ভূমধ্যসাগরের দ্বীপ সাইপ্রাসে এক শিল্পী অভিনব এক প্রকল্প গড়ে তুলেছেন৷ আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা প্রাকৃতিক উপকরণের দৌলতে সেই জগত ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে৷ নির্মাণ শৈলির প্রেরণাও সেই প্রকৃতিই৷
বিজ্ঞাপন
সাইপ্রাস দ্বীপে গাছপালার মাঝে যেন রঙিন এক মরুদ্যান৷ সঙ্গে শিল্পের সমারোহ৷ জায়গাটিকে যে আসলে জঞ্জালের স্তূপ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল, তা বোঝা কঠিন৷ তার বদলে শিল্পী ও ইন্টিরিয়র ডিজাইনার হিসেবে আন্টস মিরিয়ান্টুস পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ দিয়ে সেখানে অভিনব এক স্থাপত্য সৃষ্টি করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে শুধু সৃষ্টির তাড়না ও নিজের মনোরঞ্জনের জন্য এটা করেছিলাম৷ তারপর মানুষের চাহিদা মেনে সবার জন্য খুলে দিলাম৷''
কারণ আচমকা কৌতূহলী মানুষের ভিড় বাড়তে লাগলো৷ এমনকি অনেকে প্রাচীর টপকে ব্যক্তিগত এই স্বপ্নের জগত দেখার চেষ্টা করছিল৷ তাই এখন আগে থেকে অনুরোধ করলে ‘ইউফোরিয়া আর্ট ল্যান্ড' প্রকল্প ঘুরে দেখা সম্ভব৷ গোটা বিশ্ব ঘুরে আন্টস সেই কাজের প্রেরণা পেয়েছেন৷ সেই উদ্যোগের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘মানুষ কীভাবে নিজেদের বাসায় থাকে, তাদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি নিয়ে আমার আগ্রহ ছিল৷ যখনই কোথাও গেছি সঙ্গে নানা স্যুভেনির নিয়ে গেছি৷ এত কিছু সংগ্রহ করি বলে সব মনে নেই৷ জানতাম না একদিন সেগুলি ব্যবহার করবো৷ হ্যাঁ, আমি প্রায় সবকিছুই ব্যবহার করেছি৷''
এখনো পর্যন্ত তিনি তিনটি ভিন্ন ভবনের সমষ্টির খসড়া তৈরি করেছেন৷ প্রত্যেকটির নিজস্ব চরিত্র রয়েছে৷ কিন্তু দেখলে মনে হবে স্পেনের বিশ্ববিখ্যাত স্থপতি আন্টোনি গাউডির স্থাপত্যের স্থানীয় সংস্করণ৷ আন্টস মিরিয়ান্টুস বলেন, ‘‘আমি তাঁর দর্শন অনুসরণ করি৷ মানে আরও অরগ্যানিক আকার আনতে চাই৷ অর্থাৎ প্রকৃতির মাঝে অস্তিত্ব রয়েছে, এমন কিছু৷ সেখানে কখনো সরল রেখা বা নিখুঁত গোল আকার দেখা যায় না৷''
স্যুভেনিয়ার দিয়ে বানানো রঙিন স্থাপত্য
04:10
২০১২ সালে আন্টস নির্মাণের কিছু উপকরণ উপহার হিসেবে পান৷ সে সময়ে রাষ্ট্র হিসেবে সাইপ্রাসের দেউলিয়া হবার উপক্রম দেখা দিয়েছিল৷ ফলে অনেক কোম্পানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ সেরামিক টাইলসের মতো উপকরণ ফেলে দেবার বদলে কিছু কোম্পানি আন্টসকে সেগুলি উপহার হিসেবে দিয়ে দেয়৷ প্রকল্পের শুরুতে অনেক স্বেচ্ছাসেবীও সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন৷
‘ইউফোরিয়া আর্ট ল্যান্ড'-এ এলে গোটা বিশ্বের নানা প্রান্তের চিহ্ন চোখে পড়বে৷ আন্টস জানালেন, ‘‘আফ্রিকা, বিশেষ করে ইথিওপিয়া থেকে প্রেরণা পেয়েছি, কারণ সেখানকার মানুষ পাথর, ঝিনুকসহ প্রকৃতির নানা সূত্র থেকে রং কাজে লাগায়৷ যেমন এটা ইউক্যালিপটাস গাছের কাঠ৷ গাছটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল৷ আমরা আশাপাশের পরিবেশ কাজে লাগিয়ে থিমের সঙ্গে মানানসই উপকরণ ব্যবহারের চেষ্টা করি৷ এটা আমার দাদির ছিল৷ সেখানে একই রকম কিছু দেখে এটাকে ম্যাচিং মনে হলো৷ গোটা মেঝেই প্রাকৃতিক পাথরের টুকরো ও আফ্রিকার সব মোটিফ দিয়ে তৈরি৷''
সূর্য ডুবে গেলে ইউফোরিয়া আর্ট ল্যান্ডে ভিন্ন ধরনের এক জাদুময় পরিবেশ নেমে আসে৷ আন্টস বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের মধ্যে এই মুহূর্তে মাত্র তিনটি ছোট বাড়ি রয়েছে৷ তবে ভবিষ্যতে আমরা বিভিন্ন সংস্কৃতির আরও বাড়ি তৈরি করতে চাই৷''
অরগ্যানিক এই শিল্প প্রকল্পের সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে৷
আবার যেদিন তুমি সমুদ্রস্নানে যাবে...
