সাংবাদিক পান্নার গ্রেপ্তারের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
এই গ্রেপ্তারের ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠন (আইএফজে) ও বাংলাদেশে তাদের সহযোগী সংগঠন৷
এই গ্রেপ্তারের ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবিকরেছে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠন (আইএফজে) ও বাংলাদেশে তাদের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম৷ বেআইনিভাবে কাউকে আটক না করে দ্রুত বিচারের কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে তারা৷ছবি: Ariful Islam
বিজ্ঞাপন
গত ২৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি (ডিআরইউ)-তে মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান নিয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাসহ অনেকে মব সন্ত্রাসের শিকার হন৷ মব সন্ত্রাসের শিকার ১৬ জনকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ।
এই গ্রেপ্তারের ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবিকরেছে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠন (আইএফজে) ও বাংলাদেশে তাদের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম৷ বেআইনিভাবে কাউকে আটক না করে দ্রুত বিচারের কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে তারা৷
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ডিআরইউ থেকে মঞ্জুরুল আলম পান্নাসহ ১৬ জনকে আটকের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, ‘‘ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের সংবিধান' শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেয়ার সময় পান্না গ্রেপ্তার হন৷ জানা গেছে, অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১' নামের একটি সংগঠন৷''
সাংবাদিকতার সংকট ও করণীয় সম্পর্কে সাংবাদিকদের কথা
বাংলাদেশে সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন? আর্থিক নিরাপত্তাই বা কতটুকু? এসব সংকট থেকে উত্তরণের উপায়ই বা কী? এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন সাংবাদিকরা। ছবিঘরে তাদের কথা
ছবি: Shamima Nasrin Lucky
সংবাদপত্রের সংস্কার দরকার: শামসুল হক জাহিদ, সম্পাদক, দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস ও মিডিয়া সংস্কার কমিশনের সদস্য
এখানে যেটা হয়েছে বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ নিজেদের স্বার্থে সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেল করেছে। ফলে সংবাদমাধ্যমে যাদের আসার কথা না তারাও এসে গেছে। এতে বহু প্রতিষ্ঠান বের হওয়ার কয়েকদিন পরই সাংবাদিকদের বেতন দিতে পারছে না। এখন সংবাদপত্রের সংস্কার দরকার। এখানে যে কয়টা থাকা দরকার, তার চেয়ে অনেক বেশি আছে। ভালো পত্রিকাও এখন চালাতে কষ্ট হচ্ছে।
গত ১৫-২০ বছরে সাংবাদিকতাকে দুর্বৃত্তায়নে পরিণত করা হয়েছে। এতে মাঠ পর্যায়ের রিপোর্টাররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সাধারণ মানুষের কাছে শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। অপশাসনের সহযোগী হয়েছে। গণমাধ্যমের মালিক ও শীর্ষ কর্তারা নিজেদের স্বার্থে এটা ব্যবহার করেছে। ৬ বছর আগে ওয়েজবোর্ড দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অভিন্ন ওয়েজবোর্ড সরকারের বিবেচনায় আছে।
ছবি: Private
বিভুদার শেষ চিঠি সাংবাদিকদের আর্থিক দৈন্যদশার চিত্র:মাইনুল হাসান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি
বিভুরঞ্জন সরকার পুরো সাংবাদিক কমিউনিটির অর্থনৈতিক দৈন্যদশার চিত্র তুলে ধরেছেন। সংবাদমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হলেও অন্যান্যগুলোর মতো সাংবাদিকতার বা সাংবাদিকদের মর্যাদা বাড়েনি। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও প্রতিনিয়ত বেতন-ভাতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের পরে আশাবাদী ছিলাম উত্তরণ ঘটবে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
ছবি: Private
সাংবাদিক হয়রানি ও নির্যাতন রেকর্ড ভঙ্গ করেছে: খায়রুল আলম,
সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
গত ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ সাংবাদিক নির্যাতন ইতিহাসের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আওয়ামী লীগ আমলে আদর্শিক কারণে কোনো সাংবাদিকের চাকরি গেছে এমন নজির নেই। কিন্তু এখন প্রায় ৫ শতাধিক সাংবাদিক বেকার হয়েছেন৷ তাদের দুর্বিষহ দিন কাটছে। কারণ, অনেকেই ছিলেন বেতনের উপর নির্ভরশীল। একদিকে গ্রেপ্তারের ভয়, মামলা-হয়রানি, অন্যদিকে উপার্জন-ক্ষমতা হারিয়ে তাদের অজানা আতঙ্ক গ্রাস করেছে।
ছবি: Private
বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা: ইলিয়াস হোসেন,
