ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে পোর্টসমথ বন্দরের মুখেই সাগরের পানির মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা দুর্গ, যার নাম স্পিটব্যাংক ফোর্ট৷ আজ সেই দুর্গ একটি লাক্সারি হোটেল; সৈন্যদের কামান দাগার বদলে শ্যাম্পেনের গ্লাস৷
বিজ্ঞাপন
সাগরের মাঝখানে হোটেল, নাম আবার স্পিটব্যাংক ফোর্ট৷ দক্ষিণ ইংল্যান্ডের উপকূল থেকে এক সামুদ্রিক মাইল দূরত্বে৷ ব্রিটেনের লাক্সারি হোটেলগুলির মধ্যে এ এক বিশেষ ধরনের বিলাস!
অতীতে স্পিটব্যাংক ছিল সত্যিই একটি ফোর্ট বা দুর্গ, যার কাজ ছিল পোর্টসমথ বন্দরে ঢোকার মুখটি সুরক্ষিত করা৷ আজ সেই ফোর্ট পরিণত হয়েছে একটি লাক্সারি হোটেলে৷
তীর থেকে হোটেল পর্যন্ত আসাটাই একটা অ্যাডভেঞ্চার৷ তবে সাগরের স্রোত এখানে কম নয়, কাজেই বোটের ওঠানামায় সি-সিক হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে৷
ইউরোপের কিছু আজব হোটেল
ক্রেনের মাথায় হোটেল, রুপোর খনির তলায় হোটেল, ট্রোজান ঘোড়া কিংবা উফো’র মতো দেখতে হোটেল - সবই কিন্তু ইউরোপে!
ছবি: Ufogel Hotel
ফারাল্ডা ক্রেন হোটেল, নেদারল্যান্ডস
আমস্টারডাম বন্দর এলাকার একটি ভারী ক্রেনকে তিন সুইটের একটি ডিজাইনার হোটেলে পরিণত করা হয়েছে৷ মাটি থেকে ৪৫ মিটার উঁচুতে রাত কাটানো, সেই সঙ্গে এরকম একটা ভিউ!
ছবি: Crane Hotel Faralda Amsterdam
ফারাল্ডা ক্রেন হোটেল, নেদারল্যান্ডস
ছবি: Crane Hotel Faralda Amsterdam
ফারাল্ডা ক্রেন হোটেল, নেদারল্যান্ডস
ছবি: Edwin Kornmann/Faralda Crane Hotel
সিলভার মাইন হোটেল, সুইডেন
সুইডেনের সালা শহরের এই হোটেলটি পরিত্যক্ত, অর্থাৎ ছেড়ে যাওয়া এক রুপোর খনির ভিতরে, মাটি থেকে ১৫৫ মিটার নীচে৷
ছবি: Martinus Schwarzkopf
সিলভার মাইন হোটেল, সুইডেন
ছবি: gruvtroll.se
সিলভার মাইন হোটেল, সুইডেন
ছবি: Uniqhotels.com
ইংল্যান্ডের উপকূলে স্পিটব্যাংক ফোর্ট
স্পিটব্যাংক ফোর্টটি তৈরি করা হয়েছিল ১৮৫৯ সালে, প্রতিরক্ষার জন্য৷ আজ সেটি একটি লাক্সারি হোটেল৷
ছবি: Amanda Retreats
ইংল্যান্ডের উপকূলে স্পিটব্যাংক ফোর্ট
ছবি: Solentforts
ইংল্যান্ডের উপকূলে স্পিটব্যাংক ফোর্ট
ছবি: Solentforts
ট্রোজান হর্স, লা বালাদ দে নোম, বেলজিয়াম
‘হেলেন অফ ট্রয়’-কে কেন্দ্র করে যুদ্ধে কাঠের ঘোড়ার পেটে ট্রোজান সৈন্যদের কথা মনে আছে তো? সেই গ্রিক কিংবদন্তির অনুকরণে বেলজিয়ামের এই হোটেল৷
ছবি: Uniqhotels.com
ট্রোজান হর্স, লা বালাদ দে নোম, বেলজিয়াম
ছবি: uniqhotels.com
ট্রোজান হর্স, লা বালাদ দে নোম, বেলজিয়াম
ছবি: Uniqhotels.com
উফোগেল হোটেল, অস্ট্রিয়া
