সাংবাদিক পেটানোর মামলায় জামিন বাতিলের দুই ঘণ্টার মাথায় বুধবার সাংসদ গোলাম মাওলা রনিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ এর আগে জামিন বাতিলের পর ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেন তিনি, যেটাতে লাইক ও মন্তব্যের সংখ্যা বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
সাংসদ রনি লিখেছেন, ‘‘আমার জামিন বাতিল হয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে৷ আমার একটি বিশ্বাস ছিল যেসব রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি এবং ব্যক্তি বিশেষের অন্যায় ও অবিচার সম্পর্কে আমি সরব ছিলাম, তার সাথে সরকারের কোনো সংযোগ নেই৷ নির্বোধের মতো এই বিশ্বাসের পিঠে সওয়ার হয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম৷ কিন্তু আজ সেই বিশ্বাসে চিড় ধরেছে৷ যেভাবে জামিনটি বাতিল হলো তা স্বাধীন বাংলাদেশে তো নয়ই, পাকিস্তান আমলেও ঘটেনি....আমার শাস্তির বিনিময়ে হলেও শেয়ারবাজার চাঙা হোক, সাগর-রুনির হত্যাকারী ধরা পড়ুক এবং প্রিয় দলটি আবার ক্ষমতায় আসুক, দেশবাসী শান্তিতে থাকুক৷''
কেন খুন হয়েছেন সাগর, রুনি?
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে৷ কিন্তু আজও নিহতের পরিবার, শুভানুধ্যায়ী আর সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারলো না, কেন এই হত্যাকাণ্ড? এই বিষয়ে ছবিঘর দেখুন এখানে:
ছবি: DW
সেই কালোরাত
২০১২ সালের এগারোই ফেব্রুয়ারি৷ সেদিন খুব ভোরবেলা জানা গিয়েছিল, ঢাকায় নিজের ভাড়া বাসায় খুন হয়েছেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি৷ একই ফ্ল্যাটে থাকলেও প্রাণে বেঁচে যান তাদের একমাত্র শিশুপুত্র মেঘ৷
ছবি: dapd
সাগর সরওয়ার
দেশি-বিদেশি একাধিক গণমাধ্যমে কাজ করার পর ২০১১ সালে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন সাগর সরওয়ার (ডানে)৷ সর্বশেষ সেই টেলিভিশন চ্যানেলেই কাজ করেছেন তিনি৷ ২০১২ সালের দশই ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কাজ থেকে বাসায় ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খুন হন সাগর৷
ছবি: DW
মেহেরুন রুনি
একাধিক দৈনিকে কাজ করার পর কয়েক বছর আগে টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলায় কাজ শুরু করেন মেহেরুন রুনি (বামে)৷ মাঝে স্বামীর সঙ্গে বছর দেড়েক জার্মানিতে কাটিয়েছেন তিনি৷ এরপর ২০১১ সালে আবারো ফিরে যান নিজের কর্মস্থলে৷
ছবি: DW
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার!
১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন৷ বলাবাহুল্য, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি৷
ছবি: DW
সাংবাদিকদের আন্দোলন
বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের মধ্যে মতের অমিল থাকলেও সাগর-রুনি ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের ঘোষণা প্রদান করে সব সংগঠন৷ খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গত এক বছরে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ
সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে গর্জে ওঠে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাঙালিরা৷ জার্মানিসহ কয়েকটি দেশে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়৷ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনও খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিবৃতি প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW
ব্লগারদের প্রতিরোধ
সাংবাদিক সংগঠনগুলোর আন্দোলনের পাশাপাশি ব্লগাররা এই দম্পতি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজপথে নামে৷ গত বছর এই ইস্যুতে ব্লগ ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগ৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে এখনো রয়েছে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্যানার৷
ছবি: DW
রিপোটার্স উইদাআউট বর্ডার্স
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে রাজপথে ব্লগারদের সক্রিয় আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকাসহ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ইত্যাদি ইস্যুতে ব্লগ লিখে ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার রিপোটার্স উইদাআউট বর্ডার্স অ্যাওয়ার্ড জয় করে আবু সুফিয়ানের বাংলা ব্লগ৷ ছবিতে আন্দোলনরত আবু সুফিয়ান৷
ছবি: DW
নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাটকীয় ঘোষণা
গত অক্টোবর মাসে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে ‘জড়িত’ আটজনকে চিহ্নিত করে সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান৷ বাকি একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় গত সপ্তাহে৷ ব়্যাব গ্রেপ্তারকৃতদের বলছে ‘সন্দেহভাজন’৷ আর পরিবার মনে করছে, এদেরকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে কার্যত ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানো হচ্ছে৷
আন্তর্জাতিক তদন্ত চান পরিবার
সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের এক বছর হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই৷ ধরা পড়েনি মূল অপরাধীরা৷ তাই তাদের পরিবার এখন আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করেছেন৷ রুনির ভাই নওশের রোমান জানিয়েছেন, তারা (ব়্যাব) তদন্তের চেয়ে হয়রানি করতে বেশি উৎসাহী৷ সাগর রুনির একমাত্র সন্তান মেঘের নিরাপত্তাও প্রত্যাহার করা হয়েছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
জজ মিয়া নাটক চান না সাগরের মা
সাগরের মা সালেহা মনির এখনও কাঁদেন৷ তাঁর দাবি হচ্ছে, প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে হবে৷ এক বছর পর দারোয়ান এনামুলকে গ্রেফতার তাঁর কাছে জজ মিয়া নাটক ছাড়া কিছুই নয়৷ তাঁর মতে, এক বছরে নানা টালবাহানা করে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
11 ছবি1 | 11
কেউ তাঁর মুক্তি চেয়েছেন, কেউ বলছেন তাঁর মুক্তির জন্য দোয়া করবেন, কেউ বলছেন এটা প্রত্যাশিত ছিল৷ রাশেদ লিখেছেন, ‘‘আবারো প্রমাণিত হলো যে রাজনীতিতে বড় মাছ কিভাবে ছোট মাছকে শিকার করে ফায়দা লুটে৷ সরকার এই বলে বাহবা নেবে যে, তাদের আমলে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার হয়, নিজ দলের এমপি-কে গ্রেপ্তার করে তারা তা প্রমাণ করতে পেরেছে৷''
মো: সাকিবুল ইসলাম লিখেছেন, ‘‘টিভি অনুষ্ঠান ‘তালাশ' এতকিছু তালাশ করতে পারে, একটু শেয়ার মার্কেটের টাকাটা কই গেল – এইটা তালাশ করলো না কেনো?
মাজহারুল ইসলাম সাকিবের মন্তব্য, সাগর-রুনির হত্যাকারীরা ভালোই আছেন, কিন্তু আপনি ‘আনবিটেন' দরবেশের লোকজনকে মেরেছেন৷ সুতরাং আপনি একজন অপরাধী৷ হাউ ফানি!
আশরাফুল আলম খোকন তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘দুইজন সাংবাদিককে মারধর করায় দলীয় এমপিকে গ্রেপ্তার করা হলো ....সাধুবাদ! কিন্তু আরেকজন নারী সাংবাদিক নাদিয়া শারমীনকে জামাত-হেফাজত ইবলিশগুলা প্রকাশ্যে রাজপথে লাঞ্চিত করল, তাদের কি করলেন! অবশ্য ওনার পক্ষে তো আমাদের প্রতিবাদী সম্পাদকদের কোনো বিবৃতি বা সাংবাদিকদের কোনো আলটিমেটামও ছিল না! সাগর-রুনির কথা আর বলতে ইচ্ছে করে না৷''