জার্মানির উত্তরে হেলিগোল্যান্ড, যা উত্তর সাগরের একটি দ্বীপপুঞ্জ৷ গত ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে হেলিগোল্যান্ডের উপকূলে সাগরের পানির নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে ও নানা তথ্য নথিবদ্ধ করা হচ্ছে, যা গবেষকদের কাছে অমূল্য৷
বিজ্ঞাপন
হেলিগোল্যান্ডের বন্দর ছেড়ে কারেন উইল্টশায়ার ও তাঁর সতীর্থেরা উত্তর সাগরে পানির নমুনা নিতে যাচ্ছেন৷ ওশেনোগ্রাফারদের সাগরে ভয় করলে চলে না৷ এছাড়া তাদের ধৈর্য থাকা চাই৷ সাগরের পরিবর্তন একদিনে চোখে পড়ে না৷ গবেষকরা বহু প্রজন্ম ধরে হেলিগোল্যান্ডের উপকূলে উত্তর সাগরের উপর নজর রেখে চলেছেন৷
কারেন উইল্টশায়ার জানালেন, ‘‘আমরা গত একশ' বছর ধরে এখানে পানির তাপমাত্রা মেপে আসছি৷ প্রত্যেক দিন সকালে ওপরের দিকের পানির তাপমাত্রা মাপা হয়, এই ধরুন এক মিটার গভীরে৷ বলতে কি, ঠিক একই থার্মোমিটার দিয়ে৷ আমরা যে মেপেছি, সেটা ভালোই, কেননা তা থেকে দেখা গেছে যে, তাপমাত্রা বেড়েছে৷''
সাগরের মায়াপুরী
ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞদের মতে সমুদ্রের পাঁচটি স্থানকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত৷ অবশ্য সাগরের অতলে এই স্থানগুলিতে দর্শক সমাগম হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Courtesy Chris Burville
সাগরের গভীরে, জলের তলায় এক আশ্চর্য জগৎ
সাগরের পানির নীচে পাঁচটি স্থানকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেবার সুপারিশ করেছেন ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞরা৷ এই সব স্থানের বাসিন্দাদের সৌন্দর্য অকল্পনীয়; সেই সঙ্গে রয়েছে অপরিসীম জীববৈচিত্র্য; এছাড়া পরিবেশ বিপন্ন হলে, তার চিহ্নও ধরা পড়ে এখানে৷
ছবি: Kevin Raskoff/NOAA/Wikipedia
‘‘হারানো শহর’’
অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে ৮০০ মিটার জলের তলায় ভূপৃষ্টের ফাটল থেকে আগুন, গরম লাভা ও গ্যাস বেরিয়ে আসছে৷ ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের অন্য কোথাও এ ধরনের একটি আশ্চর্য পরিবেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট নামে পরিচিত প্রাকৃতিক চিমনিগুলি থেকে সম্ভবত ১ লক্ষ ২০ হাজার বছরের বেশি সময় ধরে গ্যাস নির্গত হচ্ছে৷ সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় চিমনিটির নাম রাখা হয়েছে পোসাইডন৷ উচ্চতা ৬০ মিটারের বেশি৷
ছবি: Woods Hole Oceanographic Institute and Charles Fisher, Pennsylvania State University
কোস্টা রিকার থার্মাল ডোম
প্রশান্ত মহাসাগরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ৫০০ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘের এই এলাকাটিকে ‘‘সাগরের মরুদ্যান’’ আখ্যা দিয়েছেন ইউনেস্কোর বিজ্ঞানীরা৷ এখানে যেমন টুনা মাছ কিংবা শুশুক, তেমনই হাঙর বা তিমি মাছ পাওয়া যায়৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এলাকার সবচেয়ে বড় বাসিন্দা নীল তিমিকে৷ বিশেষভাবে বিপন্ন সামুদ্রিক কচ্ছপ লেদারব্যাক টার্টলরাও এখান দিয়ে যায়৷
ছবি: picture alliance/WILDLIFE
