1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাইবার গুপ্তচরবৃত্তিতে আর্থিক খাতে ঝুঁকি

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৮ অক্টোবর ২০২১

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে একাধিক সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির চেষ্টা চালানো হয়েছে বলে একটি সংস্থার পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে৷ আইসিটি বিভাগের বিজিডি ই-গভ সার্ট বুধবার এ বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে৷  

Symbolbild Computerkriminalität
ছবি: picture alliance / Alexey Malgavko/Sputnik/dpa

ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির পরিচালক (অপারেশন্স) তারেক বরকতউল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের সাইবার হুমকি গোয়েন্দা ইউনিট সম্প্রতি এপিটি-সি-৬১ (APT-C-61) নামে একটি গ্রুপের সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেছে৷ তাদের এ ধরনের তৎপরতা ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে ধারাবাহিকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছিল৷ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাসহ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর গোপন তথ্য চুরি করা সন্দেহজনক গ্রুপটির লক্ষ্য৷ এই তথ্য চুরি করে তারা ওই প্রতিষ্ঠানকে আক্রান্ত করতে চেয়েছিল নাকি চুরি করা তথ্য কারও কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিল সেটা জানা যায়নি৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থাকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর চেষ্টা করছে৷ এই হামলাকারীরা ঠিক কোন প্রতিষ্ঠানের তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, সেটা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি৷ এ ছাড়া কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানও আমাদের কাছে নিজেদের সাইটে সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে জানায়নি৷ এখন পর্যন্ত এই গ্রুপের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে আছে৷’’

বিজিডি ই-গভ সার্ট তাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইটে জানিয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, সন্দেহজনক গ্রুপটির লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাসহ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর গোপন তথ্য চুরি করা৷ কোনো প্রতিষ্ঠান যদি সন্দেহজনক কিছু লক্ষ্য করে, তাহলে সার্ট টিমকে জানানোর জন্য বলা হয়েছে৷ প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা দুর্বল, তাদের এখনই সতর্ক হতে হবে৷

তারেক বরকতউল্লাহ

This browser does not support the audio element.

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সার্ট যে তথ্য দিয়েছে সেটা আমাদের অনেক বেশি গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে৷ আমরা তো এখন সবকিছুই ডিজিটালাইজেশন করে ফেলেছি৷ ফলে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকি যে আছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ যে কেউ এখন এটা হ্যাক করতে পারলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উলটপালট করে ফেলতে পারে৷ এমনকি টাকাও চুরি করে নিয়ে যেতে পারে৷ এই সময়ে সামাজিক মাধ্যম নিয়ে আমরা অনেক বেশি ব্যস্ত সময় পার করছি, আসলে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়েও অনেক বেশি মনযোগ দেওয়া দরকার৷ সরকার এখন সেদিকে নজর দিচ্ছে৷’’

