নিউ ইয়ার্স ইভে জার্মানিতে সহিংসতা হতে পারে এমন আশঙ্কায় পুলিশ ও জরুরি পরিষেবা কর্মীরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফ্রেজার জানিয়েছেন, গতবছর নিউ ইয়ার্স ইভ বা বছরের শেষ দিন রাতে বার্লিন ও অন্য শহরে দাঙ্গা হয়েছিল। পুলিশ ও জরুরি পরিষেবার কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছিলেন। এবারও একই ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
আরএনডি মিডিয়াকে ফ্রেজার বলেছেন, ‘‘আমি উদ্বিগ্ন। গতবছর কয়েকটি শহরে আমরা অন্ধ রাগ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখেছিলাম। পুলিশ ও জরুরি পরিষেবার কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছিলেন।
ফ্রেজার বলেছেন, ''আমার কাছে ওই সহিংসতা অভাবনীয়। এই ঘটনার পিছনে কোনো যুক্তিই দেয়া যায় না।''
নিউ ইয়ার্স ইভের কিছু জার্মান প্রথা
জার্মানিতে বর্ষশেষের রাতটিকে বলে ‘সিলভেস্টার’৷ সারা পৃথিবীর মতো এদেশেও নিউ ইয়ার্স ইভ উদযাপন করার কিছু বিশেষ প্রথা আছে৷
ছবি: picture-alliance
‘ভালোভাবে পিছলাবেন!’
জার্মান ‘গুটেন রুট্শ’, এই শুভকামনার অর্থ হলো, পুরনো বছর থেকে নতুন বছর বিনা বাধায় পিছলে যাবেন, এই কামনা করি৷ সেটা শুধু শীতের দিনে বরফের জন্য নয়৷ ইহুদিদের ঈডিশ ভাষায় ‘রশ হাশানা’ মানে নববর্ষ; আবার প্রাচীন জার্মানে ‘রুট্শ’ কথাটার মানে হলো ‘যাত্রা’৷
ছবি: picture-alliance
লাকি চার্ম
জার্মানরা যদি নিউ ইয়ার্স ইভে এ ধরনের কোনো উপহার দেন, তাহলে তা দেখতে যত খারাপই হোক না কেন, মনে রাখবেন, উপহারটি একটি লাকি চার্ম, নববর্ষে আপনাকে সৌভাগ্য এনে দেবে৷ ছবিতে যা দেখছেন, জার্মানে তাকে বলে ‘গ্ল্যুক্সপিলৎস’, অর্থাৎ ‘গ্ল্যুক’ বা সৌভাগ্য এনে দেবে এমন ‘পিলৎস’ বা ব্যাঙের ছাতা৷
ছবি: Fotolia/B. Bonaposta
‘পাঞ্চ বোওল’
ইংরেজিতে পাঞ্চ বলতে যা বোঝায়, জার্মানিতে ‘বোওল’ কথাটার মানেও তাই৷ জার্মানরা কথাটা নিয়েছেন ইংরেজি ‘বোওল’ বা পাত্র শব্দটি থেকে৷ হার্ড ড্রিঙ্কের সঙ্গে ফল আর ফলের রস মিশিয়ে তৈরি এই পানীয়টি ছাড়া জার্মানদের নিউ ইয়ার্স ইভের পার্টি জমে না৷
ছবি: Imago
ফিঙ্গার ফুড
নিউ ইয়ার্স ইভের পার্টিতে যদি শুধু বুফে আর ফিঙ্গার ফুড থাকে, তাহলে আপত্তি নেই, কেননা পার্টি চলবে রাত বারোটার পরেও৷ অনেকক্ষণ ধরে খাবার গরম থাকে, যদি সুইশ কায়দায় ‘ফন্ডিউ’ করা যায়: একটি পাত্রে চিজ গলতে থাকে; অতিথিরা যে যার কাঁটা দিয়ে তাতে মাংস বা সবজির টুকরো ডুবিয়ে ডুবিয়া খান৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে সুইশ ‘রাক্লেট’, যা কিনা একটা নীচু আঁচের টেবলটপ গ্রিল৷ এই ধরনের খাওয়ার মজা হলো, তা অনেকক্ষণ ধরে চলে৷
ছবি: Fotolia/thongsee
‘ব্লাইগিসেন’
ছোট একটা চামচে অল্প কিছুটা সিসা বা টিন গলিয়ে, তা ঠান্ডা জলে ফেলে দেখা হয়, সেটার কী চেহারা দাঁড়ায়৷ সেই চেহারা দেখে নাকি ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়, যার সিসা, আগামী বছরটা তার কেমন যাবে৷ এ এক ধরনের অপটু ও অপেশাদারি জ্যোতিষ, যেখানে কাজের চেয়ে মজাই বেশি৷ জার্মানে ‘ব্লাই’ মানে সিসা আর ‘গিসেন’ মানে ঢালা৷
ছবি: Fotolia/thongsee
‘ফ্রোহেস নয়েস ইয়ার’
পুরনো বছরের শেষ মুহূর্তগুলো মানুষজন ‘দশ, নয়, আট, সাত, ছয়...’ করে গোনেন৷ ঠিক কাঁটায় কাঁটায় বারোটার সময় কাছের মানুষদের চুমু খাওয়া চলে, দূরের মানুষদের টেলিফোন করতে হয় আর পাশের মানুষদের ‘ফ্রোহেস নয়েস ইয়ার’ মানে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ বলতে হয়৷ ছবিতে মহিলা ফুলঝুরি জ্বালিয়েছেন বটে, কিন্তু আসল বাজি পোড়ানোটা হয় বাড়ির বাইরে৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
বাজি ফাটছে যেন যুদ্ধ বেঁধেছে!
