প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যের জবাবে এক ব্লগার লিখেছেন, ‘‘আমাদের একটা ফরমালিন মুক্ত দেশ দিন৷'' সাকিব আল হাসানের স্ত্রী-কে নিয়ে মন্তব্য পড়ে আরেক ব্লগার মন্তব্যকারীদেরই ঘর সামলানোর পরামর্শ দিয়েছেন৷
সাকিবের সঙ্গে শিশির (ডানে)ছবি: DW/M. Mamun
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘‘বিএনপির রাজনীতি পচে গেছে৷ এখন আমরা একে ফরমালিন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি৷'' তাঁর এই মন্তব্যের সূত্র ধরে সামহয়্যার ইন ব্লগে রানা সোহেল একটি পোস্ট দিয়েছেন, যার শিরোনাম, ‘ফরমালিন মুক্ত রাজনীতি, ফরমালিন মুক্ত দেশ'৷
সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘বিরোধী দলকে তাজা রাখতে সরকার নাকি ফরমালিন দিচ্ছে৷ আহা! কী ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা'! নিজেরা নিজেরাই তো, একজন পচলে আরেক জনের তো খারাপ লাগারই কথা৷ খাবার দাবার তাজা রাখতে ব্যবসায়ীরা ফরমালিন দিচ্ছে৷ সাধারণ জনগণের আর পচা/বাসী খেতে হচ্ছে না৷ ভালো, ভালো!!
‘বিএনপির রাজনীতি পচে গেছে, আমরা একে ফরমালিন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি'ছবি: Reuters
রাজনীতি নাকি মানুষের জন্য৷ খাদ্যদ্রব্যও নাকি মানুষের জন্য৷ আপনাদের এই ফরমালিনে রাজনীতি তাজা (!) থাকছে, খাদ্যদ্রব্য তাজা থাকছে, কিন্তু আমরা তো তাজা থাকতে পারছি না৷ ফরমালিন যুক্ত রাজনীতিতে দেশ বিষাক্রান্ত হচ্ছে, আর খাবার খেয়ে আমরা৷''
দেশের মানুষ ‘নষ্ট' রাজনীতির খপ্পরে পড়ে দিশেহারা, অসহায়৷ তাই লেখার শেষে রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে রানা সোহেলের অনুরোধ, ‘‘আপনারা তাজা থাকেন, আমাদের কোনো দুঃখ নেই৷ আমরা একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকলে কি আপনাদের অনেক দুঃখ? না হলে, আমাদের একটা ফরমালিন মুক্ত দেশ দিন, ফরমালিন মুক্তভাবে বাঁচতে দিন৷ চাওয়াটা হয়তো অনেক বেশি হয়ে গেল৷ তবু দেখেন না একটু, প্লিজ!!''
সামহয়্যার ইন ব্লগে আরমান অরণ্য লিংকন এতটা ধৈর্য বা সহনশীলতার পরিচয় দেননি৷ কলকাতা নাইট রাইডার্স আইপিএল-এ চ্যাম্পিয়ন হবার পর সাকিব আল হাসান সগর্বে ছবি তুলেছেন ট্রফি হাতে নিয়ে৷ বাংলাদেশের অহংকার সাকিবের পাশে তাঁর স্ত্রী-ও ছিলেন৷ স্বাভাবিক পোশাকে, হাস্যোজ্বল সাকিব পত্নিকে দেখে কারো কারো ভালো লাগেনি৷ তাঁদের মনে হয়েছে, সাকিবের স্ত্রী-র বোরকা পরা উচিত৷ ভারতের ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানের স্ত্রী বোরকা পরলে, বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের স্ত্রী কেন পরবেন না- এটাই তাঁদের প্রশ্ন৷ এই প্রশ্নকে আরমান অরণ্য লিংকন দেখেছেন ‘ক্যাচক্যাচানি' হিসেবে৷ তাই তাঁর লেখার শিরোনাম, ‘সাকিবের বৌকে বোরকা পরানোর ক্যাচক্যাচানি ও ছোট্ট একটি কথা না বললেই না...'৷
বাঙালি নারীর দশ গুণ
গরবিনি, আবেগী এবং স্বাধীনচেতা – বাঙালি নারীর সঙ্গে এই তিনটি বিশেষণই মানানসই৷ নারীর গুণ সম্পর্কে জানিয়েছেন ডয়চে ভেলের পাঠকরা৷ তাঁদের মতামত এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি বাঙালি নারীর দশগুণ নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
আবেগী, স্বাধীনচেতা
গরবিনি, আবেগী এবং স্বাধীনচেতা – বাঙালি নারীর সঙ্গে এই তিনটি বিশেষণই মানানসই৷ আবেগ যেমন তাঁদের দ্রুত স্পর্শ করে, তেমনি স্বাধীনতার প্রশ্নে কিন্তু তাঁরা সত্যিকার অর্থে অনড়৷ নিজের সত্ত্বা নিয়ে অহংকার তাঁদের আছে বটে, তবে তার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মধ্যে রয়েছে অসীম ধৈর্য্য৷
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
শাড়িতে সবচেয়ে সুন্দর
বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে শাড়ি৷ সেই শাড়ি বাঙালি নারীর সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তোলে চমৎকারভাবে৷ বিভিন্নভাবে শাড়ি পরতে জানেনও তাঁরা৷ আর ‘উপহার হিসেবে শাড়ি’? – কোন বাঙালি মেয়ে না চায় বলুন?
