একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ৷ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বুধবার এই রায় ঘোষণা করে৷
ছবি: Farjana K. Godhuly/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শহিদ নূতন চন্দ্র সিংহের ছেলে ও মামলার সাক্ষী প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ৷ ওদিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেছেন, তাঁর বাবা নির্দোষ৷ তাই তাঁরা রভিউ আবদেন করবেন৷ প্রসঙ্গত, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের এই আপিল বেঞ্চের অন্যান্য সদস্যরা হলেন – বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী৷
২০১৩ সালের ১লা অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল ১-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়৷ হত্যা-গণহত্যার ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণ হওয়াতেই মৃত্যুদণ্ড দেয় এই বিশেষ আদালত৷
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরীছবি: Harun Ur Rashid
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১২ সালের ৪ঠা এপ্রিল সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়৷ যে চারটি হত্যা-গণহত্যার দায়ে সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেয়, তা হলো চট্টগ্রামের কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠিাতা অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে তিনজনকে গণহত্যা, রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে গণহত্যা এবং চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তাঁর ছেলে শেখ আলমগীরকে হত্যার অভিযোগ৷
নির্যাতিতরা জানান, একাত্তরে চট্টগ্রাম শহরের গণি বেকারি মোড়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাসভবন ‘গুডস হিল'-এ মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের ধরে এনে নির্যাতনের পর পকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হতো৷ গুডস হিল-এর গ্যারেজটিকে ‘নির্যাতন কেন্দ্র' হিসেবে চিহ্নিত করেন অনেক নির্যাতিত৷
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ২০১০ সালের ১৫ই ডিসেম্বর রাতে হরতালে গাড়ি পোড়ানো ও ভাঙচুরের এক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়৷ এরপর ঐ বছরের ১৯শে ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷ সেই থেকে কারাগারে বন্দি সাকা৷
জেগে আছে প্রজন্ম চত্বর
মূল দাবি একটাই, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’৷ এই দাবি নিয়ে পাঁচই ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগ চত্বরে অবস্থান করছে তরুণ প্রজন্ম৷ তাদের সমর্থন জানাচ্ছে সবশ্রেণির মানুষ৷ ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে বেশ কয়েকদিন৷ কিন্তু এক চুল নড়েনি তারা৷
ছবি: Reuters
লাগাতার আন্দোলন
শাহবাগে অবস্থান নেওয়া তরুণ প্রজন্ম গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি ধরে লাগাতার তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অনড় তারা৷ ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইটে নিয়মিত সেখানকার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাতীয় দলের আগমন
রবিবার প্রজন্ম চত্বরে এক টুকরো আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে এসেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা৷ আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল, শাহবাগে অবস্থান নেওয়া ব্লগার, তরুণ সমাজের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসছেন তাঁরা৷ রবিবার সেই খবরের সত্যতা প্রকাশ পেলো৷
ছবি: REUTERS
টুইটার লড়াই
হ্যাশট্যাগ #shahbag, কেউ কেউ ব্যবহার করছেন #shahbagh - আসলে শাহবাগের ইংরেজি বানান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে৷ উইকিপিডিয়া শেষের এইচটি বাদ দিলেও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সেটি ধরে রেখেছে৷ এই বিভ্রান্তি অবশ্য টুইটার লড়াইকে পেছনে ফেলেনি৷ বরং সমানতালে দু’টি হ্যাশটাগ দিয়েই জানানো হচ্ছে আন্দোলনের অগ্রগতি৷
ছবি: REUTERS
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ‘শোধরানোর’ চেষ্টা
শাহবাগের প্রতিবাদ কি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে না ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে? বিবিসি ইংরেজি বিভাগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনামে এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল৷ টুইটারে আন্দোলনকারীদের অব্যাহত দাবির পর সেই শিরোনামে বদল এসেছে৷ ইসলামপন্থী বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধ শব্দটি জোড়া হয়েছে সেখানে৷ এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আমারব্লগ৷
ছবি: amarblog.com
‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’
প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান করছেন ‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’ দলের অনেক সদস্য৷ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির দাবিকে আরো সোচ্চার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা৷ পাশাপাশি প্রজন্ম চত্বরের সর্বশেষ পরিস্থিতিও ইন্টারনেটে তুলে ধরা হচ্ছে এদের মাধ্যমে৷
