1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাউথ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিল ভারত

৫ নভেম্বর ২০২৩

৩২৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৮৩ রানে অলআইট হয়ে যায় সাউথ আফ্রিকা৷ বোলিং আর ব্যাটিং দুই ক্ষেত্রেই যেন নিজেদেরকে সেরা প্রমাণে ব্যস্ত ভারত৷

Indien Cricket World Cup 2023 | Indien gegen Südafrika
ছবি: Altaf Qadri/AP Photo/picture alliance

কলকাতার ইডেন গার্ডেনে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩২৬ রান তুলেছিল ভারত৷ জবাবে মাত্র ২৭.১ ওভারেই ৮৩ রানেই গুটিয়ে গেছে আফ্রিকা৷ 

২৪৩ রানের বড় জয়ে বিশ্বকাপে ভারত পেয়েছে টানা আট জয়৷ 

ইডেনের ‘হাই-ভোল্টেজ’ ম্যাচটা ছিল টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ‘ইনফর্ম’ দুই দলের৷ ভারত এসেছিল টানা সাত ম্যাচে জয়ের গৌরব নিয়ে, অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হোঁচট বাদ দিয়ে প্রোটিয়াদের গাড়ি ছুটছিল এক্সপ্রেস গতিতে৷ কিন্তু সেই গাড়ি ইডেনে এসে ব্রেক ফেল করল অপ্রতিরোধ্য ভারতের সামনে৷ এই ম্যাচের আগেই দুই দলের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, এক হিসেবে ম্যাচটি ছিল নিজেদের শক্তির বার্তা দেওয়ার৷ তাতে ভারত পরিস্কার ব্যবধানে জয়ী তো বটেই, সাথে এই প্রশ্নও উঠে গেছে, এই ভারতকে কে থামাবে? 

এই মুহূর্তে ভারতের ব্যাটার আর বোলাররা যেভাবে খেলছেন, এই প্রশ্নের উত্তর কারও কাছে নেই বলেই মনে হচ্ছে৷ ব্যাটাররা যদি ৩০০ রান করে দলকে অনেকটা এগিয়ে দেন, বোলারদের মনে হচ্ছে তাদের চেয়েও বেশি ভয়ংকর৷ ইডেনের উইকেটে ৩০০ রানের বেশি তাড়া করা খুবই কঠিন, কিন্তু সাউথ আফ্রিকাকে ৮৩ রানে গুটিয়ে দেওয়ার দুর্দান্ত কীর্তিটা তো বোলারদেরই৷ 

রবীন্দ্র জাদেজা (ডানে) একাই সাউথ আফ্রিকার মিডল ও লেট অর্ডার গুড়িয়ে দিয়েছেন৷ ৯ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট৷ ছবি: Altaf Qadri/AP Photo/picture alliance

আজ অবশ্য ব্যাটসম্যান বা বোলাররা সবাই একজনকেই সেই জয় উৎসর্গ করবেন৷ ইডেনের চারপাশে শোভা পাচ্ছিল বিরাট কোহলির কাটআউট, ৫০ হাজার দর্শকে ঠাসা স্টেডিয়ামে অসংখ্য ব্যানার ও জার্সি কোহলির নামে৷ উপলক্ষ ভারতের এই ব্যাটসম্যানের ৩৫তম জন্মদিন৷ দলের দুর্দান্ত জয় এবং সেই সাথে নিজের ৪৯তম সেঞ্চুরি করে শচীন টেন্ডুলকারের বিশ্বরেকর্ড ছুঁয়ে ফেলা জন্মদিনটা এরচেয়ে ভালোভাবে রাঙাতে পারতেন না কোহলি৷ ম্যাচ শেষে ইডেনে আতশবাজির রোশনাই যেন তার জন্মদিনই আরেকবার উদযাপন করল৷

