বেড়ালের ছবি এঁকে, কার্টুন ফিল্ম তৈরি করে, তাদের নিয়ে ছবির বই বার করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে আনন্দ দেবার কথা ভাবতে পারেন? লন্ডনের সাইমন টোফিল্ড তাঁর ‘ক্যাটদের' নিয়ে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
সাইমন টোফিল্ডের পোষা বিড়ালরা যে সব কাণ্ডকারখানা করে, সাইমন তার ছবি আঁকেন৷ ‘সাইমন’স ক্যাট' সিরিজের কার্টুন ছবিগুলো ইউটিউবে বিরাট ‘হিট'৷ সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ টোমাস রস বলেন, ‘‘বিড়াল আর হাস্যরসের মিশ্রণ ইন্টারনেটে চিরকাল ভালো চলে৷ সাইমন টোফিল্ড সেটা খুব ভালো পারেন৷ তাঁর নিজস্ব একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে, বহু ফ্যান আছে৷ সাইমনের ফিল্ম থেকে ফ্যানরা খুব স্পষ্ট ধারণা করতে পারেন, সাইমন তাঁর বিড়ালদের নিয়ে কীভাবে থাকেন আর কী ভাবেন৷''
বাড়িতে নিজের বিড়াল, বাইরে পাড়া-প্রতিবেশীর বিড়ালদের দেখে সাইমন তাঁর কার্টুন ছবি আর ছবির বইগুলোর অনুপ্রেরণা পান৷ তাঁর প্রথম বইটাই অসম্ভব জনপ্রিয় হয়, ২৪টি দেশে তার সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে৷ ডয়চে ভেলের রিপোর্টার হেন্ড্রিক ভেলিং-এর মতে, ‘‘সাইমন’স ক্যাট-এর বিশেষত্ব হলো, সাইমন জিনিসটা সত্যিই খুব ভালো পারেন: মাত্র কয়েকটি রেখা দিয়ে এমন একটি বিড়াল আঁকেন, যার নিজস্ব চরিত্র থাকা সত্ত্বেও সে যে কারো বিড়াল হতে পারে৷ যাতে প্রত্যেক মার্জারপ্রেমী ভাবেন – আরে, ও তো আমার বিড়াল!''
বিখ্যাত বিড়ালদের কথা
কিছু বিড়াল সারা বিশ্বে অনেক মানুষের চেয়েও বেশি বিখ্যাত, জনপ্রিয়৷ সবই অবশ্য কাল্পনিক চরিত্র৷ কার্টুন বা চলচ্চিত্রের সেইসব বিড়ালদের নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Photo Itar-Tass
অপ্রতিরোধ্য এক বিড়াল
‘শ্রেক’ ছবিতে দেখা যায় তাকে৷ বিড়ালটির নাম ‘পুস ইন বুটস’৷ বিড়াল হলে কী হবে, অপরাধীকে শায়েস্তা করতে তার জুড়ি মেলা ভার৷ ভীষণ ক্ষিপ্রগতির এ বেড়ালের থাবায় অনেক শক্তি৷ আর নখগুলো এমন ধারালো যে তা দিয়ে অনায়াসে কাচও কাটা সম্ভব৷ এত ক্ষমতা যার, সে বিখ্যাত বা জনপ্রিয় না হয়ে পারে!
ছবি: picture-alliance/dpa/Photo Itar-Tass
অভিজাত ‘অ্যারিস্টোক্যাটস’
ওয়াল্ট ডিজনির ‘অ্যারিস্টোক্যাটস’ যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা কখনোই ডাচেস নামের এক বিড়ালি আর তার তিন সন্তানের কথা কোনোদিন ভুলতে পারবেন না৷ বিড়ালদের সমাজে আভিজাত্যের জন্য পরিচিত তারা৷ আভিজাত্যের সমস্যাও অনেক৷ ও’ম্যালি এবং অন্যান্য রাস্তার বিড়ালের সঙ্গে হাঙ্গামা লেগেই থাকে তাদের৷ অ্যানিমেশন মুভিটির বিড়ালদের আবার সংগীত, বিশেষ করে জ্যাজ সংগীত এবং চাঁদের আলোর রোমান্টিকতা খুব পছন্দ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Reisfeld
রক ‘এন’ রোল এবং যৌনতা প্রিয় বিড়াল
গত শতকের সত্তরের দশকে তৈরি হয় অ্যানিমেশন মুভি ‘ফ্রিটজ দ্য ক্যাট’৷ রবার্ট ক্রাম্ব-এর কল্পনার জগত থেকে নেমে আসা বিড়ালেরা সেখানে মানুষের মতোই পানাহারে অভ্যস্ত৷ অবসরে রক ‘এন’ রোল শোনে, সেক্স পার্টিও উপভোগ করে তারা৷
