1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিকরা কেন সব পক্ষের টার্গেট?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৭ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় অন্তত চারজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন দুই শতাধিক।

বিটিভি ভাঙচুর করে হামলাকারীরা
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় অন্তত চারজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।ছবি: DW

কয়েকজন নারী সাংবাদিক যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব অমিয় ঘটক পুলক নিহতের সংখ্যা চারজন বলে জানিয়েছেন। তার কথায়, ‘‘ইন্টারনেট সংযোগ না থাকাসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে ঘটনায় সময় সব তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এখন তথ্য আসছে।''

কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট(সিপিজে) নিহত মোট তিনজন সাংবাদিকের নাম জানিয়েছে। তারা হলেন ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদী। তিনি ১৮ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় নিহত হন। একই দিনে গাজীপুর শহরে নিহত হন দৈনিক ভোরের আওয়াজের সাংবাদিক শাকিল হোসাইন। পরদিন ১৯ জুলাই সিলেট নগরীতে নিহত হন দৈনিক নয়াদিগন্ত ও দৈনিক জালালাবাদের প্রতিবেদক আবু তাহের মো. তুরাব। এছাড়া ১৯ জুলাই ঢাকার সেন্ট্রাল রোড এলাকায় ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট তাহির জামান প্রিয় নিহত হয়েছেন বলে জানান অমিয় ঘটক পূলক। তার বাড়ি রংপুরে। পূলক তার নিজস্ব উদ্যোগে এই তথ্য সংগ্রহ করছেন।

'ইন্টারনেটসংযোগ সহ নানা প্রতিকূলতায় তথ্য পাওয়া যায়নি'

This browser does not support the audio element.

তিনি জানান," আমার হিসাবে এই আন্দোলন চলাকালে সারাদেশে তিন শতাধিক সাংবাদিক আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন চারজন। আমার কাছে এ পর্যন্ত ১৯৮ জন আহত সাংবাদিকের তালিকা আছে। তাদের অর্ধেকের সঙ্গে আমি টেলিফোনে কথা বলেছি। ইন্টারনেট না থাকায় তথ্য সংগ্রহে একটু সময় লাগছে। আমার কাছে আহত সাংবাদিকদের তালিকা এখনো আসছে।”

হামলার শিকার যেভাবে:

আহত সাংবাদিকদের মধ্যে একজন একাত্তর টিভির সিনিয়র রিপোর্টার নাদিয়া শারমিন। যাত্রাবাড়ি এলাকায় কমপ্লিট শাটডাউনের প্রথম দিন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি এবং তার সঙ্গে থাকা আলোকচিত্রী সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হন। এই সাংবাদিকের হাতে, পায়ে এবং গলায় গুলি লাগে। তিনি জানান, ‘'কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গিয়েছিলাম আমরা। এক পর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পেরে না ওঠায় এপিসি থেকে এলোপাথাড়ি গুলি করলে আমরা গুলিবিদ্ধ হই।”

আর একুশে টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টোর মাহমুদ হাসান ও তার সঙ্গে থাকা ক্যামেরা পার্সন ওয়াসিম হামলার শিকার হন কারফিউয়ের প্রথম দিন সকালে সাইনবোর্ড এলাকায়। তিনি বলেন, "আমরা অফিসের গাড়িতে করে ওই এলাকা থেকে সংবাদ সংগ্রহের জন্য যাওয়ার সময় ৫০-৬০ জন যুবক আমাদের গাড়ি আটকে ভাঙচুর, ক্যামেরা ভাঙচুর ও আমাদের মারধোর করে। আমার মেরুদণ্ডে গুরুতর আঘাত পেয়েছি। আর ক্যামেরা পার্সনকে বেদম পিটিয়েছে।”

'কোটাবিরোধীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গিয়েছিলাম'

This browser does not support the audio element.

তার কথায়," হামলাকারীরা রাস্তা অবরোধ করে বসেছিলেন। তাদের সবার হাতে লাঠি ছিলো।”

আর ২০ জুলাই বিকালে ওই একই এলাকায় এক নারী সাংবাদিক যৌন হেনস্থার শিকার হন। তিনি একটি অনলাইন পত্রিকায় কর্মরত। তিনি অভিযোগ করেন," প্রথমে আন্দোলনকারীরা আমার প্রেস আইডি কার্ড খুলে ফেলতে বলেন। খুলে ব্যাগে রাখার পরই পিছন থেকে আমরা ওপর হামলা করা হয়। তারা আমায় শারীরিক নির্যাতন করে। পরে হেলিকপ্টার থেকে ওই এলাকায় গুলি করা হলে আন্দোলনকারীরা সরে যায়।”