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় ঘাটতি অনেক

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক‘বাংলাদেশ ব্যাংকের’ অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ৮০৮ কোটি টাকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করা হয়৷ এই টাকা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে গচ্ছিত ছিল৷ দেশি-বিদেশি নানা উদ্যোগের পরও এই টাকা উদ্ধার করা যায়নি৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরি যাওয়ার ঘটনার পর বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে নাড়াচড়া শুরু হয়৷ অনেক প্রতিষ্ঠানই নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করে৷ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার নিরাপত্তা এখন পর্যন্ত কতটা জোরদার করা গেছে? জানতে চাইলে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিকিউরিটি সচেতনতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই৷ অনেক প্রতিষ্ঠান আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করছে৷ বিশেষ করে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে পরিমাণ প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল সেখানে একটা বড় ধরনের ঘাটতি আছে৷ যেটার সুযোগ অনেকে নেওয়ার চেষ্টা করবে৷ আগে তো আমরা অনেক বড় বিপদে পড়েছি৷ এখনও যে আমরা খুব বেশি নিরাপদ আছি, সেটা দাবি করার কোন সুযোগ নেই৷ সিকিউরিটির বিষয়টা প্রতিনিয়ত দেখভাল করতে হয়৷ এটা ঠিক আছে কি-না সেটার জন্য যে প্রস্তুতির জায়গাটা সেটা উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কোথাও আসলে ঠিক সেভাবে নেই৷ আমাদের এখানে তো সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে আর্থিক খাত৷ তাদের নিরাপত্তার জায়গা এখনও মানসম্পন্ন জায়গায় পৌঁছেনি৷ আমাদের সব ব্যাংকই কিন্তু অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করে৷ ফলে বড় ধরনের একটা ঝুঁকির মধ্যে আমরা আছি৷ এখানে ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে৷ এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই৷ আমাদের এখানে উচ্চ পর্যায়ের একটা সিকিউরিটি এজেন্সি দরকার৷ যাদের তত্ত্বাবধানে থেকে অন্যরা কাজ করবে৷ আমরা মেট্টোরেল চালু করতে যাচ্ছি, আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করতে যাচ্ছি৷ এগুলোর পুরোটাই অটোমেশন৷ ফলে এখানে সাইবার সিকিউরিটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ সামগ্রিক বিষয়টা দেখার জন্য এখানে কোন কর্তৃপক্ষ নেই, এটাই বাস্তবতা৷ এখানেই আমাদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার৷’’

তানভীর হাসান জোহা

This browser does not support the audio element.

ক্র্যাক ভার্সন সফটওয়্যারে গুপ্তচরবৃত্তিকে আমন্ত্রণ

সাইবার সিকিউরিটিতে আমরা কোন অবস্থায় আছি? জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) সহকারি অধ্যাপক ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানে যে গুপ্তচরবৃত্তি হচ্ছে সেটা যে সার্ট অনুধাবন করতে পেরেছে এ জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই৷ বাংলাদেশে যখন থেকে ডিজিটালাইজেশন শুরু হয়েছে তখন থেকেই গুপ্তচরবৃত্তি শুরু হয়েছে৷ বিষয়টা দেরি করে হলেও তারা অনুধাবন করতে পেরেছে৷ বাংলাদেশের বেশিরভাগ সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স নিয়ে সফটওয়্যারের ব্যবহার করে না৷ উইন্ডোজের কথাই যদি বলি, আমরা যেগুলো ব্যবহার করি সেগুলো ক্র্যাক ভার্সন৷ একটা ক্র্যাক ভার্সন হচ্ছে একটা সাক্ষাৎ ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির সম্পদ মাত্র৷ আপনি যতই ক্র্যাক ভার্সন সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন ততই আপনার ডিভাইসটি আপনি ছাড়াও আরও একজনের৷ ক্র্যাক ভার্সন সফটওয়্যার হলো গুপ্তচরবৃত্তিকে আমন্ত্রণ জানানো৷ এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে৷ আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের কতজন লাইসেন্স করা উইন্ডোজ ব্যবহার করেন? এই সংখ্যা খুবই অল্প৷ আমাদের প্রথম গুপ্তচরের ফাঁদ হচ্ছে ক্র্যাক ভার্সনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা৷ আর দ্বিতীয় বক্তব্য হচ্ছে, আমরা যা খুশি তাই এটাচমেন্ট ডাউনলোড করে ফেলি৷ মানুষের সচেতনতার অভাব তো আছেই৷ এর ফলে তারা নিজেরাই অপরাধের শিকার হচ্ছেন৷ তারা যদি কোন ডকুমেন্ট বা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন কাউকে পাঠাই সেই মেশিনও গুপ্তচরবৃত্তির মধ্যে পড়ে যাবে৷ ফলে আমাদের এখনই উচিৎ আইন করে সমস্ত ডিভাইসে বৈধ সফটওয়্যার ব্যবহার করা৷ সবমিলিয়ে আমাদের সচেতনতা যদি না বাড়ে তাহলে আইন করে বা রিপোর্ট করে এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যাবে না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