আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অন্তত তিনবার ‘দুর্নীতি বিষয়ক' তথ্য গোপন করেছেন সাকিব৷ ২০১৮ সালে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবোয়ের ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং আইপিএল-এ একাধিকবার ফিক্সিং-এর প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব৷
বিজ্ঞাপন
তার বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগই স্বীকার করে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান৷ আইসিসিকে তিনি বলেছেন, তার ভুল থেকে তরুণ ক্রিকেটাররা যাতে শিক্ষা নিতে পারেন, সে উদ্দেশ্যেও কাজ করতে চান তিনি৷
১) আর্টিকেল ২.৪.৪- ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের অংশগ্রহণে ত্রিদেশীয় সিরিজ বা একই বছর অনুষ্ঠিত আইপিএল-এ প্রথমবার ‘দুর্নীতিতে জড়ানোর' প্রস্তাব পান সাকিব৷ কিন্তু এ বিষয়ে পরবর্তীতে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট আকসুকে জানাননি সাকিব৷
২) আর্টিকেল ২.৪.৪- ২০১৮ সালের জানুয়ারিতেই একই ত্রিদেশীয় সিরিজে দ্বিতীয়বার সাকিবের কাছে আসে এমন ‘প্রস্তাব'৷ সেটিও পরবর্তীতে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট আকসুকে জানাননি সাকিব৷
৩) আর্টিকেল ২.৪.৪- ২০১৮ সালের এপ্রিলে সানরাইজারস হায়দারাবাদ ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যকার ম্যাচ নিয়েও ‘দুর্নীতির প্রস্তাব' আসে সাকিবের কাছে৷ এই প্রস্তাব বিষয়েও পরবর্তীতে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট আকসুকে জানাননি সাকিব আল হাসান৷
ভালো-মন্দে সাকিব
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ব্যাট-বলে সমানতালে পারফর্ম করে নিজেকে অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন৷ মাঝেমধ্যে জন্ম দিয়েছেন বিতর্ক, নিজের আচরণের জন্যও হয়েছেন নিন্দিত৷ সাকিবের ভালো-মন্দের খতিয়ানগুলো নিয়ে আমাদের এই ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/M. Melville
সেই যে শুরু
২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বিতর্কে জড়ান সাকিব৷ ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ব্যাট করছিলেন তিনি৷ কিন্তু সাইড স্ক্রিনের পাশে এক দর্শকের নড়াচড়া তার মনযোগে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল৷ হঠাৎ ক্রিজ ছেড়ে বাউন্ডারি লাইনে ছুটে যান সাকিব, ব্যাট উঁচিয়ে ওই দর্শককে হুমকিও দিতে দেখা যায় তাকে৷
ছবি: AP
ক্ষমা চাওয়া
২০১০ সালের ২৩ জনুয়ারি দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় একটি ছবি ছাপা হয়৷ ওই ছবিতে তৎকালীন বিসিবি সভাপতি আ হ মু মুস্তফা কামালের পায়ের কাছে নত হয়ে সাকিবকে তার হাত ধরে অনুনয়ের ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখা যায়৷ অনেকেই দাবি করেন, ওই দিন বোর্ড সভাপতির কাছে ক্ষমা চান সাকিব৷
ছবি: picture-alliance/T. Basnayaka
দর্শকের কলার ধরে বিতর্কে
২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস টি টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে এক দর্শক অটোগ্রাফ চান সাকিবের কাছে৷ সাকিব তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মনোক্ষুন্ন দর্শক কটূক্তি করেন৷ তখন গ্যালারিতে গিয়ে ওই দর্শকের কলার চেপে ধরেন তিনি৷
ছবি: AP
অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে নিষিদ্ধ
২০১৪ সালের চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচে ছক্কা মারতে গিয়ে লং-অফে ধরা পড়েন সাকিব৷ আউট নিয়ে টিভি ধারাভাষ্যকারেরা আলোচনা করার সময় প্যাভিলিয়নে বসা সাকিব টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েন৷ ক্যামেরা দেখেই অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন তিনি৷ এই ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তিন ম্যাচে নিষিদ্ধ করা হয় তাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
স্ত্রীর জন্য দর্শককে মারধর
২০১৪ সালের গত ১৬ জুন স্ত্রী শিশিরকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে এক দর্শককে পেটান সাকিব৷ ভারতের বিপক্ষে ওয়ান্ডে সিরিজ চলাকালে ক্রিকেট বোর্ডের অনুমতি ছাড়া বিসিবির করিডোরে স্ত্রীর কাছে এসে এই কাণ্ড ঘটানোয় শাস্তিও পেতে হয় তাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
জাতীয় দল ছাড়ার হুমকি!
