জার্মানিতে দু'জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে৷ ‘গ্রিমে অনলাইন’ পুরস্কার জয়ী জার্মানির একটি জনপ্রিয় ব্লগ সাইটের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
গত ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিল মাসে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনের কারণে দেশদ্রোহীতার অভিযোগের মুখে পড়েছেন ‘নেৎসপোলিটিক ডট অর্গ' নামের একটি ব্লগ সাইটের দুই সাংবাদিক ও ব্লগার৷ সাংবাদিক দু'জনের নাম আন্দ্রে মাইস্টার এবং মার্কুস বেকেডাল৷ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইন্টারনেটে নজরদারি বাড়ানোর কাজে ব্যয় করার জন্য বাজেট বাড়াতে চাইছে জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা৷ এরপর এপ্রিলে ‘ফলোআপ' প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়৷ সেখানে জানানো হয়, সামাজিক যোগাযোগ বিষয়ক ওয়েবসাইটগুলোর ওপর নজরদারির জন্য গোয়েন্দা সংস্থা একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করছে৷
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক আন্দ্রে মাইস্টার এবং বিশ্বখ্যাত ব্লগার সম্মেলন ‘রি:পাবলিকা'-র প্রতিষ্ঠাতা মার্কুস বেকেডালকে জানানো হয় যে, ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিলের ওই দুটো প্রতিবেদনের কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার অভিযোগে তদন্ত শুরু হচ্ছে৷
প্রতিবেদনে পরিচয় গোপন রেখে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা এক ব্যাক্তির বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে বলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে৷
সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার অভিযোগ তদন্তের এই বিষয়টি জার্মানিতে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ বিষয়টিকে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ' হিসেবে দেখছে জার্মানির সাংবাদিক ইউনিয়ন৷ সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রধান মিশায়েল কনকেন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করে অবিলম্বে তদন্ত বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন৷
জার্মানিতে সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের কাজে হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার দৃষ্টান্ত খুব বিরল৷ সর্বশেষ আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৬২ সালে৷ সেবার জার্মানির অন্যতম সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ডেয়ার স্পিগেল' একটি প্রতিবেদনে দাবি করে, জার্মান সেনাবাহিনী পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি মোকাবিলায় অক্ষম৷ ‘ডেয়ার স্পিগেল'-এর বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছিল এবং দেশদ্রোহীতার দায়ে সাংবাদিকের কারাদণ্ডও হয়েছিল তখন৷
যেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই
অনেক রাষ্ট্রেই সাংবাদিক ও ব্লগাররা হামলার শিকার হচ্ছেন৷ রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্স ২০১৫ সালের ‘প্রেস ফ্রিডম ইনবক্স’-এ বিশ্বের ১৮০টি দেশকে তুলে ধরেছে৷ সেই ব়্যাংকিং-এ যে দেশগুলি সবচেয়ে পেছনে, এই ছবিঘরে থাকছে তাদেরই কথা৷
ছবি: Fotolia/picsfive
ইরিট্রিয়া
‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচিতে’ শেষ অবস্থানে রয়েছে ইরিট্রিয়া৷ পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটিতে স্বৈরতন্ত্রের কারণে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই বললেই চলে৷ অনেক সাংবাদিককে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে৷ রেডিও ইরেনা একমাত্র গণমাধ্যম, যা ইরিট্রিয়ার নিরপেক্ষ সংবাদ প্রদান করে৷ তবে এটি প্রচারিত হয় প্যারিস থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Juinen
স্বৈরশাসকের স্বৈরশাসন
উত্তর কোরিয়াতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই৷ পুরো বিশ্ব থেকে দেশটিকে বিচ্ছিন্ন তরে রেখেছেন সে’দেশের স্বৈরশাসক কিম জং উন৷ তিনি যা চান, সেটাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়৷ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেল ছাড়া তেমন কোনো গণমাধ্যম নেই৷ যে’সব ব্যক্তি তাঁদের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করেন, তাঁদের রাজনৈতিক বন্দি শিবিরে রাখা হয় এবং এক সময় গুম করে ফেলা হয়৷ কখনো কখনো তাঁদের পরিবারের ওপরেও নেমে আসে বিপর্জয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap/Kcna
তুর্কমেনিস্তান
প্রেসিডেন্ট গুরবাঙ্গুলি বেরডিমুহামেদভ প্রায় দেশের সবগুলো গণমাধ্যমের মালিক৷ সংবাদপত্র রিসগাল কেবল ভিন্ন৷ তবে এর প্রতিটি সংস্করণে রাষ্ট্রের অনুমোদন নিয়ে ছাড়পত্র মেলে৷ এছাড়া ইন্টারনেট এবং ওয়েবসাইটেও হস্তক্ষেপ করে সরকার৷
ছবি: Stringer/AFP/Getty Images
ভিয়েতনাম
ভিয়েতনামেও কোনো স্বাধীন গণমাধ্যম নেই৷ ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি বলে দেয় সাংবাদিকরা কী লিখবেন৷ বেশিরভাগ প্রকাশক, সম্পাদক এবং সাংবাদিক ক্ষমতাসীন দলের সদস্য৷ সম্প্রতি কয়েকজন ব্লগার কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমকে চ্যালেঞ্জ করলে তাঁদের জেলে পাঠানো হয়৷
ছবি: picture alliance/ZB/A. Burgi
চীন
রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্স বলছে, ব্লগার এবং সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বড় কারগারটি রয়েছে চীনে৷ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কেউ কোনো সংবাদ প্রকাশ করলে, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ এছাড়া বিদেশি সাংবাদিকদের উপর উত্তোরত্তোর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে চীনে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schiefelbein
সিরিয়া
রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্স দেশটিকে গত কয়েক বছর ধরে মুক্ত গণমাধ্যমের শত্রু হিসেবে উল্লেখ করেছে৷ বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পর থেকে সিরিয়ায় অনেক সাংবাদিককে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ হত্যা করা হয়েছে অনেকককে৷ অন্যদিকে আল-নুসরা ফ্রন্ট, যারা ইসলামিক স্টেট এবং আসাদের বিরুদ্ধে লড়ছে, তাদের হাতেও বিপন্ন হতে হচ্ছে সরকারি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের৷ এছাড়া সাংবাদিকদের অপহরণের ঘটনাও ঘটে চলেছে অহরহ৷