‘‘সরকার প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে এই ফাঁসি কার্যকর করতে যাচ্ছে’’ – আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্য নিয়ে টোবি ক্যডম্যানের এই অভিযোগ ‘অসত্য' বলে উড়িয়ে দিলেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত৷
বিজ্ঞাপন
[No title]
বুধবার ডয়চে ভেলের ইংরেজি বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ ব্যারিস্টার টোবি ক্যাডম্যান দাবি করেন, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য ফাঁসিতে ঝোলানো হচ্ছে৷ গ্রেহেম লুকাসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘এই বিচারে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হয়নি৷''
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগকে বলেন, ‘‘টোবি ক্যাডম্যান জামায়াত নেতাদের আইনজীবী নন৷ তিনি একজন লবিস্ট৷ আর লবিস্ট হিসেবে তাদের বাঁচাতে তিনি অসত্য বলছেন৷ বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি এই কাজ করছেন৷''
সাক্ষাৎকারে টোবি ক্যাডম্যান মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তোলেন৷ তাঁর মতে, ‘‘দু'টি (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের) মামলাতেই যুক্তিতর্কের জন্য সীমিত সময় দেয়া হয়েছে৷'' রিভিউয়ের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলে তিনি দাবি করেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগের যে বিচারকরা এর আগে আপিল খারিজ করেছেন, তাঁরাই রিভিউ আবেদন শুনানি করেছেন৷''
ক্যাডম্যান ডয়চে ভেলের ইংরেজি বিভাগেকে আরো জানান, মুজাহিদের রিভিউ শুনানির পরের দিন এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্ষেত্রে রিভিউ শুনানির ৩০ মিনিটের মধ্যে রায় দেয়া হয়৷
আপিলেও বহাল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি
অনেকের জন্য গত কয়েকটি দিন ছিল অধীর আগ্রহ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষার৷ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়৷ মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
৯টি অভিযোগ প্রমাণিত, চারটিতে মৃত্যুদণ্ড
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড আপিল বিভাগও বহাল রেখেছে৷ এর আগে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হয়৷ ৯টির মধ্যে চারটি অপরাধের জন্যয় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় বিশেষ আদালত৷ তবে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন৷ বুধবার আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেই চার অভিযোগ
যে চারটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো, চট্টগ্রামের কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠিাতা অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে, রাউজানের সুলতানপুর গ্রামের তিনজনকে, রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে এবং চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তাঁর ছেলে শেখ আলমগীরকে হত্যা করা৷
ছবি: Farjana K. Godhuly/AFP/Getty Images
সাকা’র ছেলের দাবি
আপিলের রায় ঘোষণার পর সালাহদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী (মাঝে) বলেন, ‘‘আমার বাবা একজন নির্দোষ মানুষ৷ আশা করি, একদিন না একদিন প্রমাণ হবে যে তিনি নির্দোষ৷’’
ঢাকার শাহবাগে আপিলের রায় ঘোষণার আগে থেকেই অবস্থান নিয়েছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষ৷ তাই ‘সাকার ফাঁসির আদেশ বহাল থাকছে’ – এই খবর পৌঁছানোর পর সেখানেও শুরু হয় আনন্দ৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
‘সাকা’র শাস্তি না হলে জাতি হতাশায় নিমজ্জিত হতো’
বুধবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘‘সাকা চৌধুরীর ফাঁসির এই রায় প্রত্যাশিত ছিল৷ এ শাস্তি না হলে পুরো জাতি হতাশায় নিমজ্জিত হতো৷ এখন বাকি আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই রায় রাস্তবায়ন হবে৷’’ তিনি আরো জানান, ‘সাকা চৌধুরী একাত্তরে দেশে ছিলেন না’ – এমন বক্তব্য সর্বোচ্চ আদালত গ্রহণ করেনি৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
আইনজীবীর আশা
তবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন যে, রায়ের কপি পেলে তাঁরা রিভিউ আবেদন করবন৷ তিনি বলেন, ‘‘যেসব অভিযোগে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে, আমরা আশা করি, রিভিউ-এর মাধ্যমে সেগুলো থেকে সাকা চৌধুরী খালাস পাবেন৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
7 ছবি1 | 7
দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারে টোবি ক্যাডম্যান বিচারকার্যের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে এই ফাঁসি কার্যকর করতে যাচ্ছে৷ সরকার এই বিচার প্রক্রিয়া যে প্রভাবিত করেছে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ আমার কাছে আছে৷''
সাক্ষাৎকারে সাক্ষীদের সাক্ষ্যদানে বিরত রেখে বিচারকার্যের নিরপেক্ষতা বিনষ্ট করার অভিযোগও তোলা হয়েছে৷ এর পক্ষে দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে গিয়ে ক্যাডম্যান দাবি করেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ৬ জন সাক্ষীকে আদালতে আসতে দেয়া হয়নি৷’’ ওই সাক্ষীদের বিদেশ থেকে আসা রুখতে সরকার বিমানবন্দরে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি রুখতে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন ক্যাডম্যান৷
