জলবায়ু পরিবর্তন আর বায়ু দূষণ রোধে অনেক ইউরোপীয় শহরই সাইকেলের দিকে ঝুঁকেছে, ঝুঁকছে৷ এই যেমন নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডাম৷ জার্মানির প্রাক্তন রাজধানী বনেরও ইচ্ছা সেরকম, কিন্তু কাজটা ঠিক সহজ মনে হচ্ছে না৷
বিজ্ঞাপন
পরিবেশবান্ধব যান হিসেবে সাইকেলের তুলনা নেই৷ জার্মানির কয়েকটি শহর তাই বাসিন্দাদের সাইকেল চালাতে উৎসাহ দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে, এসেছে সাফল্যও৷ বন শহরও চায় নিজেদের ২০২০ সাল নাগাদ নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে সাইকেলবান্ধব মহানগরীতে রূপ দিতে৷ সেটা করতে পারলে রাস্তাঘাটে গাড়ি চলাচলের ফলে সৃষ্ট কার্বন নির্গমনের হার কমানো যাবে অন্তত ২০ শতাংশ৷
কিন্তু কাজটা এত সহজ নয়৷ জার্মান সাইক্লিং ক্লাবের (এডিএফসি) ট্রাফিক প্ল্যানার ওয়ার্নার ব্যুচার বনের সাইকেল নগরী হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধার কথাটা সহজেই ধরিয়ে দিয়েছেন৷ তিনি মনে করেন, ‘‘বনে ট্রাফিক সমস্যা রয়েছে৷ আর সেটা হচ্ছে গাড়ি অনেক, কিন্তু সে তুলনায় রাস্তাঘাট কম৷''
বনের অর্থনীতি আসলে অফিসে কাজ করা কর্মচারী নির্ভর, শিল্পকারখানার শ্রমিক নির্ভর নয়৷ ফলে গাড়ি চালিয়ে অফিসে যাওয়া মানুষের সংখ্যা শহরে অনেক বেশি, যার প্রভাব পড়ছে রাস্তাঘাটের উপর৷ ব্যুচার বলেন, ‘‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এই মানুষদের গাড়ির বদলে সাইকেল বা গণপরিবহণ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা৷''
সাইকেলে ইউরোপ ঘুরতে চাইলে যা জানা প্রয়োজন
সাইকেলে ঘোরাঘুরি সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব এবং জনপ্রিয়৷ আর সাইকেলে চড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে চলাচলও সহজ৷ এখানে দেয়া হলো সাইকেলের দশটি ‘রুট’ সম্পর্কে তথ্য৷
ছবি: picture alliance/Arco Images/K. Kreder
দশম: ড্রাভা সাইক্লিং রুট
ইটালির সাউথ টিরোল থেকে স্লোভেনিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এই রুটে দৈর্ঘ ৩৬৬ কিলোমিটার৷ মূলত ড্রাভা নদীর তীর ঘেষে তৈরি হয়েছে রুটটি৷ ভবিষ্যতে অবশ্য এটা ক্রোয়েশিয়া পর্যন্তও যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/DUMONT Bildarchiv/K. Kreder
নবম: এলবে সাইকেল রুট
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগ থেকে শুরু হওয়া এই পথ শেষ হয়েছে জার্মানির নর্থ সি বা উত্তর সাগরে গিয়ে৷ দূরত্ব ১,২২০ কিলোমিটার৷ এলবে নদীর তীর ধরে এই রুট তৈরি হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/P. Zimmermann
অষ্টম: ভিয়া ক্লাউডিয়া আউগুস্টা
জার্মানির ডোনাউভ্যোর্ট থেকে শুরু হয়ে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার লম্বা এই রুটটি শেষ হয়েছে ইটালির ভেনিসে৷ প্রাচীন রোমের ‘বাণিজ্য সড়ক’ হিসেবে পরিচিত এই পথে রয়েছে আল্পস পর্বতমালার সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ৷ আর রয়েছে দক্ষিণ টিরোলে অবস্থিত রেশেন হ্রদ৷ ছবিতে সেই লেকে ডুবে থাকা একটি গ্রামের বেল টাওয়ার দেখা যাচ্ছে৷
সুইজারল্যান্ডের মালোয়া থেকে জার্মানির পাসাও পর্যন্ত বিস্তৃত এই রুট৷ তবে এ পথে সাইকেল চালাতে একটু কষ্ট আছে৷ বলা বাহুল্য, আল্পসের পাথুরে পথ পাড়ি দিতে প্রয়োজন হয় বাড়তি শক্তি৷
ছবি: picture alliance/A. Weigel
ষষ্ঠ: অতলান্ত থেকে কৃষ্ণ সাগর
সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার লম্বা এই পথ সাধারণ মানুষের পক্ষে সাইকেলে পাড়ি দেয়া প্রায় অসাধ্য৷ তবে ইউরোপে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং সৌন্দর্য সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে চাইলে এই রুট ব্যবহার করা যেতে পারে৷ এ পথে যেতেই পড়বে নান্টেস, অরলিন্স, বাসেল, বুদাপেস্ট, বেলগ্রেড এবং বুখারেস্ট৷
ছবি: picture-alliance/ZB/W. Thieme
পঞ্চম: এচ সাইক্লিং রুট
রেশেন থেকে ভেরোনা পর্যন্ত ৩০০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই পথ চলেছে এচ নদীর তীর ঘেষে৷ মসৃণ পথে সাইকেল চালাতে চাইলে এই রুট একেবারে আদর্শ৷
ছবি: picture-alliance/U. Bernhart
চতুর্থ: নর্থ সি কোস্ট সাইকেল রুট
শেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ থেকে নরওয়ের ব্যার্গেন পর্যন্ত বিস্তৃত এই পথের দৈর্ঘ ৬,০০০ কিলোমিটার৷ পথের জার্মান অংশ মূলত বন্যা প্রতিরোধক বাঁধের উপর দিয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/Klein
তৃতীয়: লেক কনস্টানৎস সাইকেল রুট
লেক কনস্টানৎস সাইকেল রুট ইউরোপের সেরা তিনটি সাইকেল রুটের একটি৷ সাইকেল চালানোর জন্য জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের সীমান্তে অবস্থিত এই লেকটিকে ঘিরে রয়েছে ২৬০ কিলোমিটার লম্বা একটি নৈসর্গিক পথ৷
ছবি: picture alliance/P. Seeger
দ্বিতীয়: রাইন সাইকেল রুট
রাইন নদীর শুরু যেখানে, সেই সুইজারল্যান্ড থেকে শুরু হয়ে ১,২৩০ কিলোমিটার লম্বা এই পথ গিয়ে শেষ হয়েছে নেদারল্যান্ডসের রটারডামে৷ ছবিটি অবশ্য কোলন শহরে অবস্থিত ‘রাইনাউহাফেন’-এর৷
ছবি: picture alliance/H. Ossinger
প্রথম: দানিউব বাইক পাথ
জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং লম্বা সাইকেলের পথ এটি৷ প্রায় আটটি দেশের মধ্য দিয়ে বইছে দানিউব নদী, যার পাশ ধরে গেছে এই পথ৷ ২,৮৫০ কিলোমিটার লম্বা সাইকেলের এই রুটে তাই দেখা মিলবে বিভিন্ন সংস্কৃতির, ঐতিহ্যের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jaeger
10 ছবি1 | 10
তিনি মনে করেন না যে, নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে৷ বরং তাঁর মতে, রাস্তাঘাটে গাড়ির সংখ্যা কমানোর উপায় বের করতে হবে৷ তবে কাজটা যে কঠিন, তাও স্বীকার করেছেন ব্যুচার৷ ‘‘জার্মানিতে গাড়ির লবি এখনো অনেক শক্তিশালী'', বলেন তিনি৷
জার্মানিতে জ্বালানি উৎপাদনের পর কার্বন নির্গমনের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস হচ্ছে ট্রান্সপোর্ট৷ বন শহর সেই ২০১০ সালেই সাইকেলের ব্যবহার বৃদ্ধির পরিকল্পনার কথা ঘোষণা দিয়েছিল, যা ২০২০ সাল নাগাদ বাস্তবায়ন হওয়ার কথা৷ এ জন্য শহরের কেন্দ্রস্থলে গাড়ির বদলে সাইকেলের ব্যবহার বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে৷ সাইকেল চালানো সহজ করতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সাইকেলের লেনের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি৷ এছাড়া সাইকেল যাতে সহজে রাখা যায়, সেজন্য আরো নিরাপদ পার্কিং স্পট তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে নগর কর্তৃপক্ষের৷
কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ ততটা এগোয়নি৷ ২০২০ সাল নাগাদ বন শহরে স্পষ্ট সাইনসহ সাইকেল পাথের সংখ্যা ১৭৫টি করার কথা থাকলেও, এখন পর্যন্ত হয়েছে মাত্র ২৫টি৷ আর অল্প কিছু রাস্তায় পাশাপাশি সাইকেল চালানোর ব্যবস্থা রয়েছে৷ নগর কর্তৃপক্ষ অবশ্য আশাবাদী যে, ‘‘সাইকেলের রাজধানী'' হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়েছে তারা৷ এমনকি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ শেষ হবে বলেও আশা করছেন তাঁরা৷
সাইকেল কেন চালাবেন?
