উষ্ণায়নের ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে৷ তার একটা বড় কারণ হলো সাগরের পানির সম্প্রসারণ, দেখছেন বিজ্ঞানীরা৷ কিন্তু এর অর্থ কী দাঁড়াচ্ছে? ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে? সেজন্য আমাদের কী করা উচিত?
বিজ্ঞাপন
উষ্ণায়নের ফলে সাগরের জলের উচ্চতা বেড়ে চলেছে৷ বর্তমানে ‘সি লেভেল' বাড়ছে বছরে তিন মিলিমিটার করে৷ তার একটা কারণ মেরু অঞ্চলের তুষার ও হিমবাহের বরফ গলা৷ অপরদিকে তাপমাত্রা বাড়ার ফলে সাগরের পানির সম্প্রসারণ ঘটছে৷ এভাবে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার ফলে বিভিন্ন দ্বীপরাজ্য ও বাংলাদেশ বা নেদারল্যান্ডসের মতো উপকূলবর্তী দেশগুলি বিপদের মুখে৷
এ যাবৎ ধরে নেওয়া হয়েছিল যে, বিশ্বব্যাপী বরফ গলার ফলেই সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে৷ কিন্তু তাপমাত্রা বাড়ার ফলে সাগরের জলরাশির সম্প্রসারণ ঘটছে, অর্থাৎ তার ঘনত্ব কমে গিয়ে আয়তন বাড়ছে৷ দৃশ্যত ‘সি লেভেল' বাড়ার এটাও একটা বড় কারণ৷ বন বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওডেসি অ্যান্ড জিওইনফর্মেশন ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ইয়ুরগেন কুশে বললেন, ‘‘আমরা গত ১২ থেকে ১৫ বছরের ফলাফল পরীক্ষা করে দেখেছি৷ বছরে তিন মিলিমিটার করে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে৷ এ পর্যন্ত আমরা ভাবছিলাম যে, এর এক-চতুর্থাংশ সম্ভবত উষ্ণায়নের ফলে সাগরের পানির সম্প্রসারণের কারণে৷ কিন্তু এখন আমরা দেখছি, তার অনেক বেশি: সি লেভেল বাড়ার ৫০ শতাংশ হলো সাগরের পানির সম্প্রসারণের দরুণ৷''
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে কতটা জানেন?
সিওটু, গ্রিনহাউস গ্যাস, কার্বন নির্গমন – এই সব শব্দ সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় বার বার উঠে আসে৷ কিন্তু এই সব শব্দের প্রেক্ষাপট আপনি কতটা বোঝেন? যাচাই করে নিন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রশ্ন
পৃথিবী আসলে কতটা উষ্ণ হয়ে উঠেছে?
ছবি: DW
উত্তর
১৮৫০ সালে শিল্প-বিপ্লবের শুরু থেকে বিশ্বের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে৷ তাই গবেষকদের আশঙ্কা, ২১০০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি কমানোর লক্ষ্যমাত্রা বিফল হবে৷ জলবায়ু গবেষণার ভিত্তিতে বড়জোর দেড় ডিগ্রির সীমা ধরে রাখার চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করেন সমালোচকরা৷
ছবি: DW/G. Rueter
প্রশ্ন
২১০০ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পরিণতি কী হতে পারে?
ছবি: DW/K.Hasan
উত্তর
পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও বেশি মাত্রায় বাড়লে উপকূলবর্তী এলাকায় প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ বিপদে পড়তে পারেন৷ প্রায় ২০০ কোটি মানুষ জলের অভাবে সমস্যায় পড়বেন৷ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP/T. Gutierrez
প্রশ্ন
গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবের উৎস কী?
ছবি: IRNA
উত্তর
কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস৷ জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ঘরবাড়ি গরম রাখা, পরিবহণ ব্যবস্থা চালানো এবং শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনের ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি হয় এবং বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে৷ গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রায় ৬৫ শতাংশই কার্বন-ডাই-অক্সাইড৷ এছাড়া মিথেন, লাফিং গ্যাস ও ক্লোরোফ্লুরোকার্বন এর জন্য দায়ী৷
ছবি: Imago stock&people
প্রশ্ন
আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার কারণে কোন দেশগুলি গত বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?
