মাইকেল ব্রাউন হত্যার বর্ষপূর্তিতে শান্তিপূর্ণ পথসমাবেশ হয়েছে ফার্গুসনে৷ তবে পুলিশের গুলিতে নিহত ব্রাউনকে স্মরণের দিনটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়নি৷ রোববার রাতে ব্যাপক সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৪ সালের ৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসন শহরে পুলিশের গুলিতে মারা যায় কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মাইকেল ব্রাউন৷ নিরস্ত্র ব্রাউনকে গুলি করে হত্যা করে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা উইলসন৷ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঘটনাস্থলে সাড়ে চার ঘণ্টা পড়ে ছিল ব্রাউন৷ পুলিশ তাঁকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা করেনি৷ ফার্গুসনের অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে আরো বিক্ষুব্ধ করে তোলে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রনালয়ের একটি সিদ্ধান্ত৷ মন্ত্রনালয় জানায়, উইলসনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব নয়৷ এর প্রতিবাদে স্মরণকালের ভয়াবহতম বিক্ষোভ শুরু হয় ফার্গুসনে৷ সারা দেশ থেকেই ওঠে উইলসনের শাস্তি এবং পুলিশ বিভাগের সংস্কারের দাবি৷ সংস্কারের কাজ এখনো শুরু হয়নি, তবে গণবিক্ষোভের মুখে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন উইলসন৷
‘প্লিজ গুলি কোরো না’
সাদা পুলিশের হাতে নিরস্ত্র এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্রের মিসুরি রাজ্যের শহর ফার্গুসন৷ মাত্র ২১ হাজার অধিবাসীর এই শহরের প্রতিবাদের খবর এখন বিশ্ব মিডিয়ায়৷
ছবি: DW/M. Soric
ঘটনার সূত্রপাত
৯ আগস্ট রাত, নিরস্ত্র মাইকেল ব্রাউন নিহত হন পুলিশের গুলিতে৷ পুলিশ শ্বেতাঙ্গ আর ১৮ বছরের মাইকেল কৃষ্ণাঙ্গ৷ ব্রাউন বর্ণবাদের বলি হয়েছেন, এ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আসছেন কৃষ্ণাঙ্গ-অধ্যুষিত ওই এলাকার বাসিন্দারা৷
ছবি: Getty Images
‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’
বিক্ষোভের সময় প্রতিটি বিক্ষোভকারী হাত উপরে তুলে ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন৷ স্লোগানটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ভিডিও বা ছবির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে৷
ছবি: Reuters
কিছুটা স্তিমিত
৯ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত বিক্ষোভ হয়েছে ফার্গুসনে৷ তবে ২০ তারিখ বিচার বিভাগের প্রধান অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ কিছুটা স্তিমিত হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রথম আফ্রো-অ্যামেরিকান হোল্ডার৷
ছবি: Reuters
ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য
গত ১১ দিনে বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা সদস্যদের পাঠান৷
ছবি: Getty Images
প্রতিবাদ রূপ নেয় সহিংসতায়
বিক্ষোভ কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল৷ মনে হচ্ছিল ফার্গুসন যে রণক্ষেত্র৷ বুধবারও ছয় বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ৷ এর আগে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গভীর রাতের দিকে কেউ কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে পানি ও প্রস্রাব ভর্তি প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে মারলে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়৷
ছবি: Reuters
বর্ণ বৈষম্যের অভিযোগ
ফার্গুসনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ ফার্গুসনের জনসংখ্যা প্রায় ২১ হাজার৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকান-অ্যামেরিকান৷ কিন্তু নিরাপত্তা, প্রশাসন, রাজনীতিসহ সব বিভাগেই শ্বেতাঙ্গ মানুষের পদচারণা৷
ছবি: Reuters
আর এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু
১৯ আগস্ট দুই পুলিশের গুলিতে ২৩ বছর বয়সের আরেক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক সেন্ট লুইস এলাকায় নিহত হন৷ সে অঞ্চলের পুলিশ প্রধান স্যাম ডস্টন দাবি করেন, ঐ যুবক পুলিশদের দিকে ধেয়ে আসেন এবং হাতে থাকা ছুরি বের করে বলতে থাকেন, ‘‘আমাকে গুলি করো, মেরে ফেলো আমাকে’’৷ যুবকটি তাঁদের দিকে ধেয়ে এলে গুলি করতে বাধ্য হন তাঁরা৷
ছবি: Reuters
ঘটনার তদন্তে শুনানি
এরিক হোল্ডার বুধবার ব্রাউনের মৃত্যুর তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করেছেন৷ বুধবারই ঘটনার তদন্তে শুনানি শুরু হয়েছে বলে খবর৷ তবে ড্যারেন উইলসন নামের পুলিশ কর্মকর্তা, যাঁর গুলিতে ব্রাউনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে কিনা – সে বিষয়ে এখনও ‘ফাইনাল’ সিদ্ধান্ত জানা যায়নি৷
ছবি: DW/M. Soric
8 ছবি1 | 8
মাইকেল ব্রাউনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর শুরুটা ছিল শান্ত, শোকাচ্ছন্ন৷ ব্রাউন যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে ছিল সেই জায়গায় সাড়ে চার মিনিট নীরবতা পালন করেন শ' তিনেক মানুষ৷ মৃত্যুপথযাত্রী ব্রাউনের প্রতি অবজ্ঞা, অবহেলার সাড়ে চার ঘণ্টাকে স্মরণ করতেই সাড়ে চার মিনিটের প্রতীকী নীরবতা পালন করা৷ মাইকেল ব্রাউনের বাবা মাইকেলও ছিলেন পথ সমাবেশে৷ ফার্গুসনের প্রতিবাদী মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তোমরা না থাকলে ওরা ঘটনাটা কার্পেটের নীচে চাপা দিয়ে দিতো৷ তাই আমার সমস্ত ভালোবাসা তোমাদের জন্য৷ ''
নীরবতার সাড়ে চার মিনিট শেষে সবাই ‘হাত তোলো, গুলি কোরো না', ‘দয়া করে আমাদের হত্যা করা বন্ধ করো', ‘কার জন্য আমরা এ সব করছি? মাইক ব্রাউনের জন্য, মাইক ব্রাউনের জন্য' স্লোগান শুরু হয় সমাবেশে৷
রাতে হঠাৎই যেন ফার্গুসন বদলে যায়৷ শুরু হয় জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ৷ সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দু'পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ও হয়েছে৷ পুলিশের অন্তত দু'টি গাড়িতে গুলি লেগেছে৷ এছাড়া পুলিশের গুলিতে কম পক্ষে এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে৷ সেন্ট লুইস কাউন্টি পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুলিশের ওপর ব্যাপক গুলিবর্ষণের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবেই পুলিশকেও গুলি চালাতে হয়৷