ছবি: picture alliance/United Archives/IFTN
অসহায় সিলভেস্টার
সাড়া জাগানো আরেক অ্যানিমেটেড মুভি ‘সিলভেস্টার অ্যান্ড টুইটি’৷ সেখানে অবশ্য বিড়ালটি দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নয়৷ সিলভেস্টার নামের বিড়ালটি বরং ছোট্ট এক গানের পাখি টুইটির সামনেই অসহায়৷ সিলভেস্টারের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য টুইটিকে ধরে শায়েস্তা করা৷ কিন্তু কিছুতেই সেই লক্ষ্য পূরণ হয়না৷ প্রত্যেকবার টুইটির গতির কাছে হেরে যায় সিলভেস্টার৷
ছবি: picture alliance/United Archives/IFTN
অস্কার মাতানো টম অ্যান্ড জেরি
সেই ১৯৪০ সাল থেকে শিশু-কিশোরদের মাতিয়ে রেখেছে ‘টম অ্যান্ড জেরি’৷ প্রথমে আত্মপ্রকাশ রূপালি পর্দায়৷ ১৯৬৭ সালে টেলিভিশনেও হাজির হয় টম নামের এক বিড়ালের সঙ্গে জেরি নামের এক ইঁদুরের মজাদার দ্বন্দ্বের গল্প৷ টমও চায় জেরিকে ধরে শিক্ষা দিতে৷ কিন্তু আকারে ছোট হলেও বুদ্ধি আর গতিতে অনেক এগিয়ে জেরি৷ তাই বারবার শেষ পর্যন্ত টমই হারে৷ টম অ্যান্ড জেরি অস্কারেও ভীষণ সফল৷ এই কাহিনীর সাতটি ছবি অস্কার জিতেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Goldschmidt
মানুষের ভাষা জানা বিড়াল
পেটারসন অ্যান্ড ফিনডাস’ সুইডিশ সাহিত্যিক সভেন নর্ডকভিস্ট-এর লেখা শিশুতোষ গ্রন্থ৷ মূল কাহিনী এক বৃদ্ধ আর তাঁর দুষ্টু বিড়াল কিটি-কে ঘিরে৷ দুষ্টুমি করলেও কিটির সঙ্গে কেউ বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারেনা৷ সব প্রাণীর সঙ্গে কথা বলতে পারে বলে কিটি মন ভোলানো কথায় সবাইকে খুশি করে দেয়৷ তবে মানুষের মধ্যে শুধু মনিবের সঙ্গেই কথা বলতে পারে কিটি৷ ‘পেটারসন অ্যান্ড ফিনডাস’ গল্পটি নিয়ে পরে অ্যানিমেটেড মুভিও হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Mfa film
6 ছবি1 | 6
সাইমন শিল্পকলা নিয়ে পড়াশুনো করেছেন৷ পরে লন্ডনে নিজের কোম্পানি গঠন করেন, যার নাম হলো: ‘সাইমন’স ক্যাট লিমিটেড'৷ এখানেই তাঁর নতুন সব কার্টুন ফিল্ম তৈরি হয়৷ সাইমন সরাসরি কম্পিউটারের পর্দায় আঁকেন, একটির পর একটি শট, যা মিলিয়ে শেষমেষ ফিল্মের সিকোয়েন্স তৈরি হবে৷ নিজের স্কেচ থেকে আঁকেন সাইমন৷ ইতিমধ্যে নানা মার্চেন্ডাইজ তৈরি হয়ে গেছে৷ দুনিয়াতে মার্জারপ্রেমীর তো কোনো অভাব নেই৷ ভেলিং মনে করেন, ‘‘এই সব ফ্যান আর্টিকেল শুধু ব্যবসার কথা ভেবে তৈরি করা হয়নি, ভালোবেসে তৈরি করা হয়েছে৷ লোকজন এটাসেটা কিনতে চেয়েছেন, ফ্যানরা আইডিয়া দিয়েছেন, বালিশ কিংবা কি-রিং তৈরি করার৷ লোকে দেখেছে, কত দরদ দিয়ে এই সব ফ্যান আর্টিকেল তৈরি করা হয়েছে৷''
এভাবেই মানুষ আর বেড়ালের মধ্যে সম্পর্ক একটা সফল বিজনেস ভেঞ্চার হয়ে উঠেছে৷ সাইমন টোফিল্ড ফেসবুক ও টুইটারে তাঁর ফ্যানদের খবরাখবর দেন৷ বিশ্বের ৩০টির বেশি দেশে তাঁর বই বেরিয়েছে, বিক্রি হয়েছে ১৭ লাখের বেশি৷ ৫১টি সাদা-কালো কার্টুন ফিল্ম বানিয়েছেন সাইমন, ২০১৬ সালে বেরচ্ছে তাঁর প্রথম রঙিন ছবি৷ সাইমনের বিড়ালরা আজ ‘সেলিব্রিটি'৷
আপনার কি বেড়াল আছে? থাকলে আপনিও কিন্তু এভাবে তার একটা কার্টুন এঁকে ফেলতে পারেন!
