সাগরের গভীরে ভূমিকম্পের পদধ্বনি
১৫ জুন ২০১৮সাগরবক্ষের নীচে ভূমিকম্প হওয়ার সময় যে শব্দ হয়, তা ছেঁকে বার করার চেষ্টায় রয়েছেন দক্ষিণ ফ্রান্সের এক গবেষক দল৷ দলের প্রযুক্তবিদরা এ কাজের জন্য এক ধরনের বিশেষ ‘প্রোব' সৃষ্টি করেছেন৷
ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার ইয়ান এলো জানালেন, ‘‘এই হাইড্রোফোন দিয়ে আমরা ভূমিকম্পের শব্দ শুনতে পাই৷ হাইড্রোফোন সাগরের পানির তলায় নানা ধরনের আওয়াজ রেকর্ড করতে পারে: ঢেউয়ের ওপর বাতাসের শব্দ, সাগরের প্রাণীদের ডাক, হিমশৈল ভেঙে যাওয়ার শব্দ৷ আমরা কিন্তু ভূমিকম্পের আওয়াজ শুনতেই বেশি আগ্রহী৷''
‘প্রোব' ও তার পরিচালনা
পানির মধ্যে প্রোবগুলো ঝোলানো থাকে, স্রোতের টানে নড়াচড়া করে৷ পানির ভিতর দিয়ে বেতার সংকেত পাঠিয়ে প্রোবগুলোকে চালানো সম্ভব, কিন্তু খুব বেশিদূর পর্যন্ত নয়৷
কম্পিউটার বিজ্ঞানী রোম্যাঁ ভেরফাইয়ি বললেন, ‘‘আমরা বেতার সংকেতের মাধ্যমে প্রোবটিকে তার প্রোগ্রাম অনুযায়ী নানা ধরনের প্যারামিটার পাঠাতে পারি৷ প্রোবের ভিতরে একটি অভ্যন্তরীণ ঘড়ি ও একটি প্রেসার ট্রান্সডিউসার থাকায় আমরা প্রোবটিকে একটি বিশেষ গভীরতায় যেতে বলতে পারি, কতোক্ষণ ধরে প্রোবটি চলবে, তা নির্ধারণ করতে পারি, অথবা কতোক্ষণ ধরে রেকর্ডিং চলবে, তাও নির্দিষ্ট করে দিতে পারি৷''
কোনো লক্ষণীয় ভূকম্পন ধরা পড়লেই হাইড্রোফোনগুলি নিজে থেকে পানির উপর উঠে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেই ডাটা যথাস্থানে প্রেরণ করে৷ একটি অভিযান শেষ হবার পর হাইড্রোফোনগুলোকে সংগ্রহ করে নতুন করে প্রোগ্রাম করা যায়৷
শব্দময় পরিবেশ
এই যন্ত্রগুলিতে ইলেকট্রনিক আর হাইড্রলিক প্রণালীর এক আশ্চর্য সংমিশ্রণ ঘটেছে৷ গবেষকদের কাছে মূল চ্যালেঞ্জ ছিল, পানির নীচে অত্যন্ত শব্দময় পরিবেশে ভূমিকম্পের শব্দটিকে আলাদা করে চিনতে পারা ও রেকর্ড করা৷
সিসমিক টোমোগ্রাফার খুস্ট নোলেট বললেন, ‘‘সাগরে এতো ধরনের শব্দ থাকে৷ জাহাজের শব্দ, তেল কোম্পানিগুলির অয়েল রিগের শব্দ; বড় বড় তিমি মাছ তাদের গান গায়; এছাড়া ঝড়জলেও বিপুল আওয়াজ করে৷ আমরা এই কোলাহলের মধ্যে ভূমিকম্পের আওয়াজ খুঁজছি৷ কাজেই আমাদের কাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল, কম্পিউটার যাতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে জলের নীচে ভূমিকম্পের আওয়াজ আর তিমি মাছের ডাক তফাৎ করতে পারে৷''
প্রযুক্তি ও তার প্রয়োগ
অন্যান্য নানা ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে: যেমন সাগরে যে সব স্তন্যপায়ী জীব বাস করে, তাদের নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে, এমনকি বিমান দুর্ঘটনার পর সাগরের পানির তলায় ফ্লাইট রেকর্ডারটি খুঁজে বার করার কাজে৷ তবে ফরাসি বিজ্ঞানীরা সর্বাগ্রে ভূমিকম্প সংক্রান্ত গবেষণায় এই প্রযুক্তি পরখ করে দেখছেন৷
ইয়ান এলোর মতে, ‘‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে যদি ছ'শ এ ধরনের যন্ত্র পৃথিবীর বিভিন্ন সাগরে স্থাপন করা যায়, তাহলে আমরা ভূগোলকের অভ্যন্তরে কী ঘটছে, তার একটা অনেক স্পষ্ট ছবি পাব – বিশেষ করে দক্ষিণ গোলার্ধে, যেখানে সাগরের অনুপাত বেশি এবং আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য নেই৷''