1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সহিংস দিল্লি, মৃত ২৩

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

তিন দিন ধরে সহিংসতা, গুলি, আগুনে উত্তাল উত্তর-পূর্ব দিল্লির একটি বড় এলাকা৷ এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৷

ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain

গত ৭২ ঘণ্টা ধরে দিল্লিতে লাগাতার সংঘর্ষ চলছে৷ রাজপথ কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে৷ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পাথর আর কাচ৷ আরেকটু নজর করলে পাওয়া যাচ্ছে কার্তুজের খোল। চারপাশে ভাঙা ও পোড়া গাড়ি, মোটর সাইকেল, পোড়া দোকান৷ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বস্তি৷ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রচুর বাড়িতে৷ মৌজপুর, ব্রহ্মপুরী, গোলকপুরী, জাফরাবাদ, ভজনপুরা, করাওলনগর, মুস্তাফাবাদ সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এটাই ছবি৷ খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে মার খেয়েছেন সাংবাদিকরাও। তাঁদের বাইক ভাঙচুর হয়েছে। ঘুষি মেরে দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের হিংসা ও সংঘর্ষ দেখেনি দিল্লি৷  এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে হিংসার বলি ২৩৷ শতাধিক লোক হাসপাতালে ভর্তি৷ কোনও কোনও সূত্রের দাবি, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি।

রবিবার দুপুর থেকে যা চলছে, তার জন্য কাঠগড়ায় দিল্লি পুলিশ৷ এই সময়ের সাংবাদিক অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থল ঘুরে এসে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''মঙ্গলবারের অভিজ্ঞতা হল, পুলিশ রয়েছে, কিন্তু চুপচাপ বসে আছে। যদি পুলিশ আক্রান্ত হয় তা হলেই তারা তৎপর হয়ে কাঁদানে গ্যাস, লাঠি চালাচ্ছে৷ জিজ্ঞাসা করলে বলছে, ওপরওয়ালার নির্দেশ নেই৷ নির্দেশ পেলেই তৎপর হব৷ আর চারপাশের অবস্থা এতটা খারাপ যে বলার নয়৷ চোখের সামনে টায়ার মার্কেট জ্বলতে দেখেছি৷ এরকম পাথরবৃষ্টি যে হতে পারে তা জীবনে ভাবিনি৷ সব জায়গায় একটাই প্রশ্ন শুনেছি, দিল্লি কেন জ্বলছে?''

ছবি: picture-alliance/Xinhua News Agency/Str

এটাই এখন দিল্লিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন৷ সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের মন্তব্য আসছে। তবে অধিকাংশের প্রশ্ন, পুলিশ কেন নিষ্ক্রিয়? এত দিন দিল্লি পুলিশের সুনাম ছিল। বলা হত, কোনও ঘটনা ঘটলে তারা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে৷ পুলিশের এ বারের নিষ্ক্রিয়তা অবাক করেছে প্রবীণ সাংবাদিক গুলশনকে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''আগে বরাবর দেখেছি, কিছু ঘটলেই পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিনবার বৈঠক করেছেন। তাতেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি৷ এটাই আশ্চর্য।''

দিল্লি হাইকোর্টও পুলিশের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট৷ আদালত জানিয়েছে, কোনওভাবে যেন ১৯৮৪র  ভয়াবহ দাঙ্গার পুনরাবৃত্তি না হয়৷ যারা গৃহহীন হয়েছেন, তাদের থাকার ব্যবস্থা ও খাওয়ার ব্যবস্থা প্রশাসনকে করতে হবে৷  আর যারা জেড পর্যায়ের নিরাপত্তা পান, তাঁদের উচিত, উপদ্রুত এলাকা সফর করে লোককে ভরসা দেওয়া৷

পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে সরকার বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নিয়েছে৷ সিআরপিএফ থেকে এস এন শ্রীবাস্তবকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে দিল্লি পুলিশে৷ জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শদাতা বা এনএসএ অজিত দোভাল রাতভর উপদ্রুত এলাকায় গিয়ে লোককে বুঝিয়েছেন এবং বলেছেন, সকলকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে৷ বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে। সেখানে দোভাল দিল্লির হিংসা নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছেন। পরে নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকও হওয়ার কথা৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দাবি করেছেন, অবিলম্বে সেনা নামানো দরকার৷ তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে সেই অনুরোধ করেছেন৷ মঙ্গলবার রাতে জামিয়ার ছাত্র ও প্রাক্তনীরা কেজরিওয়ালের বাসভবন ঘেরাও করেন৷ জলকামান দিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করা হয়৷

দিনভর ঘটছে অনেক কিছুই। কিন্তু তারপরেও একটিমাত্র প্রশ্নের উত্তর মিলছে না, গত তিনদিন ধরে পুলিশ কেন এতটা নিষ্ক্রিয় থাকলো ? কেন এখনও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আয়ত্ত্বে আনা গেল না। যাঁরা পরিবারের লোকেদের হারিয়েছেন, তাঁরা বলছেন, দিনের পর দিন ধরে যে ভাবে ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে, এটা তারই ফল। দুই সম্প্রদায়ের মানুষই একই দাবি করছেন। অথচ, এই ধরনের নেতাদের পুলিশ এখনও গ্রেফতার করেনি। 

এত প্রয়াসের পরও বুধবার সকালে ব্রহ্মপুরী ও মুস্তাফাবাদে সকালে পাথরবৃষ্টি হয়েছে৷ গোকুলপুরীতে পৌনে দশটা নাগাদ বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এ দিন উপদ্রুত এলাকায় প্রচুর পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ তাতে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও প্রবল উত্তেজনা রয়েছে৷ ঘটনাও ঘটছে৷

এরপর শুরু হয়েছে অভিযোগ ও পাল্টা অভিয়োগের রাজনীতি৷ পুরো ঘটনাটা পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিযোগ করে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী দাবি করেছেন, ''ঘটনার দায় নিয়ে অমিত শাহকে ইস্তফা দিতে হবে৷'' এরপরই দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর এবং রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, ''এটা রাজনীতি করার সময় নয়৷ শান্তি ফেরানোর সময়৷''

অ্য়ামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনান্ড ট্রাম্প দিল্লিতে থাকার সময়েই উত্তাল হয় শহরের উত্তর পূর্বের একের পর এক এলাকা। ট্রাম্প অবশ্য বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে গিয়েছেন৷ কিন্তু তাঁর দেশের পার্লামেন্ট সদস্যরা সোচ্চার হয়েছেন৷ কংগ্রেস সদস্য প্রমীলা জয়পাল বলেছেন, ''গণতন্ত্র কখনওই এই ধরনের বিভাজন ও বঞ্চনা সহ্য করে না৷ এমন আইনও করা উচিত নয়, যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতায় আঘাত লাগে৷''

জিএইচ/এসজি(পিটিআই,এএনআই)

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