প্রাণীরা যখন শিক্ষক
প্রাণীরা শুধু মানুষের বিশ্বাসী বন্ধু নয়, প্রাণীদের কাছ থেকে মানুষের অনেককিছুই শেখার আছে৷ আর সেই শিক্ষা গ্রহণ করলে মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও সুন্দর হতে পারে৷ প্রাণীদের সেরকমই কিছু আচরণের নমুনা পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Meyers
বেড়াল শান্ত রাখে
‘স্ট্রেস’ বা চাপ? না, এই শব্দ বেড়াল একেবারেই চেনে না৷ আর সেটা ওদের চোখের দিকে সরাসরি তাকালেই বোঝা যায়৷ বেড়ালকে শিকারে নিয়ে যান, মেঝেতে পিঁপড়ে ছড়িয়ে দিন কিংবা শুকনো পাতার ওপর হাঁটুন, কিছুতেই বেড়াল উত্তেজিত হবে না বা ওর গায়ের কোনো পেশী ফুলে উঠবে না৷ তাই বর্তমান যান্ত্রিক জীবনে আমরা বেড়ালের কাছ থেকে নিজেকে শান্ত রাখার কৌশল শিখতে পারি৷
পানিতে যাদের বসবাস, তাদের মধ্যে ডলফিন খুবই মিশুক৷ পানিতে খেলার সময় বা ট্রেনিং-এর সময় সহজেই তারা একে-অপরের বন্ধু হয়ে যায়৷ মানুষের সঙ্গেও তাদের সহজেই বন্ধুত্ব হয়৷ তার ওপর স্মরণশক্তিও ওদের খুব ভালো৷ ২০ বছর পরও ডলফিন তার বন্ধুকে চিনতে পেরে কাছে টেনে নেয়৷ যা সত্যিই মানুষের হিংসে করার মতো৷ আহা মানুষ যদি এমন হতো!
ছবি: picture-alliance/dpa
কুকুরের কোনো অভিযোগ নেই!
প্রভুভক্ত কুকুরের একাকী সারাদিন কেমন কেটেছে, তা নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই৷ বরং মনিব বাড়িতে এসে একটু আদর করলেই সে মহাখুশি৷ কুকুরের ক্ষেত্রে যেটা লক্ষ্যণীয় তা হচ্ছে, সে বিনা শর্তে ভালোবাসে, খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বাস অর্জন করে এবং সহজে ক্ষমাও করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Hörhager
ঘোড়া ভালো নেতৃত্ব দেয়
ঘোড়া একদিকে যেমন ভদ্র, অন্যদিকে সহসী ও নেতৃত্বে পটু৷ সে সহজেই মনিবের ভাষা বোঝে, যা অন্যদের ‘মোটিভেট’ করতে পারে৷ এই সুন্দর, শান্ত প্রাণী যতক্ষণ না কোনো নির্দেশ পায়, ততক্ষণ চুপচাপ থাকে৷ তবে কিছু বললে সাথে সাথে বুঝে তার প্রতিক্রিয়া জানায়৷ অন্যদিকে কেউ ঘোড়াকে ক্ষেপালে সে মুহূর্তেই প্রতিবাদ করে ওঠে৷ অর্থাৎ ভদ্র, সাহসী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ঘোড়া৷
ছবি: Andreas Sten-Ziemons
একতাই বল, দলই শক্তি
‘একের বোঝা দশের লাঠি’ বা ‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’ – এ সব প্রবাদবাক্যের প্রমাণ আমাদের দিয়েছে ‘পরিযায়ী পাখি’৷ এরা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে ‘টিম স্পিরিট’ বা ‘দলীয় শক্তি’ কাকে বলে৷ আজকের যুগে একা এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়৷ শুধুমাত্র দলের সকলে মিলে কাজ করলেই সাফল্য অর্জন সম্ভব, ঠিক এই পাখিদের মতো৷ তবে দলকে একত্রিত করে সফল হতে প্রয়োজন শক্তিশালী গাইড বা দলনেতা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধৈর্য
প্রাণীরা বর্তমান সময়কেই উপভোগ করে৷ মানুষদের মতো আগামীতে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করে না৷ কোনো কিছুতে তাড়াহুড়ো নেই তাদের৷ বেড়ালকে দেখুন, কী সুন্দর নিশ্চন্তে বসে থাকে বা কুকরকে নিয়ে বাইরে বের হলেই লক্ষ্য করবেন যে, তারা শীত, গ্রীষ্ম, বৃষ্টির কথা না ভেবে যতক্ষণ দরকার ততটা সময় ব্যয় করে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে৷ আজকের তরুণরা চাইলে প্রাণীদের কাছ থেকে ধৈর্য ধরা শিখতে পারে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/J. Fieber
শোনায় মনোযোগী
প্রাণীরা শোনার ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগী, যা ওদের কান খাড়া করে থাকা দেখেই বোঝা যায়৷ ওরা চুপ করে বসে শোনে এবং সেভাবেই তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়৷ প্রাণীদের কাছে থেকে মানুষরা এই গুণটি গ্রহণ করলে নিঃসন্দেহে তা মানবজাতির অনেক উপকারে আসতে পারে৷ কারণ মানুষের সাধারণত শোনার চেয়ে বলাই পছন্দ৷ ফলে সৃষ্টি হয় ভুল বোঝবুঝি, আবার অনেক সময় কিছু বিষয় স্পষ্ট হয় না৷