1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চীন-জার্মানি

২ ফেব্রুয়ারি ২০১২

জার্মানি ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গোটা সাল জুড়ে জার্মানিতে পালিত হচ্ছে ‘চীনা বর্ষ’৷ কিন্তু অনেকে সন্দেহ করছেন, চীন আসলে এই অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করছে৷

জার্মানিতে পালিত হচ্ছে ‘চীনা বর্ষ’ছবি: DW

জার্মানিতে চীনা সাংস্কৃতিক উৎসব

এই ধরণের দ্বিপাক্ষিক উৎসবে যা হয়, আগামী সপ্তাহ থেকে জার্মানিতে চীনা বর্ষও বেশ ধুমধাম করে শুরু হতে চলেছে৷ বার্লিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবে চীনা সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা৷ এক বছর ধরে জার্মানি জুড়ে প্রায় ৫০০ অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন মানুষ৷ বিচ্ছিন্নভাবে নয়, জার্মানিতে নিয়মিত যেসব বড় সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, তার মধ্যে বেশ কয়েকটির ‘থিম' হতে চলেছে চীন৷ উত্তরের শ্লেসভিক হলস্টাইন সংগীত উৎসব থেকে শুরু করে দক্ষিণে মিউনিখ সংগীত উৎসবেও চীনা শিল্পীদের দেখা যাবে৷ তরুণ চীনা শিল্পীদের সৃষ্টি দেখা যাবে কাসেল শহরে৷ সাম্প্রতিক কালে চীন ইউরোপের ভূখণ্ডে এত বড় আকারের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করে নি৷ ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও সুইজারল্যান্ডে এই ধরণের সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে বটে, কিন্তু সেগুলি এত বড় আকারের ছিল না৷

চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ইউরোপ বিভাগের প্রধান চেন পিং জানালেন, যে জার্মানিতে চীনা উৎসবের ক্ষেত্রে সচেতনভাবেই সংগীতকে মূলমন্ত্র করা হয়েছে৷ তিনি বললেন, ‘‘আমরা মনে করি, সংগীত সহজেই দেশের সীমানা অতিক্রম করে অন্যের কাছে পৌঁছে যেতে পারে৷ ভাষা না জানলেও যে কেউ সংগীতের স্বাদ নিতে পারে৷ সেজন্যই আমরা শুরু থেকে অনেক সংগীতের অনুষ্ঠান ও প্রকল্প পরিকল্পনা করেছি৷ এর আরেকটি বড় কারণ হলো, সংগীতের ক্ষেত্রে জার্মানির নিজস্ব এক ঐতিহ্য রয়েছে৷ চীনেও তাই জার্মান সংগীতের বিশাল প্রভাব রয়েছে৷''

চীনে গৃহবন্দি থাকায় উৎসবে থাকতে পারবেন না জার্মানিতে অতি পরিচিত চীনা আই ওয়েওয়েছবি: AP

‘উৎসবের আড়ালে প্রচারণা'

তবে সমালোচকরা মনে করছেন, সংগীতকে বেছে নেওয়ার মূল কারণ হলো – যতটা সম্ভব বিতর্ক দূরে সরিয়ে রাখার প্রচেষ্টা৷ বিশেষ করে ধ্রুপদী সংগীতের ক্ষেত্রে বিতর্কের অবকাশ কম৷ সেই তুলনায় শিল্প বা সাহিত্যের ক্ষেত্রে বিতর্ক দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷ কিন্তু যে দুই চীনা শিল্পী জার্মানিতে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন, তাঁদের কেউই চীনা উৎসবে উপস্থিত থাকবেন না৷ এদের মধ্যে একজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চীনা পিয়ানো বাদক লাং লাং৷ তিনি সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসবে অংশ নিতে রাজি হন নি৷ আরেক জন আই ওয়েওয়ে, যাঁর নাম জার্মানিতে অধিকাংশ মানুষের কাছেই পরিচিত৷ জার্মানির সঙ্গেও আই ওয়েওয়ে'র ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে৷ গত বছর তিনি বার্লিনে নিজস্ব স্টুডিও খুলতে চেয়েছিলেন৷ তিনি আপাতত চীনে গৃহবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন, ফলে সরকারি উৎসবে তাঁর যোগদানের কোনো সম্ভাবনাই নেই৷

