শাস্তি না কমলে আগামী এক বছর সাকিবকে পাবে না বাংলাদেশ দল৷ তাই বলে কি ‘সাকিব নেই! সাকিব নেই!' আহাজারি করে আগেই হেরে বসতে হবে? মোটেও না৷ বরং ভারত সফর থেকেই শুরু করতে হবে নতুন লড়াই৷ সেই লড়াইয়ে জয় পাওয়া খুব সম্ভব৷
বিজ্ঞাপন
টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়ে দিলে খুব অবাক হবো না আমি৷ অবাক হবো না, কারণ, আমি জানি, টি-টোয়েন্টিতে ভারত সেরা দল নয়৷গত পরশুই টি-টোয়েন্টির ব়্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে আইসিসি৷ সেখানে সবার ওপরে কোন দেশের নাম লেখা দেখেছেন নিশ্চয়ই? পাকিস্তান৷ ভারতের নাম আছে পাঁচ নাম্বারে৷ বাংলাদেশ অবশ্য আরো পেছনে— নয় নাম্বারে৷ তা নয় নাম্বার দল কি পাঁচ নাম্বারকে হারাতে পারে না? খুব পারে৷
বেশি দূরে যেতে হবে না৷ ব়্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল পাকিস্তানের সবশেষ সিরিজটার কথাই ভাবুন না! তিন ম্যাচের সিরিজটি নিজের দেশেই খেলেছে সরফরাজের দল৷ প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা৷ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় তাদের প্রথম একাদশের অনেক খেলোয়াড়ই পাকিস্তানে যাননি৷ ফলে দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে মাঠে নেমেছিল শ্রীলঙ্কা৷ তারপর? সবাই ভেবেছিলেন, দুর্বল প্রতিপক্ষকে নিজের মাঠে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে পাকিস্তান৷ কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো৷ পাকিস্তানকেই ৩-০ তে উড়িয়ে হাসিমুখে দেশে ফিরেছেন ভানিদু হাসারাঙ্গারা৷
এত খেলোয়াড় থাকতে শুধু ভানিদু হাসারাঙ্গার নামটা কেন বললাম? বলেছি, কারণ, পাকিস্তান-বধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এই ভানুদিই হয়েছেন ম্যান অব দ্য সিরিজ৷ মনে রাখতে হবে, পাকিস্তান সিরিজের তিনটিসহ এ পর্যন্ত মাত্র সাতটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্ট খেলেছেন ভানুদি৷
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচ জেতানো নায়কেরা
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জেতা ১৩টি ম্যাচে সেরার স্বীকৃতি টাইগাররা পেয়েছেন ১২ বার৷ বাকি একটি পুরস্কার যায় পরাজিত দলে৷ টাইগারদের মধ্যে দুইবার করে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছেন শুধু মোহাম্মদ আশরাফুল ও ইমরুল কায়েস৷
ছবি: Getty Images/R. Kinnaird
মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, ১৯৯৯
১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ অংশ নেয় ক্রিকেট বিশ্বকাপে৷ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যাত্রাটি শুরু হয় ছয় উইকেটের হার দিয়ে৷ বাংলাদেশ প্রথম জয় তুলে নেয় তৃতীয় ম্যাচে, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে৷ এই ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু৷ বাংলাদেশের ২২ রানে জেতা ম্যাচে ৬৮ রান (অপরাজিত) করেন তিনি৷ পাশাপাশি ৩ ওভার বল করে ১টি উইকেটও নিয়েছিলেন বিসিবির বর্তমান নির্বাচক৷
ছবি: M. Mohammad
খালেদ মাহমুদ সুজন, ১৯৯৯
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আসরের দ্বিতীয় জয়টিও পেয়ে যায় বাংলাদেশ৷ ৬২ রানে জেতা সেই ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন খালেদ মাহমুদ সুজন৷ ব্যাট হাতে ২৭ রান করার পর বোলিংয়ে ৩ উইকেটও নিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/R. Kinnaird
মাশরাফি বিন মোর্তজা, ২০০৭
১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে দুই ম্যাচে জয় পেলেও বিশ্বকাপে পরের জয়ের জন্য ৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে৷ ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সেই জয়ের দেখা পায় টাইগাররা৷ ৪ উইকেট নিয়ে সেবার ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছিলেন মাশরাফি বিন মোর্তজা৷
ছবি: Getty Images/C. Rose
মোহাম্মদ আশরাফুল, ২০০৭
২০০৭-এর আসরে বিশ্বকাপের তৃতীয় জয়টিও পেয়ে যায় বাংলাদেশ৷ গ্রুপ পর্যায়ের সেই ম্যাচে বারমুডাকে হারায় টাইগাররা৷ ব্যাট হাতে ৩২ বলে হার না মানা ২৯ রান করায় ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ নির্বাচিহ হন মোহাম্মদ আশরাফুল৷ ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৭ উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Singh
মোহাম্মদ আশরাফুল, ২০০৭
২০০৭ সালের সেই আসরেই প্রথম বারের মতো সুপার এইটে উঠে সাউথ আফ্রিকাকেও হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ৷ ৮৩ বলে ৮৭ রান করে আবার ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন মোহাম্মদ আশরাফুল৷ ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৬৭ রানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Dennis
