1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
অপরাধভারত

সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু, অভিযুক্ত শাহজাহান

১২ ডিসেম্বর ২০২৫

পশ্চিমবঙ্গে জেলবন্দি শেখ শাহজাহান খবরের শিরোনামে। শাহজাহানের বিরুদ্ধে একটি মামলার দুই সাক্ষী পথ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
তার বিরুদ্ধে জমিদখলের মামলায় সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়েও অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান। ছবি: Subrata Goswami/DW

রেশন দুর্নীতি থেকে ভেড়ি দখল, নারী নির্যাতন থেকে মানবপাচার, এমন অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির দাপুটে নেতা শাহজাহানের বিরুদ্ধে। এবার একটি পথ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে।

দুর্ঘটনা কি পরিকল্পিত?

তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত নেতা শাহজাহানের বিরুদ্ধে একটি জমি দখলের মামলায় অন্যতম সাক্ষী ভোলানাথ ঘোষ তার ছেলেকে নিয়ে সাক্ষ্য দিতে বুধবার বসিরহাট আদালতে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে তাদের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে। ভোলানাথ সামান্য আহত হন। তার ছোট ছেলে সত্যজিৎ ঘোষ ও গাড়িচালক শাহনুর আলমের মৃত্যু হয়। দু’জনের বয়স ৩০–৩২।

এই ঘটনার ২৭–২৮ ঘণ্টা পরে তিনি পরিকল্পিত খুনের চক্রান্তের অভিযোগ এনেছেন শেখ শাহজাহান, তার স্ত্রী তসলিমা বিবি–সহ নয় জনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুর একটা নাগাদ তিনি ন্যাজাট থানার রাজবাড়ি ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। 

সরবেড়িয়ার বাসিন্দা ভোলানাথ অভিযোগে জানান, বুধবার সকালের দুর্ঘটনা পূর্ব–পরিকল্পিত খুনের চক্রান্ত। তার দাবি, জেলে বসে শাহজাহান স্ত্রী তসলিমাকে ফোনে নির্দেশ দেন এবং সেই নির্দেশ কার্যকর করেন মোসলেম শেখ, গফ্ফর শেখ, সাবির আলি মোল্লা, ছয়রাফ মির, আব্দুল কাহার মোল্লা, ট্রাকচালক আব্দুল আলিম মোল্লা ও নজরুল মোল্লা। মোসলেম সন্দেশখালি–১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ–সভাপতি ও তৃণমূল নেতা।

ভোলানাথ অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে তাকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন শাহজাহান। ২০১৯ সালে তিনি কয়েক বছরের জন্য এলাকাছাড়া হয়েছিলেন, যে জন্য দায়ী শাহজাহান। 

ভোলানাথের দাবি, বুধবার সকালে আদালতে যাওয়ার পথে একটি মোটরবাইকে করে এক যুবক তাদের গাড়িকে অনুসরণ করছিলেন। বাসন্তী হাইওয়েতে বয়ারমারি ও কলুপাড়ার মাঝখানে সকাল নয়টার পর তাদের নীল রংয়ের ছোট গাড়িটিকে ধাক্কা মারে ১৬ চাকার ট্রাকটি। 

অভিযোগকারীর দাবি, "আমাদের সবাইকে খুন করার জন্যই লরিটি গাড়িতে ধাক্কা মারে।" দুর্ঘটনার পরে ট্রাকচালক আলিম পালিয়ে যান নজরুল মোল্লার বাইকে চেপে, এমনও দাবি করেছেন ভোলানাথ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইডি–র উপরে হামলার দিনেও আলিমকে ওই এলাকায় দেখা গিয়েছিল।

দুর্ঘটনার তদন্তে বৃহস্পতিবার ফরেন্সিক দলের পাঁচ সদস্য নমুনা সংগ্রহ করেন। এসএসকেএম হাসপাতালে ময়নাতদন্তে জানা যায়, সত্যজিতের মাথা ও বুকে গুরুতর আঘাত, মুখে গভীর ক্ষত ছিল। শাহনুরের মাথার পিছনে আঘাত ও রক্তজমাট ধরা ক্ষত পাওয়া যায়, পাশাপাশি ডান কাঁধ ও বুকে চোট ছিল।

এসএসকেএম হাসপাতালে ভোলানাথের বড় ছেলে বিশ্বজিৎ জানান, বুধবার লোকবল না থাকায় অভিযোগ করা হয়নি, বৃহস্পতিবার বাবা অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তার দাবি, শাহজাহানের সঙ্গে তাদের শত্রুতা বহু দিনের। ভোলানাথ ইডি–র উপর হামলার মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাকে নানা তথ্য দিয়েছেন। ভোলানাথের মেয়ে সোনালি ঘোষ বলেন, “আমার ভাইয়ের জন্য সুবিচার চাই। শাহজাহান ঘটনাটি ঘটিয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি হোক।”

