সাউথ আফ্রিকার কুখ্যাত ‘পন্টে টাওয়ার’-এর নতুন রূপ
৩ নভেম্বর ২০২৩
হলিউডের কয়েকটি মুভিতে এটি দেখানো হয়েছে, যেমন রেসিডেন্ট এভিল ও চাপি৷
১৯৭৫ সালে উদ্বোধন হওয়া ভবনটি সাউথ আফ্রিকার ঐশ্বর্য্যের প্রতীক ছিল৷ কিন্তু পরে সেটি মাদকপাচারকারী, দুর্বৃত্ত এবং পতিতাবৃত্তির দালালদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল৷
জোহানেসবার্গের কিছু তরুণ কুখ্যাত ঐ টাওয়ার সংস্কার করে সেটিকে এখন সারা বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণে পরিণত করেছেন৷
২৪ বছর বয়সি গ্রান্ট কোবো সংস্কারকাজের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন৷ ডেলালান জে নামে এক পর্যটন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কোবো বলেন, ‘‘এখানে প্রায় আট হাজার মানুষ বাস করতেন৷ তারা সব ময়লা ভবনের মাঝখানের জায়গাটায় ফেলতেন৷ একসময় প্রায় ১৪ তলা পর্যন্ত ময়লা জমে গিয়েছিল৷ কিন্তু এখন যেমনটা দেখতে পাচ্ছেন, জায়গাটা পরিষ্কার করা হয়েছে, তাই দেখতে আগের মতো নেই৷ সে কারণে এখন আমরা আপনাদের টাওয়ারের ভেতরে এনে দেখাতে পারছি, ভেতরটা কত সুন্দর৷’’
জুলু ভাষায় ‘ডেলালান জে’র মানে হচ্ছে ‘জাস্ট প্লে’৷ ডেলালান জে পর্যটন কোম্পানির চেয়েও বেশি কিছু৷ টাওয়ারের নীচ তলায় বাচ্চাদের জন্য জায়গাও আছে৷ কোবো বলেন, ‘‘এখানে আসতে তাদের কোনো টাকা দিতে হয় না৷ আপনারা যারা টাকা খরচ করে ঘুরতে এসেছেন সেই টাকা দিয়ে বাচ্চাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা হয়৷ আমাদের কিছু স্বেচ্ছাসেবী আছেন যারা বাচ্চাদের বিভিন্ন দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করেন৷’’
ডিআর কঙ্গোতে জন্ম নেয়া তরুণ গাইড আলভারো শিকাপা হিলব্রো এলাকায় বড় হয়েছেন৷ ডেলালান জে তাকে শহরের রাস্তার বিভিন্ন সমস্যা থেকে নিরাপদে থাকতে সহায়তা করেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলায় আমি যেরকম অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম এখনকার বাচ্চারাও তেমন সমস্যায় আছে৷ এখন আমি এমন ট্যুর করাতে পেরে কমিউনিটিতে কিছু ফিরিয়ে দিতে পারছি৷ আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদেরও এমন সুযোগ দেয়া হয়েছিল৷’’
স্থপতি রডনি গ্রোসকপফ এই ভবনের নকশা করেছিলেন৷ সেখানে ৪০০-র বেশি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল৷ আর নীচতলায় ছিল বাজার৷ ৫০ বছর আগে এমন নকশার কথা সচরাচর শোনা যেত না৷
তার কন্যা ব্রিগেট গ্রোসকপফ এখনও তার বাবা যখন নকশা করছিলেন, সেই সময়কার কথা মনে করতে পারেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আসলে এটাকে সবচেয়ে ফ্যাশনেবল বাসভবন হিসেবে বিজ্ঞাপিত করা হয়েছিল৷ সবগুলো অ্যাপার্টমেন্ট আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো ছিল৷ ছোটবেলায় এখানে আসার কথা আমি মনে করতে পারি৷ দেওয়ালজুড়ে কার্পেট ওপরে উঠে গেছে৷ তখন আমার মনে হয়েছিল, আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর জিনিস এটা৷''
এখন এই ভবনে পুরো আফ্রিকা থেকে আসা মধ্যবিত্ত ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষেরা বাস করেন৷
পন্টে টাওয়ার ধীরে ধীরে তার সহিংসতা ও দুর্বৃত্ততার ছবি মুছে ফেলে অনেকের আশার আলো হয়ে উঠছে৷
কোবো বলেন, ডেলালান জের উদ্দেশ্য দারিদ্র্যতা দেখিয়ে টাকা কামানো নয়, বরং তারা আফ্রিকার তরুণদের জন্য সাউথ আফ্রিকায় দারুণ সব সুযোগ তৈরি করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি এই এলাকায় বড় হয়েছি৷ ডেলালান জের সব গাইডও তাই৷ সেজন্য এটাকে আমরা পর্যটন হিসাবে দেখি না, বরং আমরা মানুষজনকে আমাদের এলাকা দেখাচ্ছি- বিষয়টা এইভাবে দেখি৷ আমাদের উদ্দেশ্য, সেতুবন্ধ তৈরি করা এবং হিলব্রো এলাকা সম্পর্কে মানুষকে জানানো৷ আমার কাছে এটা ‘পোভার্টি পর্ন’ এর একেবারে বিপরীত৷''
২০১২ সাল থেকে প্রায় ২৫ হাজার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটক ঐ এলাকা দেখতে গিয়েছেন৷ তাই ডেলালান জে ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী৷
হানার ফ্রাঙ্কেনফেল্ড/জেডএইচ