তামিম ইকবাল, ২০১১
২০১১ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে তিনটি জয় পায় বাংলাদেশ৷ গ্রুপ পর্যায়ে প্রথমে আয়ারল্যান্ডকে হারায় ২৭ রানে৷ ওই ম্যাচে ৪৩ বলে ৪৪ রান তুলে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন তামিম ইকবাল৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ইমরুল কায়েস, ২০১১
২০১১ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ের আরেক ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ৷ সেই ম্যাচে ১০০ বলে ৬০ রান করে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন ইমরুল কায়েস৷ বাংলাদেশ জয়ী হয়েছিল ২ উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/M. Lewis
ইমরুল কায়েস, ২০১১
২০১১ সালের সেই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে আরেকটি জয়ও পেয়ে যায় সহ-আয়োজক বাংলাদেশ৷ ওই ম্যাচে নেদারল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল টাইগাররা৷ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে ১১৩ বলে ৭৩ রান করে ম্যাচ সেরা হন ইমরুল কায়েস৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
মুশফিকুর রহিম, ২০১৫
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ৷ তবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেও ম্যাচে ম্যান অব ম্যাচ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের৷ তবে আফগানিস্তানকে ১০৫ রানে হারানোয় ৫৬ বলে ৭১ রানের অবদান রেখে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম৷
ছবি: Getty Images/C. Spencer
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ২০১৫
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে টাইগাররা দ্বিতীয় জয়টি পায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে৷ ওই ম্যাচে ১৩৮ বলে ১০৩ রান তুলে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ৷ বাংলাদেশ ওই ম্যাচ জিতেছিল ১৫ রানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khan
সাকিব আল হাসান, ২০১৯
২০১৯ সালে বিশ্বকাপ মিশনের প্রথম ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় পায় বাংলাদেশ৷ ম্যাচে অলরাউন্ডার নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন সাকিব৷ ব্যাট হাতে করেছেন ৮৪ বলে ৭৫ রান আর বল হাতে ১০ ওভারে ৫০ রান দিয়ে নেন এক উইকেট৷ বাংলাদেশ জিতে যায় ২১ রানে৷
ছবি: picture-alliance/A. Salahuddin
11 ছবি1 | 11
আরো মনে রাখতে হবে, ‘‘দলে মালিঙ্গা নেই, অমুক নেই, তমুক নেই'' আহাজারি করে করে কিন্তু সময় পার করেনি শ্রীলঙ্কা৷ অনেকের না থাকাটাকেই সবাই দেখেছে খুব বড় সুযোগ হিসেবে৷ তার ফলাফলটা দেখুন৷
প্রথম ম্যাচে ৩৮ বলে ৫৭ রান করে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন ক্যারিয়ারের ১৮তম ম্যাচ খেলা দানুশকা গুনাতিলাকা৷ তৃতীয় ম্যাচে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৮ রানের (অপরাজিত) ইনিংস খেলেছেন মাত্র দুটি টি-টোয়েন্টি খেলা ওশাদা ফার্নান্দো৷ আর প্লেয়ার অব দ্য হয়েছেন মাত্র চার ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়ে সিরিজ শুরু করা ভানুদি৷ প্রতিষ্ঠিতরা নেই বলে শ্রীলঙ্কার কিন্তু বিশ্বসেরা পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করতেও কোনো অসুবিধা হয়নি৷
তাহলে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ কেন পারবে না? না পারার কোনো কারণ নেই৷ ম্যাচের আগে মনের বাঘে খেয়ে ফেললেই শুধু সমস্যা৷
ভারতের বিপক্ষে অনেকবারই তীরে গিয়ে তরী ডুবেছে বাংলাদেশের৷ এবার সেই গেরোটা খুলতে হবে৷ সাকিব, তামিমের অভাব পূরণ করতে হবে সামষ্টিক পারফর্ম্যান্সে৷নিজেদের শক্তি, সামর্থ্যের ওপর আস্থা রেখে মাঠে খেলতে হবে পজিটিভ ক্রিকেট৷
টেস্ট ক্রিকেটে বরাবরই বাংলাদেশ একটু দুর্বল৷ এতদিন দেশের মাটিতে দুর্বলতাটা ঢাকা যেতো৷ আফগানিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে তা-ও সম্ভব হয়নি৷ সাকিবের উপস্থিতিও পারেনি রশিদ খানদের জয় ঠেকাতে৷ সুতরাং ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে খুব ভালো করা একটু কঠিন৷ তবে ব্যাটসম্যানরা খেলাটা যে পাঁচদিনের, সেটা মনে রেখে সেশন ধরে ধরে ব্যাট করলে সেখানেও কিছু অর্জনের আশা থাকবেই৷ ভালো একটা স্কোর পেলে বোলাররাও কিছু একটা করে দেখার প্রেরণা পাবেন৷ হোক না, টেস্ট ক্রিকেটে এ মুহূর্তে এক নাম্বার দল ভারত৷ মাশরাফির ‘ধরে দেবানে' মানসিকতা নিয়ে খেললে ভারত থেকে অন্তত মাথা নীচু করে ফিরবে না মাহমুদুল্লাহ আর মুমিনুলের দল৷