1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাক্ষরতায় ত্রিপুরা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়১০ সেপ্টেম্বর ২০১৩

এটা সম্ভবত যে কোনও বাংলাভাষী অঞ্চলের জন্যই খুশির খবর৷ কেরালাকে পেছনে ফেলে ভারতে সাক্ষরতায় সবার থেকে এগিয়ে প্রত্যন্ত রাজ্য ত্রিপুরা৷

ARCHIV - ILLUSTRATION - Der Schriftzug «Lesen» ist am 07.09.2011 in Schwerin auf einem Buchstabenspiel zu sehen. Mit einem Aktionstag zur Alphabetisierung Erwachsener wird die Kampagne «Lesen & Schreiben - Mein Schlüssel zur Welt» der Bundesregierung am 09.07.2013 in Mecklenburg-Vorpommern vorgestellt. Foto: Jens Büttner/dpa (zu dpa «Viele können kaum lesen und schreiben - Kampagne soll helfen» vom 09.07.2013) +++(c) dpa - Bildfunk+++
ছবি: picture-alliance/dpa

সাক্ষরতা তো সাক্ষরতাই৷ সেটা যে কোনো ভাষার জন্যেই সাক্ষরতা৷ তা হলে উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা দেশের মধ্যে সবথেকে স্বাক্ষর রাজ্য হয়ে উঠলে বাংলা ভাষার উল্লসিত হয়ে ওঠার কারণ কী?

অত্যন্ত সঙ্গত প্রশ্ন৷ কিন্তু তার জবাব খোঁজার আগে একবার ভারতে সাক্ষরতার হারের তথ্য-পরিসংখ্যানে নজর দেওয়া যাক৷ এতদিন পর্যন্ত ভারতের সবথেকে স্বাক্ষর রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে এসেছে দক্ষিণ ভারতের কেরালা৷ এই নিয়ে কেরলবাসীর মনে নিশ্চিত গর্ব ছিল৷ ত্রিপুরা সেখানে ছিল সাক্ষরতা তালিকার অনেকটাই নীচে৷ ২০০১ সালে ৭৩.১৯ শতাংশ সাক্ষরতার হার নিয়ে ত্রিপুরার স্থান ছিল ১৪ নম্বরে৷

এক দশক পর, সারা ভারতেই সাক্ষরতার হার বাড়ল প্রায় ৯ শতাংশ৷ ২০১১ সালের সাক্ষরতা জরিপে দেখা গেল, তখনও কেরল ৯৩.৯১ শতাংশ সাক্ষরতার হার নিয়ে এক নম্বরেই রয়েছে৷ কিন্তু ৮৭.৭৫ শতাংশ সাক্ষরতা নিয়ে ত্রিপুরা তিন নম্বরে উঠে এসেছে৷ তার পর থেকেই ১০০ শতাংশ সাক্ষরতা নিশ্চিত করতে একেবারে উঠেপড়ে লেগেছিল ত্রিপুরা৷ রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের নেতৃত্বে তৈরি করা হল স্টেট লিটারেসি মিশন অথরিটি৷ সঙ্গে নেওয়া হল গ্রাম পঞ্চায়েত, পাড়ার ক্লাব এবং এনজিও-দের৷ রাজ্য জুড়ে তৈরি হল আট হাজারেরও বেশি প্রাথমিক সাক্ষরতা কেন্দ্র৷

২০১৩ সালের যে সাক্ষরতা সমীক্ষা করেছে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউট, তাতে দেখা যাচ্ছে ৯৪.৬৫ শতাংশ সাক্ষরতার হার নিয়ে প্রথম স্থানে চলে এসেছে ত্রিপুরা৷ ৯৩,৯১ শতাংশ সাক্ষরতা নিয়ে দ্বিতীয় কেরল এবং ৯১.৫৮ শতাংশ সাক্ষরতার হার তৃতীয় স্থানে রেখেছে উত্তর-পূর্ব ভারতেরই আর এক রাজ্য মিজোরামকে৷

