1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
মিডিয়াবাংলাদেশ

সাংবাদিক হত্যা: আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে চরম উদ্বেগ

শহীদুল ইসলাম ঢাকা
৮ আগস্ট ২০২৫

একদিনের ব্যবধানে গাজীপুরে একজন সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা এবং আরেকজনকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনায় দেশের আইন-শৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ আরো বাড়িয়েছে।

খুনের জায়গায় জমেছে ভিড়
একদিনের ব্যবধানে গাজীপুরে একজন সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা এবং আরেকজনকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনায় দেশের আইন-শৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ আরো বাড়িয়েছে।ছবি: Md. Rocky

একদিনের ব্যবধানে গাজীপুরে একজন সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা এবং আরেকজনকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনায় দেশের আইন-শৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ আরো বাড়িয়েছে।

এর আগে যেসব সাংবাদিক খুন হয়েছেন সেগুলোর বিচার না করায় যে কেউ সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানোর সাহস পাচ্ছে বলে মত দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনলে পরিস্থিতি  আরো খারাপের দিকে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বলে মানবাধিকার কর্মীরা।

অন্যদিকে দুর্বৃত্তের হামলায় আহত দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন সৌরভ পেশাগত দায়িত্ব পালনে ভয় পাচ্ছেন বলে তার মা জানিয়েছেন। দুর্বৃত্তের হাতে খুন হওয়া মো. আসাদুজ্জামান তুহিনের পত্রিকা দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ এর সম্পাদক জানিয়েছেন, খুন হওয়ার আগেও হুমকি পেয়েছিলেন তুহিন।

বুধবার বিকেলে গাজীপুরের সাহাপাড়া এলাকায় সৌরভকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। একদিন পর, বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কুপিয়ে খুন করা হয় তুহিনকে।  এসব ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা বা সাংবাদিক নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে৷ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত ১৯৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে হত্যার হুমকি পেয়েছেন ৮ জন। এই সময়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে মামলার আসামি হয়েছেন ৪৪ জন সাংবাদিক।

২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ছয় সাংবাদিক।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, জুলাই মাসে অন্তত এক ডজন সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগামী রোববার তারা এসব তথ্য হালনাগাদ করবেন।

আগেও হুমকি পেয়েছিলেন তুহিন

দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি তুহিন একমাস আগেও হুমকি পাওয়ার কথা তার পত্রিকার সম্পাদককে জানিয়েছিলেন। দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক মো. খায়রুল আলম রফিক শুক্রবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তুহিন এক মাস আগে আমাকে বলেছিলেন গাজীপুরের সদর থানায় এমএলএম প্রতারণার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে, ডিবি দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এখানে একটি সাংবাদিক চক্র ছিল, তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তুহিন জানিয়েছিলেন এই ঘটনা নিয়ে তিনি নিউজ করেছেন এবং ফেসবুকে লাইভ করেছেন, এরপর তাকে হুমকি দেওয়া হয়।’’

খায়রুল আলম বলেন, ‘‘তুহিনকে যেভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে, তাতে বোঝা যায় এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বিগত দিনে বাংলাদেশে কোনো সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় সাংবাদিক তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।’’

দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ-এর সম্পাদক আরো বলেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজে খুনিদের স্পষ্ট চেহারা দেখা গেল৷ তাদের সবাইকে কেন এখনো পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারছে না সেই প্রশ্ন রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলিতে আছে। আমি চাই, যারা হত্যাকারী, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।’’ 
 মো. খায়রুল আলম রফিক শুক্রবার দুপুরে তুহিনের লাশ নিয়ে গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন তুহিনের স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। এ সময় তুহিনের স্ত্রী ফরিদা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে, ওরা ওকে মেরে ফেলেছে...৷' এরপর কণ্ঠ থেমে যায় ফরিদার।

সাংবাদিক তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে, আমরা এর বিচার চাই: মো. খায়রুল আলম

This browser does not support the audio element.

