বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজ-এর সম্পাদক নূরুল কবির তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতে পারছেন না৷ গত ৫ অক্টোবর থেকে তিনি ফেসবুকে আসতে পারছেন না বলে তার বন্ধু আজফার হোসেন জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবারও ফেসবুকে সার্চ করে নূরুল কবিরের ফেসবুক আইডি খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তার ফেসবুক আইডি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাোস্ট দিয়েছেন অনেকে, এজন্য সরকারকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ৷
গত ১৬ অক্টোবর রাত ১১টা ৩৩ মিনিটে আজফার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক এবং দৈনিক নিউ এইজ-এর সম্পাদক ও আমার দীর্ঘ সময়ের বন্ধু নূরুল কবীর (Nurul Kabir)-এর কাছ থেকে এই মাত্র জানলাম যে, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে৷ গত ৫ই অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত সে ফেসবুকে আসতে পারে নাই৷ সাংবাদিক হিসাবে নূরুল কবীরের সততা, কর্তব্যপরায়ণতা আর গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত৷ নূরুল কবীরকে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমি জোর দাবি জানাচ্ছি৷ এও জেনেছি, কমপক্ষে আরও ১০০ জন এই দাবি তুললে হয়ত সে ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা ফিরে পাবে৷ আপনাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাই স্ট্যাটাস দিয়ে অনুরূপ দাবি তোলার জন্য৷ আপনাদের প্রতি রইল ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা৷’’
গত ২৯ জুন এক অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, চলতি বছরের শেষ দিকে এসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হবে বাংলাদেশ৷
ওই দিন তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাষ্ট্রের এখন সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হচ্ছে রাষ্ট্র ইচ্ছে করলে যে কোনো ওয়েবসাইটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এটি বড় অর্জন৷ তবে সামাজিক মাধ্যমে যখন স্ট্যাটাস দেওয়া হয় বা ভিডিও প্রচার করা হয়, সেগুলোর ব্যাপারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না৷ আশা করছি শিগগিরই এ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে সক্ষমতা অর্জন হবে৷ আগামী সেপ্টেম্বরের পর এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা যাবে৷ তখন ইচ্ছেমতো ফেসবুক বা ইউটিউবে কিছু প্রচার করা যাবে না৷’’
সোশ্যাল মিডিয়া ভেরিফিকেশন
ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব কীভাবে ভেরিফাইড করবেন, এমন প্রশ্ন অনেকেরই৷ জনপ্রিয় কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ভেরিফিকেশনের তথ্য পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/A. Islam
ফেসবুক পেজ
পাবলিক ফিগার, ক্রীড়া, মিডিয়া, বিনোদন ও সরকারি পাতা ফেসবুক পেজ ভেরিফিকেশনের জন্য উপযুক্ত৷ পাতার সব তথ্য পূরণ করা আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন৷ এরপর ‘Request a Verified Badge’-এ গিয়ে নির্দিষ্ট ফর্মে পেজটি সিলেক্ট করুন৷ অফিসিয়াল আইডি আপলোড করুন৷ অফিসিয়াল পেজের লিঙ্ক দিন৷ এবার প্রেরণ করুন৷ ভাগ্য ভালো থাকলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আপনার পেজে ভেরিফাইড ব্লু মার্কটি দেখাবে৷
ছবি: DW/P. Böll
ফেসবুক প্রোফাইল
ফেসবুক পেজের মতো প্রোফাইলেও একই নিয়ম৷ তবে সেক্ষেত্রে প্রোফাইল ভেরিফিকেশনের ফর্ম পূরণ করতে হবে৷ বিজনেস পেজের ক্ষেত্রে নিয়ম একটু ভিন্ন৷ সেখানে ফর্ম পূরণ করে অথবা আপনার ও ব্যবসার সব তথ্য আছে এমন বিজনেস ডকুমেন্ট আপ করে ভেরিফাই করতে পারেন৷
ছবি: DW/A. Islam
টুইটার অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন
সংগীত, অভিনয়, ফ্যাশন, সরকার, রাজনীতি, ধর্ম, সাংবাদিকতা, মিডিয়া, ক্রীড়া, ব্যবসাসহ বিভিন্ন রকমের টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীরা ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করতে পারতেন৷ সেজন্য প্রোফাইল পাবলিক থাকতে হতো৷ এজন্য একটি ফোন নম্বর ও ই-মেল অ্যাড্রেসও লাগতো৷ তবে আপাতত এই সুবিধা বন্ধ রেখেছে টুইটার৷
