চারমাস পর আবার সংসদভবনে ঢুকলেন রাহুল গান্ধী। অনাস্থা প্রস্তাবে কংগ্রেসের প্রধান বক্তা হবেন তিনিই।
বিজ্ঞাপন
মোদী পদবী নিয়ে রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের জেরে তাকে দুই বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি দিয়েছিল গুজরাটের আদালত। হাইকোর্টও সেই শাস্তি বহাল রেখেছিল। হাইকোর্টের রায়ের পরই সাংসদপদ হারান রাহুল। তাকে সরকারি বাড়ি ছেড়ে দিতে হয়।
সুপ্রিম কোর্ট সেই রায় স্থগিত করেছে। তার ৪৮ ঘণ্টা পরেই আবার লোকসভার সাংসদপদ ফিরে পেলেন তিনি।
সোমবার সকালেই লোকসভার সচিবালয়ের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, রাহুল গান্ধী আবার তার সাংসদপদ ফিরে পাচ্ছেন। আদালত পরবর্তী কোনো নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তিনি সাংসদ থাকবেন।
রাহুল কী করলেন?
রাহুল বেলা বারোটার আগে সংসদভবনে ঢোকেন। তিনি সোজা চলে যান গান্ধীমূর্তির সামনে। সেখানে প্রণাম করে রাহুল ঢোকেন সংসদভবনে। মা সোনিয়া আগে থেকেই সেখানে ছিলেন। সংসদভবনের বাইরে অধীর রঞ্জন চৌধুরী-সহ কংগ্রেসের নেতা ও সাংসদরা রাহুলকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
হাসতে হাসতে রাহুল সংসদভবনে ঢোকেন। তারপর সোনিয়া ছেলেকে নিয়ে ঢোকেন সেন্ট্রাল হলে। তার আগে কংগ্রেস সবাইকে মিষ্টিমুখ করায়। ইন্ডিয়া জোটের নেতাদেরও মিষ্টি খাওয়ানো হয়।
১০ জনপথে সোনিয়া গান্ধীর বাড়ির সামনে শুরু হয় উৎসব। ব্যান্ড ও ঢোল বাজিয়ে নাচতে শুরু করেন প্রচুর কংগ্রেস কর্মী ও সমর্থক।
কংগ্রেসের কৌশল
কংগ্রেস ঠিক করেছে, মঙ্গলবার থেকে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হবে, সেখানে রাহুলই হবেন কংগ্রেসের প্রধান বক্তা। তিনিই সরাসরি আক্রমণ করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদীকে।
কংগ্রেস সাংসদ মাণিকরাম ঠাকুর বলেছেন, রাহুল মণিপুর গেছিলেন। তিনিই সেখানকার পরিস্থিতির কথা জানাবেন এবং বিরোধী জোটের হয়ে বলবেন।
এমপি পদ হারিয়েছিলেন ইন্দিরাও
ভারতের সংসদ থেকে এর আগেও বহু রাজনীতিক এমপি পদ হারিয়েছেন। ইন্দিরা থেকে লালু, শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে হেভিওয়েট নেতানেত্রীদের।
ছবি: Hindustan Times/imago images
ইন্দিরা গান্ধী
ভারতের দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। জওহরলাল নেহরুর মেয়ে। নির্বাচনে কারচুপির অপরাধে ১৯৭৫ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট ইন্দিরাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। বিচারপতি সিনহার নির্দেশে খারিজ হয়েছিল ইন্দিরার এমপি পদ। যদিও তার প্রধানমন্ত্রী পদ খারিজ করা হয়নি। ইন্দিরা অবশ্য এর কিছুদিনের মধ্যেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। নভেম্বর মাসে সুপ্রিমকোর্ট প্রধানমন্ত্রীর শাস্তিও বাতিল করে দেয়।
ছবি: picture-alliance/dpa
লালুপ্রসাদ যাদব
বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব ৬৫ বছর বয়সে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় অভিযুক্ত হন। সে সময় তিনি ছিলেন লোকসভার এমপি। আদালতের নির্দেশে লালুর পাঁচ বছরের জেল এবং ২৫ লাখ টাকা জরিমানা হয়। সঙ্গে ১১ বছরের জন্য সংসদ থেকে নির্বাসিত হন তিনি। অর্থাৎ, এমপি পদ হারানোর পাশাপাশি আদালত জানায়, জেল থেকে বার হয়েও ছয় বছরের জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না লালু।