তবে এই দুই শিল্পীর অনুপস্থিতি নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠছে৷ জার্মানিতে চীনা রাষ্ট্রদূত উ হংবো'কেও সেরকম প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে৷ তিনি অবশ্য প্রকাশ্যে এদের তেমন গুরুত্ব দিতে প্রস্তুত নন৷ তিনি বললেন, ‘‘আপনারা দু'টি নাম উল্লেখ করলেন৷ চীনে হাজার হাজার শিল্পী রয়েছেন৷ আমি জানতে চাই, আমাদের জার্মান বন্ধুরা চীনের সাংস্কৃতিক জগত সম্পর্কে আদৌ কতটা জানেন৷ সীমিত জ্ঞান সত্ত্বেও কোনো বিষয় নিয়ে রায় দিলে তাকে ‘প্রেজুডিস' বলা হয়৷''

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চীনা পিয়ানো বাদক লাং লাং উৎসবে অংশ নিতে রাজি হননিছবি: dapd

সমালোচনার জবাব

চীনা সরকারের এমন মনোভাবের কারণে জার্মানিতে অনেকেই মনে করছেন, উৎসবের আড়ালে চীন আসলে প্রচারণা চালিয়ে জার্মানিতে নিজস্ব ভাবমূর্তির উন্নতি করতে চাইছে৷ বিকল্প চিন্তাধারা বা সরকার-বিরোধী কোনো মতামত এই সাংস্কৃতিক আঙিনায় স্থান পাচ্ছে না৷ তবে জার্মানির মানুষের সামনে শুধু সরকারের পছন্দের বিষয়বস্তু তুলে ধরা হচ্ছে, এমন অভিযোগ মেনে নিতে প্রস্তুত নন চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ইউরোপ বিভাগের প্রধান চেন পিং৷ তিনি বললেন, ‘‘এই উৎসবের আওতায় শুধু রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ স্থান পাচ্ছে না৷ বিভিন্ন শহর কর্তৃপক্ষও চীনা বর্ষ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে৷ বেশ কিছু এনজিও এতে অংশ নিচ্ছে৷ এমনকি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও কিছু অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ কিছু শিল্পী সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে উৎসবে তাঁদের সৃষ্টি তুলে ধরছেন৷ সেকারণেই গোটা বছর হবে বৈচিত্র্যে ভরা৷ এটা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বা সরকারের কোনো একচেটিয়া অনুষ্ঠান নয়৷''

এমন এক সময়ে জার্মানিতে চীনা উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে, ইউরোপ যখন আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকটের কবলে পড়ে সমাধানসূত্রের খোঁজ করছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও ভাল নয়৷ এই অবস্থায় সবার নজর চীনের দিকে৷ সেদেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করলে ইউরোপ তথা আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজার শান্ত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ খোদ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল চীন সফরে গিয়ে সেদেশের নেতৃত্বের মন জয় করা চেষ্টা করছেন৷ চীনের বেড়ে চলা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের প্রেক্ষাপটে অনেকেই সেদেশের কৃপাদৃষ্টি অর্জন করতে চাইছে৷ চীনে আশঙ্কাজনক মানবাধিকার পরিস্থিতি ও মত প্রকাশের অধিকারের অভাব নিয়ে খোলামেলা সমালোচনার সুর ক্রমশঃ দুর্বল হয়ে পড়ছে৷ অতীতে কোণঠাসা অবস্থা পেছনে ফেলে চীন নতুন আত্মবিশ্বাস নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজস্ব অবস্থান আরও মজবুত করতে চাইছে৷

প্রতিবেদন: মাটিয়াস ব্যোলিঙার / সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