আধুনিক যুগেও বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে আদানপ্রদান অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা রয়ে গেছে৷ তথ্য প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের এক অভিনব প্রচেষ্টা শুরু হয়ে গেছে৷ মুখের অভিব্যক্তি ও ইশারা ইঙ্গিত শেখানো হচ্ছে কম্পিউটারকে৷
বিজ্ঞাপন
আমরা বিশ্বায়নের যুগে বসবাস করছি৷ বিশেষ করে শহরের পরিবেশে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে৷ এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে ভুল-বোঝাবুঝি এড়ানো সম্ভব?
যেমন আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুন-এর এরিক ও তার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা চীনের শু একসঙ্গে খাবার সময়ে ভাবেন, চপস্টিক, কাঁটাচামচ, নাকি হাতে করেই খাওয়া উচিত? এই ধরনের বাধাবিপত্তি কাটিয়ে তুলতে বিশেষ গেম ডিজাইন করা হয়েছে৷
কিন্তু তার আগে প্রযুক্তিকে মানুষের চরিত্র বুঝতে হবে৷ কম্পিউটার বিজ্ঞানী এলিজাবেথ আন্ড্রে সেই লক্ষ্যেই কাজ করছেন৷ আউগসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গবেষকদলের সঙ্গে তিনি মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটারের মাধ্যমে আরও কার্যকর যোগাযোগ নিয়ে কাজ করছেন৷ এই সব ডিভাইস যাতে আমাদের ভালো বুঝতে পারে, সেটাই হলো লক্ষ্য৷ প্রো. আন্ড্রে বলেন, ‘‘যন্ত্রের সঙ্গে আদানপ্রদানের সময়ে আমরা যদি ভুলেই যেতে পারি, যে সেটা একটা যন্ত্র, সেটা খুব ভালো হবে৷''
ব্যবহারকারীর আবেগ ও নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া বুঝে সেই অনুযায়ী যন্ত্রকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা দেওয়াই আসল চ্যালেঞ্জ৷ সেই লক্ষ্য পূরণ করতে গবেষক দল কম্পিউটারকে বিভিন্ন রকমের ইশারা-ইঙ্গিত ও তার অর্থ শেখাচ্ছে৷ নড়াচড়ার প্রক্রিয়াগুলি শব্দভাণ্ডারের মতো নতুন এক ভাষায় জমা করা হয়৷ কম্পিউটার সেগুলি শনাক্ত করে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়৷
আদিবাসীদের কয়েকটি উৎসব
পহেলা বৈশাখে অনেক আদিবাসী গোষ্ঠীও বর্ষবরণ করে থাকেন৷ এছাড়া আছে অন্যান্য উৎসবও৷ ছবিঘরে আদিবাসীদের কয়েকটি উৎসবের কথা থাকছে৷
ছবি: hello.bdnews24.com
বৈসাবি উৎসব
ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের ‘বৈসুক’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ আর চাকমাদের ‘বিজু’ – এই তিন উৎসবের নামের প্রথম অক্ষর থেকে ‘বৈসাবি’ উৎসবের নাম এসেছে৷ তিনটিই বর্ষবরণের অনুষ্ঠান৷ ফলে পার্বত্য এলাকার আদিবাসীরা সবাই মিলে বৈসাবি উৎসবে অংশ নেয়ার মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়৷ উপরের ছবিটি সাংগ্রাই উৎসবের৷
ছবি: bdnews24.com
চাকমাদের বিজু
বাংলা বছরের শেষ দু’দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এই উৎসব হয়৷ অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ‘ফুল বিজু’ নামে পরিচিত৷ এই দিন ভোরে পানিতে ফুল ভাসানো হয়৷ তরুণ-তরুণীরা পাড়ার বৃদ্ধদের গোসল করিয়ে দেয়৷ তবে বিজু উৎসবের মূল দিন নববর্ষের প্রথম দিন৷ চাকমা ভাষায় এই দিনটির নাম গজ্জ্যেপজ্জ্যে, অর্থাৎ গড়াগড়ি খাওয়ার দিন৷ এই দিন ভালো খাবার রান্না করা হয়৷ কারণ মনে করা হয়, বছরের প্রথম দিন ভালো রান্না করলে বছরজুড়ে অভাব থাকবে না৷
ছবি: Sanchay Chakma
মারমাদের সাংগ্রাই
পার্বত্য চট্টগ্রামের দ্বিতীয় বৃহত্তম আদিবাসী গোষ্ঠী মারমারা পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপন করলেও বাংলা পঞ্জিকা অনুসরণ করে না৷ তারা বর্মীপঞ্জি, অর্থাৎ বার্মা মিয়ানমারের ক্যালেন্ডার মেনে চলে৷ সাংগ্রাই উৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রিলং পোয়েহ্’৷ এটি পানি ছো়ড়াছুড়ির খেলা৷ মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দেয়৷ তাঁদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে অতীতের সকল দুঃখ-গ্লানি ও পাপ ধুয়ে-মুছে যায়৷
