1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে বাকস্বাধীনতার সুরক্ষা কোথায়?

১০ জানুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে৷ বিশেষ করে এটি বাকস্বাধীনতার অনুকূল নয় বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন৷ তবে সরকারের এক পরামর্শক বলছেন, অনেকেই আইনের খসড়াটি ভালোভাবে না পড়ে সমালোচনা করছেন৷

বাংলাদেশের বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ বাতিল হলেও নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে৷
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে বাকস্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে (প্রতীকী ছবি)ছবি: SkazovD/Pond5 Images/IMAGO

বাংলাদেশের বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ বাতিল হলেও নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে৷ ইতোমধ্যে অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ৷

বিশ্লেষকরা এই অধ্যাদেশে কনটেন্ট অপসারণ ও ব্লক করার সুযোগ থাকার সমালোচনা করে জানিয়েছেন, এই বিষয়ে বিচারিক পর্যালোচনা, জবাবদিহি ও পরিসংখ্যান প্রকাশের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি৷ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কনটেন্ট ব্লক বা অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হলে অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ এই ধারা সাংবাদিকতা, অনলাইন অ্যাকটিভিজম এবং ওটিটি প্ল্যাটফরমের জন্য বাধা হবে৷ 

‘অনুভূতি, মানহানির সংজ্ঞা দিয়ে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি’

This browser does not support the audio element.

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এতে নতুনভাবে ব্ল্যাকমেইলিং বা অশ্লীল বিষয়বস্তু প্রকাশের বিষয়টি সংযোজন করা হয়েছে৷ কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে৷ ‘ব্ল্যাকমেইলিং' এর একটি ব্যাখ্যা দেয়া হলেও ‘অশ্লীল' বিষয়বস্তুর কোনো ব্যাখ্যা নেই৷ ফলে এর অপব্যবহার হতে পারে

ধর্মীয় অনুভূতি ও মানহানিকে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি৷ ফলে এখানেও অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে৷

‘সাইবার বুলিং'কে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলেও সেটি সুবিধামতো ব্যাখ্যা করার সুযোগ আছে৷ ফলে এর অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা আছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷

অপব্যবহারের সুযোগ রয়ে গেছে'

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এই বিষয়ে বলেন, ‘‘সমস্যা হলো এখানে জামিন যোগ্য এবং অযোগ্য দুই ধরনের ধারাই আছে৷ ফলে হয়রানি করতে চাইলে জামিন যোগ্য ধারার সঙ্গে জামিন অযোগ্য ধারা জুড়ে দেবে৷ আসলে নতুন যে আইনটি হয়েছে তা পুরনো আইনের সঙ্গে কিছু যোগ করে কিছু বাদ দিয়ে করা হয়েছে৷ কিন্তু সাইবার অপরাধ বিস্তৃত বিষয় এবং সংজ্ঞা এর মধ্যে নাই৷''

তিনি বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে বলেন, ‘‘বিটিআরসি চাইলে যে কোনো কনটেন্ট সরিয়ে নিতে পারবে৷ আপনার আমার তথ্য সরিয়ে নেয়ার কোনো পদ্ধতি আইনে বলা হয়নি৷ ফলে এর অপব্যবহার হবেই৷ সাইবার বুলিংয়ের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কোনো সংজ্ঞা দেয়া হয়নি৷ হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে পজিটিভ হ্যাকিং নিয়ে কেনো কথা বলা হয়নি৷''

তার কথা, ‘‘এখানে অনুভূতি, মানহানি এগুলোর কোনো সংজ্ঞা দিয়ে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি৷ ফলে এর অপব্যবহার হবে৷''

‘‘এনটিএমসি এখনো কার্যকর৷ বিগত সরকারের সময় এই প্রতিষ্ঠানটি হয়রানির কাজে ব্যবহার করা হয়েছে,'' বলেন বড়ুয়া৷

বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘‘আগের আইনে ছিল যখন তখন কোনো নাগরিকের মোবাইল ফোন তল্লাশি করা যাবে, ডিভাইস চেক করা যাবে, ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে সেই বিষয়গুলো নতুন আইনেও আছে৷ আর সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় পুলিশকে বিনা ওয়ারেন্টে তল্লাশি ও আটকের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷ যা আগেও ছিল৷ ফলে বাকস্বাধীনতা আর ব্যক্তিস্বাধীনতা হুমকির মুখেই থাকবে৷''

‘বেশ কয়েকটি ধারা মানুষকে ভয়ের মধ্যে ফেলে দেবে’

This browser does not support the audio element.

আইন হতে হবে বাকস্বাধীনতার পক্ষে'

বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক প্রধান ও মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, ‘‘আমার আপত্তি হলো কথা বলার জন্য ফৌজদারি আইনে শাস্তির বিধান রাখা নিয়ে৷ কথা বলার স্বাধীনতার ওপর নির্ভর করছে বাকস্বাধীনতার চর্চা হবে কি হবে না৷ আইনটিতে দেখতে পাচ্ছি বেশ কয়েকটি ধারা এমন যা কথা বলার ক্ষেত্রে মানুষকে ভয়ের মধ্যে ফেলে দেবে৷ এই ধরনে ধারা আগের আইনেও ছিল৷ আমরা কথা আইন হতে হবে বাকস্বাধীনতার পক্ষে৷'' 

তার কথা, ‘‘এই আইনটি তৈরি করার আগে যারা বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করেন তাদের সঙ্গে কথা বলা দরকার ছিল৷''

তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি পরামর্শকের বক্তব্য

তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের নীতি পরামর্শক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘‘নতুন আইনে জামিন যোগ্য ধারা বাড়ানো হয়েছে৷ শাস্তি কমানো হয়েছে৷ সাইবার অপরাধের নতুন ক্ষেত্র যুক্ত হয়েছে৷ ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে বিচারককে স্পেস দেয়া হয়েছে৷''

তার কথা, ‘‘আদালত যখন ছুটিতে থাকবে তখনই বিনা ওয়ারেন্টে পুলিশ তল্লাশি চালাতে পারবে৷ নয়তো অপরাধী পালাতে পারে৷ অপরাধের আলামত সরিয়ে ফেলতে পারে৷ কনটেন্ট ব্লকিং-এর ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে কী ধরনের কনটেন্ট ব্লক করা হবে তা প্রকাশ করা হবে৷ কিছু ধারা রহিত করা হয়েছে৷''

ত্যৈয়ব বলেন, ‘‘সভ্যতা ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে যদি আইন প্রয়োগ না হয় তাহলে যেকোনো আইনের অপব্যবহার হতে পারে৷ আমরা এটা নিশ্চয়তা দিতে পারি, এই সরকার এই দুইটি বিষয় খেয়াল রেখেই আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করবে৷''

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম কতটা স্বাধীন হয়েছে?

05:06

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