সাকা, মীর কাসেম, গোলাম আজমের পুত্রদের মুক্তি দাবি
১৩ অক্টোবর ২০১৬যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী আর আমৃত্যু কারাদন্ড ভোগের সময় কারাগারেই মারা যাওয়া জামায়াত নেতা গোলাম আজমের পুত্রকে ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানাতে গিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, ‘‘গত আগস্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের পুত্রদের গুম করে৷ এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য তথ্য থাকলেও সরকার বিষয়টি স্বীকার করছে না৷'' হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) এক বিবৃতিতে সরকারের প্রতি সাকা চৌধুরী, মীর কাশিম আলী ও গোলাম আজমের পুত্রকে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে নির্বিচারে ও ‘গোপন গ্রেপ্তার' বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছে৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বিবৃতিতে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার ও গুমের দীর্ঘ ইতিহাস আছে৷ লোকজনকে আটক করে তাদের হেফাজতে থাকার কথাও অস্বীকার করে৷ আটককৃত ব্যক্তিরা নির্যাতন, এমনকি হত্যারও শিকার হন৷''
বাংলাদেশে ব্লগার, ‘নাস্তিক', বিদেশি এবং এলজিবিটি অ্যাক্টিভিস্টদের হত্যাকাণ্ড আর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার মতো বিষয়গুলোও তুলে ধরেছে এইচআরডাব্লিউ৷ ১ জুলাই গুলশানের ওই হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জন নিহত হন৷ এইচআরডাব্লিউ-এর মতে,,‘‘এসব হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সরকার প্রথমদিকে সামান্যই পদক্ষেপ নিয়েছে৷''
এইচআরডাব্লিউর দাবি, ‘‘হোলি আর্টিজানের দুই জিম্মিকেও গোপনে আটক করা হয়েছিল৷ এক মাসেরও বেশি সময় পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সরকার বিষয়টি স্বীকার করে৷ তিন মাস আটক থাকার পর ওই দু'জনের মধ্যে একজনকে কোনো অভিযোগ গঠন ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়৷ অন্যজন এখনও আটক রয়েছেন৷''
তিন ‘যুদ্ধাপরাধীর' পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী, মীর আহমেদ বিন কাশেম এবং আমান আজমীর ব্যাপারে এইচআরডাব্লিউর কথা হলো, ‘‘সরকারের উচিত দ্রুত এই তিন ব্যক্তির ব্যাপারে অভিযোগ গঠন করা অথবা তাদের মুক্তি দিয়ে এবং গুম ও অবৈধ আটকের অবসান ঘটানো৷''
ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘‘সরকারের কাছে যদি এই তিন ব্যক্তির কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকে, তাহলে শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা উচিত৷ দ্রুত আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যদের দেখা করার সুযোগ দেওয়াসহ অন্যান্য প্রক্রিয়াও অনুসরণ করা উচিত৷''
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক আরো বলেন, ‘‘গুমের শিকার তিন রাজনৈতিক নেতার পুত্রদের কোনো বিচারিক বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই আটক করা হয়৷ আইন অনুযায়ী তাদের কোনো বিচারকের সামনে হাজির করা হয়নি৷ পরিবারের সদস্য বা আইনজীবীদেরও তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়নি৷''
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ‘‘সরকার সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের নামে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বারবার খারাপ আচরণ করছে৷ বাংলাদেশের দাতা দেশ এবং সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে যেসব দেশ ঢাকার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে, তাদের এ বিষয়ে কথা বলা উচিত৷''
বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই তিজনের পরিবারই অভিযোগ করেছেন যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের তুলে নিয়ে গেছেন৷ এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা৷ আমার কথা হলো তাদের যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা না-ও তুলে নিয়ে গিয়ে থাকে তারপরও তাদের খুঁজে বের করা তাদের কাজ৷ প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব৷''
তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে এই অভিযোগ সত্য নয়৷ তাদের পরিবারের পক্ষ থেকেও কেউ এ ধরণের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে করেননি৷ তারা অভিযোগ করলে তাদের অবস্থানের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো৷''