1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে আবার অবরোধ ও হরতালের রাজনীতি

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৪ জানুয়ারি ২০১৫

বাংলাদেশের রাজনীতি ও জীবনযাত্রা আবারো অবরোধ-সহিংসতা-প্রতিরোধের মধ্যে পড়ে গেছে৷ ৫ই জানুয়ারির পর থেকে টানা অবরোধ চলছে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের৷ বৃহস্পতিবার অবরোধের সঙ্গে থাকছে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল৷

Bangladesch Dhaka Zusammenstöße Gewalt Straßenschlachten 5.1.2015
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com

দিনে কিছুটা কম হলেও রাতে আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয় ঢাকা৷ ঢাকা কেন, পুরো দেশ৷ কোন বাসে কখন আগুন দেয়া হয়৷ কোথায় ককটেল ফোটে কেউ জানেন না৷ যে কেউ এর শিকার হতে পারেন৷ সর্বশেষ মঙ্গলবার গভীর রাতে রংপুরে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুনের ঘটনায় এক শিশুসহ চারজন ঘটনাস্থলেই জীবন্ত দগ্ধ হয়েছেন৷

আর একই রাতে কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকার গুলশানে গুলিবিদ্ধ হন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমান৷ তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷

এই ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বুধবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা জানিয়ে হামলার তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে৷

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘‘আমরা সকল দলকে সংযত আচরণ করতে এবং সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই এবং জনগণের স্বাধীনভাবে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান রাখছি৷''

আবার কি আসছে সংঘর্ষের রাজনীতি?ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/ABIR ABDULLAH

এর আগে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ বিএনপির তিন নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়৷ সরকার দলের মন্ত্রীদের বাড়ি এবং গাড়ি লক্ষ্য করেও ককটেল ছোড়া হচ্ছে৷ আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাড়িতে ককটেল ছোড়া হয়েছে তিনদিন আগে৷

এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন আরেকটি মাত্রা যোগ হয়েছে ভারতের বিজেপির প্রধান অমিত শাহের টেলিফোন কথোপকথন নিয়ে৷ ৭ই জানুয়ারি খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘‘অমিত শাহ টেলিফোন করে গুলশান কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ' খালেদা জিয়ার খোঁজ খবর নিয়েছেন৷'' কিন্তু এরপর বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া টেলিফোন সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ জানান, তিনি খালেদা জিয়াকে ফোন করেননি৷ তবে বিএনপি এখনো তাদের দাবিতে অটল আছে৷

এদিকে বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং নিরাপদ বাংলাদেশ দেখতে চাই৷ তবে বাংলাদেশ কীভাবে চলবে তা সে দেশের সরকার ও জনগণই ঠিক করবে৷ বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের জন্য ভারতের শুভকামনা রয়েছে৷'' বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশের বিষয়ে আমাদের নীতি হচ্ছে – বাংলাদেশে কেমন সমাজ গঠন হবে, নিজেদের সমস্যাগুলো তারা কীভাবে সামাল দেবে – বাংলাদেশের সরকার ও তাদের জনগণই তা ঠিক করবে৷ এতে ভারতের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নেই৷'

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের ভুয়া বিবৃতিও আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷ প্যাড ও সই জালিয়াতি করে তাদের নামে এই বিবৃতি আসলে পাঠিয়েছিলেন বিএনপির বৈদেশিক দূত ও বিশেষ উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জাহিদ এফ সর্দার সাদী ও ডা. মজিবর রহমান মজুমদার৷ বিএনপি অবশ্য এরই মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে৷ তাদের দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা৷

বুধবার বিএনপির ডাকা অবরোধের দশম দিন চলছে৷ ৫ই জানুয়ারির আগের রাত থেকে খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসায় ‘অবরুদ্ধ' আছেন৷ ৫ই জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের বছর পুর্তিতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস' পালনে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি না পাওয়া এবং খালেদাকে ‘অবরুদ্ধ' রাখার প্রতিবাদে বিএনপি এই লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়৷ খালেদা জিয়া বুধবার এই অবরোধ আরো তীব্র করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ আর রিয়াজ রহমান গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি৷ অবরোধও চলবে৷

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি৷ তিনি চাইলে যে কোনো সময় বাড়ি যেতে পারেন৷'' শেখ হাসিনা সন্ত্রাস এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান জানিয়েছেন৷ আর তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সারাদেশে প্রতিরোধ কমিটি গঠন শুরু করেছেন৷

গত ১০ দিনের অবরোধে ঢাকাসহ সারা দেশে ৩ শতাধিক গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে৷ ভাঙচুর করা হয়েছে হাজারেরও বেশি যানবাহন৷ নিহত হয়েছেন ২০ জনেরও বেশি মানুষ৷ পোশাক খাতে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ৩০০ কোটি টাকা৷ আর পরিবহণ খাতে প্রতিদিন ৪৮ কোটি টাকা৷ স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে৷ নিম্নবিত্ত মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে৷

রেল যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ রেলে নাশকতা এড়াতে ৪ হাজার আনসার নিয়োগ করা হয়েছে৷ আর ২৮ জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি৷ যানবাহন চলাচল নিরাপদ রাখতে মহাসড়কে চলছে বিজিবি টহল৷ তারপরও মানুষের মধ্যে নিরপত্তাহীনতা বাড়ছে৷

তারপরও রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে এখানো কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়৷ সরকারের তরফে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকোচ করে দেয়া হয়েছে৷ আর বিএনপি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