বোর্ডের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি না নিয়েই ২০১৪ সালের ২ জুলাই ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) খেলতে দেশ ছাড়েন সাকিব৷ এনিয়ে কোচ তাকে প্রশ্ন করলে জাতীয় দল ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি৷ পরে বোর্ডের নির্দেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে দেশে ফিরে পুরো ঘটনার জন্য দায় দেন ওই সময়কার কোচ হাথুরুসিংহেকে, এ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Guercia
আম্পায়ারের সঙ্গে অসদাচারণ
২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর বিপিএলে সিলেট সুপার স্টার্সের বিপক্ষে ম্যাচে কট বিহাইন্ডের আবেদন করেন সাকিব ও অন্যান্য ফিল্ডারা৷ আম্পায়ার তানভীর আহমেদ তাতে সাড়া না দিলে তার সঙ্গে অসদাচারণ করেন সাকিব৷ এজন্য এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধও হতে হয় তাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
দর্শকের সঙ্গে তর্ক
২০১৮ সালে আমেরিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালীন সাকিব আল হাসান এক ভক্তের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ভিডিও ভাইরাল হলে নিজের ফেসবুকে এনিয়ে ব্যাখ্যাও দেন তিনি৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
সবখানেই সেরা
ওয়ানেড, টেস্ট এবং টি টুয়েন্টি- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এই তিন ফরম্যাটেই একসঙ্গে সেরা অলরাউন্ডারের আসন ধরে রাখেন সাকিব৷ খুব কম ক্রিকেটারই এই কীর্তি অর্জন করতে পেরেছেন৷
ছবি: Getty Images/A. Davidson
মুকুটবিহীন রাজা
গত বিশ্বকাপে মোট আট ম্যাচে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ৷ দুই সেঞ্চুরিসহ সাকিব করেছেন ৬০৬ রান৷ এর মধ্যে সাত ইনিংসেই ৫০-এর বেশি রান করেছেন তিনি৷ এর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারতের শচীন টেন্ডুলকার সাত ইনিংসে ৫০-এর বেশি রানের রেকর্ড গড়েছিলেন৷ এবার সেই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেন সাকিব, তাও আবার শচীনের থেকে তিন ম্যাচ কম খেলে! শেষ বিশ্বকাপে বল হাতে নিয়েছেন ১১ উইকেট৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
অনন্য, অদ্বিতীয় সাকিব
বাংলাদেশের হয়ে সাকিবের কীর্তিগুলো ক্রিকেট বিশ্বে তাকে কাছে অনন্য করে তুলেছে৷ সব ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সেরা এই খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অর্জনগুলো সেরার সেরাদের তালিকায় নিয়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/W. West
11 ছবি1 | 11
যা বলছে আইসিসি
আইসিসি বলছে, তিনটি আলাদা ঘটনায় দুর্নীতির প্রস্তাব আসার সঙ্গে সঙ্গে আকসুকে তা না জানিয়ে আইসিসির কোড অব কন্ডাক্টের যে লংঘন হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন সাকিব৷
ফলে তাকে ২ বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হলেও এর মধ্যে এক বছর স্থগিত করা হয়েছে৷ আর্টিক্যাল ৬.২ অনুসারে, এই সিদ্ধান্ত জানানোর দিন থেকেই শুরু হবে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ৷ ফলে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবরের আগে আর ক্রিকেট খেলতে পারছেন না সাকিব৷
কোড অব কন্ডাক্টের আর্টিক্যাল ৮.২ অনুসারে আইসিসি ওয়েবসাইটসহ জনসম্মুখে সাকিবের অপরাধের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে৷ এবং সাকিব সব অভিযোগ মেনে নেয়ায় ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজন পড়েনি৷ ফলে এ তদন্ত এখানেই সমাপ্ত করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে আইসিসির বিজ্ঞপ্তিতে৷
ম্যাচ ফিক্সিং ও স্পট ফিক্সিং: সেলিম থেকে সাকিব
