মুক্তচিন্তার বিকাশে ভূমিকা রাখায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ মানবাধিকার বিষয়ক পুরস্কার সাখারভ সম্মাননা পেলেন ইউক্রেনের অধিকারকর্মী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ওলেগ সেনসভ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ায় ইউক্রেনের সব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি দাবি করেছেন সেনসভ৷
৪২ বছর বয়সি ওলেগ সেনভের জন্ম রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ক্রাইমিয়া অঞ্চলের প্রশাসনিক রাজধানী সিমফেরোপোল শহরে৷ ২০১১ সালের ‘গেমার’ চলচ্চিত্রের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পাওয়া সেনসভ ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং ক্রাইমিয়া দখল নিয়ে রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা করেন৷
২০১৩ সালের নভেম্বরে কিয়েভে মস্কোপন্থি প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হলে তাতে যোগ দেন সেনসভ৷ পরে ক্রাইমিয়ায় রুশ বাহিনীর কবলে পড়া ইউক্রেনের সৈনিকদের খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেন তিনি৷
সামরিক শিক্ষায় ঝুঁকছে রুশ কিশোর-কিশোরীরা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ক্রাইমিয়া দখলের পর পশ্চিমা বিশ্ব তাঁর সমালোচনা করলেও দেশে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে৷ ফলে সামরিক শিক্ষায় আগ্রহী হচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা৷
ছবি: Reuters/E. Korniyenko
ক্রাইমিয়া দখল
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দখল নিয়েছিলেন৷ ছবিতে তাঁকে স্বাক্ষরের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দেখা যাচ্ছে৷ পশ্চিমা বিশ্ব এর কড়া সমালোচনা করলেও নিজ দেশে পুটিনের জনপ্রিয়তা বেড়েছে৷ রুশ জাতীয়তাবাদীরা এই ঘটনাকে ‘ক্রাইমিয়ার বসন্ত’ বলে থাকে৷
ছবি: Reuters
দেশপ্রেম শিক্ষা
ক্রাইমিয়া দখলের ঘটনায় শুধু পুটিনই প্রশংসিত হননি, ঘটনাটি রুশ তরুণ-তরুণীদের ‘সামরিক ও দেশপ্রেম শিক্ষা’-য় আগ্রহী করে তুলেছে৷ বিশেষ করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে৷
ছবি: Reuters/E. Korniyenko
ক্যাডেট স্কুল
ছবিতে দক্ষিণের স্টাভরোপোল অঞ্চলের এক ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষার্থীদের দেখা যাচ্ছে৷ তাদের শারীরিক শিক্ষার পাশাপাশি অস্ত্র চালানো, গাড়ি চালানো, এমনকি প্যারাসুটিং-এর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷
ছবি: Reuters/E. Korniyenko
জেনারেলের নামে নামকরণ
স্কুলটির নাম আলেক্সেই ইয়ারমোলোভ ক্যাডেট স্কুল৷ উনিশ শতকে রাশিয়ার নামকরা জেনারেল ছিলেন ইয়ারমোলোভ (পোর্ট্রেট ছবি)৷ তাঁর নেতৃত্বে ককেশাস রুশ সাম্রাজ্যের অধীনে এসেছিল৷
ছবি: Reuters/E. Korniyenko
জার আমলের শিক্ষা
সেই সময় ‘কসাক্স’ নামে যুদ্ধ প্রশিক্ষণের এক শিক্ষা কর্মসূচি চালু ছিল৷ স্টাভরোপোলের অনেক কিশোর-কিশোরী এখন সেই শিক্ষা নিচ্ছে৷ সঙ্গে জার আমল ও আধুনিক যুগের যু্দ্ধ সম্পর্কে জানছে তারা৷
ছবি: Reuters/E. Korniyenko
নিরীহ চাষী!
যখন শান্তি বিরাজ করত তখন কসাক্সদের নিরীহ চাষী মনে হত৷ কিন্তু কেউ তাঁদের সঙ্গে লড়তে আসলে তাঁদের প্রতিহত করার মতো সামর্থ্য ছিল কসাক্সদের৷ সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছিল তাঁদের৷ দরকার হলে রাশিয়ার সামরিক অভিযানেও অংশ নিত তাঁরা৷ ছবিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়া কসাক্সদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/RIA Nowosti
নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সন্তান
ক্যাডেট স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই রুশ সেনাবাহিনী কিংবা অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর বর্তমান সদস্যদের সন্তান৷ প্রায় ৪০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থী পরবর্তী সময়ে সামরিক বাহিনী কিংবা নিরাপত্তা বাহিনীতে যোগ দিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/E. Korniyenko
প্রশিক্ষক
যাঁরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তাঁদের বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ স্থানে কয়েক বছর কাজের অভিজ্ঞতা আছে৷
ছবি: Reuters/E. Korniyenko
8 ছবি1 | 8
২০১৪ সালের মে মাসে ক্রাইমিয়া থেকে সেনসভকে গ্রেপ্তার করে রাশিয়ার এফএসবি নিরাপত্তা সংস্থা৷ তাঁর বিরুদ্ধে সিমফেরোপোল, সেভাস্তোপোল ও ইয়াল্টা শহরে রুশপন্থি সংস্থাগুলোতে আক্রমণ চালাতে উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী রাইট সেক্টরের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ আনা হয়৷ সেনসভের বিরুদ্ধে যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়, তারা ক্রাইমিয়া রাশিয়ান কমিউনিটির দুটি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল৷ এই চলচ্চিত্র নির্মাতার বিরুদ্ধে সেখান থেকে লেনিনের ভাস্কর্যসহ দুটি স্মৃতিস্তম্ভ উড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রেরও অভিযোগ আনা হয়৷
এই মামলায় ২০১৫ সালে সেনসভকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয় রুশ সেনাবাহিনীর একটি ট্রাইব্যুনাল৷ পরে তাঁকে ইউক্রেনে হস্তান্তরের আবেদনও খারিজ করেছে রাশিয়া৷
বন্দি সেনসভ রাশিয়ার কারাগারে থাকা সব ইউক্রেনীয় রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি দাবিতে গত ১৪ মে থেকে ১৪৫ দিন অনশন করেন৷ জীবন শঙ্কা দেখা দেওয়ায় গত ৫ অক্টোবর অনশন ভাঙেন তিনি৷
সেনসভের মামলা ও রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা হয়৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা থেকে তাঁর মুক্তি দাবি করা হয়৷ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে তারা৷
নোবেল পুরস্কারজয়ী হেরটা মুলার, স্ভেতলানা অ্যালেক্সিভিচ এবং পেড্রো আলমোদোভার ও আকি কুরিসমাকির মতো খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতারাও তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন৷ সেনসভকে ‘রাজনৈতিক বন্দি’ অভিহিত করে তাঁর মুক্তি চেয়েছে রাশিয়ার মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়ালও৷