ছবি: Hindustan Times/IMAGO Images
জে জয়ললিতা
১৪ বছর তামিনাডুর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জে জয়ললিতা। যদিও তার উত্থান অভিনেত্রী হিসেবে। এআইএডিএমকে-র এই প্রতাপশালী রাজনীতিক ২০১৪ সালে হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি মামলায় অভিযুক্ত হন। চার বছর জেলের পাশাপাশি রাজ্য বিধানসভার এমএলএ পদ হারান জয়ললিতা। বস্তুত, এর পর আর রাজনীতিতে ফিরতে পারেননি তামিলনাডুর আম্মা। ২০১৬ সালে তার মৃত্যু হয়।
ছবি: AP
আজম খান
উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা আজম খান। উত্তর ভারতের রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী এই রাজনীতিবিদ ২০২২ সালে রাজ্যের বিধানসভা থেকে এমএলএ পদ হারান। হেট স্পিচ বা বিভেদমূলক প্রচারের অভিযোগে ২০২২ সালে তিনি অভিযুক্ত হন এবং আদালত তাকে তিন বছরের কারাবাসের শাস্তি দেয়। এখনো শাস্তি ভোগ করছেন আজম খান।
ছবি: IANS
আবদুল্লাহ আজম খান
আজম খানের পুত্র আবদুল্লাহ আজম খান। সমাজবাদী পার্টির এই নেতাও উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা থেকে তার এমএলএ পদ হারান। ২০২৩ সালে ১৫ বছরের পুরনো একটি মামলায় শাস্তি হয় তার। দুই বছর হাজতবাসের শাস্তি ভোগ করছেন তিনি।
ছবি: IANS
রাহুল গান্ধী
চলতি সময়ে ভারতে সবচেয়ে আলোচিত নাম রাহুল গান্ধী। গুজরাতের একটি আদালত তাকে দুই বছর হাজতবাসের নির্দেশ দিয়েছে। অপরাধ, মোদী পদবির অপমান করেছেন তিনি। শাস্তি ঘোষণার পরেই ভারতের সংসদ থেকে রাহুলের এমপি পদ বাতিল হয়েছে। তবে এখনো তাকে জেলে যেতে হয়নি। আদালত তাকে আপিল করার জন্য ৩০ দিনের জামিন মঞ্জুর করেছে।
ছবি: Altaf Qadri/AP/picture alliance
বিতর্ক এবং ফলাফল
হেভিওয়েট মন্ত্রী এবং এমপি-এমএলএ-দের সঙ্গে যখনই এমন ঘটনা ঘটেছে, রাজনৈতিক বিতর্ক হয়েছে। রাহুলের শাস্তি এবং তার এমপি পদ চলে যাওয়া নিয়েও সেই বিতর্ক চলছে। উচ্চ আদালত রাহুলের শাস্তি খারিজ করে দিলে অবশ্য ফের এমপি পদ ফিরে পাওয়ার সুযোগ আছে রাহুলের। যেমন পেয়েছিলেন তার ঠাকুমা, ইন্দিরা।
ছবি: Altaf Qadri/AP/picture alliance
আছে আরো নাম
এই নেতা-মন্ত্রীদের পাশাপাশি কম পরিচিত আরো অনেক নাম আছে, বিভিন্ন সময়ে যারা এমপি এবং এমএলএ পদ হারিয়েছেন। লাক্ষাদ্বীপের এমপি মহম্মদ ফয়জল, বিহারের এমএলএ অনন্ত সিংহ, হরিয়ানার এমএলএ প্রদীপ চৌধুরী, কংগ্রেস এমপি রশীদ মাসুদ আইনসভা থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। মুজফফরনগর দাঙ্গার জন্য শাস্তি পেয়েছেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি এমএলএ বিক্রম সিং সাইনি। ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত এমএলএ কুলদীপ সিং সেনগর এমএলএ পদ হারিয়েছেন।
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo
8 ছবি1 | 8
কংগ্রেসের বক্তব্য, ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালোবাসার জয় হলো। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেছেন, এটা গণতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থার জয়।