1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সাংবাদিক মুক্তির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কিছু করার নেই’

৯ ডিসেম্বর ২০২৫

কারাগারে হত্যা মামলায় আটক এক নারী সাংবাদিকসহ চার সাংবাদিককে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট, সিপিজে৷

ছবিতে শ্যামল দত্ত, ফারজানা রূপা ও মোজাম্মেল বাবু
সোমবার দেয়া চিঠিতে নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠনটি ‘জরুরি পদক্ষেপ’ নিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি এই আহ্বান জানায়৷ চিঠিতে উল্লেখ করা চার সাংবাদিক হলেন, ফারজানা রূপা, শাকিল আহমেদ, মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত৷ছবি: AFP - bdnews24.com

‘‘এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই৷ আমরা সবাই আইনের শাসনে বিশ্বাস করি এবং বাংলাদেশে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে,’’ বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম৷  

ওই চার সাংবাদিক গড়ে ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে একাধিক মামলায় কারাগারে আছেন৷ তারা হলেন সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপা, মোজাম্মেল বাবু এবং শ্যামল দত্ত৷ 

কারাগারে তাদের চিকিৎসা, খাবার ও থাকার বিষয়েও করুণ অবস্থার কথা বলেছে সিপিজে৷ এই বিষয়ে কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন দাবি করেছেন, ‘‘তারা ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের মতোই কারাগারে সর্বোচ্চ সুবিধা পাচ্ছেন৷’’

সিপিজে যা বলেছে

প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা চিঠিতে সিপিজে বলেছে, ‘‘ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ‘প্রতিহিংসামূলক’ এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের অভাব রয়েছে৷’’

চিঠিতে সংগঠনটি ওই সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷ তারা বলেছে, সাংবাদিকতা এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার জেরে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাবশত মামলাগুলো করা হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ নেই৷

চার সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধৃত করে সিপিজে বলেছে, ‘‘কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদেরকে ৩৬ বর্গফুটের সেলে রাখা হয়েছে৷ সেখানে দরজার বদলে লোহার শিক থাকায় তারা শীত ও মশার উপদ্রবের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন৷ কংক্রিটের মেঝেতে কোনো তোশক ছাড়াই তাদের ঘুমাতে হচ্ছে৷ পাশাপাশি পর্যাপ্ত খাবার ও চিকিৎসাসেবা থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন৷’’

প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়া চিঠিতে সিপিজে বলেছে, ‘‘২০২৪ সালের নভেম্বরে দ্য ডেইলি স্টারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস স্বীকার করেছিলেন যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি করে হত্যা মামলা দেয়া হচ্ছে এবং সরকার তা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে৷’’

‘‘কিন্তু গত বছরের ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেয়ার পর চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নতুন করে হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে এবং বারবার তাদের জামিন আবেদন নাকচ করা হয়েছে,’’ বলেছে সিপিজে৷

তারা লিখেছে, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ এবং ইন্টারন্যাশনাল কভেনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস-এ (আইসিসিপিআর) বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত রয়েছে৷ আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উদ্যাপনের অংশ হিসেবে কারাবন্দি সব সাংবাদিককে মুক্তি দিয়ে পরিবারের কাছে ফেরার এবং কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে৷

চলতি বছর মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে ১০০টির বেশি দেশের দেড় হাজারের বেশি সাংবাদিক সিপিজের এই আহ্বানের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন বলে চিঠিতে জানানো হয়৷

চিঠিতে ওই সাংবাদিকদের আইনজীবী জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে সম্প্রতি হত্যা মামলা দায়েরের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে৷ তবে জেড আই খান পান্না জানান, গত বছরে ওই মামলাটি করা হলেও পরে তার নাম মামলা থেকে প্রত্যাহার করা হয়৷

চিঠির শেষে বলা হয়েছে, ‘‘এই বিষয়ে আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ মানবিক শাসন, ন্যায়বিচার ও মুক্ত আলোচনার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকারকে তুলে ধরবে৷’’

সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীরা যা বলছেন

গত বছরের ২১ আগস্ট সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপাকে বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়৷ তাদের পরিবারের এক সদস্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসলে তাদের বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা করা হয়েছে তার ঠিক সংখ্যা আমরা এখনো জানি না৷ তবে শাকিলকে আটটি এবং রুপাকে ৯টি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে৷ আমরা নিম্ন আদালতে বার বার জামিনের চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু জামিন হয়নি৷ গত মার্চে হাইকোর্ট থেকে তাদের দুইটি মামলায় জামিন হলেও পরে তা আপিল আদালতে স্থগিত হয়ে যায় দুই দিনের মধ্যে৷’’

তাদের আইনজীবী সৈয়ম মামুন মাহবুব বলেন, ‘‘শাকিল ও রুপার বিরুদ্ধে সব মামলাই হত্যা মামলা৷ কিন্তু ওইসব হত্যার সাথে তাদের দূরতম সম্পর্কও নাই৷ হ্যাঁ, হতে পারে তারা গত সরকারের পক্ষে কাজ করেছেন, সরকারের প্রশংসা করেছেন৷ সাংবাদিকের যে দায়িত্ব ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা, তা তারা করেননি৷ তবে সেটার বিচারেতো নতুন আইন লাগবে৷ সেই আইনতো নেই৷ আর এখনোতো অনেকে দালালি করছেন৷’’

‘‘হাইকোর্ট থেকে তাদের দুটি মামলায় জামিন করানোর পর তা আবার স্থগিত হয়৷ আমরা এর বিরুদ্ধে রিট করেছি৷ শুনানির অপেক্ষায় আছে,’’ বলে জানান তিনি৷

ওইসব হত্যার সাথে তাদের দূরতম সম্পর্কও নাই: মামুন মাহবুব

This browser does not support the audio element.

গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর শ্যামল দত্ত এবং মোজাম্মেল বাবু গ্রেপ্তার হন ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থেকে৷

শ্যামল দত্তের স্ত্রী কনা দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তার বিরুদ্ধে কতটি মামলা আছে তা আমি জানি না৷ তবে হত্যা মামলা আছে৷ বারবার জামিন চাওয়ার পরও জামিন হচ্ছে না৷

শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুর আইনজীবী শ্যামল কান্তি সরকার জানান, ‘‘মোজাম্মেল বাবুর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা চলছে৷ আর শ্যামল দত্তের বিরুদ্ধে একটি৷ সবগুলোই হত্যা মামলা৷ তবে শ্যামল দত্তের বিরুদ্ধে আরো কিছু মামলার খবর পাচ্ছি৷ তবে ওইসব মালায়য় তাকে গ্রেপ্তার এখনো দেখানো হয়নি৷’’

‘‘আমরা নিম্ন আদালতে বারবার জামিনের চেষ্টা করেছি, কিন্তু হয়নি৷ উচ্চ আদালতে আবেদন করেছি এখনো শুনানি হয়নি,’’ বলে জানান তিনি৷ তার কথা, ‘‘যেসব মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ওই সব হত্যায় তারা জড়িত কী না সেটা এখনো তদন্তে প্রমাণ হয়নি৷’’

আইনজীবীরা বলেন, কোনো মামলারই তদন্ত এখনো শেষ হয়নি৷ আবার আদালত তাদের জামিনও দিচ্ছে না৷

অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, ‘‘ওই চার সাংবাদিকের মামলায় আমিও পরামর্শ দিচ্ছি৷ মামলার তদন্ত শেষ না করে তাদের কারাগারে আটক রাখা হচ্ছে৷ আসলে আদালতে কী হচ্ছে সেটা তো বুঝতে পারছি না৷ সাংবাদিকদের হত্যা মামলায় আটক রাখা হচ্ছে৷ যা এখনো প্রমাণ হয়নি৷’’

আটক সাংবাদিকদের পরিবার ও আইনজীবীরা জানান, মোজাম্মেল বাবু ক্যানসারে আক্রান্ত, শ্যামল দত্ত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ জটিল রোগে আক্রান্ত৷ শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপাও নানা রোগে আক্রান্ত৷
 
প্রেস সচিব ও কারা কর্তৃপক্ষ যা বলছে

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কারাগারে তাদের পর্যাপ্ত খাবার, চিকিৎসা এটা নিয়ে আপনি জেল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন৷ আর ওনাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে এবং আর সেই অভিযোগ এখনো তদন্ত পর্যায়ে আছে৷ এর বাইরে আমার আর কিছু বলার নেই৷ আর তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো করেছেন যারা জুলাই-আগস্টের ভিকটিম, তারা৷’’

সিপিজের আহ্বানে এই চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ আছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই৷ আমরা সবাই আইনের শাসনে বিশ্বাস করি এবং বাংলাদেশে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে৷ আপনারা দেখেছেন একসময় সুপ্রিম কোর্টকে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে যে বাধাগুলো ছিলো এই সরকারের সময়ে সেই বাধাগুলো দূর করা হয়েছে৷ এখন বিচার বিভাগ, সুপ্রিম কোর্ট তার নিজস্ব গতিতে চলছে৷’’

আইজি প্রিজন্স-এর অনুমতি নিয়ে দেখে যান: আব্দুল্লাহ আল মামুন

This browser does not support the audio element.

‘‘আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেগুলো হয়রানিমূলক মামলা, অনেকে বলছেন যে হয়রানিমূলক মামলা৷ সেজন্য আপনারা দেখেছেন যে, আমাদের আইনে (সিআরপিসি) কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে৷ সেইজন্য পুলিশ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখন খুব দ্রুত তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারছে৷ যদি কারোর নাম আসে যে তিনি ওই ঘটনায় জড়িত নন, তাহলে তার নাম সরানো হচ্ছে৷ আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি এবং সব আইনসিদ্ধভাবেই হচ্ছে,’’ বলে জানান প্রেস সচিব৷

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন কারাগারে ঐ সাংবাদিকদের চিকিৎসা, খাবার ও থাকা নিয়ে নানা অভিযোগের জবাবে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অভিযোগ তো অনেকে অনেকভাবেই করে৷ তাই আমি সাজেস্ট করব, আপনাদের মনে যদি কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে আইজি প্রিজন্স-এর অনুমতি নিয়ে একটি টিম এসে সরেজমিন দেখে যান৷ তারা ডিভিশন প্রাপ্তদের সব সুবিধা পাচ্ছেন শুধুমাত্র খাট ছাড়া৷ তাদের কোনো শারীরিক সমস্যা হলে আমাদের চিকিৎসকরা দেখছেন, বিশেষজ্ঞরা দেখছেন৷ প্রয়োজনে আমরা বাইরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাচ্ছি৷ দুইদিন আগেও শাকিল আহমেদকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আনা হয়েছে৷ মোজাম্মেল বাবু ক্যানসারের রোগী৷ উনি যখন চাচ্ছেন তখন তাকে ঢাকা পাঠিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷ শ্যামল দত্তকেও একইভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷’’

‘‘ডিভিশনপ্রাপ্তরা যা পান তাদের তাই দেয়া হচ্ছে৷ তাদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়া হচ্ছে৷ তারপরও কেন অভিযোগ করা হচ্ছে আমি জানি না৷ অভিযোগ যদি করা হয়ে থাকে আপনারা এসে যাচাই করে দেখতে পারেন,’’ বলেন তিনি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