ছবি: DW/P. Böll
ইউটিউব
ইউটিউবে আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার এক লাখ হলেই আপনি ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করতে পারবেন৷ তবে পরবর্তীতে আপনি যদি চ্যানেলের নাম পরিবর্তন করেন, তাহলে ভেরিফাইড ব্যাজ উঠে যাবে৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
গুগল প্লাস
ফেসবুকের মতো গুগল প্লাসেও আপনি সরাসরি আবেদন করতে পারেন৷ তবে সেক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটকে আগে ভেরিফাইড করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইনস্টাগ্রাম
ইনস্টাগ্রাম আগে শুধুমাত্র সেলিব্রেটি ব্যক্তি বা ব্র্যান্ডেরই ভেরিফিকেশনের সুযোগ দিতো৷ তবে এখন প্রোফাইল ‘পাবলিক’ রেখে যেকেউ অ্যাপের মাধ্যমে ভেরিফিকেশনের আবেদন করতে পারেন৷ তবে এজন্য প্রোফাইলের সব তথ্য যথাযথভাবে পূরণ রাখতে হবে৷
ছবি: DW
6 ছবি1 | 6
সাংবাদিক নূরুল কবিরের ফেসবুক আইডি কীভাবে উধাও হয়ে গেল সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনাো তথ্য জানা যায়নি৷ এ বিষয়ে নূরুল কবিরের সঙ্গে মোবাইলে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি৷
মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সদস্য এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন ডয়চে ভেলেক বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মী, সম্পাদক-সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্লগার এবং মানবাধিকার কর্মীদের তথা সাধারণ নাগরিকদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এক্সেসে ঝামেলা হচ্ছে৷
পাসওয়ার্ড না জানলেও অন্য ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে ফেসবুকের পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেয়া সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, আইডির নিরাপত্তা কম থাকার কারণে এটা হচ্ছে বলে মনে করছি না৷ কারণ কিছু আইডিতে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য অবৈধ-অনৈতিক হ্যাকাররা রিপোর্ট করেছেন, চেষ্টা করছেন৷ সরকার অনলাইন ও অফলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে অনেকাংশেই ব্যর্থ হচ্ছে৷ এজন্য অনেক নাগরিক মনে করতে পারেন ফেসবুক আইডি হ্যাকের পেছনে সরকারের প্রচ্ছন্ন ভূমিকা অবৈধ-অনৈতিক হ্যাকারদের প্রতি আছে৷
লেনিন বলেন, ‘‘ফেসবুকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছে৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফেসবুক সেই দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পালন করার ক্ষমতা এখনো তৈরি হয়নি বা নেই৷ বাংলাদেশ সরকার যে তার নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে ফেসবুকের আসলে নজর রাখা ও বোঝাপড়া গুরুত্বপূর্ণ এবং সে অনুযায়ী বাংলাদেশে যারা ভিন্নমতাবলম্বী ব্লগার বা মানবাধিকার কর্মী রয়েছেন তাদের ফেসবুকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গোপনীয়তা যেন কোনো রকমে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে তাদের সচেষ্ট থাকতে হবে৷ ফেসবুকে কারো মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকার হরণ হলে ফেসবুকের দায়িত্ব হবে সেটা ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা৷‘’
ফেসবুক আইডি নিরাপদ রাখতে স্টেপ ভেরিফিকেশন ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়ে লেনিন বলেন, বিপদে পড়লে বা নিয়ন্ত্রণ হারালে যথাযথ ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে৷
এসআই/কেএম (প্রথম আলো)
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ‘গণতান্ত্রিক’ ও স্বৈরাচারী’ সরকারের মধ্যে তফাত করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়৷ ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের তথ্য অনুসারে এই ছবিঘরে থাকছে স্বৈরাচারী সরকারের ১০টি লক্ষণ৷
ছবি: DW/S. Elkin
গণমাধ্যমকে ভয় দেখানো
