বাংলাদেশ বা ভারতে গাড়ি, বাস, ট্রাকের দাপটে সাইকেল চালকদের কোণঠাসা হয়ে থাকতে হয়৷ ইউরোপে তাঁদের অবস্থা অনেক ভালো হলেও চুরি ও দুর্ঘটনার সমস্যা রয়েছে৷ বেশ কিছু চমকপ্রদ উদ্ভাবনের মাধ্যমে সেই সব সমস্যা দূর করার চেষ্টা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
স্পিড-পেডেলেক্স সাইকেল জগতের এসইউভি গাড়ির মতো৷ এমন সাইকেল হাতে পেলে প্রশিক্ষণ ছাড়াই ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে চালানো যায়৷ অবশ্য তাতে ইঞ্জিনের কিছুটা অবদানও থাকে৷
কাঠামোর মধ্যেই ব্যাটারি, অনবোর্ড কম্পিউটার ও জিপিএস মডিউল বসানো রয়েছে৷ টাচস্ক্রিনের মাধ্যমে সেসব ব্যবহার করা যায়৷ সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় গিয়ার বদলানো হয়৷ ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যাটারি চার্জের প্রয়োজন নেই৷ তাছাড়া ব্রেক করলেই ব্যাটারি কিছুটা চার্জ হয়ে যায়৷
এই সাইকেলের গুণের শেষ নেই৷ মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথাকথিত এই ‘স্মার্ট বাইক' অ্যাপ দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব৷ মাইস্ট্রোমার কোম্পানিরনুশা ওয়াকিলজাদেহ বলেন, ‘‘অ্যাপের মাধ্যমে আমি সাইকেলে পছন্দমতো কনফিগারেশন পাঠাতে পারি৷ যেমন পেছনের ইঞ্জিনের কাজে ইচ্ছামতো রদবদল করতে পারি৷ এমনকি সাইকেল চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে যদি তার অপব্যবহারের আশঙ্কা থাকে, তাহলে তার ইঞ্জিন ব্লক করে দিতে পারি৷ তখন আর সেই সাইকেল চলবে না৷ তাছাড়া অ্যাপের মাধ্যমে সাইকেলের অবস্থানও জানতে পারি৷''
পাঁচটি বাইসাইকেল যা সবার নজর কাড়বে
দু’চাকার বাইসাইকেল এ বছর ২০০-য় পা দেবে৷ এই দীর্ঘ পথে সাইকেল নামের যানটির বহু রূপান্তর ঘটেছে৷
ছবি: Lopifit/Gert de Veerd
‘হাই হুইল’
যেন মহিলাদের হাই-হিল (জুতো)! এককালে এই সাইকেলের নাম ছিল পেনি-ফার্দিং: সামনের চাকাটা বড়, সেটা যেন একটা পেনি (মুদ্রা বা ‘কয়েন’); পিছনের চাকাটা ছোট, সেটা হলো ফার্দিং৷ এই যন্ত্রটিই প্রথম বাইসাইকেল বা দু’চাকার যান নাম পায়৷ সুইডিশ স্থপতি পের-ওলফ কিপেল ২০১৩ সালে তাঁর নিজের হাই-হুইলার বাজারে ছাড়েন৷
ছবি: www.standardhighweels.de
‘কুইগল’
মাত্র সাড়ে আট কিলো ওজনের এই বাইকটি আকারে সাধারণ ফোল্ডিং বাইকের অর্ধেক৷ কুইগল নাকি বিশ্বের সবচেয়ে আঁটোসাটো ফোল্ডিং বাইক৷ এটিকে নাকি সুটকেসে ভরে নিয়ে যাওয়া যায় – তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে বাইকটা কী ধরনের খদ্দেরদের জন্য তৈরি: ডেইলি প্যাসেঞ্জারদের জন্য৷ ট্রেন বা বাস থেকে নেমে, বাইকটি ‘খুলে’ নিয়ে, সোজা অফিসে গেলেই হল৷
ছবি: Kwiggle/Basil Fotografie/S. Sellnau
‘হাফবাইক’
মানে আধা বাইক – বস্তুটি বাইসাইকেল আর স্কেটবোর্ডের একটি সংমিশ্রণ৷ হ্যান্ডেলটা ঠিক স্টিয়ারিং-এর কাজ করে না; ডানদিক বা বাঁদিকে ঘুরতে শরীর সেদিকে ঝোঁকাতে হয়৷ বুলগেরিয়ার দুই স্থপতি, মার্টিন আঙ্গেলভ আর মিহাইল ক্লেনভ মিলে এই বাইকটি সৃষ্টি করেছেন৷
ছবি: DW
‘বেড বাইক’
‘বিছানা বাইক’, বার্লিন শহরে এই বাইক ভাড়া করা যায়৷ একটি সাইকেল রিকশার ওপর লাল-কালো-হলুদ বিছানা লাগানো (যা কিনা জার্মান পতাকার রং)৷ টুরিস্টরা এই বাইকে চড়ে – থুড়ি শুয়ে বার্লিন দেখতে পারেন৷ অবশ্য তারা যতো না বার্লিন দেখবেন, তার চেয়ে বেশি বার্লিনবাসীরা তাদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকবেন...