ছবি: Reuters
উত্তর
সার্বিয়া, আফগানিস্তান এবং বসনিয়া-হ্যারৎসোগোভিনা ২০১৫ সালে আবহাওয়া বিপর্যয়ের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ প্যারিস-ভিত্তিক পরিবেশ সংগঠন ‘জার্মানওয়াচ’ প্রকাশিত বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকির তালিকায় এই তথ্য উঠে এসেছে৷ তবে ১৯৯৫ সাল থেকে হন্ডুরাস, মিয়ানমার, হাইতি ও ফিলিপাইন্সের মতো দক্ষিণ গোলার্ধের দরিদ্র দেশগুলি বন্যা, বিধ্বংসী ঝড় ও তাপপ্রবাহের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. uz Zaman
প্রশ্ন
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র কেন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়?
ছবি: imago/OceanPhoto
উত্তর
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন-ডাই-অক্সাইড সমুদ্রের পানির মধ্যে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে৷ এই প্রক্রিয়ায় জলের ‘পিএইচ ভ্যালু’ কমে যায়৷ অ্যালজির মতো ক্ষুদ্র প্রাণী ও প্রবাল প্রাচীরের উপর তার প্রভাব পড়ে৷ জলে অম্লের মাত্রা যত বাড়ে, ক্যালশিয়াম বাইকার্বোনেট তত পাতলা হয়ে যায়৷ তখন প্রবালের মৃত্যু হয়৷ ফলে সমুদ্রের গোটা ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
প্রশ্ন
বার্লিন থেকে প্যারিস যেতে হলে গাড়ি, বিমান অথবা ট্রেন – পরিবহণের কোন মাধ্যম পরিবেশের সবচেয়ে ক্ষতি করে?
ছবি: DW/K. Jäger
উত্তর
এই দূরত্ব অতিক্রম করতে এয়ারবাস এথ্রিটুজিরো বিমানে যাত্রীপিছু ২৪৮ কিলোগ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি হয়৷ ফলক্সভাগেন কোম্পানির গল্ফ মডেলের নতুন গাড়িতে চড়ে গেলে নির্গমনের পরিমাণটা দাঁড়ায় ১৭৯ কিলো৷ অন্যদিকে সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব বাহন হলো ট্রেন৷ সে ক্ষেত্রে নির্গমনের পরিমাণ প্রায় ১১ কিলো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Kneffel
12 ছবি1 | 12
নতুন তথ্য
বন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলটি স্যাটেলাইট থেকে পাঠানো ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, গত ১২ বছরে উষ্ণায়নের এই বিশেষ ফলশ্রুতি যা ভাবা গিয়েছিল, তার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে৷ নতুন পদ্ধতিতে স্যাটেলাইটের ডাটা অ্যানালাইজ করে সাগরের পানির সম্প্রসারণ নিখুঁতভাবে হিসেব করা যায়৷
অপরদিকে উষ্ণায়নের ফলে পানির সম্প্রসারণ যদি সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ায় একটা বৃহত্তর ভূমিকা পালন করে থাকে, তাহলে অতীতে অনেক কম তুষার গলা জল সাগরে গিয়ে পড়েছে৷ কেননা সাগরের পানির উচ্চতা আগের মতোই বছরে তিন মিলিমিটার করে বেড়ে চলেছে৷
তবে এর একটা খারাপ দিকও আছে৷ এর অর্থ, সাগর আরো অনেক বেশি তাপ শুষে নিয়েছে৷ জিওডেসি অ্যান্ড জিওইনফর্মেশন ইনস্টিটিউটের ডক্টর-ইঞ্জিনিয়ার রোয়লফ রিটব্রুক জানালেন, ‘‘সাগরের পানি যে আগের চেয়ে বেশি গরম হচ্ছে, সেটার তাৎপর্য আছে, কেননা সাগরের গরম পানি থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয়৷ কাজেই ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, সাগরের পানি যত গরম হবে, ততই আরো জোরালো ঘূর্ণিঝড় অথবা আরো ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে৷''
জলবায়ু পরিবর্তনের শক্তিশালী কয়েকটি ছবি