ছবি: DW/A. Islam
উৎসব প্রেমী
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন৷ নববর্ষ, ঈদ কিংবা দুর্গা পূজা – সব উৎসবই যেন বাঙালি নারীর জন্য তৈরি৷ প্রতিটি উৎসবের সঙ্গে মানানসই পোশাক পরতে এবং সেই উৎসবের উপযুক্ত রান্নায় পারদর্শী তাঁরা৷ ডয়চে ভেলের পাঠক সুজন খানের কথায়, ‘‘বঙ্গের নারী লাজুক প্রকৃতির, কিন্তু যে কোনো উপলক্ষ্যেই প্রাণ খোলা হাসি উপচে পড়ে তাঁদের৷’’
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
‘নো ডায়েট’
বাঙালি নারী ‘ডায়েট’ করছেন, এমনটা বেশ বিরল৷ তাই খাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা বেশ উদার৷ কথায় বলে না, মাছে-ভাতে বাঙালি? অবশ্য মাছ-ভাতের পাশাপাশি ফুসকা কিংবা চটপটি পেলে তো আর কথাই নেই৷ আসলে টক, ঝাল, নোনতা, মিষ্টি, এমনকি তেতোও পছন্দ এই নারীদের৷
ছবি: Debarati Mukherji
রান্নার শখ
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাই ধরুন৷ দেশ সামলানোর কঠিন দায়িত্ব পালনের মাঝেও রান্না ঘরে যেতে ভোলেন না তিনি৷ গত বছর ছেলের জন্য রান্না করার সময় তোলা তাঁর এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছিল৷ বাঙালি মেয়েরা রাঁধতে যে ভীষণ ভালোবাসেন!
ছবি: Sajeeb Wazed
অল্পতেই সন্তুষ্ট
বাঙালি মেয়েদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা কি খুব কঠিন? না৷ সকলেই জানেন যে, কাজটা সহজই৷ একটি লাল গোলাপ পেলে কিংবা প্রিয় রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেলেই তাঁরা সন্তুষ্ট৷ ডয়চে ভেলের পাঠক রন্জু খালেদের মতে, বাঙালি নারীর মধ্যে ‘একইসাথে দৃঢ়তা ও নমনীয়তা এবং প্রজাপতির চপলতা’ রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
কাজল কালো চোখ
জীবনানন্দ দাসের ‘বনলতা সেন’ কিংবা রবি ঠাকুরের ‘কৃষ্ণকলি’ – বাঙালি নারীর কাজল কালো চোখের প্রশংসা পাবেন অনেক কবির কবিতাতেই৷ সত্যি বলতে কি, বাঙালি নারীর চোখ পুরুষকে টানে সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: N.Seelam/AFP/GettyImages
বাকপটু
বাংলাদেশের কিংবা ভারতের মেয়েরা চুপ করে বসে আছেন – এমন দৃশ্য কল্পনা করাও কঠিন৷ তাঁরা কথা বলতে ভালোবাসেন৷ রান্না থেকে রাজনীতি – সব বিষয়েই একটা মতামত আছে তাঁদের৷ ডয়চে ভেলের পাঠক জিএনএস নয়নের কথায়, ‘‘নারী পুরুষের যে কোনো কষ্ট অতি সহজে ভুলিয়ে দিতে পারে৷ এই গুণই আমাকে মুগ্ধ করে, আবার সাথে অবাকও করে৷’’
ছবি: DW/A. Islam
নারীবাদী
বাঙালি মেয়েরা নারীবাদী৷ বিতর্কিত বাঙালি লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁদের অনেকেরই প্রিয়৷ নাসরিনের ‘আমার মেয়েবেলা’ পড়েনি এমন নারী পাওয়া মুশকিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
ভ্রমণপ্রিয়
বাংলাদেশি কিংবা ভারতীয় বাঙালি নারীর গুণ কি আর অল্পতে জানানো যায়, বলুন? কিছু গুণ না হয় অজানাই থাক৷ তবে একটির কথা বলে শেষ করি, বাঙালি মেয়েরা কিন্তু ঘুরতে খুব ভালোবাসেন৷ তথ্য সহায়তা: ডয়চে ভেলে ফেসবুক পাতা, ইন্ডিয়াওপাইন্স, স্কুপহুপ
ছবি: DW/A. Islam
10 ছবি1 | 10
আরমান অরণ্য লিংকন এ লেখায় সাকিব আল হাসানের স্ত্রী-র ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কারো কারো মন্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এমন শব্দ প্রয়োগ আরো করেছেন৷ বাংলাদেশের রাজনীতির মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও প্রতিপক্ষ বা ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ নতুন কিছু নয়৷ লিংকন কিন্তু নিজস্ব ভঙ্গিতে কিছু যৌক্তিক প্রশ্নও তুলেছেন৷ তাঁর মতে, যাঁরা সাকিবের স্ত্রীকে ধর্মের দোহাই দিয়ে পর্দা মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন, তাঁদের অনেকের ব্যক্তিজীবনই ঠিক সেরকম নয়৷ তাই সামহয়্যার ইন ব্লগের এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘ ভাই, অফ যান, এত নাটক ভালো লাগে না... ক্যাটরিনার ড্যান্স দেইখা আর সানি লিওনের পেজে লাইক দিয়া সাকিবের বৌরে বোরখা পরাইতে আইসেন না৷ আগে নিজের মা-বোন-বউ বোরখা পরে কিনা সেদিকে লক্ষ্য করেন, তারপর বলিউডের নায়িকাদের পেজে আনলাইক দেন, সবশেষে নিজের ও আত্মীয় স্বজনের প্রত্যেক বিয়ে-শাদীতে কনে আর অন্যান্য মেয়েদের বোরখা পরায় ছবি তোলার ব্যবস্থা করেন, তারপর সাকিবের বউরে ভালো বানাইয়েন......''