কয়দিন ধরে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বেশ কথা শুনছি৷ মানে যা বুঝলাম সাকিব মোটামুটিভাবে সব পক্ষকে আহত করতে পেরেছেন৷
বিজ্ঞাপন
কলকাতার কালিপূজায় উপস্থিত হয়ে একপক্ষকে আহত করেছেন সাকিব, আবার ডিজিটাল হুমকির পর নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়ে আরেক পক্ষকে আহত করেছেন তিনি৷
কিন্তু আমার মতে, তার এই দুটো আচরণই ঠিক আছে৷ ঘোর এই করোনার সময় তিনি যে কলকাতায় কালিপূজায় গেলেন তার নিশ্চয়ই কারণ আছে৷ হয় সাকিব নগদ কোনো প্রাপ্তিযোগে আনন্দিত হয়েছেন বা তাকে দেখে বা পাশে পেয়ে অনেকে আনন্দিত৷
নিজে খুশি বা অন্যকে খুশি, যেকারণই হোক না কেন এটি করার অধিকার তার রয়েছে৷ যদি এর কারণে ইহকালে করোনা আর পরকালে আরও বড় কোনো শাস্তি তিনি পান, সেটিও তিনিই পাবেন৷
আমাদের অনুভূতিতে কেন আঘাত লাগল? তিনি বড় খেলোয়াড় তাকে সবাই ফলো করে এই জন্য? নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ভার সাকিব ভালই নিতে জানেন আর একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের পক্ষে কতটা শরীয়তি হওয়া সম্ভব, তা নিশ্চয়ই আবার ভেবে দেখতে পারি আমরা৷
কালিপূজায় সাকিবকে দেখে একজন দা নাকি রামদা নিয়ে সাকিবকে হুমকি দিলেন৷ আমাদের কাজ হলো তার এই বার্তা ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রতি ইঞ্চিতে ছড়িয়ে দেওয়া৷ মানে এই ডিজিটাল দুনিয়ার আগে কেউ কোনোদিন শুনেছে ওইরকম এক বক্তব্য এত নিষ্ঠার সঙ্গে বিতরণের কথা?
যাহোক আলাপে ফিরে আসি৷ সাকিব তার কাজের জন্য মাফ চেয়েছেন৷ এতে আবার অনেকের মনে আঘাত লেগেছে৷ সাকিব তো কাউকে খুশি করতে এটা করতেই পারেন৷ সাকিব ও আমাদের অন্য ক্রিকেটাররা নিয়ম করে হজ ও নামাজের ছবি দেন৷ ভক্তদের কাছে তাদের পরিচিতি বা গ্রহণযোগ্যতা সেরকম একজন হিসেবেই৷ এখন সাকিব তাদের খুশি রাখতে চাইছেন, চাইবেনই তো!
সব শেষে একবছর আগের এই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেই৷ জুয়াড়ির সঙ্গে যোগাযোগ না জানানোর দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাকিব৷ আমরা দায় দেখছিলাম পাপন সাহেবের আর ষড়যন্ত্র দেখছিলাম ভারতের, মনে পড়ে? এই তত্ত্বে গলা মিলিয়েছিলেন অনেক বোদ্ধাও!
আমরা যেন এত দ্রুত উপসংহারে না আসি, দল করে গলাবাজি করার আগে যেন আরেকটু ভাবার শক্তি পাই৷
গতবছর অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...