বুধবার বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ৷ তাদের রিভিউ আবেদনও খারিজ করা হয়৷ ফলে এই রায় নিয়ে আদালতের আর কোনো বিচারিক প্রক্রিয়া বাকি নেই৷ তবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে ফাঁসি এড়ানোর সুযোগ আছে৷ বৃহস্পতিবার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ জানিয়েছেন, তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন না৷ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এখনো এ বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত জানাননি বলে ডয়চে ভেলেকে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷
টোবি ক্যাডম্যান রিভিউ আবেদন খারিজের দিনই সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ফাঁসির হাত থেকে বাঁচাতে জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেন৷
মুজাহিদের ফাঁসি
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে বুধবার (১৭.০৭.১৩) ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় দিয়েছেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২৷ বুধবার (১৭.০৭.১৩) দেওয়া রায়ে তাকে ‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
আমৃত্যু কারাদণ্ড
মাত্র দু’দিন আগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় নব্বই বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৷ বয়স বিবেচনায় এনে আযমকে মৃত্যুদণ্ড দেননি আদালত৷
ছবি: Nashirul Islam/AFP/Getty Images
মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশ সরকারের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ এবং সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুই লাখের মতো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ তবে আন্তর্জাতিক মহল মনে করে, মুক্তিযুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ লাখ প্রাণহানি হয়েছিল৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: AP
আলবদর কমান্ডার
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আলবদর বাহিনী গঠন করে হত্যা, গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজসহ পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে৷ ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ বর্তমানে তিনি কারাবন্দি আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stringer
‘‘মানুষ হত্যা করেছেন মুজাহিদ’’
যুদ্ধাপরাধ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মুজাহিদ শুধু বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং গণহত্যার পরিকল্পনাকারীই ছিলেন না, তিনি নিজেও সরাসরি গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন৷ ফরিদপুর এলাকায় তার নৃশংসতার সাক্ষী এখনো আছে৷’’ এই রায়ে সন্তুষ্ট বাদল৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
ফেসবুক প্রতিক্রিয়া
ওয়াসেক বিল্লাহ সৌধ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এই রায় মানি৷’’ আর শরিফুল হাসান লিখেছেন, ‘‘যে যাই বলুন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আমি শতভাগ তৃপ্ত না হলেও এ পর্যন্ত যা পেয়েছি তাতেও আমি অনেক খুশি৷’’ তবে তপু হোসেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘এটা ভুয়া রায়... মানিনা মানবো না৷’’
ছবি: Reuters
‘‘এটি প্রহসনের রায়’’
জামায়াতে ইসলামী এই রায় ঘোষণার প্রতিবাদে বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে৷ মুজাহিদের আইনজীবী তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এটি প্রহসনের রায়৷ রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি৷’’ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলেও জানান ইসলাম৷
ছবি: Reuters
দুই দিনে নিহত ৯
যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ১৫ ও ১৬ জুলাই সহিংসতায় কমপক্ষে নয় ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে৷ জামায়াতে ইসলামী এই সময় হরতাল পালন করেছে৷ মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে চার ব্যক্তি৷ আর সোমবার পাঁচ ব্যক্তি৷ দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশ করেছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters
ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে এই রায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়৷ এর আগে ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদকে ফাঁসি, জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ফাঁসি, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসি এবং সর্বশেষ সোমবার গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Stringer/AFP/Getty Images
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগকে দেয়া সাক্ষাৎকারে টোবি ক্যাডম্যানের এই আহ্বানের যৌক্তিকতা অস্বীকার করার পাশাপাশি ট্রাইব্যুনাল ও বিচার সম্পর্কে তাঁর সমস্ত দাবি অসত্য বলে উড়িয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত৷ শুরুতেই টোবি ক্যাডম্যানকে একজন যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের লবিস্ট হিসেবে উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘টোবি ক্যাডম্যান জামায়াত নেতাদের আইনজীবী নন৷ তিনি লবিস্ট৷ লন্ডনে তাঁর লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী একটি চুক্তি করেন৷ আর সেই চুক্তি অনুযায়ী টোবি ক্যাডম্যান বিচার শুরুর পর থেকেই তাদের (মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত) বাঁচাতে আন্তর্জাতিক মহলে দেন-দরবার করছেন৷ তিনি জামায়াত নেতাদের ওকালত নামায় সই করেননি৷ তাহলে তিনি জামায়াত নেতাদের আইনজীবী হন কীভাবে?''