ক্রিকেটকে বলা হতো ভদ্রলোকের খেলা৷ কিন্তু স্লেজিং, ম্যাচ ফিক্সিং, স্পট ফিক্সিংসহ নানা কেলেঙ্কারির কারণে ক্রিকেট আর সেই জায়গায় নেই৷ ছবিঘরে দেখে নিন ম্যাচ ফিক্সিং আর স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে কোন দেশের কতজন নিষিদ্ধ হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/J. Sibley
সবচেয়ে এগিয়ে পাকিস্তান
পাকিস্তানের এ পর্যন্ত ছয় জন ম্যাচ পাতানো বা স্পট ফিক্সিংয়ের কারণে নিষিদ্ধ হয়েছেন৷ এ তালিকায় প্রথম নাম সেলিম মালিক৷ ১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন আর মার্ক ওয়াহকে খারাপ খেলার জন্য টাকা দিতে চাওয়ার অভিযোগে ২০০০ সালে তাকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়৷ সেই নিষেধাজ্ঞা অবশ্য আট বছর পর প্রত্যাহার করে নেয়া হয়৷
ছবি: Tanvir Shahzad
পাকিস্তানের আরো পাঁচ জন
পাকিস্তানের আতা-উর-রেহমান, মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ আসিফ, সালমান বাট আর দানিশ কানেরিয়াও ম্যাচ পাতানো বা স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে শাস্তি পেয়েছেন৷ জুয়াড়ির কাছ থেকে টাকা নেয়ায় আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছিলেন আতাউর৷ ছয় বছর পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়৷ এছাড়া স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে মোহাম্মদ আমির পাঁচ বছরের জন্য আর ম্যাচ পাতানোয় মোহাম্মদ আসিফ সাত বছর, সালমান বাট ১০ বছর এবং দানিশ কানেরিয়া আজীবন নিষিদ্ধ হন৷
ছবি: AFP/D. Sakar
ভারতও বেশি পিছিয়ে নেই
শুরুটা হয়েছিল সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন, অজয় শর্মা, মনোজ প্রভাকর ও অজয় জাদেজাকে দিয়ে৷ আজহারের সঙ্গে সাউথ আফ্রিকার অধিনায়ক ক্রনিয়ের টেলিফোন কথোপকথনের প্রমাণ পাওয়া যায় ২০০০ সালে৷ আজহার ও অজয় শর্মাকে আজীবন আর প্রভাকর ও জাদেজাকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়৷ আজহার দুই বছর আর জাদেজা তিন বছর পর রেহাই পেয়ে যান৷এছাড়া আইপিএল-এ ম্যাচ পাতানোয় ২০১৩ সালে আজীবন নিষিদ্ধ হন শ্রীশান্ত৷
ছবি: DW/J. Sehgal
সাউথ আফ্রিকার তিন জন
সবার মতো সাউথ আফ্রিকার অধিনায়ক হানসি ক্রনিয়েও প্রথমে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন৷ পরে অভিযোগ স্বীকার করে আজীবন নিষেধাজ্ঞাও মেনে নেন ক্রনিয়ে৷ তার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হার্শেল গিবস ও হেনরি উইলিয়ামস ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ হন৷নিষিদ্ধ হওয়ার দুই বছরের মধ্যেই বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান ক্রনিয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Zieminski
কেনিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা
কেনিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড আর শ্রীলঙ্কার একজন করে নিষিদ্ধ হয়েছেন৷ জুয়াড়িদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগে কেনিয়ার মরিস ওদুম্বে পাঁচ বছরের জন্য, জুয়াড়িদের তথ্য দেয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের মার্লন স্যামুয়েলস (ওপরের ছবিতে) দুই বছরের জন্য আর তথ্য গোপন করায় নিউজিল্যান্ডের লু ভিনসেন্ট আজীবন এবং শ্রীলঙ্কার কুশল লোকারাচ্চি ১৮ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Brooks
বাংলাদেশের আশরাফুল আর সাকিব
ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল৷ভুল স্বীকার করায় তিন বছরের সাজা স্থগিত করা হয়৷ ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসান জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি গোপন করায় দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতেন৷ তবে ভুল স্বীকার করায় আপাতত এক বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হবে তাকে৷ আপিল করলে শাস্তির মেয়াদ আরো কমতে পারে৷