এই গ্রীষ্মে নির্মল জলে পর্যটকদের স্নানের আহ্বান জানাচ্ছে ইউরোপের সাগর, হ্রদ আর নদীগুলো৷ ইউরোপিয়ান এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, এ সব উৎসের অধিকাংশের জল ইউরোপীয় মানদণ্ডে চমৎকার!
ছবি: imago/Chromorange
গন্তব্য ২২ হাজার
উন্মুক্ত জলের উৎস এবং স্নানের জন্য জনপ্রিয় স্থানগুলোর পরিস্থিতি জানতে গতবছর সমুদ্র সৈকত, নদী ও হ্রদের তীরবর্তী ২২ হাজার স্থানের পানি পরীক্ষা করে দেখেছে ইউরোপিয়ান এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি৷ আর তাতে জার্মানির ৯৭ শতাংশ স্থানের পানির মান ইউরোপীয় মাণদণ্ডে উৎরে গেছে৷ ৯০ শতাংশ উৎসে বইছে ‘চমৎকার’ জল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবার সেরা সাইপ্রাস
এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি বলছে, ইউরোপের মধ্যে সাইপ্রাসই সমুদ্রস্নানের জন্য সেরা৷ গতবারের মতো এবারো সাইপ্রাসের সবগুলো সাগর সৈকত এজেন্সির ‘এক্সেলেন্ট’ নম্বর পেয়েছে৷ এবার এমন এক সময়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো যখন ইউরোপীয়রা গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে বাড়ি থেকে বের হতে শুরু করেছেন৷
ছবি: picture alliance/Stuart Black/Robert Harding
বয়ে যায় ‘জাওয়া’
সাইপ্রাসের পাশাপাশি স্থলবেষ্টিত ছোট্ট দেশ লুক্সেমবুর্গের সব জলাশয়ই এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির ‘ফুল মার্ক’ পেয়েছে৷ লুক্সেমবুর্গের উত্তরাংশে আর্ডেন অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দেশটির দীর্ঘতম নদী সাওয়ার৷ সাঁতার আর নৌকা বাইচের জন্য এ নদী পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়৷
ছবি: imago/imagebroker
ব্লু লেগুন
ছবির এই ব্লু লেগুন সমুদ্রসৈকত সহ মাল্টার ৯৯ শতাংশ জলের আধারই এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির বিচারে ‘চমৎকার’৷ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপী ইউনিয়নে স্নানের জন্য জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ৯৫ শতাংশই ন্যূনতম মান রক্ষা করতে পেরেছে৷
ছবি: picture alliance/Arco Images GmbH
বালুকা বেলা
৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরো নম্বর পেয়ে এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছে ক্রোয়েশিয়ার সৈকত ও নদী তীরগুলো৷ এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির প্রধান হান্স ব্রয়নিক্স বলেন, ‘‘গত দুই তিন বছরে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে৷ এর মানে হলো, আমরা খুব বেশি পরিমাণ বর্জ্য আর সরাসরি জলাশয়ে ফেলছি না৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্বীপ সুন্দরী
এজেন্সির প্রতিবেদনে গ্রিসের ৯৩ শতাংশ উন্মুক্ত জলাশয় পূর্ণ নম্বর পেয়েছে৷ এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির পরিদর্শকরা গ্রিসের দুই হাজার ১৫৫টি জলাশয় পরীক্ষা করে দেখেছেন, সেই জলে ব্যাকটেরিয়া এবং রাসায়নিকের পরিমাণ কতটুকু৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stache
উত্তরের হাওয়া
ইউরোপের সব দেশের পরিস্থিতি অবশ্য অতটা ভালো নয়৷ বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের বহু নদী ও উত্তর সাগরের দীর্ঘ সৈকতের বহু জায়গার জল এনভায়রনমেন্ট এজেন্সিকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি৷ বেলজিয়ামের চার এবং নেদারল্যান্ডসের পাঁচ শতাংশ স্থানের পানির মান এজেন্সির বিচারে ‘খুব খারাপ’৷
ছবি: Martijn Beekman/AFP/Getty Images
বাল্টিকের দুর্দিন
বাল্টিক সাগরের পূর্ব তীরে এস্তোনিয়ার যে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে স্নানার্থীরা প্রতি গ্রীষ্মে জড়ো হন, সেগুলোর ছয় শতাংশের জলই ইউরোপীয় মান অর্জন করতে পারেনি৷ এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির বার্ষিক প্রতিবেদনে এস্তোনিয়ার অবস্থানই সবার নীচে৷