উফোগেল নামটা এসেছে ইউএফও, অর্থাৎ আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট, আর জার্মান শব্দ ‘ভোগেল’ বা ‘পাখি’ থেকে৷ চারদিকে আল্প্স পর্বতমালার দৃশ্য৷
ছবি: Ufogel Hotel
উফোগেল হোটেল, অস্ট্রিয়া
ছবি: Ufogel Hotel
উফোগেল হোটেল, অস্ট্রিয়া
ছবি: Ufogel Hotel
15 ছবি1 | 15
ফোর্ট ম্যানেজার ডমিনিক হোন্স বলেন, ‘‘আমরা এখন স্পিটব্যাংক ফোর্টের দিকে চলেছি৷ আমি হলাম ডমিনিক, ফোর্ট ম্যানেজার৷ মাত্র দশ থেকে ১৫ মিনিটের যাত্রা৷ ঐ তো, সামনেই দেখতে পাচ্ছেন স্পিটব্যাংক ফোর্ট৷''
হেদার-এর একটি বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো৷ স্বামী গ্র্যাহামের সত্তরতম জন্মদিন উপলক্ষ্যে তিনি এই ট্রিপটি কামনা করেছিলেন৷ হেদার বলেন, ‘‘খুব রোমাঞ্চকর, তাই না? বাতাস যে আরো জোরালো নয়, সাগর যে আরো উত্তাল নয়, সেটাই সৌভাগ্য৷''
কেল্লা তো নয়, লাক্সারি হোটেল
১৩৮ বছরের পুরনো ফোর্টটি দেখলে মনে হবে না যে, এটি একটি লাক্সারি হোটেল৷ পৌঁছনোর পর অতিথিদের খাড়া সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়৷ তারপর শুরু হয় শ্যাম্পেনের গ্লাস দিয়ে অতিথিদের অভ্যর্থনা৷ হেদার বললেন, ‘‘আমি যা ভেবেছিলাম, তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা৷ কিন্তু এরকম সব দেয়াল, কোণায় কোণায় ছোট ছোট ঘর, এ সব এখনও আছে বলে ভাবিনি৷ আমার দারুণ লাগে৷''
আগে যেখানে গোলাগুলি আর বারুদ রাখা হতো, আজ সেখানে অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়৷
দিন কয়েকের ছুটি কাটানোর জন্য স্পিটব্যাংক ফোর্টের জুড়ি নেই৷ ব্রিটিশ কোটিপতি মাইক ক্লেয়ার ফোর্টটি কেনেন ২০০৯ সালে মাত্র ১৩ লাখ ইউরো মূল্যে, পরে আরো ৪০ লাখ ইউরো ব্যয় করে ফোর্টের খোলনলচে পালটে দেওয়া হয়৷
ফোর্ট ম্যানেজার ডমিনিক হোন্স বললেন, ‘‘এটা হল সমুদ্রের দিকে মুখ করা কামানের ঘরগুলোর একটি৷ আগে এখানে সাড়ে বারো ইঞ্চি ব্যাসের একটা কামান গোটা ঘরটা জুড়ে থাকত৷''
গ্র্যাহাম মনে করেন, ‘‘হ্যাঁ, আমাদের দু'জনের জায়গা হয়ে যাবে৷ তারপরও জায়গা থাকবে৷''
সৈন্যদের বদলে হোটেল গেস্ট
দিনে ছ'হাজার তিনশ' ইউরো খরচ করতে পারলে গোটা স্পিটব্যাংক ফোর্টটাই বুক করা যায়৷ আগে জলের নীচের ঘরগুলোতে শ'দুয়েক সৈন্যের শোয়ার ব্যবস্থা ছিল৷ আজ সেখানে হোটেল গেস্টদের জন্য বার৷
স্পিটব্যাংক ফোর্টের ইতিহাস না শুনলে অযাত্রা হয়৷ ডমিনিক হোন্স সেই ইতিহাস শোনালেন, ‘‘মাটিতে কামানের চাকা ঠেলার যে দাগগুলো ছিল, তা এখনও দেখতে পাওয়া যায়৷ এছাড়া কামানগুলো নাড়াচাড়া করার জন্য ছাদ থেকে দড়ি ঝোলানোর আংটাগুলোও দেখতে পাবেন৷''
জার্মানির দশটি উদ্ভুটে হোটেল
দেখতে হয়ত জেল কিংবা রাস্তায় বসানোর জলের পাইপ অথবা অতিকায় কাঠের পিপের মতো৷ অথচ এরা সবাই এক-একটি সুপরিচিত হোটেল...
