হংকংয়ে পরপর কয়েকটি সহিংস হামলার পর সেখানকার মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ এই রোগে আক্রান্তদের সেবা দেয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ হংকংয়ে নেই বলে অভিযোগ করছে বিভিন্ন সংস্থা৷
বিজ্ঞাপন
চলতি মাসে এক ব্যস্ত শপিং মলে ছুরিকাঘাতে দুই নারী মারা যান৷ হামলাকারীর মানসিক অসুস্থতার ইতিহাস আছে বলে পরে পুলিশ জানিয়েছিল৷
এর কয়েকদিন পর আরেক ছুরি হামলায় ম্যাকডোনাল্ডসের ম্যানেজার মারাত্মকভাবে আহত হন৷
এছাড়া এই মাসেই তিন কন্যাকে শ্বাসরোধ করার সন্দেহে ২৯ বছর বয়সি এক মাকে আটক করা হয়৷
২৮ বছর বয়সি মডেল অ্যাবি চোইকে হত্যার অভিযোগে ফেব্রুয়ারিতে চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়৷
ডিপ্রেশন: আপনার যা জানা উচিত
ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা একটি বৈশ্বিক অসুস্থতা৷ গোটা বিশ্বের প্রায় চার শতাংশ মানুষের বিষন্নতা রয়েছে৷ চিকিৎসার মাধ্যমে এই অসুস্থতা দূর করা সম্ভব৷ চলুন বিষন্নতা নিয়ে আরো কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Hoermann
বিষন্নতা কী?
ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা যেকারো হতে পারে এবং এটি কোনো দুর্বলতার লক্ষণ নয়৷ এটা একধরনের অসুস্থতা যার লক্ষণ হচ্ছে দীর্ঘ সময় মন খারাপ থাকা, নিত্যদিনের কাজ যা আপনি উপভোগ করতেন তা করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা বা সেসব কাজ করা কঠিন মনে হওয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Hoermann
বিষন্নতার আর কী কী লক্ষণ আছে?
বিষন্নতায় আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে আরো অনেক লক্ষণ থাকতে পারে৷ যেমন তারা সারাক্ষণ দুর্বল অনুভব করতে পারে, তাদের খাদ্যের রুচি চলে যেতে পারে, ঘুম আগের চেয়ে কম বা বেশি হতে পারে, মনোযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে, সিদ্ধান্তহীনতা দেখা দিতে পারে, এমনকি নিজেকে মূল্যহীন মনে হতে পারে৷ মারাত্মক বিষন্নতা কাউকে নিজের ক্ষতি করা বা আত্মহত্যায়ও উৎসাহিত করতে পারে৷
ছবি: Ute Grabowsky/photothek/imago images
বিষন্নতা রোধের উপায় কী?
বিষিন্নতার চিকিৎসা রয়েছে৷ একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এটা দূর করা সম্ভব হতে পারে৷ প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধও গ্রহণ করার প্রয়োজন হতে পারে৷
ছবি: Panthermedia/imago images
বিষন্নতা অনুভব করলে কী করবেন?
বিষন্নতা অনুভব করলে আপনি এমন কারো সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারেন যাকে আপনি বিশ্বাস করেন৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনেক সময় শুধু কথা বলেও বিষন্নতা কাটানো যেতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Bertold Werkmann
বিষন্নতা থেকে দূরে থাকতে আর কী করা যেতে পারে?
আপনার ভালো লাগে এরকম কিছু কর্মকাণ্ড নিয়মিত করতে পারেন৷ পাশাপাশি বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে ভালো৷ খাওয়াদাওয়া এবং ঘুমের ক্ষেত্রেও একটি রুটিন অনুসরণ করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia
ব্যায়াম করলে কী বিষন্নতা কমে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের জন্য ভালো৷ বিষন্ন মনে হলে ইচ্ছা না থাকলেও অন্তত বাইরে গিয়ে হাঁটাহাটি করুন৷ আর বিষন্নতা কাটাতে মদ্যপান কোনো সমাধান নয়৷ এলকোহল বিষন্নতা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/El Nuevo Dia de Puerto Rico/Jupiterimages
আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগলে করণীয় কী?
আপনার মধ্যে যদি আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগে তাহলে আপনার বিশ্বস্ত কারো সঙ্গে যোগাযোগ করুন যাতে তিনি আপনাকে এই চিন্তা থেকে দূরে যেতে সহায়তা করতে পারে৷ অনেক দেশে এরকম পরিস্থিতিতে মানসিক সহায়তা পেতে জরুরি ফোন নম্বর রয়েছে৷ দরকার হলে সেখানেও ফোন করতে পারেন৷
দ্রষ্টব্য: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ছবিঘরটি করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/ImageBROKER/S. Arendt
7 ছবি1 | 7
পলিসি ও অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ‘আওয়ার হংকং ফাউন্ডেশন' বলছে, হংকংয়ের ৭০ লাখের বেশি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে৷ তাদের সহায়তা করার মতো যথেষ্ট সুবিধা হংকংয়ের নেই বলে জানিয়েছে তারা৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন ও ২০২২ সালের একটি জরিপের উল্লেখ করে ফাউন্ডেশন বলছে, ‘‘গত কয়েক বছরে হংকংয়ের জনগণের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷'' ২০২২ সালের জরিপে হংকংয়ের মানুষের মধ্যে বিষন্নতার অনেক উপসর্গ দেখা গেছে৷
এর জন্য করোনা মহামারিকে অনেকাংশে দায়ী করছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷ কারণ করোনার সময় হংকংয়ে বিশ্বের অন্যতম কঠোর লকডাউন নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল৷
এছাড়া ২০১৪ সালে গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর ২০১৯ সালে হংকংয়ে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভ বেশ কয়েকবার সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল৷
ব্রিটিশদের কাছ থেকে চীনের অধীনে যাওয়ার পর মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিষয়গুলো সংকুচিত হওয়া, জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়া, আয় বৈষম্য বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত আবাসস্থলের অভাব ইত্যাদি কারণে মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ায় এসব বিক্ষোভ হয়েছে৷
গবেষক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জুডি ব্লেইন বলছেন, বিভিন্ন ধরনের চাপ একত্রিত হয়ে হংকংয়ের মানুষের উপর প্রভাব ফেলছে৷
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান ও এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষকে কীভাবে সহায়তা দেয়া যায় তা নিয়ে প্রশাসন বৈঠক করেছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন হংকং প্রশাসনের এক মুখপাত্র৷
এদিকে, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাগুলো৷ ‘মাইন্ড হংকং' সংস্থার প্রধান নির্বাহী ক্যারোল লিয়াং বলছেন, জরুরি নয় এমন সমস্যার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে সর্বোচ্চ ৯০ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে৷
৩৮ দেশের সংগঠন ‘অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট' বা ওইসিডির একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করে তিনি বলেন, হংকংয়ে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য মাত্র ৭.৫৫ জন সাইকিয়াট্রিস্ট ও ৮.১৫ জন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট আছেন- যেখান ওইসিডির গড় যথাক্রমে ১৮ ও ৫৩৷