ছবি: VPMS
‘লপিফিট’
হাঁটাও বটে আবার সাইকেল চালানোও বটে – কিন্তু যে কোনো সাইকেলের চেয়ে বেশি স্পিডে৷ ‘লপিফিট’ একটি ওলন্দাজ আবিষ্কার৷ চালক হাঁটছেন একটি ট্রেডমিলের ওপর, সেই শক্তিতে একটা ইলেকট্রিক মোটর চলেছে৷ হ্যান্ডেলে ব্রেক করার ব্যবস্থা আছে, আবার ‘হাঁটা’ বন্ধ করলে সাইকেলটি নিজেই ধীরে ধীরে থেমে যায়৷
ছবি: Lopifit/Gert de Veerd
5 ছবি1 | 5
এত উদ্ভাবনী গুণাগুণের মূল্যও কম নয় – প্রায় ৯,০০০ ইউরো গুনতে হয় এই সাইকেলের জন্য৷ তবে সাইকেল সংক্রান্ত বাণিজ্য মেলা ও উৎসবে নিয়মিত যাতায়াত করলে দেখা যাবে, দামী ও উচ্চ মানের সাইকেলের চল কতটা বাড়ছে৷
তবে সাধারণ সাইকেলেও আধুনিক নিরাপত্তা প্রযুক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব৷ জার্মানিতে বছরে প্রায় ৩ লক্ষ ৩৩ হাজার সাইকেল চুরি হয়৷ অতি সহজেই সাইকেল চুরি করা সম্ভব৷ ভুক্তভোগীদের জন্য সেই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়৷ ফাররাডইয়েগার কোম্পানির স্টেফি ভুল্ফ বলেন, ‘‘আমার বেশ কয়েকটি সাইকেল চুরি গেছে৷ আমার বয়ফ্রেন্ড মার্টিনের ৩ বছরে ৫টি সাইকেল চুরি হয়েছে৷ তার রেসিং সাইকেল চুরি হওয়ার পর সাইকেল চোরদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করলাম৷''
অ্যালার্মের কানফাটা শব্দ এই সংগ্রামেরই অংশ৷ স্টেফি ভুল্ফ এই সিস্টেমের ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘এর নাম ইনসেক্ট – আমার সাইকেলের রক্ষাকবচ ও ট্রান্সমিটার৷ সাইকেলে ইনসেক্ট বসাতে হবে৷ ব্লুটুথের মাধ্যমে স্মার্টফোনের সঙ্গে যোগাযোগের পর সে মালিক হিসেবে আমাকে চিনতে শিখেছে৷ এবার কোনো চোর সাইকেল চুরি করার চেষ্টা করলে সেন্সরের মাধ্যমে ইনসেক্ট তা বুঝে ফেলে ১০০ ডেসিবেল তীব্রতায় অ্যালার্ম বাজাবে৷ তাছাড়া অ্যাপের মাধ্যমে সে আমাকে বার্তাও পাঠাবে৷ তারপরেও সাইকেল নিয়ে পালালে আমাকে তার অবস্থান জানান দেবে৷''
অন্ধকার ঘনিয়ে এলে সাইকেল চালকের জন্য বিপদও বেড়ে যায়৷ তা সত্ত্বেও পথেঘাটে অনেক সাইকেলে যথেষ্ট আলো থাকে না৷ নিয়ম মেনে যথেষ্ট আলো লাগালেও অনেক সাইকেল চালককে সহজে দেখতে পাওয়া যায় না৷ একটি হেলমেট সেই সমস্যার সমাধান করতে পারে৷ বস্টন শহরের দুই ছাত্রের মাথায় এই ‘লুমোস' তৈরির আইডিয়া এসেছিল৷ ৬০টি এলইডি বাতি ঘন অন্ধকারেও চালকের অস্তিত্ব জানান দেয়৷ ব্রেক করলে হেলমেটে গাড়ির মতোই লাল আলো জ্বলে ওঠে৷ তাছাড়া গতিপথও নির্দেশ করে আলো৷
সাইকেলের পূর্ণ হলো ১৫০ বছর
যে বাহনে সবচেয়ে সহজে ও সস্তায় যাতায়াত করা যায় সেটা হচ্ছে দুই চাকার সাইকেল৷ সম্প্রতি যার বয়স ১৫০ বছর পূর্ণ হলো৷ শুভ জন্মদিন সাইকেল!