ভালো-মন্দে সাকিব
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ব্যাট-বলে সমানতালে পারফর্ম করে নিজেকে অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন৷ মাঝেমধ্যে জন্ম দিয়েছেন বিতর্ক, নিজের আচরণের জন্যও হয়েছেন নিন্দিত৷ সাকিবের ভালো-মন্দের খতিয়ানগুলো নিয়ে আমাদের এই ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/M. Melville
সেই যে শুরু
২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বিতর্কে জড়ান সাকিব৷ ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ব্যাট করছিলেন তিনি৷ কিন্তু সাইড স্ক্রিনের পাশে এক দর্শকের নড়াচড়া তার মনযোগে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল৷ হঠাৎ ক্রিজ ছেড়ে বাউন্ডারি লাইনে ছুটে যান সাকিব, ব্যাট উঁচিয়ে ওই দর্শককে হুমকিও দিতে দেখা যায় তাকে৷
ছবি: AP
ক্ষমা চাওয়া
২০১০ সালের ২৩ জনুয়ারি দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় একটি ছবি ছাপা হয়৷ ওই ছবিতে তৎকালীন বিসিবি সভাপতি আ হ মু মুস্তফা কামালের পায়ের কাছে নত হয়ে সাকিবকে তার হাত ধরে অনুনয়ের ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখা যায়৷ অনেকেই দাবি করেন, ওই দিন বোর্ড সভাপতির কাছে ক্ষমা চান সাকিব৷
ছবি: picture-alliance/T. Basnayaka
দর্শকের কলার ধরে বিতর্কে
২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস টি টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে এক দর্শক অটোগ্রাফ চান সাকিবের কাছে৷ সাকিব তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মনোক্ষুন্ন দর্শক কটূক্তি করেন৷ তখন গ্যালারিতে গিয়ে ওই দর্শকের কলার চেপে ধরেন তিনি৷
ছবি: AP
অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে নিষিদ্ধ
২০১৪ সালের চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচে ছক্কা মারতে গিয়ে লং-অফে ধরা পড়েন সাকিব৷ আউট নিয়ে টিভি ধারাভাষ্যকারেরা আলোচনা করার সময় প্যাভিলিয়নে বসা সাকিব টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েন৷ ক্যামেরা দেখেই অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন তিনি৷ এই ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তিন ম্যাচে নিষিদ্ধ করা হয় তাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
স্ত্রীর জন্য দর্শককে মারধর
২০১৪ সালের গত ১৬ জুন স্ত্রী শিশিরকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে এক দর্শককে পেটান সাকিব৷ ভারতের বিপক্ষে ওয়ান্ডে সিরিজ চলাকালে ক্রিকেট বোর্ডের অনুমতি ছাড়া বিসিবির করিডোরে স্ত্রীর কাছে এসে এই কাণ্ড ঘটানোয় শাস্তিও পেতে হয় তাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
জাতীয় দল ছাড়ার হুমকি!
বোর্ডের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি না নিয়েই ২০১৪ সালের ২ জুলাই ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) খেলতে দেশ ছাড়েন সাকিব৷ এনিয়ে কোচ তাকে প্রশ্ন করলে জাতীয় দল ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি৷ পরে বোর্ডের নির্দেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে দেশে ফিরে পুরো ঘটনার জন্য দায় দেন ওই সময়কার কোচ হাথুরুসিংহেকে, এ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Guercia
আম্পায়ারের সঙ্গে অসদাচারণ
২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর বিপিএলে সিলেট সুপার স্টার্সের বিপক্ষে ম্যাচে কট বিহাইন্ডের আবেদন করেন সাকিব ও অন্যান্য ফিল্ডারা৷ আম্পায়ার তানভীর আহমেদ তাতে সাড়া না দিলে তার সঙ্গে অসদাচারণ করেন সাকিব৷ এজন্য এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধও হতে হয় তাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
দর্শকের সঙ্গে তর্ক
২০১৮ সালে আমেরিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালীন সাকিব আল হাসান এক ভক্তের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ভিডিও ভাইরাল হলে নিজের ফেসবুকে এনিয়ে ব্যাখ্যাও দেন তিনি৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
সবখানেই সেরা
ওয়ানেড, টেস্ট এবং টি টুয়েন্টি- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এই তিন ফরম্যাটেই একসঙ্গে সেরা অলরাউন্ডারের আসন ধরে রাখেন সাকিব৷ খুব কম ক্রিকেটারই এই কীর্তি অর্জন করতে পেরেছেন৷
ছবি: Getty Images/A. Davidson
মুকুটবিহীন রাজা
গত বিশ্বকাপে মোট আট ম্যাচে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ৷ দুই সেঞ্চুরিসহ সাকিব করেছেন ৬০৬ রান৷ এর মধ্যে সাত ইনিংসেই ৫০-এর বেশি রান করেছেন তিনি৷ এর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারতের শচীন টেন্ডুলকার সাত ইনিংসে ৫০-এর বেশি রানের রেকর্ড গড়েছিলেন৷ এবার সেই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেন সাকিব, তাও আবার শচীনের থেকে তিন ম্যাচ কম খেলে! শেষ বিশ্বকাপে বল হাতে নিয়েছেন ১১ উইকেট৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
অনন্য, অদ্বিতীয় সাকিব
বাংলাদেশের হয়ে সাকিবের কীর্তিগুলো ক্রিকেট বিশ্বে তাকে কাছে অনন্য করে তুলেছে৷ সব ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সেরা এই খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অর্জনগুলো সেরার সেরাদের তালিকায় নিয়ে গেছে৷