1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী অধিকার

২৪ ডিসেম্বর ২০১১

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জানা গেছে, মেয়েদের জন্য আফগানিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ৷ প্রচার মাধ্যমে এসব খবর উঠে এলেও ইউরোপীয় মেয়েদের অবস্থাও কিন্তু আশানুরূপ নয়৷

Afghan Policeman stands guard as burqa clad women leave after attending a seminar on domestic violence in Herat, western Afghanistan on 24 November 2009. Afghanistan's independent human rights watchdogs and civil society organizations have been saying that gender violence has reached an alarming level in the country and efforts must be redoubled to tackle it. Forced marriages and a lack of education contribute to a recent spate of suicide attempts among women in Afghanistan. EPA/JALIL REZAYEE +++(c) dpa - Bildfunk+++
ফাইল ছবিছবি: picture-alliance/dpa

‘‘ধর্ষিত হবার পর ওর অবস্থা দেখে আমার যে অনুভূতি হয়েছিল, তা এখনও আমি মনে করতে পারি৷'' বলেন নাজনিনের মা৷ ৯ বছরের এই মেয়েটি ধর্ষণের এক শিকার, আফগানিস্তানে অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে একটি৷ ‘‘আমি সরকারের কাছে আবেদন করছি, তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য৷'' অসহায় আবেদন মায়ের৷

বাবা মারা যাওয়ার সময় নাজনিনের বয়স ছিল দুই৷ মা কিছুদিনের মধ্যে আবার বিয়ে করেন৷ দুই সত্চাচা নাজানিনকে ধর্ষণ ও অত্যাচার শুরু করে৷ এ সব কথা সে যেন কাউকে না বলে সে জন্য তার গায়ে মাঝে মাঝে গরম তেলও ঢেল দিত তারা৷

শঙ্কাজনক উঁচু সংখ্যা

নাজনিন দেশটির অসংখ্য মেয়ের একজন, যাদের জীবন এইভাবে বিপন্ন৷ আফগানিস্তানের স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে নারীদের প্রতি সহিংসতার হার রীতিমত উদ্বেগজনক৷ ২০০৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ২২০৬, ২০১০ সালে ২৭৬৫, ২০১১ সালে ২৪৩৩৷

নারী অধিকার কর্মসূচির সমন্বয়কারী লতিফা সুলতানি বলেন,‘‘নিরাপত্তাহীন অবস্থার কারণে মেয়েরা নির্যাতিত এক শ্রেণিতে পরিণত হয়েছে৷'' সুলতানি আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলির দুর্বলতা ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়ার কঠোর সমালোচনা করেন তিনি, যার ফলে এই ধরনের সমস্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷

তবে সম্প্রতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে আফগান নারীরাও, ছবিতে কয়েকজন আফগান সেনা কর্মকর্তাকে দেখা যাচ্ছেছবি: AP

আফগানিস্তানের নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী পালওয়াশা কাকার বলেন, নাজনিনের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় না হলেও প্রচারমাধ্যমগুলি চাঞ্চল্যকর ঘটনার ওপর বিশেষ জোর দেয়৷ তাঁর মতে, তালেবানি সময়ের চেয়ে আফগানিস্তানের মেয়েদের অবস্থার এখন ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে৷ তবে নারীদের অবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখনও কিছু কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে৷ নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কোনো কার্যনির্বাহী ক্ষমতা নেই, খেদ প্রকাশ করে বলেন উপমন্ত্রী কাকার৷

জার্মানিতে পারিবারিক সহিংসতা

নিরক্ষরতা, নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা আফগানিস্তানে পারিবারিক সহিংসতার মূল কারণ বলে মনে করা হয়৷ তবে জার্মানির মত উন্নত দেশগুলিতেও মেয়েরা অনেক সময় অবমাননা ও নির্যাতনের শিকার হন৷ বার্লিনস্থ পারিবারিক সহিংসতা রোধ বিআইজির মুখপাত্র জেনিফার রোটার জানান, প্রতি চারজনে একজন মেয়ে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন৷ নারীদের প্রতি সহিংসতার প্রধান কারণ বেকারত্ব ও সামাজিক ভাতার ওপর নির্ভরশীল এক জীবন৷

৪৫ বছরের বেশি বয়স্ক মেয়েদের মধ্যে যারা স্বামীর চেয়ে ভাল উপার্জন করেন, তাদের পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশি৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয় মদাসক্তি ও শিক্ষার অভাব৷ বলেন জেনিফার রোটার৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘পারিবারিক সহিংসতা সব শ্রেণিতে ও সামাজিক পরিস্থিতিতে লক্ষ করা যায়৷'' ইউরোপের ১২ থেকে ১৪ শতাংশ মেয়ে পারিবারিক সহিংসতার শিকার৷ তবে উন্নয়নশীল দেশগুলির তুলনায় জার্মানি ও উন্নত দেশের নির্যাতিত মেয়ে ও শিশুরা সরকারি উদ্যোগে নিরাপদ আশ্রয় ও পরামর্শ পেতে পারেন৷ স্বামী বা পুরুষ সঙ্গীর অত্যাচারের শিকার মেয়েরা পুলিশের কাছে অভিযোগ পেশ করতে পারেন৷ সেটা শারীরিক, মানসিক বা আর্থিক যাই হোক না কেন৷

আফগান সরকারও এখন নারীর নিরাপত্তার জন্য আইনকানুনের উন্নতি ঘটাচ্ছে৷ এ প্রসঙ্গে উপমন্ত্রী কাকার বলেন, ‘‘যেমন নিরক্ষরতার হার কমানোর জন্য শিক্ষা কর্মসূচির উন্নয়ন এবং নারী পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নানা ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হচ্ছে৷'' মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে পারিবারিক সহিংসতাও হ্রাস পাবে৷

মেয়েদের জন্য এখন নানা ক্ষেত্রে প্রবেশের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে, যেমন পৌর সংস্থা ও স্বাধীন কমিশনে অংশ নিতে পারছেন মেয়েরা৷ এ ছাড়া প্রচার মাধ্যমে যোগ দেয়া সহজ হয়েছে তাদের পক্ষে৷ কার্যকর হয়েছে বিচার বিভাগ৷ এসব কিছু পারিবারিক সহিংসতার হার কমাতে সাহায্য করছে৷ বলেন কাকার৷ পরিবারের সদস্যদের দ্বারা প্রহৃত হলে মেয়েরা এখন নিরাপদ আশ্রয়স্থলে যেতে পারেন৷

দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক

আফগানিস্তানের নারী অধিকার রক্ষায় তত্পর বেসরকারি সংস্থা আফগানিস্তান উইমেন কাউন্সিলের মতে, ‘‘যে সব রাষ্ট্র পারিবারিক সহিংসতা রোধে ও নারী অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ, তারা মেয়েদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করে এবং বিষয়টি নিয়ে সমাজের কোনো মাথা ব্যথার প্রয়োজন নেই, এটাই বোঝাতে চায়৷''

সংস্থা আরো জানায়, পারিবারিক সহিংসতা জাতি, ধর্ম, বয়স, সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান নির্বিশেষে সব ক্ষেত্রেই দেখা দিতে পারে৷ এ ব্যাপারে জেনিফার রোটার একমত পোষণ করে বলেন, ‘‘আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতির চাপে সহিংসতার প্রকাশ ঘটলেও এটাই যে মূল কারণ তা বলা যায়না৷ নারী পুরুষ জুটির মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকলে এই রকমটি ঘটতে পারে৷''

প্রতিবেদন: তামানা জামিলি/ রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