ওই সাংবাদিকের বক্তব্য ডয়চে ভেলে রেকর্ড করেছে। তিনি এখনো নারায়ণগঞ্জের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি কাতর কণ্ঠে বলেন," আমাকে টার্গেট করে হামলা এবং যৌন হেনস্থা করা হয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে এটা করেছে বলে আমার মনে হয়।” পুলিশ ওই ঘটনায় একজনকে আটক করেছে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব অমিয় ঘটক পূলক নিহতের সংখ্যা চারজন বলে জানিয়েছেন।ছবি: AFP

সাংবাদিকরা সবার টার্গেট:

এবার যে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে তারা আন্দোলনকারী, আন্দোলনবিরোধী এবং পুলিশ সব পক্ষেরই তোপের মুখে পড়েছেন। সবাই সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে।

একাত্তর টেলিভিশনের নদিয়া শারমিন ১৬ জুলাই বিকালেও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় হামলার শিকার হন। ওই হামলার সময় তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা যে দিকে ছিলেন সেখানেই ছিলেন। তার ওপর ওপর তখন রড দিয়ে হামলা করা হয়। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট থাকায় তিনি তখন রক্ষা পান। তিনি বলেন," আসলে সব পক্ষই চায় তাদের মতো খবর পরিবেশন করা হোক। ফলে কোনো পক্ষই সাংবাদিকদের ওপর সন্তুষ্ট ছিল না। কোনো পক্ষেরই তাদের মতের বিপরীত তথ্য শোনা বা গ্রহণ করার মতো ধৈর্য ছিল না।”

আর মাহমুদ হাসান বলেন," আসলে আমরা সবার দিক থেকেই প্রতিপক্ষের মতো আচরণ পেয়েছি। আর একটি গণমাধ্যমাধ্যমের একজন কর্মী লাইভ চলাকালেই পুলিশকে গুলি করতে বলেন ভালো শট পাওয়ার জন্য। এই ধরনের ঘটনাও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করে।”

আরো কয়েকজন সাংবাদিক জানান," এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে এক পর্যায়ে সুযোগসন্ধানীরা ঢুকে পড়ে। ফলে আন্দোলনকারী , আন্দোলন প্রতিরোধকারী  সবার হাতেই লাঠি ছিলো। অস্ত্র ছিলো। পুলিশের তো আছেই। ফলে কেউ এক্সপোজ হতে চায়নি। চায়নি তাদের ওই ধরনের ছবি বা খবর প্রকাশ হোক। তাই সব পক্ষই সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে  দমাতে চেয়েছে। আবার হামলা করে পরিস্থfতি খারাপও করতে চেয়েছে।”

‘বিজনেস বাংলাদেশের” সাংবাদিক মুহতাসিম নিশান বলেন," আমরা যদি কোটাবিরোধীদের কাছে অবস্থান করতাম তখন তারা আমাদের বলতো ছাত্রলীগের দিকে যান তাদের হাতে কী আছে তা দেখান। আবার ছাত্রলীগের দিকে গেলে তারা বলত কোটা বিরোধীদের দিকে যান। তারা কী করে তা দেখান।”

কোটাবিরোধী আন্দোলনের সহিংসতার মাঝে নারী সাংবাদিককে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এসেছেছবি: AFP

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ বলেন," সবাই না হলেও কিছু সাংবাদিক রাজনীতিবিদ হয়ে গেছেন। তারা সাংবাদিকতা করেন না। সাংবাদিক নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। তারা তা করেন না। তার প্রভাব পড়ছে সবার ওপর।  আবার কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম সাংবাদিকদের একপেশে সংবাদ পরিবেশনে বাধ্য করে। ফলে সাংবাদিকদের ওপর ক্ষোভ বাড়ছে। যার ফল আমরা এবার দেখেছি। সব পক্ষই সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে।” তিনি সব হামলার তদন্ত ও দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবী করেন। তিনি বলেন," এবার টার্গেট করে নারী সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও যৌন হয়রানির ঘটনার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এটা অশনিসংকেত।”

সাংবাদিকরা কেন নিরাপদ নয়:

ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদী ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় নিহত হন। তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।  তিনি কোনো নিরাপত্তা প্রস্তুতি ছাড়াই ওখানে গিয়েছিলেন। তিনি একজন মোবাইল জার্নালিস্ট। এ নিয়ে তার স্ত্রী কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ বলেন," তার কোনো নিরাপত্তা মানে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট ছিলোনা। তারপরও তাকে অফিস থেকে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় খুব কাছ থেকে সংঘর্ষের ছবি তুলতে বলা হয়েছিলো।” একই ধরনের তথ্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ।

