সাংবাদিকদের জন্য ভীতিহীন কাজের পরিবেশ চায় ১৪ দেশের দূতাবাস
৩ মে ২০২৩
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের জন্য হয়রানি-ভীতি ছাড়া কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছে মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের সদস্য দেশগুলোর বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশন৷
বিজ্ঞাপন
৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে তারা৷ বিবৃতিতে সই করেছে বাংলাদেশে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস/হাইকমিশন৷
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘মুক্ত এবং স্বাধীন গণমাধ্যম গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান৷ এর মাধ্যমে নাগরিকরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের তথ্য জানার পাশাপাশি তাদের নেতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারে৷ স্বাধীন গণমাধ্যমের অধিকারের বিষয়টি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার দলিলের পাশাপাশি বাংলাদেশসহ অনেক দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে৷''
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে৷ ঘোষণাপত্রের ১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেকেরই মতামত পোষণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে; কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়া অবাধে মতামত পোষণ করা এবং রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে যেকোনো মাধ্যমের মারফতে তথ্য ও ধারণাগুলো জানা বা অনুসন্ধান, গ্রহণ ও বিতরণ করা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত৷'''
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষার মূল্যবোধকে সম্মিলিতভাবে সমুন্নত রাখি৷ সাংবাদিকদের অবশ্যই হয়রানি, ভীতি বা সহিংসতার ভয় ছাড়াই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে৷ এটি সুশাসনকে সহায়তা করা ও জনসাধারণকে কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবহিত করা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়৷ এছাড়া, সাংবাদিকদের অবশ্যই তথ্যে প্রবেশাধিকার থাকতে হবে এবং তথ্যের সূত্রগুলোর সুরক্ষা দিতে পারতে হবে৷''
কাকে শিক্ষা দিতে সাংবাদিক কারাগারে?
56:28
এতে আরও বলা হয়, ‘মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের সদস্য হিসেবে আমরা মুক্ত গণমাধ্যমের তাৎপর্য অনুধাবন করা ও একে রক্ষা করার ওপর গুরুত্বারোপ করে থাকি৷ এর সঙ্গে সরকার, গণমাধ্যম সংস্থাগুলোর স্বত্বাধিকারী, নাগরিক সমাজের নেতারা, রাজনৈতিক দলগুলো এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জড়িত৷ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করার মাধ্যমে একটি সমাজ আরেও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধশালী হতে পারে৷ গবেষণায় দেখা গেছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বেশি এমন দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বেশি৷ এর সহজ কারণটি হলো-মুক্ত গণমাধ্যম স্বচ্ছতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে; যা দুর্নীতি কমায় ও উদ্ভাবনী শক্তিকে ত্বরান্বিত করে, যা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের জন্য সহায়ক৷'
‘এছাড়া, মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্যও মুক্ত গণমাধ্যম অত্যাবশ্যক সাংবাদিকরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো প্রকাশ ও জবাবদিহিতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন৷ এটি মুক্ত গণমাধ্যম আছে এমন সব দেশের জন্য প্রযোজ্য সাংবাদিকরা নারীদের বক্তব্য ও অভিজ্ঞতা প্রকাশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমাজে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টিও তুলে ধরেন৷'
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে উন্মুক্ত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাজের বিকাশ ও উন্নয়নের শক্তিশালী ধারা প্রতিষ্ঠিত হয় এমন একটা ধারা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যারা কাজ করছে বাংলাদেশস্থ মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের সদস্যরা তাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবে৷''
জেকে/এপিবি (দ্য ডেইলি স্টার)