ইডেনে ঘণ্টা বাজিয়ে যখন বিসিসিআই সভাপতি রজার বিনি ও ভারত কোচ রাহুল দ্রাবিড় ম্যাচ শুরু করেন, সেটা যেন বাজাল আফ্রিকার সর্বনাশের ঘণ্টাই৷ টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল শুরুতেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে নিজেদের বার্তাটা পরিষ্কার করে দেন৷ মাত্র ২৭ বলেই স্কোরবোর্ডে ৫০ রান উঠে গিয়েছিল ভারতের৷ শুরুতেই রোহিতের কঠিন একটা ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি তাবরাইজ শামসি৷ যখন মনে হচ্ছিল রোহিত সেটার জন্য আফ্রিকাকে বড় শাস্তি দেবেন তখনই আউট হয়ে গেলেন৷ রাবাদার বলটা ভালোই মেরেছিলেন রোহিত, কিন্তু বুলেট গতিতে ছুটে আসা বলটা মিড অনে দারুণভাবে ধরে ফেলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক টেন্ডা বাভুমা৷ ২৪ বলে ৪০ রান করে ফিরে গিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক৷ 

অন্যদিকে শুভমান গিলও খেলছিলেন বেশ ভালো, করে ফেলেছিলেন ২৩ রান৷ ১০ ওভারের  মধ্যে ৯০ রান উঠে গেল ভারতের৷ কেশভ মহারাজ এলেন, নিজের তৃতীয় বলেই বাঁহাতি স্পিনারদের এক স্বপ্নের ডেলিভারিতে তুলে নিলেন গিলকে৷ মিডল এবং লেগ স্টাম্পের মধ্যে পিচ করে বলটা দুর্দান্ত টার্ন করে বেলস ফেলে দিল, গিলও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না৷ টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ডেলিভারিতে ফিরতে হলো গিলকে৷

ইডেন অবশ্য তখন ‘কোহলি, কোহলি’ স্লোগানে উন্মাতাল৷ কোহলি শুরুটাও করেছিলেন দারুণ, প্রথম ৩০ রান তুলে ফেলেন দ্রুতই৷ কিন্তু মহারাজের স্পিন আটকে রাখল কোহলি ও নতুন ব্যাটসম্যান শ্রেয়ার আইয়ারকে৷ ১০ ওভারে কোনো বাউন্ডারি না দিয়ে মাত্র ৩০ রানে ওভার শেষ করলেন মহারাজ৷

স্পিনারদের শুরুতে দেখেশুনে খেলার পর অবশ্য কোহলি আর আইয়ার মনযোগ দিয়েছেন রান বাড়াতে৷ আইয়ারই ছিলেন বেশি আগ্রাসী, দুই ছয় মেরে দ্রুত পৌঁছে গিয়েছিলেন সত্তরের ঘরে৷ আরেকটু বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে এনগিডিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন, ফিরলেন ৮৭ বলে ৭৭ রান করে৷ ভাঙল কোহলির সাথে তার ১৩৪ রানের জুটি৷ ভারতের রান তখন ২২৭৷ ওভার বাকি ১৩.১, মনে হচ্ছিল অন্তত ৩৫০  খুবই সম্ভব৷

কিন্তু এরপরেই আফ্রিকা আবার চেপে ধরল ভারতকে৷ লোকেশ রাহুল ফিরে যান  ৮ রান করে৷ সূর্যকুমার যাদবের ১৪ বলে ২২ রানের ক্যামিওটা শেষ হলো শামসির বলে ক্যাচ দিয়ে৷ ওদিকে কোহলির প্রতিটি রানের সাথে সাথে ইডেনে উঠছিল হর্ষধ্বনির জোয়ার৷ শেষ পর্যন্ত ৪৯তম ওভারে গিয়ে সেই কাঙ্খিত সেঞ্চুরি পেলেন ১১৯ বলে৷ দাঁড়িয়ে তাকে সম্ভাষণ জানালেন ইডেনের ৫০ হাজার দর্শক৷ এই বিশ্বকাপেই সেঞ্চুরি পেতে পেতেও পাওয়া হয়নি একাধিকবার, সেই আক্ষেপও ঘোচালেন আজ৷ 

সেঞ্চুরি পেলেও কোহলি ইনিংস শেষ করার পর বলছিলেন, এই উইকেটে রান তোলা বেশ কঠিন ছিল৷ সত্যি বলতে, কোহলি নিজেও শেষের দিকে খুব সহজে রান তুলতে পারছিলেন না৷ সেই কাজ কতটা কঠিন, সেটা বোঝা গেল সাউথ আফ্রিকার ইনিংসে৷