'নারী সাংবাদিকের ওপর হামলা অশনি সংকেত'

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন," তার সহকর্মীরা আমাকে জানিয়েছেন তিনি কোনো প্রটেকশন বা নিরাপত্তা ছাড়াই ওই সংঘর্ষে মধ্যে খবর সংগ্রহ করছিলেন।”  তবে এ নিয়ে ঢাকা টাইমস-এর বার্তা সম্পাদক দিদার মালিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ বলেন,"টেলিভিশন চ্যানেল ও কিছু পত্রিকা ছাড়া অনেক সংবাদমাধ্যমই এই ধরনের সংঘাতের সময় খবর সংগ্রহে সাংবাদিকদের কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনা। তারা ঝুঁকি মুখেই সাংবাদিকদের খবর সংগ্রহ করতে পাঠায়। যে সময় মেহেদী নিহত হন তখন আরো কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। তাদের অনেকেরই নিরাপত্তামূলমক কোনো ব্যবস্থা ছিলোনা।”

আর সাংবাদিকদের জন্য করা ওয়েজ বোর্ডেও এই ব্যাপারে কিছু বলা নেই। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত বা নিহত হলে সংবাদমাধ্যমের কী দায়িত্ব তা বলা নাই। দীপ আজাদ বলেন," তবে নতুন গণমাধ্যম কর্মী আইন যেটা হচ্ছে সেখানে আমরা এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার যারা হবেন তাদের পরিবারকে বেতনের সমপরিমাণ টাকা পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত দেয়ার প্রস্তাব করেছি। আর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথাও বলেছি।”

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা কে দেয়?

বাংলাদেশের কোনো সংবাদমাধ্যম আলাদাভাবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয় বলে তথ্য পাওয়া যায়নি। এই ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানও নাই। আর এখানে নিরাপত্তা বলতে মনে করা হয় হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। তারও মান নির্নয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। আর নিরাপত্তার ধারণাও এখানে স্পষ্ট নয়।

সাংবাদিক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী " ডিজিটালি রাইট” নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান।  প্রতিষ্ঠানটি সাংবাদিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে।তিনি বলেন," পাঠকদের কাছে সংবাদমাধ্যমের আস্থা কমে গেছে। সাম্প্রতিক ঘটনায় এটা প্রমাণ হলো। কারণ সাংবাদিকরা সব পক্ষেরই হামলার শিকার হয়েছেন।”

'শুধু বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট সাংবাদিককে ঝুঁকিমুক্ত করবে তা নয়'

This browser does not support the audio element.

তার মতে সাংবাদিকরা দুই ধরনের ঝুঁকিতে আছেন। ১. সম্পাদকীয় নীতি এবং ২. পদ্ধতিগত ঝুঁকি।

তিনি বলেন, " সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান যদি তার ইচ্ছেমতো সংবাদ নিয়ন্ত্রণ করেন তাহলে সাংবাদিকরা ঝুঁকিতে পড়েন। আর ঝুঁকিপূর্ণ সংবাদ কীভাবে সংগ্রহ করতে হবে তার প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম না থাকলেও ঝুঁকিতে পড়েন।”

তার কথা," শুধু বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেটই সাংবাদিককে ঝুঁকিমুক্ত করবে তা নয়। এরজন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। কোন পস্থিতিতে কত দূর থেকে সংবাদ সংগ্রহ করবেন, কোন অবস্থায় কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন, রিস্ক অ্যাসেজমেন্ট-এরকম অনেক বিষয় আছে।  আমাদের নিউজরুমগুলো সাংবাদিকদের এভাবে প্রস্তুত করেনা।”

তিনি বলেন, "ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট করায় সাংবাকিদদের ঝুঁকি আরো বেড়ে গেছে। কারণ তারা ঠিক সময়ে খবর দিতে পারেননি। ফলে  পাঠকরা ভুল বুঝেছেন। ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আবার ইন্টারনেট থাকলে ফুটেজ বা তথ্য ক্লাউডে চলে যেতো । সাংবাদিককে যারা টার্গেট করেন তারা ডিভাইসে তা পেতো না। ফলে হামলার ঝুঁকি কমতো। ইন্টারনেট না থাকার কারণে সাংবাদিকরা বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