ছবি: Propeller Island
হোটেলের প্রত্যেকটি ঘর যেন শিল্পকলা
কোনো ঘরে শয্যা বলতে একটি কফিন৷ কোনো ঘরে আসবাবপত্র ঝুলছে ছাদ থেকে৷একটি ঘরের চতুর্দিকে আয়না লাগানো – একেবারে শিশমহল! বার্লিনের এই হোটেলটির নাম ‘প্রপেলার আইল্যান্ড’৷ এর ডিজাইন করেছেন শিল্পী লার্স স্ট্রশেন৷ এমনকি তিনি প্রতিটি ঘরের জন্য আলাদা মিউজিক কমপোজ করতেও ভোলেননি...৷
ছবি: Propeller Island
রেলগাড়ি ঝমাঝম
বার্লিন থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে ইয়্যুটারবোগ৷ সেখানে অতিথিরা ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলওয়ের আস্বাদ পেতে পারেন৷ স্লিপার কোচ হোটেলটিতে ২৫ জন অতিথির থাকার জায়গা আছে৷ প্রত্যেক কম্পার্টমেন্টে একটি করে ডাবল বেড, সেই সঙ্গে বসার জায়গা ও একটি বাথরুম৷
ছবি: Schlafwagenhotel
বাক্সের মধ্যে ঘুমনো
জার্মানির পূর্বাঞ্চলে কেমনিৎস-এর কাছে লুনৎসেনাউ শহরের ‘কফটেল’ বা বাক্সো হোটেলটিকে বিশ্বের খুদেতম হোটেল বললেও সম্ভবত দোষ হবে না৷ ২০০৪ সালে সৃষ্ট হোটেলটির প্রতিটি ঘর একটি সুটকেসের আকারে৷ ঘর বলতে দেড় মিটার চওড়া, তিন মিটার লম্বা আর দু’মিটার উঁচু৷ বিছানা নিজেকেই নিয়ে আসতে হয়৷ রাত কাটানোর খরচ: ১৫ ইউরো৷ বছরে শ’পাঁচেক অতিথি এই বাক্সো হোটেলে রাত কাটান৷
ছবি: Zum Prellbock
হবিটরা যেখানে থাকে
টলকিয়েন-এর ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’-এর কল্যাণে হবিটদের আর কে না চেনে? তবে হবিটদের ওয়াইল্ডারল্যান্ড দেখার জন্য নিউজিল্যান্ডের ফিল্মসেটে যেতে হবে না৷ হবিটরা যেভাবে বাস করত, জার্মানির টুরিঙ্গিয়া প্রদেশের জঙ্গলেও তা করা সম্ভব – এই হোটেলটির কল্যাণে৷
ছবি: Feriendorf Auenland
‘ড্যান্সেস উইথ উল্ভস’
সন্ধ্যা নামছে, আঁধার ঘনাচ্ছে, কোথাও কোনো মানুষের সাড়া নেই৷ এই হলো উত্তর জার্মানির ব্রেমেন শহরের কাছে ‘ট্রি ইন’ বা বৃক্ষ হোটেলের পরিবেশ৷ ড্যোরফার্ডেন-এ বাচ্চা নেকড়েদের রাখার জন্য যে ‘এনক্লোজার’ আছে, তার ঠিক মাঝখানে এই ট্রিহাউস হোটেল৷ পাঁচ মিটার উঁচুতে কাচে ঘেরা কামরা থেকে পরম আরামে নেকড়ে দেখা যায় – কেননা এখানে মিনি-বার থেকে হুইর্লপুল, কোনো আধুনিক বিলাসিতার অভাব নেই৷
ছবি: Tree Inn
জলের পাইপে বাস
জার্মানির রুর শিল্পাঞ্চলের বট্রপ শহরের পার্ক হোটেল-এ রাস্তায় বসানোর জলের পাইপগুলোকে কামরায় পরিণত করা হয়েছে৷ রাত কাটানোর কোনো বাঁধা ভাড়া নেই, যে যা পারেন, তা-ই দেন৷ জলের পাইপগুলোর ব্যাস প্রায় আড়াই মিটার; এক একটা সেকশনের ওজন সাড়ে ১১ টন৷ ভিতরে বিছানা আর একটা সাইড টেবল ঠিকই ধরে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