একটু গরম পড়ার সাথে সাথেই জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাইকেল চালনোর ধুম পড়ে যায়৷ এর মূল কারণ কি শুধুই আনন্দ? নাকি ফিট থাকার জন্য চালানো হয় সাইকেল? নাকি এটা পরিবেশবান্ধব বলে? চলুন দেখা যাক বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
অলরাউন্ড ট্রেনিং
শরীর অথবা মন – যা-ই বলুন না কেন, ফিট থাকা বা ফিট হওয়ার জন্য সাইকেল চালানো নিঃসন্দেহে ভালো ব্যায়াম৷ নিয়মিত সাইকেল চালালে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে৷ ডায়াবেটিস, কোলেস্টরেলের মাত্রা কমে গিয়ে বিপাক প্রক্রিয়া সচল থাকে৷ তাছাড়া পা এবং নিতম্বের পেশি শক্ত হয়৷ এমনকি যাঁদের হাঁটতে সমস্যা তাঁরাও কিন্তু সাইকেল চালাতে পারেন৷ এ কথা জানান, জার্মানির ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ ক্লাউস ম্যোলেনডিক৷
ছবি: Imago
সঠিক সাইকেল বেছে নিন
সাইকেল চালানো তখনই আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে, যখন চাকা এবং চালকের মধ্যে বোঝাপড়া সন্তোষজনক হয়৷ অর্থাৎ চালক যেন চাকা ঘুরিয়ে আরাম এবং আনন্দ দু’টোই বোধ করেন৷ কোন রাস্তায় চালানো হবে, অর্থাৎ সোজা না উঁচু-নীচু পাহাড়ি এলাকায় সেটি বিবেচনায় নিয়ে সাইকেল কিনতে হবে৷ চালক নারী, না পুরুষ কিংবা নিয়মিত নাকি মাঝেমধ্যে সাইকেল চালানো হবে সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে বলে জানান ক্লাউস ম্যোলেনডিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মানসিক চাপ কমায়
সাইকেল চালানোর সময় মুক্ত বাতাস শুধু শরীরই ভালো রাখে না৷ এর ফলে মানসিক চাপ কমে, মস্তিষ্ক খালি হয়৷ আর যদি সাইকেলের রাস্তার দু’পাশে সবুজ গাছপালা থাকে তাহলে তো কথাই নেই!
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/Klein
সাইকেল চালান, পরিবেশ বাঁচান
দুই চাকার সাইকেলে তেল, গ্যাস লাগে না৷পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি করেনা সাইকেল৷ কাছাকাছি যাতায়াতের জন্য জার্মানিতে শিশু থেকে বুড়ো অনেকেই সাইকেল ব্যবহার করেন৷ সাইকেল ব্যবহারের ফলে শরীর ‘ফিট’ থাকে, খরচ বাঁচে, অন্যদিকে রক্ষা হয় পরিবেশ৷
ছবি: Imago
পরামর্শ
যাঁদের সংসার, পেশা বা শখের কারণে শরীর ফিট রাখার জন্য তেমন কিছু করার সুযোগ হয় না, তাঁদের জন্য বিশেষজ্ঞের বিশেষ পরামর্শ রয়েছে৷ ছোটখাটো কেনা-কাটা, ব্যাংক বা পোষ্ট অফিসের দরকারি কাজগুলো কম-বেশি সবাইকেই করতে হয়৷ তাই নিজের বাড়ির কাছের জায়গাগুলোতে যেতে সাইকেল ব্যবহার করুন৷ দেখবেন, এতেই অনেক উপকার হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
5 ছবি1 | 5
স্টুমাই জর্জ/এআই
ঢাকা শহরকেও কি এমন পরিবেশবান্ধব সাইকেলের শহর হিসেবে ভাবতে পারেন? লিখুন নীচের ঘরে৷