হায়দ্রাবাদে ভারতের কেছে ২০৮ রানে হেরে গেল বাংলাদেশ৷ প্রথম ইনিংসে সাকিব আর দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিকের আউটের ধরণ দেখে অনেকেই হতাশ৷ ‘দায়িত্ববোধ’ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে৷ কেউ কেউ করছেন অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Rahi
বিজ্ঞাপন
প্রথম ইনিংসে ভারতের ৬৮৭ রানের নিচে চাপা পড়া রুখতে ভালোই লড়ছিলেন সাকিব-মুশফিক৷ ১০৭ রানের জুটিটাকে আরো টেনে নিতে পারলে ফলো-অন এড়ানো হয়ত সহজ হতো৷ কিন্তু ৮২ রান করেই অশ্বীনকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুললেন সাকিব৷ কয়েক দিন আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও ঠিক এমনই করেছিলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক৷ ওয়েলিংটনে ডাবল সেঞ্চুরির পরের ইনিংসেই খামোকা ছক্কা মারতে গিয়ে বিলিয়ে দিয়েছিলেন নিজের উইকেট৷ যে ম্যাচে অন্তত ড্র নিশ্চিত ছিল, কোনো রান না করে সাকিব ওভাবে আউট হওয়ায় সেবারও স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল বাংলাদেশের৷
এবারও প্রায় একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি৷ হায়দ্রাবাদ টেস্টেও ব্যাট হাতে দলের সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তটিতে নিজের সেরাটা দিতে ব্যর্থ সাকিব৷ ওয়ানডের মেজাজে টেস্ট খেলতে গিয়ে সেঞ্চুরির আশা জলাঞ্জলি তো দিলেনই, দলকেও ফেললেন ঘোরতর বিপদে৷
যৌক্তিক কারণেই চলছে সমালোচনা৷ পাশাপাশি পরামর্শও দিয়েছেন অনেকে৷ ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক এবি ডিলিভিয়ার্স যে দলের স্বার্থে টেস্ট ক্রিকেটে খুব ধীর লয়ে ব্যাট করেছিলেন, ভারতের বিপক্ষে তিনি যে ২৯৭ বলে ৪৩ রান করেছিলেন সে কথা মনে করিয়ে দৈনিক প্রথম আলো'র এক প্রতিবেদনে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, ‘‘ডি ভিলিয়ার্স হতে পারবেন সাকিব?''
প্রথম ইনিংসে সাকিব ৮২ করে আউট হয়ে গেলেও দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক৷ তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ব্যাটিংটাও অধিনায়কোচিত হয়নি৷ এবার তিনি ছক্কা মারতে গিয়ে আউট৷ এবং তারপর সেই ওয়েলিংটনের মতোই সামান্য প্রতিরোধ এবং অবশেষে বাংলাদেশ দলের অসহায় আত্মসমর্পণ৷
পাঠকের চোখে ক্রিকেটের সেরা একাদশ
বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য খেলোয়াড় বাছাই করতে বলা হয়েছিল ডয়চে ভেলের পাঠকদের৷ ছিল পুরস্কার৷ পাঠক, মেহেদী হাসানের দেয়া তালিকা আমাদের পছন্দ হয়েছে৷ চলুন দেখে নেই তাঁর টিম৷
ছবি: Reuters
তামিম ইকবাল
ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় জমা পড়া নামের তালিকায় সবাই যাকে রেখেছেন, তিনি হচ্ছেন ওপেনার তামিম ইকবাল৷ চট্টগ্রামের এই বাহাতি ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করছেন৷ ডয়চে ভেলের পাঠক মেহেদী হাসানের মতে, টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে, টেস্ট – সব দলেই মানানসই তামিম৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
সৌম্য সরকার
সাতক্ষীরার ছেলে সৌম্য সরকার জাতীয় দলের সঙ্গে যাত্রা শুরু করেন ২০১৪ সালে৷ বাহাতি এই ব্যাটসম্যানের ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ স্কোর ১০৭৷ আমাদের পাঠকদের কেউ কেউ অবশ্য তাঁকে আপাতত দলের বাইরে রাখার পক্ষে৷ আর মেহেদী হাসানের মতে, টেস্টে তামিমের সঙ্গে থাকা উচিত ইমরুল কায়েসের৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
সাব্বির রহমান
জাতীয় দলের তৃতীয় ব্যাটসম্যানের জায়গা নিয়ে একটু বিভ্রান্তি রয়েছে৷ আমাদের পাঠকদের অনেকে এই জায়গায় সাব্বির রহমানকে রাখতে চান৷ তবে কেউ কেউ এখানে খেলার ধরনের ভিত্তিতে ইমরুল কায়েস বা লিটন দাসকেও রাখতে আগ্রহী৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Manjunath
সাকিব আল হাসান
সাবিক আল হাসানের খ্যাতি বিশ্বজোড়া৷ মাগুরার এই অলরাউন্ডারকে সবাই দলে চান৷ ২০১৫ সালে সাকিব বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি-র সব ব়্যাংকে প্রথম অবস্থান অর্জন করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মুশফিকুর রহিম