অভিযোগে নাম থাকা মোসলেম শেখ দাবি করেন, তিনি সমবেদনা জানাতে ভোলানাথের বাড়ি গিয়েছিলেন, অভিযোগ উঠছে কেন জানেন না। আলিমের স্ত্রী দাবি করেছেন, এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তার স্বামীর যোগ নেই। নির্বাচন আসছে বলে বিজেপি চক্রান্ত করে অভিযোগ আনছে। সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বলেন, "বিভিন্ন প্রচার সন্দেশখালিকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা বিজেপির পরিকল্পনা। তদন্তেই সব স্পষ্ট হবে।" 

জেল থেকে নির্দেশ? 

রেশন দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন অভিযোগে শাহজাহান জেলে বন্দি রয়েছেন। ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি এই অভিযোগের তদন্তে শাহজাহানের বাড়িতে গিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা। সেই সময়ে তিনি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ পদে ছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সন্দেশখালি ১ নম্বর ব্লকের সভাপতিও ছিলেন তিনি। 

তার বাড়িতে তদন্তে গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়েন ইডি আধিকারিকরা। ফেব্রুয়ারিতে শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর থেকে অভিযুক্তের ঠিকানা প্রেসিডেন্সি জেল। এই সময়ে শাহজাহানকে ছয় বছরের জন্য দলের সব পদ থেকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল কংগ্রেস।

জেলে বসেই শাহজাহান খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি শাহজাহান কীভাবে সেখানে বসে বাইরে জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অভিযোগ, সাধারণ বন্দিদের থেকে জেলের ভিতর বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন তিনি। ফোনে কথাও বলতে পারছেন। ভোলানাথের দাবি, স্ত্রী তসলিমাকে জেল থেকে ফোনে নির্দেশ দেন শাহজাহান। সেই অনুযায়ী খুনের ছক কষা হয়। যদিও এই অভিযোগ সম্পর্কে কারা দপ্তর থেকে প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়নি।

জেলবন্দি অভিযুক্তদের নানা তৎপরতার কথা বিভিন্ন সময় খবরে উঠে এসেছে। এই সম্ভাবনা একেবারে খারিজ করতে রাজি নন সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম।

তিনি ডিডব্লিউকে বলেন, "জেলে যে নিয়মগুলো কার্যকর হওয়ার কথা, সে নিয়ম ভেঙে কাউকে যদি সুযোগ করে না দেয়া হতো, তাহলে কেউ এ ধরনের কাজ করতে পারতেন না। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। পুলিশ ও প্রশাসনের সম্মতি ছাড়া কারো পক্ষে জেলে বসে এ ধরনের কাজ করা সম্ভব নয়।"

অধ্যাপক শুভময় মৈত্র সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, "রাজনীতি ও দুর্বৃত্তায়ন যখন একেবারে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, যখন আইনের শাসন সেভাবে বলবৎ থাকে না, তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে। যদি এটিকে একটি চিত্রনাট্য বলেন, তাহলে একেবারে বাস্তবের চিত্রনাট্য। আজকের দিনে এ ধরনের ঘটনা ঘটা আমাদের কাছে আশঙ্কার, তবে অবাক করার মতো নয়। কারণ পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটেছে।" 

তার বক্তব্য, "যে নৈরাজ্য এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, যদি তার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে দেখতে পাওয়া যায় যে, এটা একটা নিছক দুর্ঘটনা, তাহলে স্বস্তি মিলবে। বাসন্তী হাইওয়ের এমন ১০০ মিটার জায়গা যেখানে সিসিটিভি নেই, সেই জায়গায় দুটি গাড়ির সংঘর্ষ হয়েছে, লরির ড্রাইভার তার পরে কিছুটা নাকি দৌড়ে একটা বাইকে উঠে পড়েছেন। এটা একেবারে থ্রিলার থেকে উঠে আসা চিত্রনাট্য। এটা যদি একটি পরিকল্পিত খুনের ঘটনা হয়, যার সঙ্গে রাজনীতি ও দুর্বৃত্তায়ন জড়িত, তাহলে সেটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের পক্ষে যথেষ্ট চিন্তার।"

এই অভিযোগ সিবিআইয়ের হাতে বাড়তি অস্ত্র জোগাবে বলে মনে করেন না নজরুল। বলেন, "নয়া অভিযোগ সিবিআইয়ের হাতে অস্ত্র তুলে দেবে, এমনটা নয়। তবে যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা অপরাধ এবং সেই অপরাধের যতটা প্রমাণ জোগাড় করা সম্ভব হবে, সেটা অপরাধীদের বিরুদ্ধে যাবে। যদি যথেষ্ট প্রমাণ হাজির করা না যায়, তাহলে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে ধরা হবে না।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