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আটটি ছবি
তেসরা মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস৷ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বহু সাংবাদিক সংগ্রাম করেছেন৷ তাদেরই কাহিনি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্র৷
ছবি: Bild: BR/Wiedemann & Berg Film
রেজর’স এজ
২০১৬ সালে নাগরিক সাংবাদিকতা বিভাগে ডয়চে ভেলের বব্স পুরস্কারে ভূষিত হয় এই তথ্যচিত্র৷ বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার ও লেখকরা বিশেষভাবে বিপন্ন: ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের আক্রমণে শুধুমাত্র গত পাঁচ সপ্তাহে এদের চারজন প্রাণ হারিয়েছেন৷ ‘ক্ষুরধার’ ছবিটি সেই পরিস্থিতির দিকে নজর দিচ্ছে৷
ছবি: Nastiker Dharmakatha
ফ্রেম বাই ফ্রেম
‘এক একটি ছবি’ শীর্ষক দিয়ে চারজন তরুণ আফগান ফটো জার্নালিস্ট বা সংবাদধর্মী আলোকচিত্রশিল্পীর কাহিনি বলা হয়েছে৷ ফটোগ্রাফি বহুদিন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকার পর এই সব আফগান ফটোগ্রাফার আবার ছবি দিয়ে কাহিনি সাজাতে শিখছেন৷ কাবুলের মার্কিন দূতাবাসে ছবিটি প্রদর্শিত হওয়ার পর স্থানীয় টিওএলও নিউজ সংস্থার সাতজন সাংবাদিক একটি আত্মঘাতী বোমা আক্রমণে নিহত হন৷
ছবি: Film Fprout
অল দ্য প্রেসিডেন্টস মেন
‘প্রেসিডেন্টের সাঙ্গপাঙ্গ’ নামের ছবিটি ওয়াটারগেট কেলেংকারি নিয়ে৷ ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকার দুই সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টাইনের খোঁজখবরের ফলে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ফাঁস হয় ও প্রেসিডেন্ট নিক্সন শেষমেষ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন৷ ছবিটি তৈরি করেন রবার্ট রেডফোর্ড৷
ছবি: Warner Bros./dapd
গুড নাইট অ্যান্ড গুড লাক
‘‘শুভরাত্রি, তোমার মঙ্গল হোক’’ শীর্ষক সাদা-কালো ছবিটিতে বেতার সাংবাদিকতার গোড়ার দিকের পরিবেশ ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ সেনেটর জোসেফ ম্যাককার্থি ১৯৫৩ সালে তাঁর ‘লাল আতঙ্ক’ অভিযানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও সেলিব্রিটি মহলে তথাকথিত কমিউনিস্টদের খুঁজে বার করার চেষ্টা করেন৷ সাংবাদিক এডওয়ার্ড আর. বারোস ম্যাককার্থি আমলের সেই সব কেলেঙ্কারি ফাঁস করে দিয়েছিলেন৷
ছবি: Kinowelt
পিপল ভার্সাস ল্যারি ফ্লিন্ট
যাজক জেরি ফলওয়েল প্রাপ্তবয়স্কদের ম্যাগাজিন ‘হাসলার’-এর বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিলেন, তাই নিয়ে তৈরি হয়েছে ১৯৯৬ সালের কথাচিত্র ‘সরকার বনাম ল্যারি ফ্লিন্ট’৷ পর্নোগ্রাফির প্রকাশক ল্যারি ফ্লিন্ট বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারের কোপে পড়েন৷
ছবি: dpa
ফর্বিডেন ভয়েসেস
জুরিখের চিত্র পরিচালক বার্বারা মিলার-এর ২০১২ সালে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘নিষিদ্ধ কণ্ঠ’ কিউবা, চীন ও ইরানের তিন ব্লগারের জীবন তুলে ধরেছে৷ ইওয়ানি সাঞ্চেজ, জেং জিনিয়াং ও ফর্নাজ সঈফি স্বদেশে স্বৈরাচারী শাসন সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবহিত করতে চান৷ তাদের কাজ এতটা কৌতূহল সৃষ্টি করে যে, তারা নিজের জীবন বিপন্ন করে এই সব কাহিনি দেশের বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Das Kollektiv
বার্মা ভিজে
বর্মা, অর্থাৎ মিয়ানমারে ২০০৭ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পথে নামেন৷ সেই নাটকীয় ঘটনাবলী নিয়ে ডেনিশ চিত্রনির্মাতা আন্ডার্স ওস্টারগার্ড-এর ছবি ‘বর্মার ভিডিও জকি’৷ ভিক্ষুদের প্রতিবাদ দেশের সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রূপান্তরিত হওয়ায় বিদেশি সাংবাদিকদের বর্মা থেকে বহিষ্কার করা হয় ও শুধু গোপনে ছবি তোলার পথই বাকি থাকে৷
ছবি: flickr/Steve Rhodes
দ্য স্পিগেল অ্যাফেয়ার
১৯৬২ সালে জার্মানির ‘ডেয়ার স্পিগেল’ সংবাদ পত্রিকায় পশ্চিম জার্মানির সামরিক বাহিনীর দৈন্যদশা নিয়ে একটি রচনা প্রকাশিত হয়৷ ফলে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্রানৎস ইওসেফ স্ট্রাউস ‘স্পিগেল’ পত্রিকা অফিসে পুলিশি তল্লাসির নির্দেশ দেন৷ কিছু স্পিগেল সম্পাদকদের গ্রেপ্তারও করা হয়৷ জনসাধারণ এই ঘটনাকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ বলে গণ্য করে৷ ‘স্পিগেল কেলেঙ্কারি’ টিভি ছবিটিতে সেই মুড ধরে রাখা হয়েছে৷