ডয়চে ভেলে: টোবি ক্যাডম্যানের অভিযোগ, এই বিচারে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হয়নি৷ বিচার হয়েছে সংক্ষিপ্ত সময়ে...
রানা দাশগুপ্ত: এই বিচার পর্যাপ্ত সময় নিয়েই হয়েছে৷ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরে৷ যুদ্ধাপরাধের বিচারে বিশ্বের কোথাও আপিলের সুযোগ না থাকলেও, বাংলাদেশে আপিল এবং রিভিউ – দু'টোরই সুযোগ আছে৷ এমনকি কোনো কোনো আসামিকে জামিনও দেয়া হয়েছে৷ এমন নজির বিশ্বের আর কোথাও নেই৷ যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধপরাধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ স্টিফেন ব়্যাপ একাধিকবার বাংলাদেশ সফর করে বলেছেন, এই বিচার স্বচ্ছ এবং অনুসরণীয়৷
টোবি ক্যাডম্যান আরো বলেছেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে ছয় জন সাক্ষীকে বাংলাদেশে এসে সাক্ষ্য দিতে দেয়া হয়নি৷
এটা সত্য নয়, কারণ, যে সাক্ষীদের কথা বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে কিন্তু তাদের সাক্ষী হিসেবে দেখানো হয়নি৷ এমনকি আপিলের পর্যায়েও না৷ রিভিউ আবেদনের পরে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আবেদন করা হয়৷ এই পর্যায়ে নতুন কোনো সাক্ষীকে গ্রহণের বিধান আইনে নেই৷ রিভিউতে বিচারকরা শুধু রায় পর্যালোচনা করে দেখেন৷''
টোবি ক্যাডম্যান বলেছেন, যে বিচারকরা আপিল খারিজ করেছেন তাঁরাই রিভিউ-ও করেছেন৷ এটা কি আইনসম্মত?
এটাই আইন৷ এটা সংবিধানেই আছে৷ শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই আছে৷ যে আদালত আপিল শোনে সেই আদালতই আবেদন পেলে রিভিউ করে৷ রিভিউ বিষয়টি হলো, আপিল আদালতের কাছে আবেদন করা হয় তাদের রায় আরেকবার পর্যালোচনা করে দেখার জন্য৷ আর রিভিউয়ের আবেদন তো সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগেই করা হয়েছে৷
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তো দাবি করেছেন, ঘটনার সময় (১৯৭১) তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছিলেন...
ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে তিনি এটা বলেছেন৷ আর আপিলের সময় সার্টিফিকেট দিয়েছেন৷ কিন্তু প্রমাণ হয়েছে সেই সার্টিফিকেট জাল৷ এটা তৈরি করা হয়েছে৷
টোবি ক্যাডম্যান দাবি করেছেন, সরকার বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে...৷
তিনি নানা অভিযোগ করতেই পারেন৷ লবিস্ট হিসেবে তিনি তাঁর কাজ করছেন৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশ্ব এই বিচারকে স্বচ্ছই বলেছে৷
ক্যাডম্যান ফাঁসির দণ্ড কার্যকর না করতে জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন...৷
স্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমেই দণ্ড দেয়া হয়েছে৷ উন্নত বিশ্বসহ বিশ্বের অনেক দেশে বিচার ছাড়াই দণ্ড দেয়া হয় বা হচ্ছে৷ টোবি ক্যাডম্যানের উচিত সেই সব দেশে হস্তক্ষেপের জন্য জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যকে আহ্বান জানানো৷
জেগে আছে প্রজন্ম চত্বর
মূল দাবি একটাই, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’৷ এই দাবি নিয়ে পাঁচই ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগ চত্বরে অবস্থান করছে তরুণ প্রজন্ম৷ তাদের সমর্থন জানাচ্ছে সবশ্রেণির মানুষ৷ ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে বেশ কয়েকদিন৷ কিন্তু এক চুল নড়েনি তারা৷
ছবি: Reuters
লাগাতার আন্দোলন
শাহবাগে অবস্থান নেওয়া তরুণ প্রজন্ম গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি ধরে লাগাতার তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অনড় তারা৷ ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইটে নিয়মিত সেখানকার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাতীয় দলের আগমন
