সাইপ্রাস থেকে এই প্রথম গাজার জন্য ত্রাণভর্তি জাহাজ
১৩ মার্চ ২০২৪
সাইপ্রাসের বন্দরে বেশ কয়েকদিন আটকে থাকার পর দুইশ টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গাজার দিকে যাত্রা শুরু করলো জাহাজ।
বিজ্ঞাপন
সাইপ্রাস থেকে জলপথে এই প্রথম গাজার মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে কোনো জাহাজ। স্পেনের একটি এনজিও-র এই জাহাজে আটা, চাল, বিনস, ক্যানভর্তি টুনামাছ, মুরগি এবং অন্য জিনিস আছে।
দুই দিন যাত্রার পর তা গন্তব্যে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইসরায়েল এই সমুদ্রপথকে স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু অনেক সংস্থার মতে, প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য জিনিস নিয়ে যাচ্ছে এই জাহাজটি। ফলে তাতে বিশেষ লাভ হবে না।
অ্যামেরিকা, ইইউ ও সৌদি আরব মিলে গাজায় এই ত্রণ দেয়ার কাজ করছে। গাজার পরিস্থিতি এখনো বেশ খারাপ। সেখানে মানুষ উপযুক্ত পরিমাণ খাবার পাচ্ছেন না।
জাতিসংঘ বিমানের মাধ্যমে ত্রাণ দিচ্ছে। কিন্তু তাদের মতে, এটা একেবারেই পর্যাপ্ত ও কার্যকর ব্যবস্থা নয়।
রাফায় আক্রমণ চলবে: নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার আবার জানিয়ে দিয়েছেন, রাফাতে সামরিক অভিযান চলবে। রাফাতে আক্রমণ না করার জন্য নেতানিয়াহুর উপর আন্তর্জাতিক চাপ ছিল। তারপরেও নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ইসরায়েল পরিকল্পনামাফিক চলবে এবং রাফায় অভিযান বন্ধ হবে না।
গাজায় যে পরিমাণ মানবিক সহায়তা যাচ্ছে
গত সপ্তাহান্তে রাফা সীমান্ত দিয়ে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো শুরু হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ সহায়তা পাঠানো হয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের?
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কত ট্রাক সহায়তা?
সপ্তাহান্তে সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর গাজায় শনিবার ২০ ট্রাক এবং রোববার ১৪ ট্রাক মিলিয়ে মোট ৩৪ ট্রাক সহায়তা পাঠানো হয়৷ সোমবার আরো ৪০টি ট্রাকে সহায়তা পাঠানোর খবর পাওয়া যায়৷ এরপর আর কোনো সহায়তার ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে কি না সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে?
জানা গেছে ট্রাকে করে খাবার পানি, ওষুধ, খাবার এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল৷ প্রবেশ পথে ট্রাকগুলোকে যাচাই-বাছাই করছে ইসরায়েলের নিরাপত্তারক্ষীরা৷ সহায়তার নামে যেন কোনো অস্ত্র প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যই ট্রাকগুলোতে তল্লাশি চালায় ইসারায়েলি কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কী দরকার গাজাবাসীর?
দাতা সংস্থাগুলো বলছে, গাজার সাধারণ মানুষের নিত্য চাহিদা মেটাতে দিনে অন্তত একশ ট্রাক সহায়তা প্রয়োজন৷ খাবার, ওষুধ ছাড়াও জ্বালানি সহযোগিতা দেওয়ার আহ্বান ত্রাণ সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর৷ গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় পানির সংকট তৈরি হচ্ছে৷ তাছাড়া হাসপাতালগুলোকে চালু রাখতে প্রয়োজন জ্বালানি৷
ছবি: Hatem Ali/AP/picture alliance
জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে?
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জ্বালানি নিয়ে ৬টি ট্যাংকার রাফাহ ক্রসিং অতিক্রম করেছে যদিও স্বতন্ত্র সূত্র থেকে এটি নিশ্চিত করা যায়নি৷ তবে ফিলিস্তিনের একজন মুখপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এমন তথ্যের কথা অস্বীকার করেছে৷ এদিকে, ফিলিস্তিনের বেসামরিক বিষয়ক ইসরায়েলের ডিফেন্স বডির পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতিসংঘের একটি তেলের ডিপো থেকে হাসপাতালে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়েছে৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
অপেক্ষমাণ সহায়তা
সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর থেকে গাজায় প্রবেশের লক্ষ্যে কয়েক দিন ধরে সহায়তার ট্রাক অপেক্ষমাণ রয়েছে৷ জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা জানায়, গাজা সীমান্তে সংস্থাটির এক হাজার টন খাদ্য সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছে৷
ছবি: Ibraheem Abu Mustafa/REUTERS
সহায়তায় কোন কোন দেশ
ফিলিস্তিনীদের সহায়তায় এরইমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিশরে সহায়তা পাঠিয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, রাশিয়া, তুরস্ক এবং রুয়ান্ডাসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ৷
ছবি: Mohammed Asad/AP Photo/picture alliance
জার্মানির অর্থ সহায়তা বৃদ্ধি
গাজার বসবাসরত সাধারণ মানুষের জন্য ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বাড়তি সহায়তা ঘোষণা করেছে জার্মানি৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দেন৷ জার্মানির এই সহয়তা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য বেয়াবকের৷
ছবি: Annette Riedl/dpa/picture alliance
7 ছবি1 | 7
লড়াই শুরু হওয়ার পর রাফাতে ১০ লাখের বেশি বেসামরিক মানুষ আর্শ্রয় নিয়েছেন।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ''আমরা রাফায় আমাদের কাজ শেষ করব। বেসামরিক মানুষের যাতে ক্ষতি না হয়, সেটা আমরা দেখব।''
মঙ্গলবারই মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুলিভান বলেছেন, ''বেসামরিক মানুষকে নিরাপত্তা না দিয়ে রাফাতে অফিযান প্রেসিডেন্ট বাইডেন কখনই সমর্থন করবেন না।''
ইসরায়েল কবে থেকে রাফা অভিযানে নামবে তা জানা যায়নি।
ইসরায়েলের দাবি
ইসরায়েলের সেনা মঙ্গলবার দাবি করেছে, তারা লেবানন ও সিরিয়ায় গত পাঁচ মাসে সাড়ে চার হাজার বার হেজবোল্লাহ পজিশনের উপর আঘাত হেনেছে। এর ফলে তিনশর মতো সন্ত্রাসবাদী মারা গেছে ও ৭৫০ জন আহত হয়েছে
গাজা : যেখানে জীবিতের ঘর আর মৃতের কবরের অভাব
গাজা উপত্যকায় বাসস্থানের সংকট এখন এমন চরমে যে কবরস্থানেও ঘর বানিয়ে থাকছেন অনেকে৷ পাশাপাশি সদ্য মৃতদের সমাধিস্থ করাও হয়ে উঠেছে খুব বড় চ্যালেঞ্জ৷ দ্বিমুখী সংকট দিনদিন বাড়ছে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
কবরস্থানে কামিলদিয়া কুহাইল
ছবির এই নারীর নাম কামিলিয়া কুহাইল৷ গাজার শেখ শাবান কবরস্থানে দুই মাসের সন্তানকে ঘুম পাড়াচ্ছেন তিনি৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
মৃতরা কথা বলতে পারলে কী হতো?