ছবি: REUTERS
‘আপনার সহায়তা প্রয়োজন’
ডয়চে ভেলের টুইটার পাতাতে আন্দোলনকারীদের কিছু বার্তা আমরা পেয়েছি৷ জিন্নাত গোনিম নামক ঢাকার এক বাসিন্দা টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমরা কোন রাজনৈতিক দল, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নই৷ আমরা বাংলাদেশি৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাচ্ছি, আমার মায়ের হত্যাকারীর, বোনের ধর্ষকের বিচার চাচ্ছি৷ আমাদের আপনার সহায়তা প্রয়োজন৷’’
ছবি: twitter.com
এই প্রজন্মের নারী মুক্তিসেনাদের লড়াই
গত কয়েকদিন ধরেই গণমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা করে নিচ্ছেন লাকি আক্তার৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরুর দিন থেকে রয়েছেন শাহবাগে৷ তাঁর মতো আরো কয়েকজন নারী মুহুর্মুহু শ্লোগানে কাপিয়ে তুলছেন প্রজন্ম চত্বর৷ বিভিন্ন স্কুলকলেজের ছাত্রীরা মাঝেমাঝে হাজির হচ্ছেন আন্দোলনে৷
ছবি: REUTERS
‘ফাঁসির মঞ্চ’ প্রস্তুত
‘রাজাকারের ফাঁসি চাই’ - এই হচ্ছে প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনরতদের মূল দাবি৷ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করলে তা প্রত্যাখ্যান করে তরুণ প্রজন্ম৷ তারা চায় ফাঁসির আদেশ৷ শাহবাগে প্রতীকী ‘ফাঁসির মঞ্চ’ তৈরি করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির অপেক্ষায় আছে ব্লগাররা৷
ছবি: Reuters
সপরিবারের শাহবাগে
শাহবাগে অনেকেই হাজির হচ্ছেন সপরিবারে৷ ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সাহিত্যিক, অধ্যাপক অনেকেই এসেছেন সপরিবারে৷ এই ছবিতে এক শিশুকে দেখা যাচ্ছে শাহবাগ চত্বরে, প্রতিবাদী ব্যানার মাথায় জড়িয়ে৷
ছবি: REUTERS
ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক
‘ট্র্যাইবুনালে কাদের মোল্লার প্রহসনের রায়ের বিরুদ্ধে মহাসমাবেশ’ - এই শিরোনামে পাঁচ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক৷ ব্লগারদের আহ্বানে সেদিন শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে সাধারণ মানুষ৷ এখন এই আন্দোলন আমজনতার৷
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
গত ৭ই জুলাই যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার আপিল শুনানি শেষ হওয়ায়, বুধবার রায়ের দিন ধার্য করে আপিল বিভাগ৷ গত ১৬ই জুন শুরু হয়ে ১৩ কার্যদিবসে এই আপিল শুনানি শেষ হয়৷ এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি৷ তাই আপিলে আসামিপক্ষের শুনানির বিপরীতে রায় বহাল রাখার পক্ষে আর্জি পেশ করে যুক্তি উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ৷
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের রায় বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এই মামলার সাক্ষী এবং শহিদ অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহের ছেলে সাক্ষী প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ৷ তিনি বলেন, ‘‘যে রায় হয়েছে তাতে আমি খুশি৷ খুব ভালো রায় হয়েছে৷ আমি সন্তুষ্ট৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমাকে আমার পিতৃহত্যার ভয় এখনো তাড়া করে ফেরে৷ এখন আমি রায় কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় আছি৷''
ওদিকে সালাহদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘আমার বাবা একজন নির্দোষ মানুষ৷ আশা করি, একদিন না একদিন প্রমাণ হবে যে তিনি নির্দোষ৷''
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘‘রায়ের কপি পেয়ে রিভিউ আবেদন করবো৷ যেসব অভিযোগে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে, আমরা আশা করি যে, রিভিউর মাধ্যমে সেগুলো থেকে সাকা চৌধুরী খালাস পাবেন৷''
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘‘সাকা চৌধুরীর ফাঁসির এই রায় প্রত্যাশিত ছিল এ শাস্তি না হলে পুরো জাতি হতাশায় নিমজ্জিত হতো৷ এখন বাকি আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই রায় রাস্তবায়ন হবে৷''
তিনি জানান, ‘‘তার বিরুদ্ধে মোট ২৩টি অভিযোগ ছিল৷ এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল ৯টি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছিল৷ এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট শুধুমাত্র একটি অভিযোগ থেকে খালাস দিয়ে বাকি ৮টি অভিযোগে তার দণ্ড বহাল রেখেছেন৷''
একাত্তরে ‘মিরপুরের কসাই’ খ্যাত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি বৃহস্পতিবার রাতে কার্যকর করা হয়েছে৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো৷ মোল্লার ফাঁসি নিয়ে তৈরি আমাদের বিশেষ ছবিঘর৷
ছবি: AP
অবশেষে ফাঁসি
৪৮ ঘণ্টা ধরে নানা নাটকীয় পরিস্থিতির পর ১২ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার রাতে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়৷ এর আগে মঙ্গলবার রাতে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে বিচারকের নির্দেশে তা স্থগিত হয়৷ মোল্লাকে এভাবে ফাঁসি না দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন, জার্মানি সহ অন্যান্যরা৷
ছবি: picture-alliance/AA
