নিখোঁজ ছিলেন ৫৩ দিন৷ খোঁজ পাওয়ার পর কারাগারে ছিলেন সাত মাস৷ ওই সময়ে যা যা ঘটেছিল ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল অবশেষে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজ ছিলেন ৫৩ দিন৷ এরপর কারাগারে ছিলেন দীর্ঘ সাত মাস৷ ডয়চে ভেলেতেও তার নিখোঁজ হওয়া, গ্রেপ্তার এবং কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয় তা নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছে বেশ কয়েকটি৷
সাংবাদিক কাজল জানিয়েছেন তাকে জোর করে ধরে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল৷ সেই সময়ের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘মনে হচ্ছিল যেন একটি কবরের ভেতরে আছি, খুব ছোট একটা জায়গা, ছিল না কোনো জানালা৷''
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১০ মার্চ নিখোঁজ হয়েছিলেন কাজল৷ ৫৩ দিন পর বেনাপোল সীমান্তের কাছে থেকে তাকে ‘আটকে'র তথ্য জানায় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি৷ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে৷ মামলা তিনটি দায়ের করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর এবং যুব মহিলা লীগের দুইজন নেতা৷
এরপর সাত মাস ধরে বারবার জামিনের আবেদন করা হলেও তা নাকচ করে দেয় নিম্ন আদালত৷ শেষ পর্যন্ত গত ২৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট থেকে তিনটি মামলায় জামিন পান তিনি৷
মুক্তিতে সামান্য স্বস্তি
ডেইলি স্টারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শফিকুল ইসলাম কাজল জানান, তার এখন হাঁটতে খুব কষ্ট হয়, রাতের বেলায় সারা শরীরে ব্যথা হয়৷ মানসিকভাবেও বেশ ভেঙে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷ তবে তিনি এটাও জানান, বাড়িতে রয়েছেন বলে এখন স্বস্তি পাচ্ছেন৷
ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, তিনি যা বলেছেন এর বাইরেও আরো অনেক কিছু বলার ছিল যা বলতে চান না৷
চোখবাঁধাঅবস্থায়৫৩দিন
শফিকুল ইসলাম কাজল ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘‘বেনাপোলে ছেড়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত ৫৩ দিন আমার চোখ বাঁধা ছিল, মুখ আটকানো ছিল আর হাতে ছিল হ্যান্ডকাফ৷ আমি কেবল দিন গুণতাম৷ এই অবস্থাটা বর্ণনা করার মতো না৷ আমি আমার পরিবারের কথা চিন্তা করে সময় কাটিয়েছি৷ খালি মনে হতো ওদের আর দেখতে পাবো কিনা৷ মনে হচ্ছিল মারা গেছি আর কোনোদিন ফিরতে পারবো না৷''
কিন্তু কারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, কেন বা কোথায় তাকে আটকে রেখেছিল, তা তিনি প্রকাশ করতে চাননি৷ জানাতে চাননি তার অপহরণকারীরা কী চেয়েছিল বা কিসের বিনিময়ে তাকে মুক্তি দিয়েছে৷
ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে?
শফিকুল ইসলাম কাজল ডেইলিস্টারকে বলেছেন, তিনি সম্ভবত ব্যক্তিগত শত্রুতার শিকার৷ তিনি বলেছেন, এরা সরকারের খুব ছোট একটা অংশ, পুরো প্রশাসন বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা সবাইকে দায়ী করা যাবে না৷ কাজল বলেন, ‘‘কেবল যে কয়েকজন ব্যক্তি এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের দায়ী করা যায়৷ যারা তদন্ত করছেন, তাদের কাছে আমার পরামর্শ এই ব্যক্তিরা কারা সেটা খুঁজে বের করুক৷’’
এপিবি/এসিবি (দ্য ডেইলি স্টার)
গত অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...
