1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিক আর পর্যবেক্ষক ‘নিয়ন্ত্রণ'?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

এবারের নির্বাচনে সাংবাদিক আর পর্যবেক্ষকদের জন্য নানা ধরনের নিয়ম-নীতি আরোপ করা হয়েছে৷ সাংবাদিকরা তাই নির্বাচনের খবর সংগ্রহ নিয়ে নানা ধরনের আশঙ্কায় আছেন৷ বিদেশি পর্যবেক্ষক শেষ পর্যন্ত কতজন আসেন তা-ও বলা যাচ্ছে না৷

ছবি: DW/M. Mamun

সাংবাদিকদের ওপর সর্বশেষ বিধিনিষেধ, যা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, তা হলো নির্বাচনের দিন মোটর বাইক ব্যবহার করা যাবে না৷ এই নির্দেশনা সাধারণভাবে দেয়া হলেও সবচেয়ে কেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাংবাদিকরা৷ কারণ, ফটো সাংবাদিক এবং ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরা প্রধানত মোটর বাইকই ব্যবহার করেন সংবাদ সংগ্রহ এবং চলাচলের জন্য৷ এর বাইরে আগেই আরো কিছু নির্দেশনা জারি করা হয়৷ তার মধ্যে আছে ভোট কেন্দ্রে লাইভ না করা, একাধিক সাংবাদিক একসঙ্গে প্রবেশ না করা, প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করা প্রভৃতি৷

সাংবাদিকদের নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করার জন্য যে প্রেস কার্ড দেয়া হয়, তাতেই জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে৷ এরমধ্যে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে তার মধ্যে একটি হলো অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড থাকতে হবে৷ কিন্তু বাংলাদেশে যাঁরা সচিবালয় বিট কাভার করেন, তাঁদেরই কেবল কার্ড দেয়া হয়৷ কুমিল্লার সাংবাদিক মাসুদ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকায় সাংবাদিকদের একাংশের অ্যাক্রিডিটেশন কাড আছে৷ কিন্তু আমরা যারা জেলা পর্যায়ে সাংবাদিকতা করি, তাদের এই কার্ড নেই, থাকার প্রয়োজনও নেই৷ তারপরও আমাদের এই কার্ড চাচ্ছে রিটার্নিং অফিসার৷ আমরা আবেদন করেছি নির্বাচন কমিশনের প্রেস কার্ডের জন্য, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাবো কিনা জানি না৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘অনলাইন নিউজপোর্টালের সাংবাদিকরা আরো বেশি ঝামেলার মুখে পড়ছেন৷ পরিচয়পত্র এবং অফিসের অ্যাসাইনমেন্ট লেটারও তাঁরা গ্রহণ করতে চাচ্ছেন না৷''

মাসুদ আলম

This browser does not support the audio element.

সাংবাদিকদের এই ধরনের বিধিনিষেধের আওতায় ফেলায় ক্ষুব্দ সাংবাদিকরা৷ এরই মধ্যে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) নির্বাচন কমিশনে এইসব বিধিনিষেধ শিথিল করার জন্য লিখিত আবেদন জানিয়েছে৷ সংগঠনের সভাপতি সোমা ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা অতীতে অনেক নির্বাচন কাভার করেছি৷ এত বিধিনিষেধের আওতায় পড়ি আগে কখনো৷ আমরা সাংবাদিকরা কখনোই ভোটিং বুথে যাই না৷ কিন্তু পোলিং সেন্টার থেকে সব সময়ই লাইভ সম্প্রচার করেছি৷ কিন্তু এবার তা করা যাবে না৷ আবার ভোট গণনার সময়ই সাংবাদিকরা খবর সংগ্রহের জন্য থাকতে পারবেন না৷ এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি৷ আবার পোলিং সেন্টারে একসঙ্গে একাধিক সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবেন না৷ প্রবেশ করতে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি লাগবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘এখন সমস্যা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে কিভাবে প্রতিফলিত হবে৷ দেখা যাবে সাংবাদিকরা পোলিং সেন্টারে ঢুকতেই পারছেন না৷ আর একাধিক সাংবাদিক যদি একসঙ্গে পোলিং সেন্টারে ঢুকতে না পারে তাহলে তো সাংবাকিদের লাইন হবে৷ আর কখন সাংবাদিক ঢুকবেন তা কে নির্ধারণ করবেন?''