শেষ দেখা
বৃহস্পতিবার ফাঁসির রায় কার্যকরের কিছুক্ষণ আগে কাদের মোল্লার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার পরিবারের সদস্যরা৷ এসময় জেলগেটে কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল বলেন, ‘‘ইসলামী আন্দোলন করার কারণেই আমার পিতাকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Reuters
গ্রেপ্তার, দম্ভোক্তি
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০০৮ সালে ঢাকার একটি থানায় দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের জুলাইয়ে গ্রেপ্তার হন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা৷ পরবর্তীতে কারাগারে দাঁড়িয়ে তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘বাংলাদেশ হয়েছে বলে অনেকের মাতব্বরি বেড়ে গেছে৷’’
ছবি: Reuters
যত অভিযোগ
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোট ৬টি অপরাধ বিবেচনায় নেয়া হয়৷ এগুলো হলো পল্লবি এলাকার গণহত্যা, কবি মেহেরুননিসা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালিব হত্যা, কেরানীগঞ্জের ভাটার চর ও ভাওয়াল খানবাড়ি হত্যাকাণ্ড, আলুব্দি গণহত্যা এবং মিরপুরের হযরত আলি পরিবারে গণহত্যা৷ এর সঙ্গে লুটতরাজ, ধর্ষণ এবং ধ্বংসযজ্ঞের অভিযোগও আছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Archiv Rowshan Jahan Shathi
প্রথমে যাবজ্জীবন, পরে মৃত্যুদণ্ড
ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে কাদের মোল্লার অপরাধ প্রমাণিত হয়৷ এর প্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে৷ সেসময় কাদের মোল্লা আদালত থেকে বের হওয়ার সময় ‘বিজয় চিহ্ন’ দেখান৷ এতে সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷ পরবর্তীতে আপিলের ভিত্তিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সর্বোচ্চ আদালত৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
দাফন সম্পন্ন
বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর মাইক্রোবাসে করে কাদের মোল্লার মরদেহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করা হয়৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম লিখেছে, ‘‘স্থানীয় সময় রাত ৪টার দিকে ফরিদুপরের আমিরাবাদ গ্রামে লাশ পৌঁছানোর পর জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়।’’
ছবি: Mustafiz Mamun
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সৃষ্টি হওয়া শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে আবারো ভিড় করেছেন অসংখ্য মানুষ৷ মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর সেখানে উপস্থিত জনতা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে৷
ছবি: Reuters
‘‘জাতি আজ কলঙ্ক মুক্ত হলো’’
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ডয়চে ভেলেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘জাতি আজ কলঙ্ক মুক্ত হলো৷ ৪২ বছর পরে হলেও একজন যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকর হলো৷’’ তিনি আশা করেন, সব যুদ্ধাপরাধীর দণ্ডই কার্যকর হবে৷
ছবি: privat
জার্মানির প্রতিক্রিয়া
এর আগে, বৃহস্পতিবার জার্মানির মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার মার্কুস ল্যোনিং এক বিবৃতিতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর না করতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, জার্মানি নীতিগতভাবে মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না৷ তাই ফাঁসির পরিবর্তে কারাদণ্ড দেবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: dapd
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, ‘‘সাকা চৌধুরী একাত্তরে দেশে ছিলেন না – এমন বক্তব্য গ্রহণ করেনি সর্বোচ্চ আদালত৷''
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, ‘‘এ রায় অপশক্তি ষরযন্ত্রের বিরুদ্ধে এক মাইলফলক৷ এই রায়ে সত্য ও সুন্দরের জয় হয়েছে৷ যত দ্রুত সম্ভব এই রায় কার্যকর করা হোক৷ এ রায়ে এটা প্রমাণিত হয়, যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার মতো শক্তি বাংলাদেশের জনগণের রয়েছে৷''
পঞ্চম রায়
ট্রাইব্যুনালের এ পর্যন্ত ২০টি মামলার রায়ের মধ্যে ১৫টিতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হয়েছে৷ আপিল বিভাগ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলায় চূড়ান্ত রায় দিয়েছে৷ এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হলে, ঐ বছরের ১২ই ডিসেম্বর সেই দণ্ড কার্যকর করা হয়৷ ২০১৪ সালের ৩রা নভেম্বর আপিল বিভাগ জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে সর্বোচ্চ সাজা দিলে ২০১৫ সালের ১১ই এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়৷ আর চলতি বছরের ১৬ই জুন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ৷ তবে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় তারা৷ এরপর সর্বশেষ বৃধবার দেয়া হলো সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলায় আপিলের রায়৷ এছাড়া আপিল শুনানি চলাকালেই মৃত্যু হয় জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম এবং বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের৷