1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিকতার পরিধি বেড়েছে, কিন্তু...

গোলাম মোর্তোজা
৭ নভেম্বর ২০১৬

‘সুসময়’ কোনটা? যে সময় চলে গেছে, না কোনোটাই না? বর্তমান নিয়ে সবসময় একটা অপ্রাপ্তি থাকে৷ আগে ছিল, এখন নেই, আগে হতো, এখন হয় না – এ সব কথা সব কালেই কমবেশি ছিল৷ এখনো আছে৷ বলছি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কথা৷

ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stache

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নিয়ে খুব সাধারণ একটা আলোচনা, ‘‘এখন আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নেই৷'' তার মানে আগে ছিল? কতটা ছিল, এখন কি আসলেই নেই বা কমে গেছে? বাংলাদেশের প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত৷

১. সাংবাদিকতার পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়েছে৷ প্রিন্ট মিডিয়ার ব্যাপকতা বেড়েছে৷ তা ছাপিয়ে জয়যাত্রা চলছে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার৷ অনলাইন সাংবাদিকতা এসেছে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে৷ প্রতিযোগিতা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে৷

সাংবাদিকতার এই প্রচার, প্রসারের বৃদ্ধির কালে কেন এই আলোচনা যে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কমে গেছে? কেন এ কথা সামনে আসে যে, এখন আর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখা যায় না?

স্বাধীনতার পর শাহাদত চৌধুরীর ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা' প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জনমানুষের আলোচনায় নিয়ে আসে৷ তারপর আস্তে আস্তে দৈনিক পত্রিকার প্রসার ঘটে৷ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে৷ এখন যখন গণমাধ্যমের সবচেয়ে রমরমা অবস্থা চলছে, তখন আলোচনায় আসছে ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা' নেই৷

‘ইসলামিক দলগুলোর বড় অবস্থান নেই'

07:02

This browser does not support the video element.

২. অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এখন হয় না৷ সাংবাদিকতার সঙ্গে সঙ্গে হয়ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেরও ধরণ বদলেছে৷ কিন্তু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এখনও হয়৷ যেমন ‘মাছরাঙা' টেলিভিশনে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সাংবাদিক বদরুদ্দোজা বাবু অসাধারণ কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন৷ প্রথম আলোতে সাংবাদিক মনজুর আহমেদ ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন৷ সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিসহ অনেক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন৷ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম প্রথম আলোতে অনেকগুলো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন৷ সচিবদের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্যে বিদেশি বন্ধুদের দেয়া পদকে ভেজালসহ অনেকগুলো অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছেন তিনি৷ সাংবাদিক হারুন-উর-রশীদ স্বপন মাঝেমধ্যেই কিছু সংবাদের অনুসন্ধান করেন৷

কালের কণ্ঠের সাংবাদিক আরিফুজ্জামান তুহিন বিদ্যুৎ সেক্টরের ৮৪ কোটি টাকার দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দিয়ে একটি অসাধারণ রিপোর্ট করেছেন৷ এর বাইরেও নিশ্চয়ই আরও বেশকিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয়েছে৷

৩. তার মানে কি, এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই যে, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হচ্ছে না? মনে হয় না অভিযোগটি এভাবে উড়িয়ে দেয়া যাবে৷ গত কয়েক বছর দেশে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, এমন কিছু বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নজীর দেখা যায়নি৷

ক. সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে৷ এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের কোনো অনুসন্ধান চোখে পড়েনি৷ পুলিশ যা বলেছে, তা-ই প্রচার করা হয়েছে৷