হোয়াইট শার্ক কাফে
সাদা হাঙরের কফিহাউস? হ্যাঁ, মেরিন বায়োলজিস্টরা সত্যিই এই নাম দিয়েছেন৷ জায়গাটা কিন্তু খোলা সমুদ্রে, উত্তর অ্যামেরিকা আর হাওয়াই দ্বীপের মাঝামাঝি৷ হোয়াইট শার্ক নামধারী হাঙরদের ভিড় লেগে থাকে এখানে, হয়তো জলের বিভিন্ন স্রোত তাদের ভালো লাগে বলে৷
ছবি: Pterantula (Terry Goss) via Wikimedia Commons
সারগাসো সি
স্বয়ং কলম্বাস নাকি ১৮৯২ সালে তাঁর প্রথম সমুদ্রযাত্রার সময় এই দৃশ্য দেখেছিলেন৷ বার্মুডার দ্বীপগুলোকে ঘিরে রয়েছে এই সারগাসো সাগর৷ সারগাসো নামটি এসেছে সার্গাসুম নামধারী ভাসন্ত সামুদ্রিক শ্যাওলা থেকে৷ সার্গাসুম-কে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘ভাসন্ত সোনালি ক্রান্তীয় অরণ্য’৷ এই ‘অরণ্যে’ বহু জীব ও প্রাণীর বাস৷ ইউরোপীয় ও অ্যামেরিকান বানমাছেরা শুধু এখানেই ডিম পাড়ে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Courtesy Chris Burville
অ্যাটলান্টিসের পাড়
ভারত মহাসাগরের এই জলমজ্জিত দ্বীপটি নাকি লক্ষ লক্ষ বছর আগে সাগরে ডুবে গিয়েছিল – এই কি তাহলে কিংবদন্তীর অ্যাটলান্টিস মহাদেশ? সাগরের ৭০০ থেকে ৪,০০০ মিটার নীচে চড়াই-উৎরাই, সৈকৎ কিংবা উপহ্রদ, সবই পাওয়া যায় – সেই সঙ্গে বড় বড় অ্যানেমনি, সুবিশাল স্পঞ্জ ও প্রবাল৷
ছবি: The Natural Environment Research Council and IUCN/GEF Seamounts Project C/O Alex D Rogers
সারা পৃথিবীর, গোটা মানবজাতির সম্পদ
পাঁচটি স্থানই সাগরের জলভূমির আন্তর্জাতিক অংশে, কোনো বিশেষ দেশের তাঁবে নয়৷ তার খারাপ দিকটা হল এই যে, এই ধরনের এলাকা সুরক্ষিত বা সংরক্ষিত করা কঠিন৷ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ আখ্যা দেওয়াটা তার একটা পন্থা হতে পারে৷
7 ছবি1 | 7
গবেষকরা প্ল্যাঙ্কটনও পরীক্ষা করে দেখেন৷ পানির তাপমাত্রা বাড়ার অর্থ, পানির নীচে জীবজগতেরও পরিবর্তন ঘটছে৷ যেমন সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ব্রাউন অ্যালজি, অর্থাৎ বাদামি শ্যাওলার পরিমাণ বেড়েছে৷'' এই সব খুঁটিনাটি থেকে সাগরের অবস্থা যাচাই করা যায়৷ আর সাগরের অবস্থার উপর গোটা পৃথিবীর অবস্থা নির্ভরশীল৷ কারেন উইল্টশায়ার বলেন, ‘‘সাগর না থাকলে জমিতেও আবহাওয়া সম্পূর্ণ অন্যরকম হতো৷ কাজেই সাগর কীভাবে কাজ করে তা বোঝা অত্যন্ত জরুরি – বিশেষ করে এখন, যখন সমস্তই বদলে যাচ্ছে, পৃথিবীর চারপাশে বায়ুমণ্ডল যেভাবে বদলে যাচ্ছে, কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে, বিশ্বের উষ্ণায়ন বেড়ে চলেছে৷ কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, সাগরে তার প্রতিক্রিয়া কী হবে৷''
সাগরের পানির নমুনা নেওয়া ওশেনোগ্রাফারদের কাজের একটা বড় অংশ৷ বোট ফিরল হেলিগোল্যান্ডে৷ পানির নমুনাগুলো এবার পরীক্ষাগারে যাবে৷ এতদিন ধরে সাগরের একই অংশের পানির নমুনা বিশ্বের আর কোথাও নেওয়া হয়েছে বলে জানা নেই৷
একটি দরজার পিছনে রয়েছে তথাকথিত ‘ফেরি বক্স'৷ ফেরি বক্স হলো একটি স্বয়ংক্রিয় পরিমাপ পদ্ধতি, যা দিনরাত কাজ করে৷ গত দশ বছর ধরে এখানে দিনরাত সাগরের পানি পাম্প করা হচ্ছে৷ তাপমাত্রা, লবণের মাত্রা, পিএইচ ভ্যালু – এ সব কিছু বাড়ছে না কমছে, কখন বা কোন মরসুমে, তা গবেষকরা জানতে পারেন ফেরি বক্সের সংগৃহীত তথ্য থেকে৷
