1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সাংবাদিকদের ভয় দেখাতে হিসাব তলব করা হয়েছে’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

বাংলাদেশে ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে সাংবাদিকদের ৬টি সংগঠন৷ তারা বিষয়টিকে বাকস্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের ওপরে চাপ হিসেবে দেখছেন৷ এই প্রতিক্রিয়ার কারণ কী?

প্রতীকী ছবিছবি: Picture-alliance/AA/Z. H. Chowdhury

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১১ সাংবাদিক নেতার যাবতীয় তথ্য চেয়েছে৷ তার মধ্যে রয়েছে হিসাব খোলার তথ্য, শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেনের বিবরণী, স্থিতি, প্রয়োজনীয কাগজপত্র সবকিছু৷ গত ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই তথ্য দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল৷ আর এই সংক্রান্ত খবরটি প্রকাশ হয় ১২ সেপ্টেম্বর৷

যাদের ব্যাপারে তথ্য চওয়া হয়েছে বলে ঢাকার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তারা হলেন: জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি (বিএনপি সমর্থিত) আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (আওয়ামী লীগ সমর্থিত) সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএনপি সমর্থিত) সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি (আওয়ামী লীগ সমর্থিত) মোল্লা জালাল, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালীন নোমানী এবং সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান৷ 

‘ব্যাংক হিসাব তলব করার আইনগত বিধান আছে’

This browser does not support the audio element.

এই নিয়ে সাংবাদিকদের ছয়টি সংগঠন বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলন করার পর রবিবার তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে৷ সেখানে সাংবাদিক নেতারা দাবি করেছেন, ‘‘সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর, তাদের কলমকে স্তব্ধ করার জন্য বেছে বেছে সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলবের এই চিঠি দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু ভয় দেখিয়ে সাংবাদিকদের কলম স্তব্ধ করা যাবে না৷''

অবিলম্বে ব্যাংক হিসাব তলবের চিঠি প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা৷ সাংবাদিক নেতারা বিষয়টিকে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি চাপ বলে দাবি করেন৷

ব্যাংক হিসাব তলবের সাথে সংবাদমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর চাপের কী সম্পর্ক জানতে চাইলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান বলেন, ‘‘আমরা ব্যাংক হিসাব তলবের বিরুদ্ধে নয়, প্রক্রিয়াটির বিরুদ্ধে৷ আমার ব্যাংক একাউন্টতো ব্যক্তিগত, সংগঠনের নামে নয়৷ কিন্তু যেভাবে সবগুলো সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদবি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সংগঠনের নাম এমনভাবে দেয়া হয়েছে যাতে ভীতি সঞ্চার হয় এবং সাংবাদিক সমাজ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারনা হয় যে সাংবাদিকরাও দুর্নীতিবাজ৷''

তিনি বলেন, ‘‘যে রাষ্ট্রীয় সংস্থা এটা করছে তারা শুধু ব্যাংকে ১০ লাখের বেশি টাকা থাকলে এবং মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের সন্দেহ থাকলে এমনটা করতে পারে৷ এর বাইরে নয়৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘তাদের এই প্রক্রিয়া নিয়ে যেহেতু বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে তাই আমাদের আরো দাবি তারা যেন যাদের প্রতিবেদন জনসম্মূখে প্রকাশ করে৷'' 

‘সংগঠনের নাম এমনভাবে দেয়া হয়েছে যাতে ভীতি সঞ্চার হয়’

This browser does not support the audio element.

সাংবাদিকদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ বা জমা দেয়ার বিরোধী নন এই নেতা৷ তবে তার কথা হচ্ছে, ‘‘এটা যেন সব পেশার সবার জন্য হয়৷ কাউকে বা কোনো পেশার লোজনকে টার্গেট করে না হয়৷''

মশিউর রহমান বলেন, ‘‘আমি মনে করি যারা সাংবাদিক নেতা এবং বিভিন্ন ফোরামে নির্বাচন করেন তাদের উচিত নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের পরে মেয়াদ শেষে সম্পদের হিসাব দেয়া৷ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এটা চালু করতে চাই৷ অন্যান্য সংগঠন করবে কী না সেটা তাদের ব্যাপার৷''

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান মনে করেন ব্যাংক হিসাব তলবের আদেশ প্রচার করে সাংবাদিক নেতাদের হেয় করা হয়েছে৷

বিষয়টি সংবাদমাধ্যমই প্রকাশ করেছে, তাহলে দায় কার? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এই গোপন নথি সংবাদমাধ্যম কীভাবে পেল? উদ্দেশ্যমূলকভাবেই এটা সংবাদমাধ্যমকে প্রচারের জন্য দেয়া হয়েছে৷ সাংবাদিকদের সমাজে ছোট করার জন্য, তাদের অধিকার ক্ষুন্ন করার জন্য এটা করা হয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সম্পদের হিসাব দিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই৷ কিন্তু এটা করা হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে৷ ঢাকার বাইরেও কিছু সাংবাদিকের হিসাব চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু দেশে দুর্নীতির মচ্ছব হচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে সে ব্যাপারে কিছু করা হচেছ না৷'' 

‘সাংবাদিকরা তাদের কথা বলছেন’

This browser does not support the audio element.

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদের কাছে অবশ্য সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া ‘একটু বেশিই' মনে হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান যদি মনে করে তাহলে ব্যাংক হিসাব তলব বা সম্পদের হিসাব চাইতে পারে৷ তবে আমরা অনেক বছর ধরেই দেখে আসছি সরকারের বিরুদ্ধে গেলে বা লেখালেখি করলে তাদের ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়৷ কিন্তু এখানেতো সরকার সমর্থক এবং সরকার বিরোধী দুই দিকের সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাবই তলব করা হয়েছে৷''

তার মতে, ‘‘সাংবাদিকরা তাদের কথা বলছেন৷ এটা তাদের অধিকার৷ তবে হিসাব চাইলে তা দিতে হবে৷ আর এর মাধ্যমে যদি সব পেশার সদস্যদের হিসাবের প্রক্রিয়ায় আনা হয় তাহলে ভালো৷ তাই বেশি প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বরং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই জরুরি৷''

দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান এই বিষয়ে বলেন, ‘‘সাংবাদিকরা মনে করছেন তাদের ভয় দেখানোর জন্য এটা করা হচ্ছে৷ সেটা করা হয়ে থাকলে তারা সেটা নিয়ে কথা বলতে পারেন৷ কিন্তু তাদের ব্যাংক হিসাব তলব করার আইনগত বিধান আছে৷ এর জবাব আইনের মাধ্যমেই দিতে হবে৷ নাগরিকদের সম্পদের হিসাবও তলব করার আইন আছে৷''

সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলবের বিষয়ে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এখন এটা নিয়ে কথা বলার সময় নয়৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