রবিবার প্রজন্ম চত্বরে এক টুকরো আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে এসেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা৷ আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল, শাহবাগে অবস্থান নেওয়া ব্লগার, তরুণ সমাজের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসছেন তাঁরা৷ রবিবার সেই খবরের সত্যতা প্রকাশ পেলো৷
ছবি: REUTERS
টুইটার লড়াই
হ্যাশট্যাগ #shahbag, কেউ কেউ ব্যবহার করছেন #shahbagh - আসলে শাহবাগের ইংরেজি বানান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে৷ উইকিপিডিয়া শেষের এইচটি বাদ দিলেও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সেটি ধরে রেখেছে৷ এই বিভ্রান্তি অবশ্য টুইটার লড়াইকে পেছনে ফেলেনি৷ বরং সমানতালে দু’টি হ্যাশটাগ দিয়েই জানানো হচ্ছে আন্দোলনের অগ্রগতি৷
ছবি: REUTERS
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ‘শোধরানোর’ চেষ্টা
শাহবাগের প্রতিবাদ কি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে না ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে? বিবিসি ইংরেজি বিভাগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনামে এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল৷ টুইটারে আন্দোলনকারীদের অব্যাহত দাবির পর সেই শিরোনামে বদল এসেছে৷ ইসলামপন্থী বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধ শব্দটি জোড়া হয়েছে সেখানে৷ এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আমারব্লগ৷
ছবি: amarblog.com
‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’
প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান করছেন ‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’ দলের অনেক সদস্য৷ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির দাবিকে আরো সোচ্চার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা৷ পাশাপাশি প্রজন্ম চত্বরের সর্বশেষ পরিস্থিতিও ইন্টারনেটে তুলে ধরা হচ্ছে এদের মাধ্যমে৷
ছবি: REUTERS
‘আপনার সহায়তা প্রয়োজন’
ডয়চে ভেলের টুইটার পাতাতে আন্দোলনকারীদের কিছু বার্তা আমরা পেয়েছি৷ জিন্নাত গোনিম নামক ঢাকার এক বাসিন্দা টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমরা কোন রাজনৈতিক দল, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নই৷ আমরা বাংলাদেশি৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাচ্ছি, আমার মায়ের হত্যাকারীর, বোনের ধর্ষকের বিচার চাচ্ছি৷ আমাদের আপনার সহায়তা প্রয়োজন৷’’
ছবি: twitter.com
এই প্রজন্মের নারী মুক্তিসেনাদের লড়াই
গত কয়েকদিন ধরেই গণমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা করে নিচ্ছেন লাকি আক্তার৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরুর দিন থেকে রয়েছেন শাহবাগে৷ তাঁর মতো আরো কয়েকজন নারী মুহুর্মুহু শ্লোগানে কাপিয়ে তুলছেন প্রজন্ম চত্বর৷ বিভিন্ন স্কুলকলেজের ছাত্রীরা মাঝেমাঝে হাজির হচ্ছেন আন্দোলনে৷
ছবি: REUTERS
‘ফাঁসির মঞ্চ’ প্রস্তুত
‘রাজাকারের ফাঁসি চাই’ - এই হচ্ছে প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনরতদের মূল দাবি৷ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করলে তা প্রত্যাখ্যান করে তরুণ প্রজন্ম৷ তারা চায় ফাঁসির আদেশ৷ শাহবাগে প্রতীকী ‘ফাঁসির মঞ্চ’ তৈরি করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির অপেক্ষায় আছে ব্লগাররা৷
ছবি: Reuters
সপরিবারের শাহবাগে
শাহবাগে অনেকেই হাজির হচ্ছেন সপরিবারে৷ ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সাহিত্যিক, অধ্যাপক অনেকেই এসেছেন সপরিবারে৷ এই ছবিতে এক শিশুকে দেখা যাচ্ছে শাহবাগ চত্বরে, প্রতিবাদী ব্যানার মাথায় জড়িয়ে৷
ছবি: REUTERS
ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক
‘ট্র্যাইবুনালে কাদের মোল্লার প্রহসনের রায়ের বিরুদ্ধে মহাসমাবেশ’ - এই শিরোনামে পাঁচ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক৷ ব্লগারদের আহ্বানে সেদিন শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে সাধারণ মানুষ৷ এখন এই আন্দোলন আমজনতার৷