ছবি: bdnews24.com
ত্রিপুরাদের বৈসুক
চাকমাদের বিজুর মতো এই উৎসবও তিনদিনের৷ নববর্ষের প্রথম দিন বয়স্করা ছোটদের আশীর্বাদ করেন৷ আর কিশোরীরা কলসি কাঁখে নিয়ে বয়স্কদের খুঁজে খুঁজে গোসল করায়৷ তরুণ-তরুণীরা রং খেলায় মেতে ওঠে৷ একজন আরেকজনকে রং ছিটিয়ে রঙিন করে দিয়ে গোসল করে আবারো আনন্দে মেতে ওঠে৷
ছবি: Sanchay Chakma
তঞ্চঙ্গ্যাদের বৈসুক
তঞ্চঙ্গ্যাদের বর্ষবরণ অনেকটা চাকমাদের মতোই৷ উৎসবের প্রথম দিন মেয়েরা ফুল সংগ্রহ করে ঘর সাজায়৷ পরদিন সবাই গোসল করে নতুন জামা-কাপড় পরে আনন্দ-ফূর্তি করে৷ ঘরে ঘরে ঐতিহ্যবাহী খাবার আর পিঠার আয়োজন করা হয়৷ রাতে ‘ঘিলা’ নামের এক খেলায় মেতে ওঠে সবাই৷ আর নববর্ষের দিন তরুণ-তরুণীরা বয়স্কদের গোসল করায়৷
ছবি: Sanchay Chakma
মুরংদের চাংক্রান
মূল উৎসবের দিন মুরংরা বাঁশি বাজিয়ে ‘পুষ্প নৃত্য’ করতে করতে মন্দির প্রদক্ষিণ করে৷ ম্রো সমাজে লাঠি খেলা খুবই জনপ্রিয়৷ তাই চাংক্রানের মূল দিনে তারা এই খেলা খেলে থাকে৷
ছবি: bdnews24.com
কারাম উৎসব
সমতলের আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কারাম উৎসব’ বা ‘ডাল পূজা’৷ ওঁরাও, সাঁওতাল, মালো, মুন্ডা, মাহাতো, ভুইমালি, মাহলীসহ বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে৷ এই আদিবাসীরা ‘কারাম’ নামক একটি গাছের ডালকে পূজা করেন বলে এই উৎসবের আরেক নাম ‘ডাল পূজা’৷
ছবি: bdnews24.com
সাঁওতালদের সহরায় উৎসব
আদিবাসী সাঁওতালদের কাছে গৃহপালিত গরু, মহিষের গুরুত্ব অনেক৷ সহরায় উৎসবে এসব প্রাণীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়৷ উৎসবকে ঘিরে বিবাহিত মেয়েরা তাদের বাবার বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পান৷ কারণ উৎসবে তাদের আমন্ত্রণ জানানো একটি রেওয়াজ৷ এই পরবের নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নেই৷ গ্রামের মোড়লদের নিয়ে সভা করে উৎসবের দিন ঠিক করা হয়৷
ছবি: hello.bdnews24.com
8 ছবি1 | 8
তবে মুখের অভিব্যক্তি বোঝা আরও কঠিন৷ এখনো পর্যন্ত যন্ত্র আনন্দের হাসির সঙ্গে লজ্জার হাসির মধ্যে পার্থক্য করতে পারতো না৷ এখন নতুন সফটওয়্যার কম্পিউটারকে সেই তফাত বোঝাতে সাহায্য করছে৷ প্রো. আন্ড্রে বলেন, ‘‘এবার ঠিকমতো প্রতিক্রিয়া দেখাতে হলে যন্ত্রকে সত্যি বুঝতে হবে, ব্যবহারকারী ঠিক কোন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে৷ সেইসঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরিস্থিতি বুঝে সেটি বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও থাকতে হবে৷''
মুখের অভিব্যক্তি ও শরীরের ইশারা-ইঙ্গিতের গুরুত্ব আবার আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের উপর নির্ভর করে৷ প্রথমবার এক র মাধ্যমে সেই পার্থক্য শনাক্ত করা হয়৷ ব্যবহারকারী এক ভার্চুয়াল চরিত্রের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে ভিনদেশি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন৷ সেই গেমে ব্যবহারকারী ইশারা-ইঙ্গিতের সাহায্যে তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন৷ অপর প্রান্তের চরিত্র বাস্তবের মতোই প্রতিক্রিয়া দেখায়৷
হাতনাড়া, সৌজন্য দেখিয়ে ঝুঁকে পড়া, হাতজোড় করা – কখন এমন আচরণ করা উচিত? প্রো. আন্ড্রে বলেন, ‘‘একটি মাত্রা হলো ক্ষমতার রসায়ন৷ অর্থাৎ কোনো সংস্কৃতিতে বয়স বা অন্যান্য কোনো বিষয়ের ভিত্তিতে উঁচু-নীচু অবস্থান এবং সেগুলির মধ্যে ফারাক কতটা গ্রহণযোগ্য, তার উপর চরিত্রগুলির আচরণ নির্ভর করে৷ যেমন বয়সে বড়দের বেশি সম্মান দেখানো হয়৷''