'দায়িত্ব পালনে ভয় পাচ্ছে সৌরভ'

হামলা চালিয়ে সৌরভকে গুরুতর আহত করার ঘটনায় গাজীপুর সদর থানায় মামলা করেছেন তার মা আনোয়ারা সুলতানা। এজাহারে তিনি জানিয়েছেন, সাহাপাড়া এলাকার শিওর লাইফ হাসপাতালের সামনে অটোরিক্সা ও সিএনজি থেকে চাঁদা উত্তোলন সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহের জন্য ৬ আগস্ট বিকাল ৩টায় সৌরভ সেখানে যান। বিষয়টি জানতে পেরে রক্তিম, সৌরভ, ফরিদসহ অজ্ঞাত ১৫-২০ জন সেখান থেকে সৌরভকে অপহরণ করে সাহাপাড়া এলাকার মোতালেবের চায়ের দোকানের পেছনের তিন রাস্তা মোড়ের পাশে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে মারধর করে। সৌরভের পকেট থেকে দুটি মোবাইল ফোন এবং মাসিক বেতনের ২৬ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।

হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথায় আঘাতের কথা উল্লেখ করে এজাহারে আরো বলা হয়েছে, আসামিরা সৌরভের দুই পায়ের হাটুর নিচে ইট দিয়ে বাড়ি মেরে গুরুতর জখম করে। বিষয়টি দেখে লোকজন থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। 

এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন জানিয়ে এজাহারে সৌরভের মা আনোয়ারা লিখেছেন, ‘‘আসামীদের নামে মাদক, অস্ত্র, হত্যা মামলা আছে মর্মে স্থানীয়ভাবে আমি জানতে পেরেছি। বর্তমানে আমার ছেলে সৌরভ পেশাগত দায়িত্ব পালনে ভয় পাচ্ছে।’’

বাংলাদেশের গাজীপুরে ফের সাংবাদিক হত্যায় বিচারহীনতা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ ছবি: Md. Rocky/DW

'সরকার সবার আস্থা হারাচ্ছে'

মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির বলেন, ‘‘কোনো সন্ত্রাসী, খুনি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে মানুষের সামনে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে যদি হত্যা করতে পারে, তাতে বোঝা যায়, কোনো আইন-শৃঙ্খলা নেই। তারা দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সেই অবস্থাটা নেই।’’ 

খুশি কবির বলেন, ‘‘দেশে কী ঘটছে - সেই তথ্য সাধারণ মানুষ তো সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমেই পাবে। কোনো সাংবাদিক যদি কোনো অন্যায় করেন, সে জন্য তো আইন আছে, কোর্ট আছে, আলাদা ব্যবস্থা আছে। এখন যাদের নামে মামলা আছে, সেগুলো কিন্তু গ্রহণযোগ্য মামলা না। এই জিনিসগুলো নিয়ে কিন্তু মানুষ এখন প্রশ্ন করছে। আমি মনে করি, এটা দেশের জন্য ভালো না। এটাকে দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে, নইলে পরবর্তীতে এটি আরো খারাপের দিকে যাবে।’’ 
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যেভাবে মামলা হচ্ছে সেসব খবর দেশের অনেক গণমাধ্যমে না এলেও বিদেশে উঠে আসছে। সংবাদকর্মীরা কেন নিরাপদ না - সেই প্রশ্ন উঠছে। এটি একটি দেশের জন্য কাম্য না। 

‘‘সরকার পতনের পর যখন নতুন সরকার এলো তাদের তো প্রধান কাজ হওয়ার কথা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। গণঅভ্যুত্থানের পরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাটা প্রধান কাজ। এক্ষেত্রে সরকার কি কারণে ব্যর্থ হচ্ছে বা শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না তা আমার কাছে বোধগম্য না। সরকার সবার আস্থা হারাচ্ছে, মানুষের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। বিদেশে দুর্নাম হচ্ছে সরকার এসব ব্যাপারে উদাসীন। এবং এই উদাসীনতা মানেই প্রশ্রয় দেওয়া।’’

আমি মনে করি, এটা দেশের জন্য ভালো না: খুশি কবির

This browser does not support the audio element.

গাজীপুরে এক সাংবাদিককে হত্যা এবং আরেকজনকে পিটিয়ে জখম করার প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুক্রবার প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিকেরা। 

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-র সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারে যে-ই থাকুক না কেন কখনোই সাংবাদিকেরা নিরাপদ না, সেটি বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। সাগর-রুনি থেকে শুরু করে কোনো সাংবাদিক হত্যার বিচারই আজ পর্যন্ত আমরা পাইনি। আমরা চাই সাংবাদিক হত্যার বিচার এবং সাংবাদিকদের নির্যাতন, নিপীড়নের ঘটনাগুলোর বিচারে সরকার আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করুক। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সাংবাদিকদের জন্য সরকারের যে দায়, সরকার সেটা কখনোই পূরণ করেনি।’’


 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