যেসব অভিযোগে ডিজিটাল আইনে মামলা
করোনা মহামারি শুরুর পর বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার সংখ্যা বেড়ে গেছে৷ কী অভিযোগে এসব মামলা হচ্ছে, জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: facebook.com/michelkumirthakur
মুশতাক আহমেদ
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে ২০২০ এর ৫ মে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র্যাব-৩৷ তাদের একজন মুশতাক আহমেদ৷ এজাহারে বলা হয়েছে, ‘‘তিনি ‘আই এম বাংলাদেশি’ পেজের এডিটর৷ তিনিও গুজব ছড়িয়েছেন৷ এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে৷’’ ২৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারে তার মৃত্যু হয়৷
ছবি: facebook.com/IamBangladeshi.71
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর
ব়্যাবের মামলার গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের একজন কিশোর৷ তার ফেসবুক পাতায় রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, করোনা, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে এজাহারে বলা হয়৷ এছাড়া তার ব্যবহৃত ফোনে তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম ও আসিফ মহিউদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও জানানো হয়৷ ৪ মার্চ তিনি জামিনে মুক্তি পান৷
ছবি: facebook.com/AKK30M
দিদারুল ভূঁইয়া
ব়্যাবের মামলায় গ্রেপ্তার আরেকজন দিদার ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য৷ ব্রিটিশ মানবাধিকার সংস্থা ‘আর্টিকেল ১৯’ বলছে, দিদার করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়তে বাংলাদেশ সরকার যে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে, তা মনিটর করার জন্য গঠিত একটি কমিটির সদস্য৷ নিজের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেস দিদার অভিযোগ করেন, সবচেয়ে গরিব মানুষেরাই সরকারি ত্রাণের সবচেয়ে কম অংশ পেয়েছেন৷ সম্প্রতি তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান৷
ছবি: Facebook/didarul.bhuiyan
তাসনিম খলিল
ব়্যাবের মামলার ১১ আসামির একজন সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল৷ তার সম্পর্কে এজাহারে বলা হয়েছে, তার ফেসবুক আইডিতে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনা ভাইরাস, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ও বাহিনী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার বা বিভ্রান্তি ছড়াতে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট পাওয়া গেছে৷
ছবি: Facebook/tasneem.khalil
শফিকুল ইসলাম কাজল
২০২০ সালের ৯ মার্চ ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় ফটো সাংবাদিক কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা করেন মাগুরা-১ আসনের সাংসদ সাইফুজ্জামান শেখর৷ যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক কারবারে ‘জড়িত’দের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে এই মামলা করেছিলেন তিনি৷ এছাড়া কাজলের বিরুদ্ধে হাজারীবাগ ও তেজগাঁও থানায়ও ডিজিটাল আইনে আরও দুটি মামলা হয়৷
ছবি: Facebook/Shafiqul Islam Kajol
বেরোবি শিক্ষক
ফেসবুকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমের মৃত্যু নিয়ে ‘অবমাননাকর’ পোস্ট দেয়ায় ডিজিটাল আইনের মামলায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষক সিরাজুম মনিরাকে ২০২০ সালের ১৩ জুন গ্রেফতার করা হয়৷ পোস্টটি দেয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি তা মুছে দিয়েছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
রাবি শিক্ষক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমানকে গতবছর ১৮ জুন গ্রেপ্তার করা হয়৷ পুলিশ কর্মকর্তা মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমকে নিয়ে ফেসবুকে ‘আজেবাজে কথা লিখে কটূক্তির অভিযোগে’ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ বার্তা সংস্থা ডিপিএ বলছে, ২ জুন প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছিলেন৷ যদিও নাসিমের নাম উল্লেখ করেননি৷ পোস্টটি তিনি পরে মুছেও দেন৷
ছবি: DW/A. Khanom
নবম শ্রেণির ছাত্র ইমন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে ময়মনসিংহের ভালুকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এক মামলায় নবম শ্রেণির ছাত্র মো. ইমনকে ২০২০ সালের ২০ জুন গ্রেপ্তার করা হয়৷ এরপর তাকে কিশোর শোধনাগারে পাঠানো হয়৷ ভালুকার ওসি জানিয়েছেন, ইমন পরে পোস্টটি মুছে ক্ষমা চেয়েছিল৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
সুশান্ত দাশ গুপ্ত
‘আমার হবিগঞ্জ’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক৷ এই পত্রিকায় স্থানীয় সাংসদ আবু জাহিরের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ২০ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহির৷ এর পরদিন সুশান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ১৪ জুন তিনি জামিন পান৷