সদস্য সচিব, বিজেসি ও হেড অব নিউজ আরটিভি
বাংলাদেশের সাংবাদিকরা সব সময় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। নিজের অফিসেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আবার গণমাধ্যম দেখার জন্য সরকারের যে প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোও ঠিকমতো ফাংশন করছে না। প্রেস কাউন্সিল নামে মাত্র। একজন চাকরিচ্যুত হলে পাওনা-দেনার বিষয়টিও ঠিকমতো হচ্ছে না। অধিকাংশ গণমাধ্যমে হাতে গোনা কয়েকজনের বেতন একটু ভালো, আর অধিকাংশই মোটের উপর কোনোভাবে খেয়ে-পরে চলার মতো।
আমাদের দেশে সাংবাদিকদের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কোনো শৃঙ্খলা নেই। মালিকরাই বেতন নির্ধারণ করেন। ওয়েজবোর্ড যেটা আছে, সেটাও কেউ মানে না। ফলে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনাচার হচ্ছে। শৃঙ্খলা না থাকায় সারা জীবন কাজ করার পর শেষ জীবনে সাংবাদিকরা পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে যাচ্ছে।
ছবি: Private
আর্থিক নিরাপত্তা নেই বলেই সাংবাদিকরা স্বাধীন হতে পারে না: আনিস আলমগীর,
সিনিয়র সাংবাদিক
বাংলাদেশের সাংবাদিকরা কখনোই স্বাধীন ছিল না। নিরপেক্ষতার আড়ালে তাদের মালিকপক্ষের মতামত বা ইচ্ছা ফলো করতে হয়। কেউ যদি সত্য সংবাদ লিখতে চায় ও সরকারের রোষানলে পড়ে, তাহলে তার চাকরিটাই যায়। আর্থিক নিরাপত্তা নেই বলেই সাংবাদিকরা স্বাধীন হতে পারে না। পারিবারিক আর্থিক নিশ্চয়তা না থাকলে বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে কারো সাংবাদিকতায় আসা উচিত না। কারণ, যে কোনো মুহূর্তে চাকরি যেতে পারে।
ছবি: Private
এখন হয়েছে মব সন্ত্রাসের ভয়: রাশেদ মেহেদী,
সম্পাদক, ভিউজ বাংলাদেশ
সাংবাদিকদের পেশাগত স্বীকৃতি আগে দরকার। সবাই বলে আগে ওয়েজবোর্ড দরকার। আসলে ওয়েজবোর্ডের চেয়ে অন্যান্য কর্পোরেট চাকরির মতো যোগ্যতা অনুযায়ী বেতনের ব্যবস্থা করা জরুরি। কোনো সরকারের আমলেই বুক ফুলিয়ে সাংবাদিকতা করা যায়নি। আগে গোয়েন্দা সংস্থা হুমকি দিতো, আর এখন হয়েছে মব ‘সন্ত্রাসের’ ভয়। সরকার মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে এবং কোথাও কোথাও উৎসাহ দিয়েছে।
ছবি: Private
সাংবাদিকরা মার খান সব গ্রুপের হাতে: শাহনাজ শারমীন,
বিশেষ প্রতিনিধি, একাত্তর টিভি
সাংবাদিকতার ইতিহাসে কখনোই এই পথ মসৃণ ছিল না। টিকে থাকতে বরাবরই যুদ্ধ করতে হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা কমেনি, বরং অনলাইন হয়রানি ও নজরদারি দিন দিন বাড়ছে । রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হাতে আবার পুলিশের হাতেও মার খাচ্ছেন বা মৃত্যুকেও বরণ করছেন সাংবাদিকরা। ৫ আগষ্টের পর সংবাদপত্র অফিসের সামনে গরু জবাই দেওয়া মিছিল স্লোগান, এমনকি সরাসরি হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
ছবি: Private
অনেকেই নিরাপত্তাহীনতা, মানসিক চাপ, বিচারহীনতা, মামলা-হামলায় হয়রানি ও আর্থিক সংকটে ভুগছেন: শেখ জামাল, সম্পাদক, দৈনিক মুখপাত্র
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তারা শারীরিক নিরাপত্তাহীনতা, মানসিক চাপ, বিচারহীনতা, মামলা-হামলায় হয়রানি, চাকরিচ্যুত ও আর্থিক সংকটে ভুগছেন। এছাড়াও গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে রাষ্ট্র। সংকট মোকাবিলায় আইনি ও পেশাগত সুরক্ষা জোরদার করা দরকার, এ জন্য সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে সততা ও সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
ছবি: Private
10 ছবি1 | 10
সেখানে আলোচনা অনুষ্ঠান পণ্ড করা ব্যক্তিদের ‘প্রতিবাদকারী' হিসেবে উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ২৮ আগস্টের সেই অনুষ্ঠানের আগে ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করতে হুমকি দেয়ার অভিযোগ'-এর কথাও উল্লেখ করা হয়৷ ওই ব্যক্তিরা ‘‘অনুষ্ঠানটিতে ব্যাঘাত ঘটানোর পর গ্রেপ্তারের'' বিষয়টি উল্লেখ করে আইএফজে আরো বলেছে, ‘‘গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পান্নার সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাবেক আওয়ামী লীগ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানও রয়েছেন৷''
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘‘ ২০২৫ সালের মে মাস থেকে আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার৷'' দীর্ঘ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রী পরিষদ (আওয়ামী লীগ) দলের এবং দলের নেতৃত্বের শত শত মানুষ হত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সকল কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখার পরামর্শ দিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়৷