জলবায়ুর যে পরিবর্তন হচ্ছে তা বিভিন্নভাবে উপলব্ধি করা যায়৷ একটি সংস্থা প্রবাল প্রাচীরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সেটা আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করছে৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
দুই মাস আগে, পরে
জলবায়ু যে পরিবর্তন হচ্ছে তা বোঝার অন্যতম উপায় প্রবালের দিকে খেয়াল করা৷ উপরে যে ছবিটি দেখছেন তার বাম পাশেরটি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তোলা, আর ডানেরটি দুই মাস পর, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের৷ এবার নীচে কোরালগুলোর দিকে তাকান৷ বামেরগুলো এক রংয়ের আর ডানেরগুলো সাদা হয়ে গেছে৷ হ্যাঁ, এটা জলবায়ু পরিবর্তিত হয়ে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে হয়েছে৷ ছবিটি অ্যামেরিকান সামোয়া এলাকার৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
সাদা হয়ে যাওয়া
এই ছবিটি হাওয়াই এলাকার৷ এখানেও সাদা হয়ে যাওয়া কোরাল দেখা যাচ্ছে৷ কোরাল তার গায়ে থাকা জলজ উদ্ভিদ, অ্যালজির কারণে বেঁচে থাকে৷ কিন্তু তাপমাত্রা বেড়ে গেলে কোরাল থেকে ঐ উদ্ভিদ ঝরে পড়ে৷ ফলে কোরালেরও আয়ু শেষ হতে থাকে৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
একেবারে স্পষ্ট
এতক্ষণ দূর থেকে সাদা অংশ দেখেছেন৷ এখন দেখুন একেবারে কাছ থেকে তোলা ও বর্ধিত করা একটি ছবি৷ এটি কোরালের একটি অংশ৷ দেখুন, গায়ে থাকা জলজ উদ্ভিদ আর না থাকায় কীরকম সাদা হয়ে গেছে কোরালটি৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
চারদিক কেমন যেন খাঁ-খাঁ করছে
মন খারাপ করা একটি ছবি৷ অ্যালজি না থাকায় মরে গেছে কোরাল৷ পড়ে আছে শুধু কঙ্কাল৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
কয়েক দশক সময় প্রয়োজন
এবার আরেকটি ছবি৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি থেকে কোরাল রিফের বেঁচে উঠতে (আদৌ যদি বেঁচে ওঠে) কয়েক দশক সময় লাগতে পারে৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
প্রমাণ সংগ্রহ
বিশ্বের কোরাল রিফগুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণে ২০১২ সালে ক্যাটলিন গ্রুপের সহায়তায় ‘এক্সএল ক্যাটলিন সিভিউ সার্ভে’ নামে একটি সমীক্ষা শুরু হয়৷ এর মাধ্যমে উচ্চপ্রযুক্তির ক্যামেরা ও রোবট ব্যবহার করে কোরালের বর্তমান অবস্থা তুলে আনা হচ্ছে৷ অনেক ছবি গুগল স্ট্রিট ভিউ-তে আপলোড করা হয়েছে৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে তাপমাত্রা বাড়ছে তার প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি অংশ শুষে নেয় সাগর৷ ফলে জলবায়ু যে পরিবর্তন হচ্ছে তা বোঝার একটি ভালো উপায় হচ্ছে কোরাল৷ সমুদ্রের প্রায় ২৫ শতাংশ প্রজাতির বেঁচে থাকার পেছনে রয়েছে কোরাল রিফ৷ তাই কোরাল না থাকে মানে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়া৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
প্রাণিকুলের খাবার
দেখছেন অ্যামেরিকান সামোয়ার ‘এয়ারপোর্ট রিফ’৷ স্বাস্থ্যবান এ সব কোরালের মধ্যে যে গাছপালা থাকে সেখান থেকেই খাবার সংগ্রহ করে পানির নীচে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
খাবার পাবে কোথায়?
লম্বা নাকের সুন্দর এই মাছটি কোরাল থেকে খাবার সংগ্রহ করে থাকে৷ কিন্তু কোরালই যদি না থাকে তাহলে তার কী হবে?