মাঠে উইকেটের পেছনে এক বিশ্বস্ত নাম মুশফিকুর রহিম৷ আমাদের প্রায় সব পাঠক তাঁকে দলে রেখেছেন৷ তবে টি-টোয়েন্টিতে তাঁকে কিপিংয়ে রাখতে রাজি নন পাঠক মেহেদী হাসান৷
ছবি: Getty Images/R. Pierse
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দলে রাখা নিয়ে আমাদের পাঠকদের কারো আপত্তি নেই৷ তবে তাঁর কোন অবস্থানে ব্যাট করা উচিত, সেটা নিয়ে মতামত ভিন্ন৷ মেহেদী হাসানের মতে, টি-টোয়েন্টি এবং টেস্টে ষষ্ঠ আর ওয়ানডে তৃতীয় অবস্থানে খেলা উচিত তাঁর৷
ছবি: Getty Images/R. Pierse
নাসির হোসেন
সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কার্যত সাইড বেঞ্চে কাটিয়েছেন নাসির হোসেন৷ রংপুরের এই অলরাউন্ডারকে মূল একাদশে দেখতে আগ্রহী ডয়চে ভেলের পাঠকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/U. Zaman
মাশরাফি বিন মোর্তোজা
জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে দলে অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মোর্তোজাকেই চান পাঠক মেহেদী হাসান৷ আর টেস্টে তাঁর পছন্দের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
তাসকিন আহমেদ
ডানহাতি ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ ব্যাটিংয়ে আবার বামহাতি৷ বর্তমানে ‘অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের’ দায়ে আইসিসি-র নিষেধাজ্ঞায় আছেন তিনি৷ তবে আমাদের পাঠকরা তাঁকে ফেরত চান দ্রুত৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
মুস্তাফিজুর রহমান
ক্রিকেটের বিস্ময় বালক মুস্তাফিজুর রহমানকে টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে এবং টেস্ট সবক্ষেত্রেই মূল দলে চান ডয়চে ভেলের পাঠকরা৷ ভারতের আইপিএল-এও খেলছেন মুস্তাফিজ৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
লিটন দাস/শুভাগত হোম/নুরুল হাসান
এই তিনজনই সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার৷ আসলে জাতীয় দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে খেলার ধরন, ভেন্যু, পরিবেশসহ অনেক কিছু বিবেচনায় আনতে হয়৷ তাই চূড়ান্ত একাদশ কী হবে তা নির্ধারণ সহজ নয়৷ আমাদের ক্রিকেটপাগল পাঠকদের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি এই গ্যালারিটিতে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে মাত্র৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
11 ছবি1 | 11
ভারত সফরে পরাজয় এড়ানো সব দলের জন্যই কঠিন৷ বাংলাদেশের সামনে সেই সুযোগও ছিল৷ সুযোগকে সাফল্যে রূপান্তরিত করতে সাকিব, মুশফিকদের মতো ক্রিকেটারদেরই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে হয়৷ এ যাত্রা তাঁরা তা পারেননি৷ তাতে যাঁরা বেশি হতাশ, তাঁরা হয়ত ভুলে যাচ্ছেন, বাংলাদেশের পরাজয়ে সাকিবের যন্ত্রণা কারো চেয়ে কম নয়৷ তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে যাওয়ার পরের সাকিবের সেই কান্না৷
তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই ক'দিন আগেই ভাঙা আঙুল, ভাঙা হাত, মাথায় বাউন্সারের আঘাত নিয়েও দেশের জন্য কী বীরের মতো লড়েছেন মুশফিক!
তাঁদের হাত ধরেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট৷ তাঁদের হাত ধরে আরো এগোবে৷ দু-এক ম্যাচে এক বলের জন্য কখনো কখনো সাকিব, মুশফিক হয়তো ভুলে যান ষোল কোটি মানুষ যাঁদের দিকে তাকিয়ে, তাঁদের দায়িত্বটা কত বড়! এবি ডিভিলিয়ার্সের এত পরিণত হতে প্রায় ১২ বছর লেগেছে৷ বাংলাদেশের সাকিব-মুশফিক-তামিমরাও এখন যথেষ্ট পরিণত৷ দেশকে তাঁরা ভালোবাসেন৷ তাঁরা খুব ভালো করেই জানেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আদতে মসৃণ মাঠের খেলা নয়৷ সেখানে ব়্যাংকিংয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে সব বিচারে সেরা হতে যে খেলার দাবি অনুযায়ী নিজেকে বদলাতে হয়, তাঁরা নিশ্চয়ই জানেন সেটা৷ ভবিষ্যতের পারফরম্যান্সে নিশ্চয়ই আমরা তা দেখতে পাবো৷