খ. হোলি আর্টিজান জঙ্গি ট্র্যাজেডি, অভিযান নিয়ে দেশের মানুষ এখনও বিভ্রান্তিকর তথ্যের মধ্যে আছেন৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পুরো বিষয়টি পরিষ্কার করেনি৷ কেন অভিযান চালানোর জন্যে সারা রাত অপেক্ষা করা হলো, তাহমিদদের হাতের অস্ত্রসহ ছবি কী প্রমাণ করে, এসব বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয়নি৷ অভিযানের কোনো পর্যায়ে পাঁচ জঙ্গি নিহত হলো, স্বচ্ছভাবে তা জানেন না জনমানুষ৷ ধারণা দেয়া হয়েছিল, অভিযানের সময় ‘গোলাগুলিতে' জঙ্গিরা নিহত হয়েছে৷ পরবর্তীতে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, জঙ্গিরা জিম্মিদের উদ্দেশে কথায় বলে, আমরা মারা যাব এ কথা বলে খালি হাতে হেঁটে যখন বের হয়ে আসছিল, তখন তাদের গুলি করে হত্যা করা হয৷ অর্থাৎ অভিযান তখনই শুরু হয়৷ গণমাধ্যম অনুসন্ধান করে রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি৷

প্রায় প্রতিদিন ক্রসফায়ারের হত্যাকাণ্ড ঘটছে৷ পুলিশ বা র‌্যাব ক্রসফায়ারের যে গল্প বছরের পর বছর ধরে বলছে, গণমাধ্যম তা-ই প্রকাশ করছে৷আজ পর্যন্ত কোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিক একটি ক্রসফায়ারেরও প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করেননি বা করতে পারেননি৷

বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা দেখা যায় না৷ মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর অনিয়ম দুর্নীতি, ভিওআইপি জালিয়াতি নিয়ে কোনো গণমাধ্যম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করানোর উদ্যোগ নেয় না৷

বড় বড় প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য ততটুকুই জানা, বাজেট যতবার যতটা বাড়ানো হয়৷ গণমাধ্যম কিছু অনুসন্ধান করে না৷

গোলাম মোর্তোজা, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকছবি: Golam Mortoza

৩. এ সব জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জনমানুষ গণমাধ্যম থেকে প্রকৃত তথ্য বা রহস্য জানতে চায়, কিন্তু জানতে পারে না৷ তখনই বলা হয়, ‘‘এখন আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হয় না৷''

না হওয়ার বা কম হওয়ার কারণ বেশ কয়েকটি৷ করপোরেট হাউজগুলো গণমাধ্যমের মালিক হওয়ায় তারা কোনো ঝুঁকি নিতে চান না৷ এ কথা সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হলেও, অনেক ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷ সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়েছে, অর্থ-গ্ল্যামার বেড়েছে৷ সাংবাদিকতা পেশায় আসা নবীনরা (সবাই নয়) কম পরিশ্রমে সাংবাদিক পরিচিতি পেয়ে যাচ্ছে৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার মতো ঝুঁকি ও পরিশ্রম অনেকেই করতে চান না৷

পরমত সহিষ্ণুতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে৷ সাংবাদিকদের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়েছে৷ আগে হুমকি দেয়া হতো, এখন আক্রমণ করা হয৷ হত্যা করা হয়৷ রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা আছেন, তারা গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ বা শত্রু মনে করেন৷ এ কারণে কোনো সম্পাদককে ‘নিষিদ্ধ' ঘোষণা করা হয়, কারো বিরুদ্ধে ৮০টি মামলা হয়৷ সাংবাদিকের হাতে হাতকড়া, কোমরে রশি দিয়ে বাঁধা হয়৷ এসব ভয়-ভীতি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্যে অনুকূল নয়৷

৪. আবার ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে হয়৷ ঝুঁকি নিতেই হয়৷ রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিবেশ এবং ঝুঁকি নেয়ার সাহস দেখাতে না পারা এবং করপোরেট পুঁজি, বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অন্তরায়৷ এর মধ্যেও অনেকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করছেন৷ আবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অনুপস্থিতি লক্ষণীয়ভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে৷

সাংবাদিকতার পরিধি যত বেড়েছে, সেই তুলনায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বাড়েনি৷ তুলনামূলক বিচারে কমেছে৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