করোনা সংকটে টানা নিষেধাজ্ঞায় জার্মানিতে জনমনে ক্ষোভের জন্ম হচ্ছে৷ বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার দাবিতে হচ্ছে বিক্ষোভ৷ সেখানে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন৷ বাড়ছে তাদের জীবনের ঝুঁকি৷
বিজ্ঞাপন
করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত মার্চ মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রার্থনালয়, দোকান ও বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়াসহ সামাজিক জীবনযাপনে নানা বিধি নিষেধ আরোপ করে জার্মান সরকার৷ জনসমাগম আটকাতে একের পর এক নানা অনুষ্ঠান-আয়োজন বাতিল করা হয়৷
যদিও বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় বিধি নিষেধও ধিরে ধিরে শিথিল হচ্ছে৷ কিন্তু এখনো অনুষ্ঠান আয়োজন, ভ্রমণসহ নানা বিষয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি আছে৷
সরকারি এসব ব্যবস্থার সমালোচনা করে অনেকে বলেন, এই বিধি নিষেধ মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকারের পরিপন্থি৷ কারো কারো মতে, এসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে বরং টিকা বাধ্যতামূলক করা উচিত৷ যদিও করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো টিকা এখনো বাজারে নেই৷
শুধু জার্মানি নয় বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেই করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আরোপিত লকডাউন তুলে নিতে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে৷
জার্মানিতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভটা হয়েছে গত রোববার দক্ষিণের নগরী স্টুটগার্টে৷ মিছিলে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন ৷ পুলিশ বলেছে, মিছিল শান্তিপূর্ণ ছিল৷
কিন্তু এ ধরণের বিক্ষোভে সাধারণত হাতাহাতি ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে৷ বিশেষ করে দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের উপর বিক্ষোভকারীদের চড়াও হতে দেখা যাচ্ছে৷ রাজধানী বার্লিনে অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমের দুইটি ক্যামেরা দলকে হামলার শিকার হতে হয়েছে৷
যে ঘটনা জার্মানি জুড়ে ত্রাসের জন্ম দিয়েছে৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দল সিডিইউ-র মহাসচিব পাউল জিমিয়াক এটা নিয়ে টুইটারে লেখেন, গত ১ মে ‘টুডে শো’র ক্যামেরা ক্রুদের উপর হামলার ঘটনায় তিনি ‘স্তম্ভিত' হয়ে গেছেন৷ এটা জার্মানিতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর হামলা৷
এসএনএল/কেএম
৬ মে’র ছবিঘরটি দেখুন...
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ১০০ দিন
গত ২৭ জানুয়ারি প্রথম করোনায় সংক্রমিত রোগী পেয়েছিল জার্মানি। সেই থেকে শুরু করোনাবিরোধী লড়াইয়ের ১০০ দিন হয়ে গেল। দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Heimken
প্রথম রোগী মিউনিখে
করোনা সংক্রমণের পর দীর্ঘ চিকিৎসা-পর্ব শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা রোগীটি মিউনিখের।
ছবি: Reuters/F. Bensch
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘোষণা
চীনে সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় ততদিনে করোনা নিয়ে আতঙ্ক জার্মানিতেও কিছুটা ছড়াতে শুরু করেছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন স্পান সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, "আমরা সতর্ক এবং প্রস্তুত আছি। আন্তর্জাতিক ও ইউরোপীয় পর্যায়ে এবং সব রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি আমরা।"
ছবি: AFP/O. Andersen
নির্বিঘ্ন প্রথম মাস
ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত জার্মানিতে জনজীবন একেবারে স্বাভাবিক ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য চলেছে। সীমান্ত খোলা ছিল। নির্বিঘ্নে এবং সফলভাবে শেষ হয়েছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব বার্লিনালে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক মানুষ অংশ নিয়েছেন সে উৎসবে।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
মার্চেও নিশ্চিন্ত বার্লিন
বার্লিনে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ২ মার্চ। জার্মানির রাজধানী শহরের যে হাসপাতলে তার চিকিৎসা হয়েছিল, সেখানকার মেডিকেল অফিসার বিষয়টিকে একেবারে পাত্তা না দিয়ে বলেছিলেন, "এটা কাকতালীয় ঘটনা।" ছবিতে মার্চে বার্লিনে অনুষ্ঠিত বুন্ডেসলিগার একটি ম্যাচের দৃশ্য৷
ছবি: Getty Images/Bongarts/M. Hangst
আসল লড়াই শুরু
মার্চ মাসে পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে শুরু করে। বাতিল করতে হয় বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল ট্রাইড শো।
ছবি: picture-alliance/dpa/B.v. Jutrczenka
ম্যার্কেলের সতর্কবার্তা
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল তখনো চুপ। ১১ মার্চ নীরবতা ভাঙলেন, এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট ভাষায় বললেন, এখনই সতর্ক না হলে জার্মানির ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে।
ছবি: Getty Images/AFP/K. Nietfeld
সীমান্ত বন্ধ, জনজীবনে বিধিনিষেধ
তারপর ধীরে ধীরে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় জার্মানি। খাদ্য সামগ্রী এবং জরুরি প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছাড়া বাকি সব দোকান, ব্যবসা পতিষ্ঠান বন্ধ করে ঘরের বাইরে চলাফেরায়ও আরোপ করা হয় নিষেধাজ্ঞা। বাতিল করা হয় খেলাধুলা, সংস্কৃতিসহ সব বিষয়ের সব অনুষ্ঠান।
ছবি: picture-alliance/dpa/CTK/M. Chaloupka
প্রশংসিত জার্মানি
সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও জার্মানিতে করোনা সংক্রমণে মৃত্যুহার এখনো কম। এ পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ, মৃতের সংখ্যা সাত হাজারের কম। মৃত্যুহার কম রাখতে পারায় বিশ্বজুড়ে চলছে জার্মানির চিকিৎসাব্যবস্থার প্রশংসা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Heimken
বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা
তবে বন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা বলছে, খুব সতর্ক না হলে সংক্রমণ দশগুণ বেড়ে ১৮ লাখ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইটা হয়তো দীর্ঘই হবে জার্মানিতে।