যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস এক রায়ে বলেছেন, অভিবাসন আইনজীবীরা পারিবারিক ও দলবদ্ধ লোকদের দ্বারা সহিংসতার শিকারদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের জন্য বিবেচনায় নিতে পারবেন না৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার দেয়া এই রায়ের ফলে মধ্য অ্যামেরিকার অনেক মানুষ সমস্যায় পড়তে পারেন৷ কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে ঐ অঞ্চলের অনেক মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷
২০১৬ সালে এল সালভেদরের এক নারী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে ‘মানসিক, দৈহিক ও যৌন নিপীড়ন'এর অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের আবেদন জানান৷ দেশটির ‘বোর্ড অফ ইমিগ্রেশন অ্যাপিলস' ঐ নারীর আবেদন মঞ্জুর করে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দিয়েছিল৷
কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর দেশটির শরণার্থী নীতি কঠোর করার প্রক্রিয়া শুরু করেন৷ ফলে গত মার্চ মাসে ঐ নারীর মামলা পুনরায় পরীক্ষা করে দেখার প্রক্রিয়া শুরু করেন সেশনস৷ রায়ে তিনি বলেন, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ করা যে কোনো দেশের জন্যই কঠিন৷
মার্কিন সীমান্ত যখন ‘দুর্ভেদ্য দুর্গ’
উন্নত জীবনের আশায় প্রতি বছর মধ্য অ্যামেরিকা থেকে অসংখ্য মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন৷ অভিবাসন থামাতে মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া নীতি সত্ত্বেও তাঁদের অনেকেই হার মানতে প্রস্তুত নন৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
অ্যামেরিকায় প্রবেশের স্বপ্ন
হাতে গোনা যে কয়েকজন শরণার্থী এ যাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে, ১৫ বছর বয়সি হন্ডুরাসের বায়রন গার্সিয়া তাদের অন্যতম৷ ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সেও হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে অ্যামেরিকার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Tamayo
পথের শেষে অপেক্ষা
সবার এমন সৌভাগ্য হয় না৷ মেক্সিকোর উত্তরে সীমান্তে অপেক্ষা করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই৷ মার্কিন সীমান্তের কাছে টিহুয়ানা শহরে তাঁবু খাটিয়ে শীতের মধ্যেও খোলা আকাশের নীচে তাদের রাত কাটাতে হয়৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
আপদকালীন সাহায্য
ল্যাটিন অ্যামেরিকার এই শরণার্থীদের অনেকে প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন৷ প্রায় সহায়সম্বলহীন এই মানুষগুলির জন্য টিহুয়ানা শহরে খাদ্যের ব্যবস্থা করেন সাহায্যকারীরা৷ অ্যামেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর হবে, এমন আশায় অপেক্ষা করেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Tamayo
টিহুয়ানায় আগমন
২০১০ সাল থেকে ‘পুয়েবলো সিন ফ্রন্তেরাস’ সংগঠন শরণার্থীদের এই ‘ক্যারাভ্যান’ আয়োজন করে আসছে৷ এভাবে তারা অভিবাসীদের সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়৷ মার্কিন কর্তৃপক্ষ অবশ্য খুব কম মানুষকে সে দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Duenes
হিংসালীলা থেকে দূরে
মূলত হন্ডুরাস, এল সালভাদোর ও নিকারাগুয়া থেকেই বেশিরভাগ মানুষ এই যাত্রায় যোগ দেন৷ তাঁদের অনেকেই নিজেদের দেশে স্থানীয় মাফিয়ার হত্যার হুমকি, জোর করে অর্থ আদায় ও হিংসার শিকার হয়েছেন৷ রাজনৈতিক নিপীড়নের ঘটনাও বিরল নয়৷
ছবি: Getty Images/D. McNew
কূটনৈতিক সংকট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করে ন্যাশানাল গার্ড বাহিনীকে সীমান্তে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অ্যামেরিকা ও মেক্সিকোর মধ্যে কূটনৈতিক সংকটের ফলে উদ্যোক্তারা যাত্রা বন্ধ করে দেন৷ তবে প্রায় ৬০০ মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে টিহুয়ানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Heng
মরিয়া প্রচেষ্টা
কয়েকজন শরণার্থী মরিয়া হয়ে সীমান্তের কাঁটাতার পেরোনোর চেষ্টা করেছেন৷ ‘পুয়েবলো সিন ফ্রন্তেরাস’ সংগঠনের এক সদস্যের মতে, এই শরণার্থীরা যে অপরাধী বা সন্ত্রাসবাদী নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তা দেখিয়ে দিতে চান তাঁরা৷ তাঁর মতে, ভয়ভীতি ছাড়া বাঁচার তাগিদেই মানুষ এমন কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Tamajo
সাফল্যের সম্ভাবনা কম
বেশিরভাগ শরণার্থীর জন্য অ্যামেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের সম্ভাবনা এই মুহূর্তে সত্যি কম৷ একটি সূত্র অনুযায়ী গত বছর মার্কিন কর্তৃপক্ষ এল সালভাদোর, হন্ডুরাস ও গুয়াতেমালার ৭৫ থেকে ৭৯ শতাংশ শরণার্থীদের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে৷ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কয়েক বছরও অপেক্ষা করতে হয়৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ
যাবতীয় প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ল্যাটিন অ্যামেরিকার মানুষ মার্কিন সীমান্তে অপেক্ষা করতে প্রস্তুত৷ সীমান্ত কর্তৃপক্ষ আরও মানুষকে প্রবেশ করতে দেবে, তাদের মনে এই আশা ও প্রার্থনা কাজ করে৷ সেই সুযোগ পেলে তবেই আশ্রয়ের আবেদন করা সম্ভব৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
9 ছবি1 | 9
কোনো রাষ্ট্রের পক্ষেই তার নাগরিকদের এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়৷ এল সালভেদরে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়ার মানে এই নয় যে, সে দেশের সরকার যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে তার নাগরিকদের রক্ষায় কম ইচ্ছুক৷
মার্কিন সরকার অবশ্য পারিবারিক ও দলগত সহিংসতার কারণে কত সংখ্যক আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে তা জানায়নি৷ তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সংখ্যাটি কয়েক হাজার হতে পারে৷
এল সালভেদরের ঐ নারী কর্মীর আইনজীবী ও আইনের অধ্যাপক কারেন মুসালো বলছেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের রায়ের কারণে বিশ্বব্যাপী নারী অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন হচ্ছে তার ভিত্তি দূর্বল হয়ে যাবে৷