ঠিক বারোটার সময় সারা জার্মানি কেঁপে ওঠে হাউই-এর হুশ হুশ শব্দ আর একটানা বাজি ফাটার শব্দে৷ জার্মানিতে শুধু বছরের শেষ তিন দিন আতশবাজি বিক্রি করা যায়৷ নববর্ষে বাজি ফাটানো এসেছে এভাবে ভূত-প্রেত তাড়ানোর সুপ্রাচীন প্রথা থেকে৷
ছবি: imago/Michael Schulz
‘জেক্ট’, মানে স্পার্কলিং ওয়াইন
ওয়াইনের সঙ্গে সোডা মেশালে যেরকম হয়, সেরকম স্বাদ পানীয়টির৷ বস্তুত শ্যাম্পেনের মতো এক দামে ছাড়া, কেননা ‘জেক্ট’ অতটা মহার্ঘ নয়৷ যা-ই হোক, এই ‘জেক্ট’-এর গেলাস উঠিয়ে ‘প্রোসিট নয়ইয়ার’ বলতে হয়৷ ‘প্রোসিট’ কথাটা এসেছে ল্যাটিন থেকে; অর্থ হলো, ‘যেন সফল হয়’৷ সব মিলিয়ে: আপনাদের নববর্ষ যেন সফল হয়৷
ছবি: Fotolia/psdesign1
8 ছবি1 | 8
বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হবে
এরপর বাজি বিক্রি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার দাবিও উঠেছিল। কিন্তু তা হয়নি। ২৮ ডিসেম্বর থেকে দোকানে বাজি এসে যাবে। ফ্রেজার জানিয়েছেন, এবার সহিংসতা যাতে না হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।''
তিনি বলেছেন, ''আমি জানি, রাজ্যগুলি ও পুলিশ এবার আলাদা প্রস্তুতি নিচ্ছে। নতুন করে ঝুঁকি খতিয়ে দেখা হয়েছে। আরো বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হবে। আমি জরুরি পরিষেবা বিভাগের কর্মীদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা আমাদের সুরক্ষার জন্য নিজদের জীবন বাজি রাখেন।''
জার্মানির পুলিশ ইউনিয়ন দাবি করেছে, জরুরি পরিষেবার কর্মীরা যদি আক্রান্ত হন, তাহলে আক্রমণকারীদের কড়া শাস্তি দিতে হবে।
চরমপন্থিদের নিয়ে চিন্তা
ফ্রেজার বলেছেন, ''বছরশেষের দিনগুলিতে সহিংসতা বেড়ে যায়। আমাদের পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে হবে। এর সঙ্গে চরমপন্থাও মিশে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে যা হচ্ছে, তার আলোতেও পুরো বিষয়টি দেখতে হবে।''
গত জানুয়ারিতে বার্লিন পুলিশ ১৪৫ জনকে গ্রপ্তার করেছিল। বছরশেষের সহিংসতায় ঘটনার জন্য তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাছাড়া ৩৮ জনকে আটকও করা হয়েছিল।
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তার মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ জার্মান নাগরিক ও তাদের বয়স ২১ বছরের কম। জার্মানিতে অনেকেই এই ঘটনায় দায় অভিবাসনকারীদের উপর চাপিয়ে দেয়। কিন্তু সরকারের সরকরের বৈষম্য বিরোধী কমিশনের প্রধান ফেরডা অ্যাটাম্যান তখন সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন, এই ধারণার পিছনে কোনো যুক্তি নেই। এগুলি হলো পুরোপুরি বর্ণবাদী প্রতিক্রিয়া।