সাইবেরিয়ায় দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। আগুন নেভাতে সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার পাঠাল রাশিয়া।
বিজ্ঞাপন
প্রায় আট লাখ হেক্টর এলাকা জুড়ে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। একে হিট ওয়েভ চলছে, তার উপর জোরে হাওয়া বইছে। ফলে আগুন নেভানোর কাজ কঠিন হয়ে পড়ছে। আগুন নেভানোর যাবতীয় প্রয়াস ব্যর্থ হচ্ছে। এই অবস্থায় রাশিয়া সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, সেনার কাছে যে পরিবহন বিমান আছে, তা দিয়ে ওয়াটার বম্বিং করা হয়েছে। আর হেলিকপ্টারগুলি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি নিয়ে গেছে। কোন এলাকায় দাবানল সব চেয়ে জোরালো, সেটাও তারা দেখছে।
দাবানল নেভানোর দায়িত্বে থাকা সংস্থা জানিয়েছে, সব চেয়ে খারাপ অবস্থা ইয়াকুটিয়াতে। সেখানে পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার হেক্টর জুড়ে ১৪৪টি দাবানল জ্বলছে। সবমিলিয়ে সাইবেরিয়ায় ৩০০টি দাবানল জ্বলছে।
স্থানীয় মানুষ প্রেসিডেন্ট পুটিনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন যে, তিনি যেন আগুন নেভানোর জন্য আরো যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত কর্মী পাঠান। তারপর এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দাবানলের বছর ২০১৯
২০১৯ সালে পৃথিবীর নানাপ্রান্ত আক্রান্ত হয়েছে দাবানলে৷ কখনো তীব্র গরমে জ্বলেছে আগুন, কখনো অভিযোগ উঠেছে নাশকতার৷ কিন্তু কারণ যা-ই হোক, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য, ঘটেছে প্রাণহানি৷
ছবি: Reuters/S. N. Bikes
জ্বলেছে পৃথিবীর ফুসফুস
কয়েক সপ্তাহ ধরে আগুন জ্বলে বিশ্বের বৃহত্তম রেইনফরেস্ট আমাজনে৷ গ্রহের ২০ শতাংশ অক্সিজেন একাই উৎপাদন করে এ বন৷ ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে জানায়, চলতি বছর ব্রাজিলজুড়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৫ শতাংশ বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ বেশিরভাগই ঘটেছে আমাজন অঞ্চলে৷ ফসল ফলানোর জন্য কৃষকরাই বন সাফ করছেন, এমন অভিযোগও উঠেছে৷
ছবি: REUTERS
হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
ব্রাজিলে এ বছর শুধু আমাজনেই আগুন লাগেনি৷ দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের কেরাডো তৃণভূমিতে আগুন লাগার ঘটনা আরো বেশি৷ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ অঞ্চলটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকাতেও রয়েছে৷ তৃণভূমির অর্ধেকের বেশি সবুজ এলাকা এরই মধ্যে ধ্বংস হয়েছে৷
ছবি: DW/J. Velozo
ওরাংওটাং
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ও বোর্নিওতে ৪০ হাজার হেক্টরেরও বেশি এলাকাজুড়ে মাসখানেক ধরে আগুন জ্বলেছে৷ এরই মধ্যে অস্ত্বিত্বের হুমকিতে থাকা অনেক ওরাংওটাং এসব দাবানলে প্রাণ হারিয়েছে৷ যারা প্রাণে বেঁচেছে, তারাও হারিয়েছে পর্যাপ্ত বাসস্থান৷ এসব এলাকায় মাটির নীচে গাছের শক্ত শেকড় থাকায় আগুন নেভানোও বেশ কঠিন হয়ে পড়়ে৷ গবেষকরা বলছেন, এই আগুনে ৭০ কোটি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড মুক্ত হয়েছে পরিবেশে৷
ছবি: REUTERS
পুড়ে শেষ ক্রান্তীয় জলাভূমি
বিশ্বের বৃহত্তম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলাভূমি, প্যান্টানালও এ বছর দাবানলের শিকার হয়েছে৷ প্যান্টানাল জলাভূমির বেশিরভাগ অংশই ব্রাজিলে অবস্থিত, তবে বলিভিয়া এবং প্যারাগুয়েতেও এর কিছু অংশ রয়েছে৷ এই বছরের আগুনের ঘটনার সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে৷ আট হাজার দাবানলের খবর মিলেছে এই এলাকায়৷ বলিভিয়াতেই ধ্বংস হয়েছে প্রায় ১২ লাখ হেক্টর বন৷ এ ঘটনাকে দেশটির ইতিহাসের বৃহত্তম জীববিপর্যয় বলে অভিহিত করেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Raldes
ক্যালিফোর্নিয়ার বুশফায়ার
এ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যজুড়ে ছড়ায় বুশফায়ার৷ প্রচণ্ড গরমে শুষ্ক আবহাওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন৷ মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়, ধ্বংস হয় ঘরবাড়ি৷ আগুনে মারা যান তিন জন৷ কয়েক হাজার মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Press/H. Gutknecht
আর্কটিকেও আগুন
বরফে আচ্ছাদিত আর্কটিক সার্কেলেও এ বছর আগুন লেগেছে৷ সাইবেরিয়াতে তিন মাস ধরে শত শত দাবানলে ৪০ লাখ হেক্টর বনভূমি পুড়ে গেছে৷ আগুন নিয়ন্ত্রণে রাশিয়াকে সেনা মোতায়েন পর্যন্ত করতে হয়৷ আলাস্কাতে ৪০০-রও বেশি আগুনের ঘটনা ঘটেছে৷ দাবানল ছড়িয়েছে ক্যানাডা এবং গ্রিনল্যান্ডেও৷
ছবি: Imago Images/ITAR-TASS
বুশফায়ারে নিহত হাজারো কোয়ালা
অস্ট্রেলিয়ায় এ বছর নজিরবিহীন বুশফায়ারের ঘটনা ঘটে৷ খরা, শুকনো তাপমাত্রা এবং শুকনো বাতাসে ১০ লাখ হেক্টরের বেশি আলাকা জুড়ে আগুন জ্বলে৷ এতে চার জন মানুষের পাশাপাশি প্রাণহানি ঘটে অন্তত এক হাজার কোয়ালার৷ কোয়ালাকে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা একটি প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ এ বছর এমন ঝুঁকিতে থাকা প্রাণীগুলোই দাবানলের ঘটনায় আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: Reuters/S. N. Bikes
7 ছবি1 | 7
সমালোচনা
এর আগে গ্রিস, তুরস্ককে আগুন নেভানোর কাজে সাহায্য করেছে রাশিয়া। কিন্তু নিজের দেশের দাবানল নেভানো নিয়ে তারা তৎপর নয় বলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। বুধবার সরকার জানিয়েছে, এই দাবানল অপ্রত্যাশিত কাণ্ড করছে। আগে তার দাপট যতটা ছিল, এখন তা অনেক বেশি।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দাবানল এমন চেহারা নিয়েছে যা অতীতে কখনো হয়নি। সাইবেরিয়ার এই অঞ্চলে প্রায় প্রতি বছর দাবানল লাগে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এখানে অস্বাভাবিক গরম পড়ছে। একে গরম, তার উপর প্রবল হাওয়া আগুন নেভানোর কাজ কঠিন করে দিচ্ছে।