ছবি: picture-alliance/akg-images
সাইকেলের উদ্ভাবক কে?
ফ্রান্সের পিয়ের মিশো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পিয়ের লালেমেন্ট – এই দু’জন প্রথম প্যাডেল চালিত সাইকেল আবিষ্কার করেন৷ তবে দু’জনের কে আসল উদ্ভাবক তা কিন্তু আজও সঠিকভাবে জানা যায়নি৷ যদিও ১৮৬৬ সালের ২০ নভেম্বর পিয়ের লালেমেন্ট সাইকেল উদ্ভাবনের জন্য তাঁর দেশে স্বীকৃতি লাভ করেন৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
বিশেষ টায়ার
১৮৭০ সালের পরে ব্রিটেনে আরো দ্রুত, সুন্দর এবং উঁচু সাইকেল তৈরি করেন জেমনস স্টার্লি ও উইলিয়াম হিলম্যান৷ তবে সেগুলোর মান তেমন উন্নত না হওয়ায়, সেসময় কিছু গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটে৷ যে কারণে পরে আর এগুলোকে রাস্তায় চলতে দেখা যায়নি৷ তবে ১৮৮৮ সালে সাইকেলে নিডাররাড ও ডানলপ কোম্পানির চাকা লাগানোর ফলে দুই চাকার বাহনের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ট্যুর দ্য ফ্রঁস ১৯০৩
১৯০৩ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত প্রথমারের মতো ফ্রান্সে ট্যুর দ্য ফ্রঁস শুরু হয়৷ আর ছয় রাউন্ডের এই প্রতিযোগিতায় মোট ২৪২৮ কিলোমিটার সাইকেল চলান প্রতিযোগিরা৷ তবে ট্যুর দ্য ফ্রঁস-এর প্রথম বিজয়ী হন ফরাসি চালক মরিস গাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Conservatoire du Patrimoine Sportif
মাউন্টেনবাইক অলিম্পিক
সাইকেল অলিম্পিক প্রথমবারের মতো স্থান লাভ করে ১৯৯৬ সালে৷ আর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে মোট ৮৮জন প্রতিযোগী৷ সাইকেল অলিম্পিক প্রথম অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাটলান্টার কাছে, জর্জিয়া আন্তর্জাতিক হর্স পার্কে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Breloer
পরিবহন মাধ্যম
সারা বিশ্বে সাইকেল এখনো একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন মাধ্যম৷ ছবিতে ভিয়েতনামের রাস্তায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে সাইকেলে তাঁর পণ্য সামগ্রী পরিবহন করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/J. Langley
স্বপ্নের সাইকেল টানডেম
একসাথে আনন্দ করার মজাই আলাদা! আর সেজন্য সাইকেলে যোগ হয় দু’টো সিট৷ তবে যিনি সাইকেল চালান, অর্থাৎ প্রথম সিটের চালককে বলা হয় পাইলট বা ক্যাপ্টেন৷ টানডেমে পেছনের সিটের সঙ্গীর পাইলটকে সঙ্গ দেওয়া ছাড়া তেমন কিছু করার থাকে না৷
ছবি: Imago
6 ছবি1 | 6
সাইকেল চালকদেরআরও নিরাপত্তা দিতে লুমোস ছাড়া আরও কিছু আইডিয়া রয়েছে৷ যেমন সাইকেল ও গাড়ির সংঘাতের বেশিরভাগ দুর্ঘটনা একাধিক রাস্তার সংযোগস্থলে ঘটে৷ ব্রিটেনের এক লেজার আলো সাইকেলের সামনে পথের উপর উজ্জ্বল সাইকেলের চিহ্ন ফুটিয়ে তোলে৷ সরাসরি সাইকেলটিকে দেখতে না পেলেও গাড়ির চালকরা সেই আলো দেখতে পান৷