আর কোথাও থাকার ব্যবস্থা না হওয়ায় কবরস্থানে বসবাসের ব্যবস্থা করেছেন কামিলিয়ার স্বামী৷ কবরস্থানে থাকতে কেমন লাগে জানতে চাইলে ৩০ বছর বয়সি কামিলিয়া বলেন, ‘‘উপায় নেই বলেই থাকি৷ মৃতরা যদি কথা বলতে পারতেন, তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের বলতেন- এখান থেকে দূর হও তোমরা!’’
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
দুর্গন্ধের সঙ্গে বাস
কবরের ওপরেই গড়ে উঠেছে ছয় সন্তান ও স্বামী-স্ত্রী মিলিয়ে আটজনের থাকার ঘর৷ ছোট পরিসরের কারণে গাদাগাদি করেই থাকতে হয়৷ ঘরে সব সময় একটা দুর্গন্ধ থাকে৷ কিছুতেই দূর করা যায় না৷ কামিলিয়া বলেন, ‘‘ওটা মৃতদের গন্ধ৷’’
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
গোরস্থানে স্বপ্ন
কবরস্থানে পড়ছে কামিলিয়ার বড় মেয়ে লামিস৷ লেখাপড়া শিখে ভালো আয়ের কাজ করতে চায় ও৷ আয় এখনো অবশ্য করে৷ মৃতদের দাফন করার সময় পানি সরবরাহ করে, বিনিময়ে যা পায় তা সংসার চালানোর জন্য তুলে দেয় মায়ের হাতে৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
গাজায় ভূমির সংকট
কামিলিয়া কুহাইলার মতো অনেকেই এখন কবরস্থানে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন৷ গাজায় যুদ্ধ লেগেই থাকে৷ যুদ্ধে নতুন করে অনেক মানুষ ঘরছাড়া হয়৷ তাদের জন্য আবার ঘর তৈরি করা, যুদ্ধে বা স্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সমাহিত করা এখন খুব বড় এক চ্যালেঞ্জ৷ কারণ, সাত লাখ ৫০ হাজার অধিবাসীর শহর গাজায় বাসস্থান বাড়ছে না, মৃত্যুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কবরস্থানও বাড়ানো যাচ্ছে না!
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
দরকার ১৪ হাজার আবাসন
গাজার গৃহায়ণ উপ-মন্ত্রী নাজি সারহান জানান, গাজা উপত্যকার আবাসন সমস্যা দূর করতে হলে এখন কমপক্ষে ১৪ হাজার ঘর তৈরি করা দরকার৷এছাড়া কবরের জন্যও জায়গা দরকার৷ কারণ, ছোট-বড় মিলিয়ে যে ৬৪টি কবরস্থান রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোতেই এখন আর নতুন করে কাউকে সমাহিত করার জায়গা নেই৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
কবরস্থানও জরুরি প্রয়োজন
আর জায়গা না থাকায় গাজার মোট ২৪টি কবরস্থান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ শেখ রাদওয়ান কবরস্থানের ওয়াকফ গার্ড খালেদ হেজাজি জানান, পুরোনো কিছু কবরস্থান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে বাড়ির কাছে কবরস্থানে জোর করে মৃত স্বজনদের সমাধিস্থ করছেন৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
7 ছবি1 | 7
সম্প্রতি লেবাননের অনেকখানি ভিতরে গিয়ে হেজবোল্লাহ টার্গেটে আক্রমণ করছে ইসরায়েল। হেজবোল্লাহকে ইরান সমর্থন করে। আর তারা ঠিক করেছে, যতদিন গাজায় হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের লড়াই চলবে, ততদিন তারাও আক্রমণ চালিয়ে যাবে। হামাসকে জঙ্গি সংগঠন বলে মনে করে জার্মানি, ইইউ-সহ বেশ কয়েকটি দেশ।
ইসরায়েল জানিয়েছে, মঙ্গলবারও দুইটি সামরিক জেট বিমান বেক্কা ভ্যালিতে হেজবোল্লাহ মিলিটারি কম্য়ান্ড সেন্টারে গিয়ে আঘাত হেনেছে।