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে গণমাধ্যম বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকে৷ সরকারের সমালোচনা ও ভুল ধরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক৷ ফলে সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাংবাদিকদের দূরে রাখতে স্বৈরাচারী শাসকরা পত্রিকা, টেলিভিশনকে ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করতে চান৷
ছবি: DW/S. Elkin
সরকারপন্থি গণমাধ্যম সৃষ্টি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে৷ ফলে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা সবক্ষেত্রে সম্ভব হয় না৷ পালটা ব্যবস্থা হিসেবে স্বৈরশাসকরা সরকারপন্থি গণমাধ্যম নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন৷ এর ফলে ব্যাপক হারে সরকারের নানা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো সহজ হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/J. Büttner
রাষ্ট্রীয় সংস্থার দলীয়করণ
রাষ্ট্রের সকল স্তরে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে স্বৈরাচারী শাসকরা পুলিশ, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সরকারি আমলাদের মধ্যেও দলীয়করণ প্রতিষ্ঠা করে থাকেন৷ এর ফলে রাষ্ট্রের ভেতর থেকে ক্ষোভ দেখা দিলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
বিরোধীদের ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি
রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীতাকারীদের ওপর নজরদারির কাজে লাগানো হয়৷ গোয়েন্দা মারফত পাওয়া তথ্য কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে নানাভাবে হেয় করা ও কোণঠাসা করতে অপব্যবহার করা হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Chromorange
বিশেষ সুবিধা ও দমনপীড়ণ
স্বৈরাচারী সরকার বা সরকারপ্রধানকে যেসব কর্পোরেট সংস্থা বা ব্যক্তি নানাভাবে সহায়তা করে থাকেন, তাদের বিশেষ রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেয়া হয়৷ বেআইনি উপায়ে কাজ পাইয়ে দেয়া থেকে শুরু করে নানাভাবে সহায়তা করা হয়৷ অন্যদিকে, যেসব সংস্থা সহায়তা করে না, তাদের ক্ষেত্রে চলে যে-কোনো উপায়ে দেউলিয়া বানানোর প্রক্রিয়া৷
ছবি: Imago/blickwinkel
বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ
আদালত স্বাধীন থাকলে স্বৈরাচারী শাসকদের নানা সময়ে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়৷ ফলে শুরু থেকেই স্বৈরাচারী শাসকরা সুপ্রিম কোর্টকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেন৷ অনুগত বিচারক নিয়োগ দেয়া, বিরোধীদের ছাঁটাই করা থেকে শুরু করে, নানাভাবে চেষ্টা চলে এ নিয়ন্ত্রণের৷
ছবি: Fotolia/Sebastian Duda
একপাক্ষিক আইন প্রয়োগ
স্বৈরাচারী শাসকদের শাসনামলে ‘আইন সবার জন্য সমান’ বাক্যটি থাকে শুধু কাগজে-কলমে৷ বাস্তবে প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য পাস করা হয় নতুন নতুন আইন৷ বিরোধীদের নানা উছিলায় গ্রেপ্তার নির্যাতন করা হলেও, নিজের সমর্থকদের রাখা হয় আইনের আওতার বাইরে৷
ছবি: Fotolia/axentevlad
‘জুজুর ভয়’ দেখানো
বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে ভয়াবহ অবস্থা হবে, দেশ রসাতলে যাবে, বিরোধীরা কত খারাপ, ক্রমাগত সে প্রচার চালানো হয়৷ এর ফলে এমন অবস্থা তৈরির চেষ্টা হয় যাতে জনগণের মনে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
দৃষ্টি সরাতে ভীতি সৃষ্টি
ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধরনের ভীতি তৈরি করে থাকেন স্বৈরাচারী শাসকরা৷ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, গণতন্ত্রহীনতা ও দুঃখ-দুর্দশা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে কোথাও জঙ্গি সংকট, কোথাও মাদকবিরোধী যুদ্ধ, কোথাও অন্য দেশের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়৷
ছবি: Fotolia/lassedesignen
নির্বাচনে কারচুপি
আগে জোর করে ক্ষমতায় থাকার উদাহরণ থাকলেও, এখন স্বৈরাচারী শাসকরাও নিয়মিত বিরতিতে নির্বাচন দিয়ে থাকেন৷ ‘গণতন্ত্র আছে’ জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলে এমন ধারণা দেয়ার জন্য তারা নির্বাচন দেন৷ কিন্তু সে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের আয়োজন আগে থেকেই করা থাকে৷