লৌহকপাট
আগে এখানে জেলের আসামিরা বন্দি থাকতেন৷ আজ সেখানে ক্রাইম থ্রিলার-এর ফ্যানরা রাত কাটান৷ জার্মানির কাইজার্সলাউটার্ন শহরের আল্কাত্রাজ হোটেলে মোট ৫৬টি কামরা ও সুইট আছে৷ আজও এখানে সর্বত্র গারদ ও লোহার শিক – এমনকি হোটেলের পানশালাটিতেও৷ তবে অতিথিরা মর্জিমতো আসতে-যেতে পারেন৷
ছবি: alcatraz
মদের পিপেতে শয্যা
এককালে যেখানে ওয়াইন মজুদ রাখা হতো, সেখানে আজ রাত কাটানো যায়৷ রাইন নদের ধারে রুডেসহাইম শহরের লিন্ডেনভির্ট হোটেলটিতে ছ’টি অতিকায় কাঠের পিপে আছে৷ পিপেগুলোয় মোট ছ’হাজার লিটার সুরা ধরতো৷ আজ তার বদলে দু’জন অতিথির শোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে৷ তবে বসবার ঘরটা পিপের বাইরে৷
ছবি: Lindenwirt
মধ্যযুগের নাইটদের মতো
দক্ষিণ জার্মানির লেক কন্সটান্স-এর কাছে আর্টুস হোটেলে ঢুকলে মনে হবে, যেন মধ্যযুগে প্রবেশ করেছেন৷ কামরাগুলো যেন মধ্যযুগের কোনো সরাইখানার অনুকরণে সাজানো, খাবারদাবার নাইটদের আমলের ভুরিভোজ...৷
ছবি: Hotel Arthus
শীতকাতুরেদের জন্য নয়
নাম ইগলু লজ৷ ইগলু বলতে উত্তরমেরু অঞ্চলের এস্কিমোদের বরফের ঘর৷ ওবার্স্টডর্ফ-এ নেবেলহর্ন পাহাড়ের উপর এই বরফের হোটেলটি ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস অবধি খোলা থাকে৷ ৪০ জন অতিথি এখানে দু’জন কিংবা চারজনের ইগলুতে রাত কাটাতে পারেন৷ সেই সঙ্গে রয়েছে – ভোর হলে – দু’হাজার মিটার উচ্চতা থেকে আল্পস পর্বতমালার অনুপম দৃশ্য৷
ছবি: IgluLodge
10 ছবি1 | 10
একটি ছোট মিউজিয়ামে গেলে দেখা যাবে, পাথরের দুর্গে মানুষ আগে কীভাবে থাকত ও কাজকর্ম করত৷
ডমিনিক হোন্স জানালেন, ‘‘এখানে দু'শ সৈন্যের খাবার তৈরি হতো৷ আমরা এখানে নানারকমের সামরিক জিনিসপত্র রেখেছি, যার ফলে হোটেলের শেফ-রা কখনোসখনো চমকে যান, যখন তারা শোনেন যে, এটাই হবে তাঁদের রান্নাঘর৷''
আগে সৈন্যরা ঝোলানো হ্যামকে শুতেন৷ আজ ফোর্টের ন'টি লাক্সারি সুইটে ১৮ জন অতিথি রাত কাটান৷ তাদের অধিকাংশ এক কিংবা দু'রাত্রির বেশি থাকেন না৷ তবে অতীতের সেই কঠিন বাস্তবের কথা ভেবে তাঁদের রোমাঞ্চ হয় বৈকি৷৷
আপনিও কি এই স্পিটব্যাংক ফোর্ট হোটেলে রাত্রিযাপন করতে চান? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