ফ্ল্যাটের চীনা ও আফ্রিকান বাসিন্দারা কিন্তু কোনো প্রযুক্তি ছাড়াই সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান করছেন৷ কারণ তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে অনেক সময় কাটাচ্ছেন৷
শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক ৭টি জনপ্রিয় টিভি সিরিজ
শিশুরা কার্টুন দেখতে ভালবাসে৷ তাই কোনো কিছু শেখাতে এই মাধ্যমের আশ্রয় নেয়া ভালো৷ পরিবেশ রক্ষায় শিশুদের আগ্রহী করতে নির্মিত সাতটি জনপ্রিয় টিভি সিরিজের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: scholastic.com
সেসেমি স্ট্রিট
শিশুদের অন্যতম প্রিয় এই শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে পরিবেশ বিষয়েও অনেক কিছু শেখানো হয়ে থাকে৷ যেমন পানি অপচয় করা ঠিক নয় কিংবা সবকিছু রিসাইকেল করা উচিত ইত্যাদি৷ মার্কিন জনপ্রিয় এই সিরিজটির বাংলা সংস্করণ ‘সিসিমপুর’ বাংলাদেশের শিশুদেরও বিনোদন দিচ্ছে৷ টুকটুকি, ইকরি, হালুম শিশুদের বেশ প্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটিয়ার্স
মার্কিন এই টেলিভিশন সিরিজের মূল বিষয় ছিল পরিবেশ রক্ষা৷ সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলা, সাগর ও সেখানকার প্রাণীদের দূষণ থেকে রক্ষা করা, পাখিদের দেখাশোনা করা ইত্যাদি নানান বিষয় তুলে ধরা হয়েছে অনুষ্ঠানটিতে৷
ছবি: picture alliance/Mary Evans Picture Library
দ্যা অক্টোনাটস
ব্রিটিশ এই অ্যানিমেটেড সিরিজের মাধ্যমে শিশুদের সাগর ও সেখানকার বাসিন্দাদের সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷ একটি পোলার বেয়ারের নেতৃত্বে আটজনের একটি দলের সাগরের অন্যান্য প্রাণীদের হাত থেকে বেঁচে থাকার সংগ্রাম দেখানো হয়েছে এতে৷ দু’জন বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানী এটি তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন যেন তথ্য সব ঠিক থাকে৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: octonauts.com
দ্যা ওম্বলস
ছবি দেখেই বুঝতে পারছেন ‘ওম্বলস’ হচ্ছে একটি কল্পিত প্রাণী৷ ষাটের দশকে বিভিন্ন উপন্যাসে প্রথম এই প্রাণীদের কথা উল্লেখ করা হয়৷ পরবর্তীতে ব্রিটেনে তাদের নিয়ে একটি টেলিভিশন সিরিজ নির্মিত হয়৷ ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত প্রচারিত ঐ সিরিজে দেখানো হয়, লন্ডনে থাকা ওম্বলসরা পরিবেশ রক্ষায় আবর্জনা সংগ্রহ করে রিসাইকেল করছে৷
ছবি: picture-alliance/Ronald Grant Archive/Mary Evan
দ্যা অ্যানিমেলস অফ ফার্দিং উড
মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে বনজঙ্গল উজাড় করায় সেখানে বসবাসরত পশুপাখিদের কী সমস্যা হয় তা দেখানো হয়েছে এই অ্যানিমেটেড টিভি সিরিজে৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: eurovisionshowcase.com
বিল নাই দ্যা সায়েন্স গায়
বিজ্ঞানের জটিল বিষয়কে শিশুদের সামনে তুলে ধরতেন বিল গায়৷ এর মধ্যে ইকোলজি, পরিবেশ বিজ্ঞানের মতো বিষয়ও থাকতো৷ তাঁর অনুষ্ঠানটি ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মার্কিন টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে৷ বর্তমানে বিভিন্ন সায়েন্স ভিডিওতে তাঁকে দেখা যায়, সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয় নিয়েও তিনি আলোচনা করেন৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture alliance/AP Images/E. Agostini
দ্যা ম্যাজিক স্কুল বাস
এই টিভি সিরিজে ফ্রিজল নামের একজন বিজ্ঞান শিক্ষককে দেখানো হয়েছে, যিনি সরীসৃপ, জলবায়ু পরিবর্তন সহ প্রকৃতির নানান বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানাতে শিক্ষাসফরে নিয়ে যান৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