এখানে আরও একটা বিষয় লক্ষণীয়৷ উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্য, চিরকাল যারা বাকি ভারতের কাছে অবহেলিত বলে তাদের এক ধরনের অভিমান এবং ক্ষোভ রয়েছে, তারা প্রায় প্রত্যেকে কিন্তু সাক্ষরতায় দেশের বাকি অংশ থেকে এগিয়ে৷ ত্রিপুরা এবং মিজোরাম ছাড়াও সাক্ষরতা তালিকায় প্রথম দশের মধ্যে রয়েছে নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মণিপুর, অসম এবং অরুণাচল প্রদেশ৷ অবশ্য ২০১৩ সালের তালিকায় তিন নম্বরে উঠে এসেছে লাক্ষাদ্বীপ৷

তবে শতাংশের হিসেবে সাক্ষরতার হার নির্ণয়ের এই পদ্ধতি যে কিছুটা বিভ্রান্তিকর, সেটা বলাই বাহুল্য৷ লাক্ষাদ্বীপে মোট জনসংখ্যাই এত কম যে শতাংশের হিসেবে অন্য রাজ্যের তুলনায় সাক্ষরতার হার অনেক বেশি দেখাতে পারে৷ কিন্তু সেটা সমস্ত পরিসংখ্যানেরই সমস্যা৷ ত্রিপুরার ক্ষেত্রে বিষয়টা অন্য৷ ঐতিহাসিকভাবে ত্রিপুরা শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে অনেক এগিয়ে থাকা রাজ্য হয়েও তার ভৌগোলিক অবস্থান তাকে কার্যত দলছুট করে রেখেছে৷ বাংলা ভাষার চর্চা ত্রিপুরায় যত ব্যাপক এবং গভীর, ততটা হয়ত পশ্চিমবঙ্গেও আর নয়, কিন্তু তাও পূর্ব ভারতে ভাষা-শিল্প-সংস্কৃতির কথা হয় কলকাতার মুখের দিকে তাকিয়ে৷

একশো শতাংশ সাক্ষরতা অর্জনের লক্ষ্যে ত্রিপুরার এই প্রয়াস এবং সাফল্য নিঃসন্দেহে উদযাপন করার মতো ঘটনাছবি: Fotolia/silver-john

সেই পরিস্থিতিতে প্রায় একশো শতাংশ সাক্ষরতা অর্জনের লক্ষ্যে ত্রিপুরার এই প্রয়াস এবং এই সাফল্য নিঃসন্দেহে উদযাপন করার মতো ঘটনা৷ এবং বাংলা ভাষা, ভারতে অন্যান্য ভাষার দাপটে যা বস্তুত কোণঠাসা হয়ে আছে, সেই ভাষার চর্চা হয়, এমন একটা রাজ্য সাক্ষরতায় এক নম্বর হল, এটা বাঙালিদের পক্ষেই অত্যন্ত সুখবর৷ যে আনন্দটা পাওয়া যায় বাংলাদেশে সব পর্যায়ে বাংলাভাষার ইজ্জত এবং কদরে৷ কারণ পশ্চিমবঙ্গ সাক্ষরতার নিরিখে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে, যদিও সেটা পুরো দেশের সাক্ষরতার হারের সমান৷ কিন্তু সেটা আদৌ কোনও সান্ত্বনা পাওয়ার মতো বিষয় নয়৷ তা ছাড়া এই রাজ্যে এখন এত বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুযের বাস যে পশ্চিমবঙ্গকে আর বাঙালি রাজ্য বলা বোধহয় ঠিক নয়৷ সেক্ষেত্রে বাংলা ভাষার মশাল এখন ত্রিপুরারই হাতে৷

ত্রিপুরার জন্যে বিষয়টা আরও আনন্দের কারণ রাজ্যের যে জেলায় সবথেকে বেশি মানুষ স্বাক্ষর হয়েছেন বলে স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটের গণনায় জানা গিয়েছে, সেটা উপজাতি অধ্যুষিত ধলাই৷ সেখানে ৯৭ শতাংশ মানুষ এখন সাক্ষর ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের এখন একটাই আফসোস৷ তাঁর রাজ্যে নিরক্ষর লোকের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৬৩৪ জন৷ এঁদের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে সাক্ষরতা কর্মসূচিতে আনা সম্ভব হয়নি৷ না হলে ত্রিপুরা হতো দেশের একমাত্র সম্পূর্ণ স্বাক্ষর রাজ্য৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