ভারতের বোলিং আর আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের ধুন্দুমার লড়াইয়ে কে জিতবে, তা নিয়ে কোনো রোমাঞ্চ যদি থাকে সেটা শেষ হয়ে গেছে খুব দ্রুতই৷ টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কুইন্টন ডি কক হতে পারতেন প্রোটিয়াদের তুরুপের তাস৷ তিনি যখন ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মোহাম্মদ সিরাজের বলে বোল্ড হয়ে গেলেন, আফ্রিকার আশার পাল গুটিয়ে যাওয়া শুরু করল তখনই৷ ইডেনের উইকেটে স্পিন ধরছিল বেশ ভালো, জাদেজাকে দ্রুতই আক্রমণে নিয়ে এলেন রোহিত৷ অধিনায়কের সিদ্ধান্ত ঠিক প্রমাণ করতে সময় নেননি জাদেজা, নিজের প্রথম ওভারেই ১১ রানে ফিরিয়েছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমাকে৷

৩৫তম জন্মদিনে সেঞ্চুরি পেয়েছেন বিরাট কোহলি, ছুঁয়ে ফেলেছেন শচীন টেন্ডুলকারের ওয়ানডেতে ৪৯ সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড৷ সেঞ্চুরির উদযাপনটা ছিল এভাবেই৷ ছবি: Bikas Das/AP/picture alliance

এরপর মঞ্চে ভারতের বোলিং সুপারস্টার মোহাম্মদ শামি৷ এই বিশ্বকাপের প্রায় ‘আনপ্লেয়বল’ শামি পরের ওভারেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন এইডেন মার্করামকে৷ ৩৫ রানে নেই ৩ উইকেট৷ স্পিনের বিপক্ষে হাইনরিখ ক্লাসেনের রেকর্ড দুর্দান্ত, কিন্তু জাদেজার বলটা বুঝতেই পারলেন না ক্লাসেন৷ আম্পায়ারে অবশ্য শুরুতে আউট দেননি, রিভিউ নিয়েই এলবিডব্লুতে তাকে ফিরিয়েছেন জাদেজা৷ পরের ওভারে ভারতের আরেকটি সফল এলবিডব্লুর রিভিউ৷ এবার বোলার শামি আর শিকার রেসি ভ্যান ডার ডুসেন৷ দুই ওভার পর মিলারকেও ফেরালেন জাদেজা৷ ৫৯ রানে ৬ উইকেট নেই আফ্রিকার, ইডেন মুখর ‘বন্দে মাতরম’ স্লোগানে৷ আফ্রিকার স্পেশালিস্ট ব্যাটারদের মধ্যে শুধু বাভুমা আর মিলারই দুই অংক ছুঁয়েছেন, দুজনেরই রান ১১৷ 

এরপরের গল্পটা খুব সংক্ষিপ্ত৷ জাদেজা একাই আফ্রিকার মিডল ও লেট অর্ডার গুড়িয়ে দিয়েছেন, তাকে এখানে সঙ্গ দিয়েছেন কুলদীপ৷ রাবাদাকে আউট করে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন জাদেজা, কোহলির সেঞ্চুরির দিনে তিনিও আফ্রিকাবধের অন্যতম নায়ক৷ যে আফ্রিকা অন্যদের নিয়ে ছেলেখেলা করেছে, তারা ভারতের সাথে  করতে পারল না ১০০ রানও, গুটিয়ে গেল মাত্র ২৭.১ ওভারেই৷ এবং আফ্রিকার এমন অসহায় আত্মসমর্পণে শুরুতে করাটা প্রশ্নটাই এখন বিশ্বকাপে ফিরে ফিরে আসছে- এই ভারতকে থামাবে কে?

সংক্ষিপ্ত স্কোর 
ভারত ৫০ ওভারে ৩২৬-৫ (কোহলি ১০১*, আইয়ার ৭৭; মহারাজ ১/৩০)
সাউথ আফ্রিকা ২৭.১ ওভারে ৮৩ (ইয়ানসেন ১৪; জাদেজা ৫/৩৩, কুলদীপ ২/৭, শামি ২/১৮)
ফলঃ ভারত ২৪৩ রানে জয়ী
ম্যাচসেরাঃ বিরাট কোহলি


 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