বাংলাদেশের চলমান অস্থিরতা ও সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনার সুযোগ দেয়ারও৷ ওদিকে রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ছাত্রশিবির৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট-এর পক্ষে মুখপাত্র মেরি হার্ফ বলেন, ‘‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে চলমান নৃশংস সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছি এবং দেশে বিদ্যমান অস্থিরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাসে অগ্নিসংযোগ এবং পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারা, রেল লাইনচ্যুত করার ঘটনায় সাধারণ নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছেন৷ কেউ কেউ পুড়ে আহত হচ্ছেন৷ আমরা এ ধরনের জঘণ্যতম কাজকে নিন্দা জানাই এবং উদ্বেগ প্রকাশ করছি৷''
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এ ধরনের কাজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তীব্রভাবে নিন্দা জানাচ্ছে বলে মেরি হার্ফ উল্লেখ করেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে ন্যাক্কারজনক এ ধরনের কাজের কোনো যৌক্তিকতা নেই৷''
অস্থির বাংলাদেশ
বাংলাদেশে দশম সংসদীয় নির্বাচনের বছরপূর্তিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷ এতে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে৷ ৫ই জানুয়ারি রাজনৈতিক অস্থিরতার কয়েকটি ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
অবরুদ্ধ খালেদা
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে আটকে রেখেছে পুলিশ৷ যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, তবে সোমবার তিনি বাইরে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁর গেটে তালা লাগিয়ে দেয়৷ ফলে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গেটের মধ্যেই৷
ছবি: AFP/Getty Images
অবরোধ ঘোষণা
অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন৷ গুলশানের কার্যালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আজ আমাদের কালো পতাকা কর্মসূচি ছিল৷ সমাবেশ করতে দেওয়া হয় নাই৷ পরবর্তী কর্মসূচি না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে৷’’
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
খালেদার কার্যালয় ঘিরে পুলিশ
প্রসঙ্গত, গত দু’দিন ধরে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ৷ ছবিতে পুলিশে একটি গাড়ি রাস্তায় আড়াআড়িভাবে রেখে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এভাবে আরো কয়েকটি বালু এবং ইটভর্তি ট্রাকও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/Landov
গাড়িতে আগুন
রবিবার থেকেই ঢাকায় সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছিল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে বিএনপিসহ বিশ দল৷ ঢাকায় একটি সিএনজি এবং মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ছবি এটি৷ বিএনপি সমর্থকরা এটা করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
পার্ক করা গাড়িতে আগুন
পার্ক করে রাখা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিচ্ছে বিএনপির সমর্থকরা৷ ছবিটি ঢাকা থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
রাজপথে সরব আওয়ামী লীগ
পুলিশ সভা, সমাবেশ নিষিদ্ধ করলেও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হন৷ বিষয়টি সমালোচনা করে ফেসবুকে সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন, ‘‘...নিষেধাজ্ঞা কি শুধু বিএনপির জন্য? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তো দেখি শহরজুড়ে মিছিল করছে, উল্লাস করছে, গান শুনছে, গান গাইছে৷’’ ছবিতে ঢাকায় বিএনপির এক সমর্থককে পেটাচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
‘শান্তির পথে আসুন’
এদিকে সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বিএনপি নেত্রীকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের যে দাবিতে বিএনপিসহ বিশদল আন্দোলন করেছে, সেই দাবির প্রতি কোন নমনীয়তা দেখাননি তিনি৷ হাসিনা মনে করেন, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়াটা বিএনপির রাজনৈতিক ভুল ছিল৷
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
‘একতরফা’ নির্বাচন
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি৷ সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে কোন ভোটাভুটি হয়নি৷ বাকি আসনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেটিকে ‘একতরফা’ নির্বাচন আখ্যা দিয়েছে৷
ছবি: DW
8 ছবি1 | 8
যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘সব বাংলাদেশিই শান্তিপূর্ণভাবে তাঁদের মত প্রকাশের অধিকার রাখেন৷ আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি চালানোর সুযোগ করে দেয়৷ সেই সঙ্গে সব দলের প্রতিও আমরা আহ্বান জানাই যে, তারা যেন তাদের নেতা-কর্মীকে যে কোনো ধরনের সহিংসতা চালানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়৷''
ওদিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা না নিলে আগামী রবিবার থেকে আরো কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছে বিএনপি৷ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ এ কথা জানান৷
প্রসঙ্গত, অবরোধের মধ্যে গত ৩০শে জানুয়ারি সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার হরতাল দেয় বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট৷ এ কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগেই আরো ৩৬ ঘণ্টার হরতাল দেয়া হয়৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যয় এ কর্মসূচি শেষ হয়েছে৷
সহিংসতায় প্রধান হাতিয়ার ‘পেট্রোল বোমা’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পেট্রোল বোমার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ হাতে তৈরি এই বোমা ব্যবহার করে গাড়িতে আগুন দেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পেট্রোল বোমায় পুড়ছে জীবন
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ৷ নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এসময়৷ হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রোল বোমা৷
ছবি: imago/imagebroker/theissen
যেভাবে তৈরি হয় এই বোমা
কাঁচের বোতল, পেট্রোল আর কিছু ভাঙা কাঁচ বা মার্বেলের টুকরা ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা তৈরি করছে দুর্বৃত্তরা৷ এরপর সুযোগ বুঝে সেগুলো নিক্ষেপ করছে যাত্রীবাহী গাড়িতে৷ ফলে গাড়ি পুড়ছে, সঙ্গে পুড়ছে মানুষ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture alliance/abaca
রয়েছে অন্য বোমাও
তবে শুধু পেট্রোল বোমাই নয়, লাল বা কালো টেপে মোড়া ককটেলও ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে৷ ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ছোট পেরেক বা লোহার টুকরা৷ এছাড়া বোমা তৈরিতে গান পাউডারও ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোমা বাণিজ্য
রাজনৈতিক অস্থিরতায় সময় হাতে তৈরি বোমার চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পেশাদারি গ্রুপও বোমা তৈরি করে৷ চড়া দামে এসব বোমা বিক্রিও করা হয়৷ গত বছর পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, একেকটি হাত বোমার দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters
বড় পর্যায়ে বোমা হামলা
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মঘাতী বা বড় পর্যায়ে বোমা হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
ছবি: dpa - Bildfunk
আত্মঘাতী হামলা
১৭ আগস্টের সেই সিরিজ হামলার পর কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে৷ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেসময় ‘‘বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন৷’’ তবে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে জঙ্গিবাদের উত্থান দমনে সক্ষম হয়৷ ২০০৭ সালে জেএমবির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: AP
বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম
ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানান, বাংলাদেশ পুলিশের শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম রয়েছে৷ তাদের কাছে আধুনিক সরঞ্জামও রয়েছে৷ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বোমা নিষ্ক্রিয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের এই টিম৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
এদিকে রবিবার বিএনপি জোটের শরীক দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে৷ ‘নির্বিচারে নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম, বাড়িঘর ভাঙচুর, গণগ্রেপ্তার ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের' অভিযোগ তুলে এ সব বন্ধের দাবিতে এ হরতাল ডেকেছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠনটি৷
রবিবার থেকে বিএনপি আরো ‘কঠোর' কর্মসূচিতে যাবে বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ৷ তাঁর এ কথার ব্যাখ্যা ডয়চে ভেলেকে দিয়েছে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান৷ তিনি বলেছেন, ‘‘রবিবার থেকে অবরোধের সঙ্গে টানা সাত দিন বা লাগাতার হরতাল দেয়া হতে পারে৷ অবরোধের সঙ্গে লাগাতার হরতাল যুক্ত হলে আন্দোলন সর্বাত্মক হবে৷'' তিনি জানান, ‘‘গণতন্ত্র উদ্ধারে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সর্বাত্মক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছেন৷''
অন্যদিকে সহিংসতা দমনে সরকার আরো কঠোর আইন করার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত৷
সাবেক এই মন্ত্রী শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর৷ সহিংসতা বন্ধে অবিলম্বে কঠোর আইন আসছে, যাতে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন পর্যন্ত সাজা থাকবে৷ আইনটি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে৷ অচিরেই এর বাস্তবায়ন হবে৷''