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
9 ছবি1 | 9
জলের তাপমাত্রা বাড়লে সেই তাপ বাষ্প সৃষ্টি করে৷ বাষ্পের মাধ্যমে সেই শক্তি বাতাসে গিয়ে পড়ে, ফলে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, ব্যাপক বৃষ্টিপাত আর বন্যা দেখা দেয়৷
পানি আর বাতাসের মধ্যে তাপমাত্রার ব্যবধান যত বেশি হবে, ঘূর্ণিঝড় ঠিক তত বেশি জোরালো হবে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরো ঘন ঘন আবহাওয়ার দুর্যোগ ঘটবে, বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা৷ শতাব্দীর শেষ অবধি ঝড়জল আর বন্যা থেকে ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷
নতুন স্ট্র্যাটেজির প্রয়োজন
এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষভাবে বিপন্ন৷ এখানে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে দ্রুতহারে৷ ভারত ও বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তু হারিয়েছেন সাগর এগিয়ে আসার ফলে৷ একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব জুড়ে প্রায় ৫০ কোটি মানুষের বাস এমন সব এলাকায়, যেখানে সাগরের জল বাড়লে, তাদের ঘরছাড়া হতে হবে৷ প্রফেসর ইয়ুরগেন কুশে মনে করেন, ‘‘আমাদের বিভিন্ন ধরণের ‘স্ট্র্যাটেজির' প্রয়োজন পড়বে৷ এমন এলাকা আছে, যেখানে বাঁধের উচ্চতা বাড়াতে হবে – একে বলে মানিয়ে নেওয়ার নীতি৷ আবার এমন এলাকা আছে, যেখানে উপকূল থেকে সরে যেতে হবে৷ এলাকা অনুযায়ী দেখতে হবে, সেখানে কি করা যায়, তার খরচ কীরকম পড়বে৷ কিন্তু আমাদের এখনই তা নিয়ে ভাবতে হবে৷''
জলবায়ু সংরক্ষণে আমরা কী অবদান রাখতে পারি?
গোটা বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশের উৎস কয়লা, তেল ও গ্যাস৷ বাকি এক-চতুর্থাংশের জন্য কৃষি ও কাঠ কাটার কাজ দায়ী৷ ১০টি উপায়ে আমরাও কার্বন নির্গমন এড়িয়ে চলতে পারি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কয়লা, তেল ও গ্যাসের কম ব্যবহার
বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কল-কারখানা ও পরিবহণ ক্ষেত্রই মূলত কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী৷ শীতের দেশে ঘরবাড়ি গরম রাখতে প্রায় ৬ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করা হয়৷ তাই পরিবেশ সংরক্ষণ করতে কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে আরও দক্ষতার সঙ্গে জ্বালানি ব্যবহার করা উচিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘ক্লিন এনার্জি’ নিজেই উৎপাদন করুন
বিদ্যুতের জন্য আর কয়লা, তেল বা গ্যাস-ভিত্তিক জ্বালানি কেন্দ্রের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না৷ বিকল্প জ্বালানি ইতোমধ্যে আরও সস্তা হয়ে উঠেছে৷ নিজস্ব উদ্যোগে জ্বালানি উৎপাদন করে চাহিদা মিটিয়ে প্রায়ই কিছু উদ্বৃত্ত থেকে যায়৷ ছাদের উপর সৌর প্যানেলের জন্য যথেষ্ট জায়গা আছে৷ এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিরও যথেষ্ট উন্নতি ঘটছে৷
ছবি: Mobisol
ভালো আইডিয়ার প্রতি সমর্থন চাই
পৌর কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানি পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে ও ‘ক্লিন এনার্জি’ বিক্রি করছে৷ যেমন জার্মানির সাবেক শহরের সোলার পার্ক৷ জনসংখ্যা মাত্র ৭,২০০৷ চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আদর্শ হয়ে উঠেছে এই ছোট্ট শহরটি৷ এক মার্কিন প্রতিনিধিদল সেই সাফল্যের রহস্য বুঝতে এসেছে৷
ছবি: Gemeinde Saerbeck/Ulrich Gunka
জলবায়ুর ক্ষতি করলে কোম্পানির লোকসান
সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিমা কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, পৌর কর্তৃপক্ষ – সবাই জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি কোম্পানি থেকে বিনিয়োগের অর্থ সরিয়ে নিচ্ছে৷ জার্মানির ম্যুনস্টার শহর কর্তৃপক্ষ সবার আগে এই ‘ডাইভেস্টমেন্ট’ আন্দোলনে শামিল হয়েছে৷ গোটা বিশ্বে মোট ৫৭টি পৌর কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত একই পথ বেছে নিয়েছে৷
ছবি: 350.org/Linda Choritz
গাড়ি ছেড়ে সাইকেল, ট্রাম-বাস, ট্রেন
সাইকেল, ট্রাম-বাস ও ট্রেন ব্যবহার করলে অনেক কার্বন সাশ্রয় করা যায়৷ গাড়ির তুলনায় বাস ৫ গুণ বেশি পরিবেশবান্ধব – ইলেকট্রিক ট্রেন ১৫ গুণ বেশি৷ আমস্টারডাম শহরের বেশিরভাগ মানুষই সাইকেল চালান৷ শহর কর্তৃপক্ষ সাইকেলের জন্য চওড়া পথ তৈরি করেছে৷
ছবি: DW/G. Rueter
বিমানযাত্রা এড়িয়ে চলুন
বিমানযাত্রা পরিবেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে৷ হিসেব অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষকে বছরে গড়ে ৫.৯ টনের বেশি কার্বন নির্গমন করলে চলবে না৷ অথচ বিমানে চেপে বার্লিন ও নিউ ইয়র্ক করলেই যাত্রী প্রতি ৬.৫ টন কার্বন নির্গমন করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Huguen
কম মাংস খান
পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কৃষিক্ষেত্রও সমস্যা সৃষ্টি করে৷ ধানচাষের ফলে এবং গরু, ভেড়া ও ছাগলের পেটের মধ্যে জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর মিথেন সৃষ্টি হয়৷ একদিকে সারা বিশ্বে মাংস খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ অন্যদিকে গবাদি পশুপালনের কারণে পশুখাদ্য হিসেবে সয়াবিনের চাহিদাও বেড়ে চলেছে৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
অরগ্যানিক খাদ্য কিনুন
লাফিং গ্যাস জলবায়ুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ গ্রিনহাউস এফেক্টের প্রায় ৬ শতাংশ এই গ্যাসের কারণে ঘটে৷ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ইঞ্জিনের পাশাপাশি বিশাল মাত্রার কৃষিকাজে কৃত্রিম সারের কারণে এই গ্যাস সৃষ্টি হয়৷ অরগ্যানিক খামারে এই বস্তুটি নিষিদ্ধ৷
ছবি: imago/R. Lueger
টেকসই নির্মাণ ও ভোগ
ইস্পাত ও সিমেন্ট উৎপাদনের ক্ষেত্রেও প্রচুর কার্বন নির্গমন ঘটে৷ অন্যদিকে কাঠ ও বাঁশের ক্ষেত্রে সেই ক্ষতির আশঙ্কা নেই৷ নির্মাণের ক্ষেত্রে সঠিক উপকরণ বাছাই করে পরিবেশের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব৷ ভোক্তা হিসেবেও সবার মনে রাখা উচিত, যে প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহার করলে পরিবেশের কত ক্ষতি হয়৷
ছবি: Oliver Ristau
দায়িত্বশীল হবার পালা
পরবর্তী প্রজন্মের জন্য জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে গ্রিনহাউস গ্যাস পরিহার করতে হবে৷ স্কুলের এই ছাত্রছাত্রীরা ‘ক্লিন এনার্জি’ সম্পর্কে অত্যন্ত উৎসাহী৷ ভবিষ্যতের জন্য তারা এটাকে বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে৷ তাদের এই স্বপ্ন পূরণ করতে সবাই সাহায্য করতে পারে৷
ছবি: Gemeinde Saerbeck/U.Gunnka
10 ছবি1 | 10
সাগরের পানির উচ্চতা বাড়া রোখার কোনো পন্থা নেই৷ আর্থিক অথবা অন্য কারণে বাঁধ তৈরি সম্ভব না হলে, মানুষজনকে উপকূল ছেড়ে দেশের অভ্যন্তরে গিয়ে বাস করতে হবে, সেখানে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে৷
বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যেই বাস্তুহারা হয়েছেন সাগর এগিয়ে আসার ফলে৷ এই বিপদ এড়ানোর কোনো উপায় আপনার জানা আছে কি? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