‘স্বরূপ’ চেনালেন সাংসদ রনি
২২ জুলাই ২০১৩ সাংবাদিক ইউনিয়নের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন টেলিভিশন সাংবাদিকরা৷ শনিবার দুপুরে পটুয়াখালী-৩ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি ও তাঁর সহযোগিরা ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের রিপোর্টার ইমতিয়াজ মমিন এবং ক্যামেরাম্যান মহসীন মুকুলকে রনির পল্টন এলাকার অফিসে মারধর করেন৷ প্রহৃতরা আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন৷ তাঁদের দাবি, দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি সংবাদ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়ায় এ হামলা চালানো হয়৷ তবে সংসদ সদস্য রনি দাবি করেন, তিনি বা তাঁর লোকজন হামলা করেননি৷ টেলিভিশন চ্যানেলটির ক্যামেরা গত কয়েকদিন ধরে তাঁকে অনুসরণ করে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছিল বলেও দাবি করেন তিনি৷ ঘটনার পর ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের দায়ের করা মামলায় রনি রোববারই আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়ে নেন৷ ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের মালিক সালমান এফ রহমান ও আহত দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলাও করেন তিনি৷
তাঁর এই হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ঢাকার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো৷ চ্যানেলগুলোর বার্তা প্রধানরা এক যৌথ বিবৃতিতে সাংসদ রনিকে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন৷ রনি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শো-তে একজন নিয়মিত আলোচক৷ একাত্তর টেলিভিশনের বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার দলীয় একজন সংসদ সদস্যের এমন সন্ত্রাসী আচরণ স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি চরম হুমকি৷ তাঁর এই আচরণ সাংবাদিকদের আতঙ্কিত করে তুলেছে৷ সরকারের উচিত তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা কার্যকর করা৷ এ ঘটনার অবশ্যই নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন৷’’ ইশতিয়াক রেজা আরো বলেন, ‘‘সাংসদ রনি নিজে টেলিভিশন চ্যানেলের টক শো-তে গিয়ে জাতিকে জ্ঞান দেন৷ তিনি নিজেকে সাংবাদিকও দাবি করেন৷ কিন্তু নিজেকে যা-ই দাবি করুন না কেন শেষ পর্যন্ত তাঁর আসল চেহারা প্রকাশ পেয়েছে৷ তিনি নিজে সাংবাদিকদের লাথি মেরেছেন৷ সেই ভিডিও ফুটেজ টেলিভিশনে প্রচারিতও হয়েছে৷’’
এদিকে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ঘটনার পর সাংসদ রনির সঙ্গে বসে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়৷ তবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক দাবি করেন, উভয় পক্ষ সমঝোতায় রাজি হয়েছে৷ তাই সাংসদ রনি ক্যামেরা ফেরত, ক্ষতিপূরণ এবং আহত সাংবাদিকদের চিকিত্সার খরচ দিতে রাজি হয়ে ঘটনার জন্য ক্ষমাও চেয়েছিলেন৷ এমন ঘটনা মীমাংসাযোগ্য কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিকরাতো আর নতুন করে মারামারি করতে পারেন না৷’’
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা মনে করেন, সাংবাদিক ইউনিয়নের এখানে সমঝোতার চেষ্টা করার কিছু নেই, ‘‘এটা সমঝোতার কোনো বিষয় নয়৷ তাঁদের উচিত সাংবাদিকদের স্বার্থ দেখা এবং ঘটনার বিচার দাবি করা৷ আহত সাংবাদিকরাও বলেছেন তাঁরা কোনো সমঝোতা চাননা৷ বিচার চান৷’’
সাংবাদিক পেটানো রনির পুরোনো অভ্যাস
রনি পটুয়াখালীর গলাচিপা এলাকা্ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন৷ তিনি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালও চালান৷ এর বাইরে টেলিভিশনের টক শো-তে নিয়মিত বিতর্কিত কথা বলার কারণে বেশ আলোচিত তিনি৷ জানা গেছে, রনি সংসদ সদস্য হওয়ার পর নদী ভরাট করে একটি মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেন তাঁর এলাকায়৷ ২০০৯ সালে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় দৈনিক প্রথম আলোর গলাচিপা প্রতিনিধি ইশরাত জাহান লিপ্টন এবং দৈনিক আমার দেশ প্রতিনিধি সাইমুন রহমান এলিটকে নির্যাতন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগ রয়েছে রনির বিরুদ্ধে৷ ঘটনার পর পটুয়াখালী থেকে সাংবাদিকরা গলাচিপায় গেলে পরে বন্ধ হয়ে যাওয়া চ্যানেল ওয়ানের প্রতিনিধি খন্দকার দেলোয়ার জালালী, আরটিভি প্রতিনিধি মুফতি সালাহউদ্দিন এবং দিগন্ত টিভির প্রতিনিধি হানজালা শিহাবের ওপর হামলা চালায় সাংসদ রনির ক্যাডাররা৷ তাঁদের ক্যামেরা এবং মোটর সাইকেল কেড়ে নেয়া হয়৷ ঐ এলাকার সাংবাকিদের দাবি, সাংসদ রনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় চ্যাম্পিয়ন৷ কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে থানা কখনো মামলা নেয় না৷ গোলাম মাওলা রনি বরং মামলা করে গণমাধ্যমেরই মুখ বন্ধ করে দেন৷ প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, সমকালসহ বাংলাদেশের প্রথম সারির প্রায় সব দৈনিক পত্রিকার বিরুদ্ধেই বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করে রেখেছেন তিনি৷ কিছু মামলা এখনো চলছে৷