পোলিং সেন্টারে ঢুকে ছবি তোলা যাবে৷ খবরও সংগ্রহ করা যাবে৷ কিন্তু সেটা এইসব নিয়মের কারণে কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয়ে আছেন সাংবাদিকরা৷ সোমা ইসলাম বলেন, ‘‘মোটর বাইক যদি সাংবাদিকরা ব্যবহার করতে না পারেন তাহলে তাঁদের জন্য সংবাদ সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়বে৷ এটা তো স্টিকার দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ আর আইন-শৃঙ্খলা  বাহিনীসহ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত কমিশনের অনেকই তো মোটর বাইক ব্যবহার করবেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘এইসব বিষয় নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনে সমাধানের জন্য একটি আবেদন করেছি৷ কিন্তু ‘দেখছি' বলে কমিশন সময় পার করছে৷''

সোমা ইসলাম

This browser does not support the audio element.

এদিকে বিদেশি  ও দেশি পর্যবেক্ষ নিয়ে চলছে জটিলতা৷ এবারে পর্যবেক্ষকের সংখ্যা সবচেয়ে কম হতে পারে৷ ভিসা জটিলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (অ্যানফ্রেল)-এর ৩২ জন পর্যবেক্ষক বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসছেনা৷ অ্যানফ্রেল স্বচ্ছ নির্বাচনে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷ তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এরইমধ্যে ১৬ জনকে ভিসা দেয়া হয়েছে৷ আর যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে মর্মাহত হয়েছে বাংলাদেশ সরকা৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার  এরইমধ্যে এ বিষয়ে ব্যখ্যা দিয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকরা চাইলে অন অ্যারাইভাল ভিসায় আসতে পারেন৷ তাদের আসা উচিত৷ সমালোচনা করার চেয়ে আসার চেষ্টা করা ভালো৷''

তিনি বলেন, ‘‘সরকারেরও উচিত হবে পর্যবেক্ষরা যাতে সহজে আসতে পারেন তার ব্যাবস্থা করা, কারণ, এ বিষয় নিয়ে সমালোচনা আছে৷''

অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘সাংবাদিকরা যাতে স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা উচিত৷ নির্বাচন কমিশন হয়তো নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে অনেক বিধি-নিষেধ আরোপ করছে৷ কিন্তু তা যেন স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধা না হয়৷ মোটরবাইক স্টিকার দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷''

ইমতিয়াজ আহমেদ

This browser does not support the audio element.

এবারে দেশি-বিদেশি কোনো পর্যবেক্ষকই প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না৷ তাঁরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে কমিশনকে রিপোর্ট দেবেন৷ তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না বা কোনো সংবাদ মাধ্যমে মতামত দিতে পারবেন না৷''

ডিআরইউ'র উদ্বেগ:

নির্বাচনের খবর সংগ্রহে সাংবাদিকদের মোটর বাইক ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি (ডিআরইড)৷ সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি ইলিয়াস হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খান এক বিবৃতিতে বলেন, এতে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব বিঘ্নিত ও ব্যাহত হবে৷

নির্বাচন কমিশন এক নীতিমালায় বলেছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত এবং অনুমোদনসূচক স্টিকারযুক্ত যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন৷ তবে, মোটরসাইকেল ব্যবহারের জন্য কোনো স্টিকার ইস্যু করা হবে না৷

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত প্রথা ও রেওয়াজ বিরোধী৷ কারণ, অতীতের সব নির্বাচনে সাংবাদিকরা নির্বাচন কমিশনের সরবরাহ করা স্টিকার মোটর সাইকেলে লাগিয়ে তাঁদের নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করেছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