প্রতিবেদন: মাবেল গুন্ডলাখ/এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
ইউরোপের যে সব সমুদ্রসৈকতে নামে পর্যটকদের ঢল
ইউরোপের পর্যটকরা গ্রীষ্মের ছুটিতে ছোটেন সমুদ্রসৈকতের দিকে৷ ‘বিচে’ সময় না কাটালে তাঁদের ছুটি যেন পূর্ণতা পায় না৷ আর ইউরোপে আছে ১০,০০০ কিলোমিটার সমুদ্র উপকূল৷ চলুন দেখে নেই তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর সমুদ্রতটগুলো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
আলগার্ভ, পর্তুগাল
অসাধারণ পাথুরে গঠন, সোনালি বালি আর মায়াময় সব বাঁক – বলছি পর্তুগালের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটক আকর্ষণ আলগার্ভের কথা৷ ইউরোপের যেসব এলাকায় সূর্যের আলো সবচেয়ে বেশি মেলে, তার মধ্যে পড়ে এই অঞ্চল৷ ফলে পর্যটকদের ভিড় থাকে সেখানে নিয়মিত৷
ছবি: picture-alliance/ZB/J. Kalaene
সিসিলি, ইটালি
ভূমধ্যসাগরের সবচেয়ে বড় দ্বীপ সিসিলিতে আকর্ষণীয় অনেক কিছুই রয়েছে৷ তবে দ্বীপটির বালুময় সমুদ্রতট পর্যটকদের টানে সবচেয়ে বেশি৷ আর শুধু গ্রীষ্মকালে নয়, শরৎকাল বা বসন্তেও ঘোরা যায় সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/W. Thieme
সাউথ আটল্যান্টিক, ফ্রান্স
হোসেগর হচ্ছে ফ্রান্সের প্রধান ‘সার্ফিং লোকেশন’৷ সেখানে ঢেউয়ের উচ্চতা তিন মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়, যা সার্ফারদের জন্য আদর্শ৷ গত শতকের সত্তরের দশক থেকে সেখানে নিয়মিত আন্তর্জাতিক সার্ফিং মিটের আয়োজন করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ASA/F. Faugere
ক্রেট, গ্রিস
গ্রিসের সবচেয়ে বড় এই দ্বীপটিতে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ পানির দেখা মেলে৷ আর্থিক মন্দার শিকার দেশটির জন্য পর্যটকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ এমন সব সমুদ্রসৈকতের জন্যই অবশ্য আজও পর্যটকদের সেদেশে যেতে উদ্বুদ্ধ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Knosowski
হাইডেনসি, জার্মানি
জার্মানির উত্তর-পূর্বাঞ্চল উপকূলের এই দ্বীপটি ছুটি কাটাতে আগ্রহী পর্যটক এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়৷ সেখানে ‘প্রাইভেট’ গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ৷ সাইকেল কিংবা ঘোড়ায় চড়ে ঘুরতে হয় সেখানে৷ তবে হাঁটতেও মানা নেই৷
ছবি: picture-alliance/ZB/P. Pleul
ডেভোন, ব্রিটেন
ব্রিটেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উককূল ডেভোন হালকা আবহাওয়া, বালুরতট এবং পাম গাছের জন্য বিখ্যাত৷ সার্ফাররা নিয়মিত ভিড় করেন সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Birchall
ডালিয়ান, তুরস্ক
যাঁরা পর্যটকদের ভিড় বেশি পছন্দ করেন না, কিন্তু ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে যেতে চান, তাঁদের জন্য আদর্শ ডালিয়ান৷ শুধু মানুষ নয়, সামুদ্রিক কাছিমসহ বিপন্ন আরো অনেক প্রাণির দেখা মেলে এখানে৷